ফজলি আম

বাংলাদেশের আমের একটি প্রজাতি

ফজলি বা ফকিরভোগ হলো আমের একটি প্রকারভেদ। এই ফল দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে বাংলাদেশভারতের পশ্চিম বঙ্গবিহারে পাওয়া যায়। আমের অন্যান্য প্রজাতির থেকে দেরিতে ফলে এই জাতটি। সাধারণত চাটনি ও আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ফজলি আম। আকারে বেশ বড় আমের এই জাতের ওজন এক কিলোগ্রাম বা তারও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশের উত্তরদিকের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা[১] এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলা[২] ফজলি চাষের জন্য বিখ্যাত।

ফজলি আম
ভৌগোলিক নির্দেশক
ফজলি আম
বিকল্প নামফকিরভোগ
বর্ণনাফজলি আম একপ্রকার আম যা আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি
ধরনকৃষি
অঞ্চল(বাংলাদেশ) - চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও (ভারত) -মালদা ,পশ্চিম বঙ্গ
দেশবাংলাদেশ, ভারত
উপাদানআম
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটDPDT http://ipindia.nic.in/girindia/

এপ্রিল, ২০০৮ থেকে মার্চ, ২০০৯ সময়ের মধ্যে ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মালদা জেলার ফজলি আমের জন্য ভৌগোলিক সূচক লাভ করেছে।[৩] একই আমের ফলন বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি হলেও যথাযথ আইন ও উদ্যেগের অভাবে ফজলি আমের স্বত্ত্ব হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। তবে ২০১৩ সালের দিকে রাজশাহীর ফজলির জন্য ভৌগোলিক সূচক পাবার ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে[৪][৫] এবং ২০২২ সাল নাগাদ বাংলাদেশও যৌথভাবে রাজশাহীচাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্য ফজলি আমের ভৌগোলিক সূচক লাভ করে।[৬]

নামকরণের ইতিহাস সম্পাদনা

ইলিইয়াস শাহী বংশের সুলতান ইয়্যুসূফ শাহ্‌(১৪৭৪-১৪৮১ ঈঃ)’র অন্যতম স্ত্রীর নাম ছিলো সুলতানা ফাদ্‌লী বিবি। নতুন বিয়ে হয়ে আসার পর তিনি ১বার ১টি আম খেয়ে তার আঁটি প্রাসাদের বাগানে ফেলেছিলেন। ক্রমান্বয়ে সেই আঁটি থেকে গাছ হয় ও তাঁতে আমও ধরে! আশ্চর্য্যের ব্যাপার হচ্ছে-ওই গাছের আমগুলো দিন দিন বড় হচ্ছিলো, সেই সাথে- ঐ আমের সাথে পাল্লা দিয়েই যেনো সুলতানাও মোটা হচ্ছিলেন! প্রাসাদের দাস-দাসীরা এই নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো এবং সুলতানার নামানুসারে আমের নামও দিয়েছিলো ফাদ্‌লী। ১দিন এটা সুলতানার কানেও গেলো ও সুলতানা এ ব্যাপারে সুলতানের কাছে নালিশ দেন। সুলতান একথা শুনে সবার আগে যাচাই করে দেখেন যে- দাসীদের কথাই ঠিক! তাই তিনি খুব হাসলেন ও ঐ আম খুব ভালো জাতের বুঝে তার আরও চারা লাগানোর ব্যবস্থা করলেন। সেই থেকে গৌড়ের প্রাসাদে জন্ম নেয়া এই আম প্রাসাদ থেকে বাহিরে ও ক্রমান্বয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে(আহ্‌ওয়াল-ই-গোর-ওয়া-পান্দুয়া)। ছড়িয়ে পরে এর নামও! তবে কালক্রমে ফাদ্‌লী(فَضْليّ ) ফাযলী ও পরে আরও বিকৃত হয়ে ফজলীতে পরিণত হয়

আরও কথিত আছে, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে মালদহের কালেক্টর র‌্যাভেন সাহেব ঘোড়ার গাড়ি চেপে গৌড় যাচ্ছিলেন। পথে তার জল তেষ্টা মেটানোর জন্য গ্রামের এক মহিলার কাছে জল খেতে চান। ফজলু বিবি নামে সেই মহিলার বাড়ির আঙিনায় বড় একটি আমগাছ ছিল। ফজলু বিবি সেই আম দিয়ে ফকির-সন্ন্যাসীদের আপ্যায়ন করাতেন (এজন্য এই আমের আর এক নাম ফকিরভোগ)। ফজলু বিবি তাকে জলের বদলে একটি আম খেতে দেন। আম খেয়ে কালেক্টর সাহেব ইংরেজিতে তাকে আমের নাম জিজ্ঞেস করেন। বুঝতে না পেরে ওই মহিলা তার নিজের নাম বলে বসেন। সেই থেকে ওই আমের নাম হয়ে যায় ফজলি।[৭][৮][৯]

বিবরণ সম্পাদনা

ফজলি আম গড়ে লম্বায় ১৩.৮ সে.মি. চওড়ায় ৯.৫ সে.মি. উচ্চতায় ৭.৮ সে.মি. হয়। গড়ে ওজন হয় ৬৫৪.৪ গ্রাম। আমটি দীর্ঘ এবং ঈষৎ চ্যাপ্টা। পাকা আমের খোসা কিছুটা হলুদ হয়ে ওঠে। শাঁস হলুদ, আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। খোসা পাতলা। আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা। এই আমে শর্করার পরিমাণ ১৭.৫ শতাংশ। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে, বা মোটামুটি ৭ই জুলাই থেকে ফজলি আম পাকে।[৭]

সাহিত্যে উল্লেখ সম্পাদনা

বিভিন্ন ধরনের আমের উল্লেখ বাংলা সাহিত্যে বহুবার এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শেষের কবিতা উপন্যাসে নায়ক অমিত রায়কে দিয়ে বলিয়েছেন, "কবিমাত্রের উচিত পাঁচ-বছর মেয়াদে কবিত্ব করা, পঁচিশ থেকে ত্রিশ পর্যন্ত। এ কথা বলব না যে, পরবর্তীদের কাছ থেকে আরো ভালো কিছু চাই, বলব অন্য কিছু চাই। ফজলি আম ফুরোলে বলব না, ‘আনো ফজলিতর আম।’ বলব, ‘নতুন বাজার থেকে বড়ো দেখে আতা নিয়ে এসো তো হে।’"[১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Fazli market gains momentum"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-২২ 
  2. Ratna Ganguli, TNN Jul 4, 2004, 11.35pm IST (৪ জুলাই ২০০৪)। "Bengal's Fazli mangoes make it to London stores - Economic Times" (ইংরেজি ভাষায়)। Articles.economictimes.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৪ 
  3. "STATE WISE REGISTRATION DETAILS OF G.I APPLICATIONS 15th September, 2003 – Till Date" (পিডিএফ)ipindia.nic.in/ (ইংরেজি ভাষায়)। Geographical Indication Registry। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ 
  4. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও শেখ রুকসানা বুরহান (১২ নভেম্বর ২০১৩)। "Geographic Indication: The role of the private sector" (পিডিএফ)www.bfti.org.bd/ (ইংরেজি ভাষায়)। দা ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেস। পৃষ্ঠা 3। ১৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ 
  5. Our Bureau। "Dhaka to contest India's GI claim over Jamdani sarees, Fazli mangoes | Business Line" (ইংরেজি ভাষায়)। Thehindubusinessline.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৪ 
  6. "ফজলি আমের জিআই সনদ পেল দুই জেলাই"যুগান্তর। ২০২২-০৫-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৩ 
  7. আলম, ফখরে। "আমপাঁচালি"। কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ 
  8. "নাম দিয়ে যায় চেনা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ 
  9. "আমের মৌতাতে সাহিত্যের স্মৃতিবিলাস"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬ 
  10. পাঠক, আশিস। "আমের মৌতাতে সাহিত্যের স্মৃতিবিলাস"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৬