প্রোটিয়াস (প্রাকৃতিক উপগ্রহ)

প্রোটিয়াস (ইংরেজি: Proteus; /ˈprtəs/) বা নেপচুন ৮ (ইংরেজি: Neptune VIII) হল নেপচুনের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ তথা বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ উপগ্রহ। ১৯৮৯ সালে ভয়েজার ২ মহাকাশযান কর্তৃক আবিষ্কৃত এই উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত রূপ-পরিবর্তনে সক্ষম সমুদ্রদেবতা প্রোটিয়াসের নামানুসারে।[১০] নেপচুনের নিরক্ষরেখার ব্যাসার্ধের থেকে প্রায় ৪.৭৫ গুণ বড়ো একটি প্রায় নিরক্ষীয় কক্ষপথে প্রোটিয়াস নেপচুনকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।[৩]

প্রোটিয়াস
ভয়েজার ২ থেকে গৃহীত প্রোটিয়াসের আলোকচিত্র (১৯৮৯)
আবিষ্কার
আবিষ্কারকভয়েজার ২
স্টিফেন পি. সিনট
আবিষ্কারের তারিখ১৬ জুন, ১৯৮৯
বিবরণ
উচ্চারণ/ˈprtəs/[১]
নামকরণের উৎসΠρωτεύς (প্রোটিয়াস) Prōteys
বিকল্প নামসমূহএস/১৯৮৯ এন ১
বিশেষণপ্রোটীয় (ইংরেজি: প্রোটিয়ান; Protean (/ˈprtən/ or /prˈtən/)[২])
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্য[৩]
যুগ ১৮ অগস্ট, ১৯৮৯
অনুসূর১৭৫৮৪±১০ কিমি
অপসূর১৭৭০৯±১০ কিমি
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ১৭৬৪৭±১ কিমি (৪.৭৫ আরএন)
উৎকেন্দ্রিকতা০.০০০৫৩±০.০০০০৯
কক্ষীয় পর্যায়কাল১.১২২৩১৪৭৭±০.০০০০০০০২ দিন
গড় কক্ষীয় দ্রুতি৭.৬২৩ কিমি/সেকেন্ড
নতি০.৫২৪° (নেপচুনের নিরক্ষরেখার প্রতি)
০.০২৬°±০.০০৭° (স্থানীয় লাপ্লাস সমতলের প্রতি)
যার উপগ্রহনেপচুন
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
মাত্রাসমূহ৪২৪ × ৩৯০ × ৩৯৬ কিমি[৪][ক]
গড় ব্যাসার্ধ২১০±৭ কিমি[৭]
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল৫৫৪,২০০ কিমি[৮]
আয়তন(৩.৪±০.৪)×১০ ঘন কিমি[৪]
ভর৪.৪×১০১৯ কিগ্রা (৭.৩৬৭২×১০−৬ পৃথিবী)[খ]
গড় ঘনত্ব≈ ১.৩ গ্রাম/ঘন সেমি (আনুমানিক)[৭]
বিষুবীয় পৃষ্ঠের অভিকর্ষটেমপ্লেট:Gr মিটার/বর্গ সেকেন্ড[গ]
মুক্তি বেগটেমপ্লেট:V2 কিমি/সে[ঘ]
ঘূর্ণনকালসমলয়[৪]
অক্ষীয় ঢালশূন্য[৪]
প্রতিফলন অনুপাত০.০৯৬[৭][৯]
তাপমাত্রা≈ ৫১ কেলভিন গড় (আনুমানিক)
আপাত মান১৯.৭[৭]

প্রোটিয়াস ৪০০ কিমি (২৫০ মা) ব্যাস-বিশিষ্ট প্রধানত একটি তুষারাবৃত বস্তু হলেও এটির আকার খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি উপগোলকের স্বাভাবিক মান থেকে চ্যূত।[৬] এটির আকার অনেকটি অনিয়তাকার বহুতলকের ন্যায়, যেটিতে বেস কয়েকটি অবতল পার্শ্ব ও খোদাই-এর অনুরূপ নকশা বিদ্যমান। এগুলির উচ্চতা সর্বাধিক ২০ কিমি (১২ মা)। উপগ্রহটির পৃষ্ঠভাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন, রং-নিরপেক্ষ ও ব্যাপক হারে অভিঘাত খাদে সমাকীর্ণ।[১১] এই অভিঘাত খাদগুলির মধ্যে বৃহত্তমটির নাম ফ্যারোজ, যার ব্যাস ২৩০ কিমি (১৪০ মা)-এরও বেশি। এছাড়াও উপগ্রহটিতে বড়ো বড়ো অভিঘাত খাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলি প্রবণভূমি, ফাটল ও উপত্যকাও দেখা যায়।

প্রোটিয়াস সম্ভবত নেপচুনের সঙ্গে উদ্ভূত কোনও আদি বস্তু নয়। পরবর্তীকালে নেপচুনের বৃহত্তম উপগ্রহ ট্রাইটন গ্রহটির মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা পড়ার সময় কোনও সংঘর্ষজাত আবর্জনা থেকেই এটির উৎপত্তি ঘটে থাকবে।[১২]

আবিষ্কার ও নামকরণ সম্পাদনা

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে গৃহীত নেপচুন ও প্রোটিয়াসের আলোকচিত্র

১৯৮৯ সালের অগস্ট মাসে নেপচুন ফ্লাইবাইয়ের দুই মাস আগে ভয়েজার ২ স্পেস প্রোবের তোলা ছবিগুলি থেকে প্রোটিয়াস আবিষ্কৃত হয়। ১৯৪৯ সালে নিয়ারিড আবিষ্কারের পর ৩৩ বছরে প্রোটিয়াসই ছিল প্রথম আবিষ্কৃত নেপচুনীয় উপগ্রহ।[১৩]

আবিষ্কারের পর প্রোটিয়াসের অস্থায়ী চিহ্নকরণ করা হয়েছিল এস/১৯৮৯ এন ১ (ইংরেজি: S/1989 N 1)।[১৪] ১৯৮৯ সালের ৭ জুলাই স্টিফেন পি. সিনটব্র্যাডফোর্ড এ. স্মিথ আবিষ্কারটির কথা ঘোষণা করার সময় "২১ দিনে তোলা ১৭টি ছবির" উল্লেখ করায় অনুমিত হয় যে ১৬ জুলাইয়ের আগেই উপগ্রহটি আবিষ্কৃত হয়েছিল।[১৫]

১৯৯১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত রূপ-পরিবর্তনে সক্ষম সমুদ্রদেবতা প্রোটিয়াসের নামানুসারে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয়।[১০]

কক্ষপথ সম্পাদনা

প্রোটিয়াস নেপচুনকে প্রায় ১,১৭,৬৪৭ কিমি (৭৩,১০২ মা) দূরত্ব থেকে প্রদক্ষিণ করে, যা নেপচুনের নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধের প্রায় ৪.৭৫ গুণের সমান। প্রোটিয়াসের কক্ষপথটি প্রায় বৃত্তাকার, কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা কম এবং নেপচুনের নিরক্ষরেখার প্রতি এটির নতি প্রায় ০.৫ ডিগ্রি।[৩] প্রোটিয়াস নেপচুনের সঙ্গে জোয়ারের বন্ধনে আবদ্ধ এবং নিজের কক্ষীয় গতির সঙ্গে সমলয়ে আবর্তন করে। এর অর্থ প্রোটিয়াসের একটি দিকই সর্বদা নেপচুনের দিকে মুখ করে থাকে।[৪]

প্রোটিয়াস লারিসার সঙ্গে সম্ভবত ১:২ কক্ষীয় অনুরণনে অবস্থান করছে, অর্থাৎ লারিসার দুই বার প্রদক্ষিণকালের মধ্যে প্রোটিয়াস একবার নেপচুনকে প্রদক্ষিণ করে। অতীতে প্রোটিয়াসের বহির্মুখী জোয়ার-সংক্রান্ত অভিপ্রয়াণের ফলে প্রোটিয়াস ও লারিসার মধ্যে কক্ষীয় অনুরণন আর কার্যকর নয়।[১৬] অতীতে কয়েকশো কোটি বছরেই সম্ভবত প্রোটিয়াসের সঙ্গে লারিসার অবিচ্ছেদ্য কক্ষীয় অনুরণনের সমাপ্তি ঘটেছে।[১৬][১৭]

ভৌত বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

প্রোটিয়াসের রঙিন-কৃত ভয়েজার ২ আলোকচিত্র

প্রোটিয়াস হল নেপচুনের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ তথা বৃহত্তম নিয়মিত অগ্রমুখী উপগ্রহ। এটির ব্যাস প্রায় ৪২০ কিমি (২৬০ মা)। পৃথিবী-ভিত্তিক দূরবীনগুলির দ্বারা এটিকে আবিষ্কার করা যায়নি, তার কারণ প্রোটিয়াস নেপচুনের এত কাছ থেকে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে যে প্রতিফলিত সূর্যালোকের তীব্রতায় তা ঢাকা পড়ে যায়।[১৪]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. In the earlier papers slightly different dimensions were reported. Thomas and Veverka in 1991 reported 440×416×404 km.[৪][৫] Croft in 1992 reported 430×424×410 km.[৬] The difference is caused by the use of different sets of images and by the fact that the shape of Proteus is not described well by a triaxial ellipsoid.[৪]
  2. The mass was calculated by multiplying the volume from Stooke (1994)[৪] by the assumed density of 1,300 kg/m3. If one uses slightly larger dimensions from the earlier papers the mass will increase to 5×১০১৯ kg.[৭]
  3. Surface gravity derived from the mass m, the gravitational constant G and the radius r: Gm/r2.
  4. Escape velocity derived from the mass m, the gravitational constant G and the radius r: টেমপ্লেট:Radical.

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. টেমপ্লেট:Lexico
  2. "Protean" অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস।  (Sসাবস্ক্রিপশন বা পার্টিশিপেটিং ইনস্টিটিউট মেম্বারশিপ প্রয়োজনীয়.)
  3. Jacobson, R. A.; Owen, W. M., Jr. (২০০৪)। "The orbits of the inner Neptunian satellites from Voyager, Earthbased, and Hubble Space Telescope observations"Astronomical Journal128 (3): 1412–1417। ডিওআই:10.1086/423037 বিবকোড:2004AJ....128.1412J 
  4. Stooke, Philip J. (১৯৯৪)। "The surfaces of Larissa and Proteus"Earth, Moon, and Planets65 (1): 31–54। ডিওআই:10.1007/BF00572198বিবকোড:1994EM&P...65...31S 
  5. Williams, Dr. David R. (২০০৮-০১-২২)। "Neptunian Satellite Fact Sheet"NASA (National Space Science Data Center)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১২ 
  6. Croft, S. (১৯৯২)। "Proteus: Geology, shape, and catastrophic destruction"। Icarus99 (2): 402–408। ডিওআই:10.1016/0019-1035(92)90156-2বিবকোড:1992Icar...99..402C 
  7. "Planetary Satellite Physical Parameters"JPL (Solar System Dynamics)। ২০১০-১০-১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  8. "Proteus By The Numbers"solarsystem.nasa.gov/। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০ 
  9. Karkoschka, Erich (২০০৩)। "Sizes, shapes, and albedos of the inner satellites of Neptune"। Icarus162 (2): 400–407। ডিওআই:10.1016/S0019-1035(03)00002-2বিবকোড:2003Icar..162..400K 
  10. Marsden, Brian G. (সেপ্টেম্বর ১৬, ১৯৯১)। "Satellites of Saturn and Neptune"IAU Circular5347। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২৪ 
  11. Dumas, Christophe; Smith, Bradford A.; Terrile, Richard J. (২০০৩)। "Hubble Space Telescope NICMOS Multiband Photometry of Proteus and Puck"The Astronomical Journal126 (2): 1080–1085। ডিওআই:10.1086/375909 বিবকোড:2003AJ....126.1080D 
  12. Goldreich, P.; Murray, N.; Longaretti, P. Y.; Banfield, D. (১৯৮৯)। "Neptune's story"। Science245 (4917): 500–504। ডিওআই:10.1126/science.245.4917.500পিএমআইডি 17750259বিবকোড:1989Sci...245..500G 
  13. "Proteus In Depth"। NASA Solar System Exporation। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৯ 
  14. Smith, B. A.; Soderblom, L. A.; Banfield, D.; Barnet, C.; Basilevsky, A. T.; Beebe, R. F.; Bollinger, K.; Boyce, J. M.; Brahic, A. (১৯৮৯)। "Voyager 2 at Neptune: Imaging Science Results" (পিডিএফ)Science246 (4936): 1422–1449। ডিওআই:10.1126/science.246.4936.1422পিএমআইডি 17755997বিবকোড:1989Sci...246.1422S 
  15. Green, Daniel W. E. (জুলাই ৭, ১৯৮৯)। "1989 N 1"IAU Circular4806। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-২৪ 
  16. Zhang, K.; Hamilton, D. P. (২০০৭)। "Orbital resonances in the inner Neptunian system: I. The 2:1 Proteus–Larissa mean-motion resonance"। Icarus188 (2): 386–399। ডিওআই:10.1016/j.icarus.2006.12.002বিবকোড:2007Icar..188..386Z 
  17. Zhang, K.; Hamilton, D. P. (২০০৮)। "Orbital resonances in the inner Neptunian system: II. Resonant history of Proteus, Larissa, Galatea, and Despina"। Icarus193 (1): 267–282। ডিওআই:10.1016/j.icarus.2007.08.024বিবকোড:2008Icar..193..267Z 

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "usgsPharos" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "BanfieldMurray1992" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Showalter2019" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা