প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান

প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান (initial singularity) ছিল একটি মহাকর্ষীয় অদ্বৈত অবস্থান যার ঘনত্ব ছিল অসীম এবং মনে করা হয় কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের কারণে মহাবিষ্ফোরণ ও পরবর্তিতে ঘটা দ্রুত প্রসারণের মাধ্যমে আজকের মহাবিশ্ব তৈরির পূর্বে[১] এটিতে মহাবিশ্বের সকল স্থান-কাল ও ভর বিদ্যমান ছিল।[২] প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থানের তাৎক্ষণিক পরবর্তি সময়েই প্লাংক যুগ শুরু হয়, যা মহাবিশ্বের ইতিহাসের সর্বপ্রথম যুগ ছিল।

মহাবিশ্বের ঐতিহ্যগত মডেলসমূহ সম্পাদনা

 
মহাবিষ্ফোরণের ঐতিহ্যগত মডেল

সাধারণ আপেক্ষিকতাকে ব্যবহার করে মহাবিশ্বের সূচনা সম্পর্কে ধারণা করা হয়। মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা নিয় আজকের সর্বোত্তম মডেলগুলো অনুসারে, মহাবিশ্বের শুরুতে মহাবিশ্বের সমস্ত ভর, শক্তি এবং স্থানকাল অসীম ঘনত্বের ঘনীভূত অবস্থায় ছিল, আর সেই অবস্থায় তার আকার মানুষের মাথার আকার থেকে একটি সুউচ্চ দালান সমৃদ্ধ শহরের সমান হতে হতে পারে।[৩] মহাবিশ্বের শুরুতে কী হয়েছিল তা অনুসন্ধান করার জন্য কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতার ব্যবহার অনেক সমালোচিত হয়েছে, কেননা প্রাথমিক মহাবিশ্বের উচ্চ-শক্তির পরিবেশের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হয়ে ওঠে, এবং কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতার ব্যবহার এক্ষেত্রে সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়।[১][৪] মহাবিষ্ফোরণের ঐতিহ্যগত মডেলে কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতা ব্যবহারজনিত ত্রুটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে মহাবিশ্বের উদ্ভবের বিকল্প তাত্ত্বিক মডেল তৈরি প্রস্তাব করা হয়েছে। এদের মধ্যে একটি হল স্ট্রিং তত্ত্ব-ভিত্তিক মডেল, যেখানে দুটো ব্রেন এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার ফলে ভর ও শক্তির সৃষ্টি হয়।[৫] ব্রেন হচ্ছে মহাবিশ্বের চেয়েও অনেক বড় ঝিল্লী।

প্রাথমিক অদ্বৈত অবস্থান বা আসল মহা বিষ্ফোরণ দেখা অসম্ভব, কারণ অদ্বৈত অবস্থানের মধ্যে স্থান ও কালের অস্তিত্ব থাকে না, তাই মহাবিষ্ফোরণের পূর্বে কোনভাবেই সেখান থেকে বিকিরণ নির্গত হতে পারবে না। যদিও অসীম ঘনত্বের অদ্বৈত অবস্থানের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, তবুও মহাবিশ্ব যে খুব উত্তপ্ত ও ঘন অবস্থা থেকে প্রসারিত হয়েছে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড হচ্ছে তার একটি প্রমাণ।[৬]

অদ্বৈত অবস্থানের বিকল্প সম্পাদনা

কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার ফলে মহাবিষ্ফোরণ কেন ঘটে এবং এর পূর্বে কী ছিল তা নিয়ে বিভিন্ন নতুন মডেল প্রস্তাব করা হয়। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি। এটি মহাবিশ্বের সূচনাকে বিগ বাউন্স এর সমাহার এর দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চায়, যেখানে কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের কারণে মহাবিশ্বের প্রসারণ ঘটে। এটি একই সাথে মহাবিশ্বের একটি চাক্রিক মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী দান করে। অর্থাৎ এটি অনুসারে পুরনো মহাবিশ্বের ধ্বংসের পর নতুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি হবে। আর এই প্রত্যেকটি নতুন মহাবিশ্বের ভৌত ধ্রুবকগুলো ভিন্ন হবে।[৪] এম-তত্ত্ব এবং মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) থেকে আসা আরেক ব্যাখ্যা অনুসারে মহাবিশ্ব আসলে বহু-মহাবিশ্ব বা মাল্টিভার্স এর অনেকগুলো মহাবিশ্বের মধ্যে একটি, এবং কোয়ান্টাম চাঞ্চল্যের ফলে আরেকটি মহাবিশ্ব থেকে আমাদের এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে। এই ব্যাখ্যাটি একটি মাত্র মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ধারণার বিরুদ্ধে।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wall, Mike (২১ অক্টোবর ২০১১)। "The Big Bang: What Really Happened at Our Universe's Birth?"The History & Future of the Cosmos। Space.com। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২ 
  2. Hawking, Stephen। "The Beginning of Time"। ৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Siegel, Ethan (৩১ মার্চ ২০১৭)। "How big was the Universe at the moment of its creation?"। Medium। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০১৯ 
  4. Penn State (২ জুলাই ২০০৭)। "What Happened Before The Big Bang?"। ScienceDaily। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২ 
  5. Lamb, Robert (১২ মে ২০১০)। "Branes, Crunches, and Other Big Ideas"What existed before the big bang?। HowStuffWorks। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২ 
  6. "What If the Big Bang Wasn't the Beginning? New Study Proposes Alternative"Space.com। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৮ 
  7. Atkinson, Nancy (১৩ জুন ২০০৮)। "Thinking About Time Before the Big Bang"Universe Today। Universe Today। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১২