প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবীদ

ড.প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ (২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১ - ১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ ) একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার মালিকান্দায় জন্ম।[১][২][৩][৪] পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনি স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।[৫] তিনি এরপর দুই বার নিয়ে মোট তিনবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ
১৯৪৭ সালে মহাকরণে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ
১ম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৪ জানুয়ারি ১৯৪৮
পূর্বসূরীহোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী (বাংলার প্রধানমন্ত্রী)
উত্তরসূরীবিধানচন্দ্র রায়
কাজের মেয়াদ
২ নভেম্বর ১৯৬৮ - ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮
পূর্বসূরীঅজয়কুমার মুখোপাধ্যায়
উত্তরসূরীরাষ্ট্রপতি শাসন
কাজের মেয়াদ
২ এপ্রিল ১৯৭১ — ২৮ জুন ১৯৭১
পূর্বসূরীরাষ্ট্রপতি শাসন
উত্তরসূরীরাষ্ট্রপতি শাসন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৮৯১-১২-২৪)২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১
ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার মালিকান্দায়
মৃত্যু১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩(1983-12-18) (বয়স ৯১)
জাতীয়তাভারতীয়
রাজনৈতিক দলপ্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট ফ্রন্ট
ধর্মহিন্দু

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম মালিকান্দার এক যাদব পরিবারে। পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মাতা বিনোদিনী দেবী ছিলেন গৃহিণী। তার মাতাপিতা দুজনেই ছিলেন সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ। প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনায় আগাগোড়া অত্যন্ত ভালো ফল করতেন এবং স্কলারশিপ পেতেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ রসায়নে স্নাতকপরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তেমনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯২০ সালে ডি.এসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। অল্পসময় অধ্যাপনা করেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। পরে তিনি কলকাতার টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার নিযুক্ত হন। এই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়।[৫]

স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পাদনা

১৯২১ সালে টাঁকশালের ডেপুটি এসেস মাস্টারের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। মোট আট বছর কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অভয় আশ্রম নির্মাণ করেন এবং ঢাকার বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহে যোগ দেন। প্রফুল্লচন্দ্র ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহে যোগ দেন।

সংসদীয় রাজনীতি সম্পাদনা

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রশাসন-কার্যের উৎকর্ষে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি দমনের চেষ্টা এবং দুর্নীতি রোধে অর্ডন্যান্স জারি করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দু-বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষারূপে পশ্চিমবঙ্গে প্রবর্তিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার উদ্যোগে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর রাজশেখর বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠিত হয়। সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে এবং তার প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথের জোড়াসাঁকোর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে অর্পণ করা হয়। কংগ্রেসের ঊর্ধতন মহলের সঙ্গে মতবিরোধে মন্ত্রীপদ থেকে সরে আসতে হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারি ডা.বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে কংগ্রেস দলের নেতা নির্বাচিত হন এবং পরিষদে কংগ্রেসি দলের সভায় ড.ঘোষের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। তিনি কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত কৃষক মজদুর প্রজা পার্টি-র সম্পাদক হন। এই দল পরে 'প্রজাসমাজতন্ত্রী দল'নাম হয়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহিষাদল থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আবার বিধানসভার সদস্য হন। প্রথম অ-কংগ্রেসি যুক্তফ্রন্ট সরকার অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত হলে, তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দেন কিন্তু ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর পদত্যাগ করে 'প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট'(পি. ডি.এফ) নামে এক নতুন ফ্রন্ট গঠন করেন। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২১শে নভেম্বর তার নেতৃত্বে পি.ডি.এফ মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করান। কিন্তু তিন মাস পরেই মন্ত্রী সভার পতন ঘটে।

শেষজীবন সম্পাদনা

আজীবন গান্ধীবাদী, অকৃতদার প্রফুল্লচন্দ্র শেষজীবন কাটিয়েছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়, শ্রীঅরবিন্দচর্চায় এবং গ্রন্থ রচনায়। তার রচিত গ্রন্থ হল -

  • ফ্রম নাগপুর টু লাহোর
  • ওয়েস্ট টু-ডে
  • প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস
  • বিজ্ঞানের কথা
  • জীবনস্মৃতি
  • মহাত্মা গান্ধী
  • জগৎগুরু বিবেকানন্দ
  • ঋষি অরবিন্দ

আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ওপেনহেইমার, অটো হান প্রমুখ বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে বহু যুগন্ধর ব্যক্তির তিনি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। সারা ভারত গ্রামীণ শিল্প পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন তিনি।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kantho, Kaler। "এবার মিস জাপান হলেন বাংলাদেশি কন্যা প্রিয়াঙ্কা - কালের কণ্ঠ" 
  2. "দোহারের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা হলেন মিস জাপান - daily nayadiganta"The Daily Nayadiganta 
  3. "আমাদের - Kaler Kantho"www.kalerkantho.com 
  4. "জাপানের সেরা সুন্দরী প্রিয়াংকা দোহারের ঘোষ পরিবারের মেয়ে - নগর-মহানগর - Jugantor"www.jugantor.com। ৮ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৮ 
  5. সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র (২০১০)। অঞ্জলি বসু, সম্পাদক। সংসদ বাঙ্গালি চরিতাভিধান। প্রথম খন্ড (পঞ্চম সংস্করণ সংস্করণ)। কলিকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪০৯ পৃঃ। আইএসবিএন 978-81-7955-135-6 
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
নতুন পদ
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
১৫ অগস্ট, ১৯৪৭ — ১৪ জানুয়ারি, ১৯৪৮
উত্তরসূরী
বিধানচন্দ্র রায়
পূর্বসূরী
অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
২ নভেম্বর ১৯৬৭ — ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮
উত্তরসূরী
রাষ্ট্রপতি শাসন
পূর্বসূরী
রাষ্ট্রপতি শাসন
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
২ এপ্রিল, ১৯৭১ — ২৮ জুন, ১৯৭১
উত্তরসূরী
রাষ্ট্রপতি শাসন