পেপটাইড হরমোন বা প্রোটিন হরমোন হলো বিশেষ ধরনের হরমোন যার অণুগুলো যথাক্রমে পেপটাইড বা প্রোটিন দিয়ে গঠিত। প্রোটিন হরমোনের অ্যামিনো অ্যাসিড শৃঙ্খলের দৈর্ঘ্য পেপটাইড হরমোনের চেয়ে বেশি। এই হরমোনগুলো মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীর অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে। [১] বেশিরভাগ হরমোনকে অ্যামিনো অ্যাসিড-ভিত্তিক হরমোন (অ্যামাইন, পেপটাইড বা প্রোটিন) বা স্টেরয়েড হরমোন হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। অ্যামিনো অ্যাসিড ভিত্তিক হরমোনগুলো পানিতে দ্রবণীয় এবং বার্তাবাহকের মাধ্যমে লক্ষ্য কোষের পৃষ্ঠে কাজ করে। অপরদিকে স্টেরয়েড হরমোনগুলো লিপিড-দ্রবণীয় হওয়ায় নিউক্লিয়াসের মধ্যে কাজ করার জন্য লক্ষ্য কোষের ( সাইটোপ্লাজমিক এবং নিউক্লিয়ার উভয়) প্লাজমা ঝিল্লির মধ্য দিয়ে চলাচল করে।

পেপটাইড এবং প্রোটিনের মতো, পেপটাইড হরমোন এবং প্রোটিন হরমোন এমআরএনএ ট্রান্সক্রিপ্ট অনুসারে অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে কোষে সংশ্লেষিত হয়। এমআরএনএ আবার নিউক্লিয়াসের ভিতরে ডিএনএ টেমপ্লেট থেকে সংশ্লেষিত হয়। প্রিপ্রোহরমোন হলো পেপটাইড হরমোনের পূর্বসূরি। তারপরে বিভিন্ন ধাপের প্রক্রিয়া শেষে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে এন-টার্মিনাল সিগন্যাল ক্রম অপসারণ এবং কখনও কখনও গ্লাইকোসাইলেশন হয়। ফলে প্রিপ্রোহরমোন প্রোহরমোনে পরিনত হয়। প্রোহরমোনগুলো তারপরে ঝিল্লি-বাউন্ড সিক্রেটরি ভেসিকেলে আবদ্ধ হয়। যা নির্দিষ্ট উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে এক্সোসাইটোসিস দ্বারা কোষ থেকে নিঃসৃত হতে পারে (যেমন, সাইটোপ্লাজমে Ca 2+ এবং cAMP এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে)। [২]

এই প্রোহরমোনগুলোতে প্রায়শই অতিরিক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডের অবশিষ্টাংশ থাকে, যা হরমোন অণুকে তার সক্রিয় কনফিগারেশনে ভাঁজ করার জন্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হরমোন ভাঁজ হয়ে যাওয়ার পরে কোনও কাজ করে না। এজন্য কোষের নির্দিষ্ট এন্ডোপেপটাইডেজ রক্তের প্রবাহে নির্গত হওয়ার ঠিক আগে প্রোহরমোনকে বিচ্ছিন্ন করে এবং অণুর পরিপক্ক হরমোন ফর্ম তৈরি করে। পরিপক্ক পেপটাইড হরমোনগুলো তারপর রক্তের মাধ্যমে শরীরের সমস্ত কোষে ভ্রমণ করে, যেখানে তারা তাদের লক্ষ্য কোষগুলোর পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট রিসেপ্টরগুলোর সাথে যোগাযোগ করে।

কিছু নিউরোট্রান্সমিটার পেপটাইড হরমোনের অনুরূপভাবে নিঃসৃত ও নির্গত হয়, এবং কিছু " নিউরোপেপটাইড " স্নায়ুতন্ত্রে নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে ব্যবহৃত হবার পাশাপাশি রক্তে নির্গত হলে হরমোন হিসাবেও কাজ করে।

যখন একটি পেপটাইড হরমোন কোষের পৃষ্ঠের একটি রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়, তখন সাইটোপ্লাজমে একটি দ্বিতীয় বার্তাবাহক উপস্থিত হয়, যা কোষের প্রতিক্রিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া সংকেতকে ট্রান্সডাকশন ট্রিগার করে। [৩]

কিছু পেপটাইড/ প্রোটিন হরমোন ( এনজিওটেনসিন II, বেসিক ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর -2, প্যারাথাইরয়েড হরমোন-সম্পর্কিত প্রোটিন ) একটি ইন্ট্রাক্রাইন প্রক্রিয়া দ্বারা সাইটোপ্লাজম বা নিউক্লিয়াসে অবস্থিত আন্তঃকোষীয় রিসেপ্টরের সাথে যোগাযোগ করে। [৪]

মানবদেহে প্রাপ্ত পেপটাইড হরমোনের তালিকা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা