পূর্ব জেরুসালেম

পশ্চিম তীর ও জর্দানীয় পূর্ব জেরুসালেমের অংশবিশেষ যা ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইসরায়েলের দখলে বি

পূর্ব জেরুসালেম (আরবি: القدس الشرقية, আল-কুদস আল-শার্কিত; হিব্রু ভাষায়: מִזְרַח יְרוּשָׁלַיִם‎, Mizraḥ Yerushalayim) মধ্যপ্রাচ্যের জেরুসালেম নগরীর পূর্বভাগের একটি অংশ যা ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় জর্দান দ্বারা অধিকৃত ছিল। এর বিপরীতে নগরীর পশ্চিমভাগ, যার অপর নাম পশ্চিম জেরুসালেম, ইসরায়েলের অধিকারে ছিল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব জেরুসালেমকে ইসরায়েলি অধিকৃত ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।

ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন সমগ্র জেরসালেম পৌর এলাকা, যাতে সবুজ অংশটি পূর্ব জেরুসালেম নির্দেশ করছে।
পূর্ব জেরুসালেমের একটি মানচিত্র, আরব অধ্যুষিত এলাকাগুলি সবুজ রঙে এবং ইহুদি অধ্যুষিত এলাকাগুলি নীল রঙে চিহ্নিত।

পূর্ব জেরুসালেম এলাকাটিতে জেরুসালেমের পুরাতন শহর এবং ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্মইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র কয়েকটি স্থান অবস্থিত, যাদের মধ্যে রয়েছে হারাম আল শরিফ, পশ্চিম প্রাচীর, আল-আকসা মসজিদ, শিলার গম্বুজ এবং যিশুর পূণ্যসমাধি গির্জা

নামে পূর্ব জেরুসালেম হলেও পূর্ব জেরুসালেমে পুরাতন শহরের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্ত। পূর্ব জেরুসালেমের অপেক্ষাকৃত ব্যাপকতর সংজ্ঞা গণনায় ধরলে এটি পশ্চিম জেরুসালেমের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণেও প্রসারিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ গণ্য করে, কিন্তু ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের এই ব্যাখ্যার বিরোধিতা করেছে।

১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় জর্দান ও ইসরায়েলের মধ্যে জেরুসালেমের কর্তৃত্ব নিয়ে সংঘাত হয়েছিল। যুদ্ধশেষে দেশ দুইটি গোপনে নগরীটিকে বিভক্ত করার ব্যাপারে একটি রফা করে, যেখানে এর পূর্ব অংশটি জর্দানের শাসনাধীন এলাকায় পরিণত হয়। ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে স্বাক্ষরিত ১৯৪৯-এর যুদ্ধবিরতি চুক্তিসমূহের (রোডস চুক্তি) এই ব্যবস্থাটি বিধিবদ্ধ রূপ পায়।[১][ক]

ইসরায়েলি নেতা দাভিদ বেন গুরিয়ন ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এই বিবৃতি দেন যে "ইহুদি জেরুসালেম ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অঙ্গীভূত, অবিচ্ছেদ্য অংশ"।[৩] এর পরের বছর জর্দান পূর্ব জেরুসালেমকে অঙ্গীভূত করে নেয়।[৪][৫] এই সিদ্ধান্তগুলি ইসরায়েলি আইনসভা ক্নে‌সেতে ১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে এবং জর্দানের আইনসভা সংসদে ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে নিশ্চিত করা হয়।[৬] ১৯৬৭ সালের ছয়-দিনের যুদ্ধশেষে পূর্ব জেরুসালেম বর্ধিত সীমানাসহ ইসরায়েলের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীনে চলে আসে।

ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও) ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ঘোষণাতে বলে যে জেরুসালেম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী। ২০০০ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জেরুসালেমকে রাজধানী ঘোষণা দিয়ে একটি আইন পাস করে। ২০০২ সালে ফিলিস্তিনের প্রধান ইয়াসির আরাফাত এই আইনটি অনুমোদন করেন। তখন থেকে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেমে পিএলও-র সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কার্যালয় ও বেসরকারী সংস্থাকে বন্ধ করে দেয় এবং বলে যে অসলো চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের পূর্ব জেরুসালেমে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অনুমতি নেই।[খ] ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসি ২০১৭ সালের ১৩ই ডিসেম্বর পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।[৮]

২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন রাষ্ট্রপতি হবার পরে পূর্ব জেরুসালেমে ইসরায়েলি বসতি বা ভবন নির্মাণের অনুমতির বার্ষিক সংখ্যা প্রায় ৬০% বৃদ্ধি পায়। ১৯৯১ সাল থেকে পূর্ব জেরুসালেমের সংখ্যাগরিষ্ঠ ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় কেবলমাত্র ৩০% নতুন ভবন নির্মানের অনুমতি লাভ করেছে।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Hasson 2000, পৃ. 15–24।
  2. Korman 1996, পৃ. 251।
  3. Hulme 2006, পৃ. 94।
  4. Klein 2001, পৃ. 51।
  5. Dumper 1997, পৃ. 33।
  6. Korman 1996, পৃ. 251,n.5।
  7. Hirbawi ও Helfand 2011
  8. OIC 2017
  9. "New data shows Israeli settlement surge in east Jerusalem"Ynetnews (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১২-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৪ 

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি সম্পাদনা


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি