পিরামিড

জ্যামিতিক পিরামিড আকৃতির মতো অবকাঠামো

পিরামিড (Pyramid) হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা গঠন যার বাইরের তলগুলো ত্রিভুজাকার (Triangular) এবং যারা শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। পিরামিড একটি বহুভূজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত। বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলো প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার, তাকে পিরামিড বলে। পিরামিডের ভূমি যেকোনো আকারের বহুভূজ (Polygon) হতে পারে এবং এর পার্শ্বতলগুলো যেকোনো আকারের ত্রিভূজ (Triangle) হতে পারে। একটি পিরামিডের কমপক্ষে তিনটি ত্রিভূজাকার পার্শ্বতল (Triangular outer surfaces) থাকে, অর্থাৎ পিরামিডের ভূমিসহ কমপক্ষে চারটি তল থাকে। বর্গাকার পিরামিড (Square Pyramid) হলো এমন একটি পিরামিড যা একটি বর্গাকার ভূমির উপর অবস্থিত এবং যার চারটি ত্রিভুজাকার পার্শ্বতল আছে। এই ধরনের পিরামিডের বহুল ব্যবহার আছে।

খুফু'র পিরামিড
আকাশ থেকে দেখা মিশরীয় গিজার পিরামিড
চাঁদের পিরামিড, তিওতিহুয়াকান
জাভা,ইন্দোনেশিয়ার ক্যান্ডি সুকুহ
কোহ কের,ক্যাম্বোডিয়াতে অবস্থিত প্রসাদ থম মন্দির


পিরামিডের ডিজাইন এমনভাবে করা হয় যেন এর বেশি ওজন ভূমির নিকটে থাকে, ফলে এর আয়তনকেন্দ্র (Centre of volume) শীর্ষ হতে লম্ব দূরত্বের এক-চতুর্থাংশে অবস্থিত।

পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফিরাউনরা (প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা রাজাদের ফিরাউন (Pharaoh) বলা হতো)। তাদেরকে কবর বা সমাধী দেয়ার জন্যই পিরামিড নির্মান করা হতো। মিশরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত। চার হাজারের বছরের পুরানো এক সমাধিতে অঙ্কিত এক চিত্রে দেখা যায় এক বিশাল স্তম্ভকে স্লেজে করে সরানো হচ্ছে; অনেক মানুষ রশি দিয়ে সেই স্লেজ টেনে নিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে একজন পাত্র থেকে জল ঢালছে বালির উপরে। এতে ঘর্ষণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আড়াই টন ওজনের এক একটা ব্লক।[১]

পিরামিড সম্পর্কিত কতিপয় সংজ্ঞা সম্পাদনা

পিরামিড সম্পাদনা

কোনো বহুভূজের উপর অবস্থিত যে ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্বতলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার তাকে পিরামিড (Pyramid) বলে।

সুষম পিরামিড সম্পাদনা

যে পিরামিডের ভূমি সুষম বহুভূজ এবং পার্শ্বতলগুলো সর্বসম ত্রিভুজ তাকে সুষম পিরামিড বলে।

পিরামিডের ভূমি সম্পাদনা

যে বহুভূজের উপর পিরামিড অবস্থিত, তাকে পিরামিডের ভূমি (Ground/Base) বলে।

পিরামিডের পার্শ্বতল সম্পাদনা

পিরামিডের ভূমি ব্যতীত একটি বিন্দুতে মিলিত অন্যান্য ত্রিভূজাকার তলগুলোকে পিরামিডের একটি পার্শ্বতল (Outer Surface) বলে।

পিরামিডের ধার সম্পাদনা

পিরামিডের দুইটি সন্নিহিত তল অর্থাৎ দুইটি পার্শ্বতল অথবা একটি পার্শ্বতল ও ভুমি যে রেখায় মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের একটি ধার (Edges) বলে। আবার, পিরামিডের শীর্ষবিন্দু ও ভূমির যেকোনো কৌণিক বিন্দুর সংযোজক সরলরেখাকে পিরামিডের ধার বলে।

পিরামিডের শীর্ষবিন্দু সম্পাদনা

পিরামিডের পার্শ্বতলগুলো যে একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের শীর্ষবিন্দু (Vertex) বলে।

পিরামিডের উচ্চতা সম্পাদনা

পিরামিডের শীর্ষ হতে ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বদৈর্ঘ্যকে পিরামিডের উচ্চতা (Height) বলে।

প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ সম্পাদনা

মেসোপটেমিয়া সম্পাদনা

 
চোঘা যানবিল একটি প্রাচীন এলামাইট কমপ্লেক্স যা ইরান এর খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত।

মেসোপটেমিয়ার অধিবাসীরা সর্বপ্রথম পিরামিড আকৃতির স্থাপনা তৈরি করেছিল। এদের জিগুরাত নামে ডাকা হত। প্রাচীনকালে এদের উজ্জল সোনালি/তামাটে রঙ করা হত। যেহেতু এদের রোদে শুকানো কাদামাটির ইট দিয়ে তৈরী করা হত, এদের খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। স্থানীয় ধর্মের জন্য সুমেরইয়, ব্যাবিলনইয়ান,এলামাইট,আক্কাদীয় এবং আসিরীয়ানরা জিগুরাত বানাত। প্রতিটি জিগুরাত একটি মন্দির কমপ্লেক্সের অন্তর্গত ছিল যেখানে অন্যান্য স্থাপনাও থাকত। জিগুরাতের পূর্বসুরী উত্তোলিত মাচা যা চার হাজার খ্রিস্টপূর্বের উবাইদ আমল থেকে বিদ্যমান[২]। সবচেয়ে প্রাচীন জিগুরাতগুলো নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রাথমিক সুমেরীয় সভ্যতার শেষ দিকে। আর সর্বশেষ মেসোপটেমিয়ান জিগুরাত ৬ষ্ঠ খ্রিস্টপূর্বের।

বর্গাকার,ডিম্বাকার অথবা আয়তাকার ভিত্তির উপর ক্রমহ্রাসমান স্তরে স্তরে তৈরী জিগুরাত ছিল একটি পিরামিড আকৃতির স্থাপনা, যার চূড়া ছিল সমতল। জিগুরাত এর কেন্দ্র হত রোদে পোড়ানো ইটের তৈরি, আর এর সম্মুখভাগ ছিল আগুনে পোড়া ইট মোড়ানো। এদের সম্মুখভাগ প্রায়ই বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকত, যা জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করত। মাঝে মাঝে রাজারা তাঁদের নাম এসব রাঙানো ইটে নিজেদের নাম অঙ্কন করে রাখতেন। স্তরের সংখ্যা দুই থেকে সাতের মাঝে উঠা নামা করত। এটা ধরে নেওয়া হয় যে এদের চুড়ায় মন্দির থাকত। কিন্তু এর পক্ষে কোন ভূতাত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় না এবং একমাত্র লিখিত প্রমাণ হচ্ছে হেরোডোটাস[৩]। মন্দিরে প্রবেশ করার পথ ছিল জিগুরাতের এক পাশে সারি সারি সিঁড়ি অথবা এর চারদিক ঘেরা সর্পিল সিঁড়ি যা তলদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত বিস্তৃত থাকত। মেসোপটেমিয়ান জিগুরাত সাধারণ মানুষের উপাসনা বা অনুষ্ঠানের জায়গা ছিল না। এদের ঐশ্বরিক বাসস্থান হিসেবে মানা হত এবং প্রতিটি নগরের নিজস্ব ঈশ্বর ছিলেন। কেবল পুরোহিতরা জিগুরাতের উপরে বা এর তলদেশের ঘরসমূহে প্রবেশ করতে পারত কারণ ঈশ্বরদের দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত ছিল। সুমেরীয় সভ্যতায় পুরোহিতরা বেশ প্রভাবশালী সদস্য ছিল।

মিশর সম্পাদনা

পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো মিশরে অবস্থিত। এগুলো ইট বা পাথরের তৈরি বিশাল স্থাপনা, যার মাঝে কিছু কিছু বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থাপনা হিসেবে পরিগণিত। প্রাচীন মিশরীয়রা ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পিরামিড তৈরি করেছিল। ফারাও জোসার এবং তার স্থপতি ইমহোটেপ তৃতীয় রাজবংশের সময় প্রথম পিরামিডটি নির্মাণ করেছিলেন। শেষ রাজকীয় পিরামিড নির্মাণ করেন রাজা আহমোস। ছোট পিরামিডগুলি নুবিয়ানদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল যারা শেষ যুগে মিশর শাসন করেছিল।

গিজার গ্রেট পিরামিডটি মিশরের বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। প্রাচীন মিশরীয় পিরামিডগুলি, নীল নদের পশ্চিমে স্থাপন করা হত কারণ ঐশ্বরিক ফেরাউনের আত্মা সূর্যের সাথে মিলিত হওয়া বোঝানো হত। ২০০০ সাল পর্যন্ত, মিশরে প্রায় ১৩৫টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে,বেশিরভাগই কায়রোর কাছে অবস্থিত।

সুদান সম্পাদনা

 
Archaeological Sites of the Island of Meroe-114973

সুদানে ২২০টি পিরামিড রয়েছে, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। [৪]নাপাতা এবং মেরোয়ের রাজা ও রাণীদের সমাধি হিসেবে সুদানের তিনটি স্থানে নুবিয়ান পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল। কুশের পিরামিড, নুবিয়ান পিরামিড নামেও পরিচিত। মিশরীয় পিরামিডগুলির তুলনায় নুবিয়ান পিরামিডগুলি খাড়া। পিরামিডগুলি সুদানে ২০০ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে নির্মিত হয় ।

সাহেল সম্পাদনা

মালির সোনহাই সাম্রাজ্যের অন্যতম সম্রাট আসকিয়া মোহাম্মদ প্রথম-এর সমাধিস্থল পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে নির্মিত হয়েছিল। ইউনেস্কো সমাধিটিকে পশ্চিম আফ্রিকান সাহেলের স্মৃতিস্তম্ভের ঐতিহ্যের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পিরামিডাল সমাধি, দুটি মসজিদ, একটি কবরস্থান এবং একটি সমাবেশের মাঠ।

নাইজেরিয়া সম্পাদনা

নুসুডে পিরামিড, নাইজেরিয়ার উত্তর ইগবোল্যান্ডে, দশটি পিরামিডাল কাঠামো দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। প্রথম বেস অংশের পরিধি ছিল ৬০ ফুট এবং উচ্চতা ৩ ফুট । পরবর্তী স্ট্যাকের পরিধি ছিল ৪৫ ফুট। বৃত্তাকার স্ট্যাক শীর্ষে অব্যাহত. স্থাপনাগুলো ছিল দেবতা আলার মন্দির।[৫]

ইউরোপ সম্পাদনা

গ্রীস সম্পাদনা

 
Elliniko Piramid - panoramio

২য় শতক খ্রিস্টাব্দ পসানিয়াস, পিরামিডের মতো দুটি ভবনের কথা উল্লেখ করেন, একটি হেলেনিকনে সংগ্রামে মারা যাওয়া সৈন্যদের জন্য একটি সাধারণ সমাধি এবং আরেকটি ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৯ সালের দিকে একটি যুদ্ধে নিহত আর্গিভসের সমাধি। অধ্যয়নের জন্য দুটি পিরামিড-সদৃশ কাঠামো টিকে আছে। একটি হেলেনিকনে এবং অন্যটি লিগোরিও/লিগুরিওতে। এই ভবনগুলির অভ্যন্তরীণ ঢালু দেয়াল রয়েছে, তবে মিশরীয় পিরামিডগুলির সাথে অন্য কোন সাদৃশ্য নেই। হেলেনিকন কাঠামো বর্গক্ষেত্রের পরিবর্তে আয়তক্ষেত্রাকার, যার মানে হল যে পক্ষগুলি একটি বিন্দুতে মিলিত হতে পারত না।[৬] এই স্থাপনাগুলি তৈরি করতে ব্যবহৃত পাথর স্থানীয়ভাবে উত্তোলন করা হয়েছিল এবং ফিট করার জন্য কাটা হয়েছিল, গিজার গ্রেট পিরামিডের মতো ফ্রিস্ট্যান্ডিং ব্লক নয় ।

স্পেন সম্পাদনা

 
গুইমার এর পিরামিড, টেনেরিফ (স্পেন)

গুইমারের পিরামিড ছয়টি আয়তাকার পিরামিড-আকৃতির, সোপানযুক্ত কাঠামো, মর্টার ছাড়া লাভা থেকে নির্মিত। এগুলি ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের টেনেরিফ দ্বীপের গুইমার শহরের চাকোনা জেলায় অবস্থিত। কাঠামোগুলি ১৯ শতকের এবং সমসাময়িক কৃষি কৌশলগুলির একটি উপজাত হিসাবে তৈরি।

গুইমারে নয়টি পিরামিড ছিল, যার মধ্যে মাত্র ছয়টি টিকে আছে।

রোমান সাম্রাজ্য সম্পাদনা

 
Pyramid of cestius

সেসিয়াসের ২৭-মিটার-উচ্চ পিরামিডটি খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীর শেষের দিকে পোর্টা সান পাওলোর কাছাকাছি নির্মিত হয়েছিল।[৭]

মধ্যযুগীয় ইউরোপ সম্পাদনা

সামন্ত যুগে খ্রিস্টান স্থাপত্যে মাঝে মাঝে পিরামিড ব্যবহৃত হত, যেমন সান সালভাদরের ওভিডোর গথিক ক্যাথিড্রালের টাওয়ার হিসাবে।

আমেরিকা সম্পাদনা

পেরু সম্পাদনা

আন্দিয়ান সংস্কৃতিগুলি বিভিন্ন স্থাপত্য কাঠামোতে পিরামিড ব্যবহার করত যেমন ক্যারাল, তুকুমে এবং শ্যাভিন দে হুয়ান্টার, যা প্রথম দিকের মিশরীয় পিরামিডগুলির মতো একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল।

মেসোআমেরিকা সম্পাদনা

 
Chichen Itza 3

চিচেন ইতজায় বেশ কিছু মেসোআমেরিকান সংস্কৃতি পিরামিড-আকৃতির কাঠামো তৈরি করেছে। মেসোআমেরিকান পিরামিডগুলি সাধারণত ধাপে ধাপে ছিল, যার উপরে মন্দিরগুলি ছিল, মিশরীয় পিরামিডের তুলনায় মেসোপটেমিয়ান জিগুরাটের সাথে বেশি মিল রয়েছে।

আয়তনের দিক থেকে বৃহত্তমটি হল মেক্সিকান রাজ্য পুয়েব্লাতে অবস্থিত চোলুলার গ্রেট পিরামিড। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে 9ম শতাব্দী পর্যন্ত নির্মিত, এই পিরামিডটি বিশ্বের বৃহত্তম স্মৃতিস্তম্ভ এবং এখনও পুরোপুরি খনন করা হয়নি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পিরামিড, সূর্যের পিরামিড, টিওটিহুয়াকানে, এছাড়াও মেক্সিকোতে অবস্থিত। গুয়াচিমনটোনস নামে বেশ কয়েকটি বৃত্তাকার ধাপযুক্ত পিরামিড টিকে আছে জালিস্কোর টেউচিটলানে।

মেক্সিকোতে পিরামিড প্রায়ই মানুষের বলিদানের জন্য ব্যবহৃত হত।

যুক্তরাষ্ট্র সম্পাদনা

প্রাচীন উত্তর আমেরিকার অনেক প্রাক-কলম্বিয়ান নেটিভ আমেরিকান সমাজ প্ল্যাটফর্ম মাউন্ড নামে পরিচিত বড় পিরামিডাল মাটির কাঠামো তৈরি করেছিল। এই স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক পরিচিত হল কাহোকিয়াতে অবস্থিত মঙ্কস মাউন্ড যা , যা ১১০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সম্পন্ন হয়েছিল। এর গ্রেট পিরামিডের চেয়ে বড় একটি ভিত্তি আছে।

এশিয়া সম্পাদনা

চীনা পিরামিড সম্পাদনা

প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং কে (২২১ BC) আধুনিক দিনের শিয়ানের বাইরে একটি বড় ঢিবির নিচে সমাহিত করা হয়েছিল। পরবর্তী শতাব্দীতে প্রায় এক ডজন হান রাজবংশের রাজপরিবারের সদস্যদেরও মাটির সমতল-শীর্ষ পিরামিডর নীচে সমাহিত করা হয়েছিল।

ভারত সম্পাদনা

চোল সাম্রাজ্যের সময় দক্ষিণ ভারতে অসংখ্য পিরামিড আকারের মন্দির তৈরি করা হয়েছিল, যার মধ্যে অনেকগুলি এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। থাঞ্জাভুরের বৃহদিশ্বর মন্দির, গঙ্গাইকোন্ডা চোলাপুরমের বৃহদিশ্বর মন্দির এবং দারাসুরামের এরাবতেশ্বর মন্দির। থাঞ্জাভুর মন্দিরটি ১১ শতকে রাজা রাজা চোল দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। [৮]১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বৃহদিশ্বর মন্দিরকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়

আত্মার বাসস্থান সম্পাদনা

প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। কাজেই পরবর্তী জীবনে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, জীবনটাকে যাতে উপভোগ করা যায়, সে চিন্তায় মিশরীয়রা অস্থির থাকতো। ব্যক্তির গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে গুরুত্ব আরোপ করা হতো এ ব্যাপারে। ব্যক্তি যতো গুরুত্বপূর্ণ হতো এ কাজে গুরুত্ব ততো বেশি বেড়ে যেতো। পরবর্তী জীবনের আরাম-আয়েশের জন্য স্বভাবতই ফারাওদের ব্যাপারেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। ক্ষমতায় আসা নতুন ফারাওয়ের প্রথম কাজ সম্পন্ন করা। প্রত্যেকেই চাইতেন বিশাল আয়তনের হোক তার সমাধিক্ষেত্র। অনেকেই মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সমাধিক্ষেত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যেত। এসব সমাধিক্ষেত্র আসলে মৃতের আত্মার ঘর। মিশরীয়রা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। এ কারণেই মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করতো তারা। আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিস। তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সাথে দিয়ে দিতো তারা। সমাধিস্তম্ভ প্রধানের দায়িত্ব ছিলো দস্যুদের হাত থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করার। কিন্তু কবরে সমাধিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ বিত্ত আর ক্ষমতাবান ছিল তা জাহিরের উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হতো পিরামিড। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সাথে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধন-সম্পদ। সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবানসামগ্রী দেয়া হতো। এমনকি, নিন্মশ্রেণীর মানুষদের কবরেও সামান্য পরিমাণ হলেও কিছু খাবার রেখে দেয়া হতো।[৯]

ছবির গ্যালারী সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Mark Lehner (2008). The Complete Pyramids: Solving the Ancient Mysteries. p. 34."। Thames & Hudson।
  2. Crawford, page 73
  3. Crawford, page 85
  4. Pollard, Lawrence (২০০৪-০৯-০৯)। "Sudan's past uncovered"BBC News। ২০২০-০৭-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১২ 
  5. Basden, G. S(1966). Among the Ibos of Nigeria, 1912. Psychology Press: p. 109, ISBN 0-7146-1633-8
  6. Mary Lefkowitz (২০০৬)। "Archaeology and the politics of origins"। Garrett G. Fagan। Archaeological Fantasies: How Pseudoarchaeology Misrepresents the Past and Misleads the Public। Routledge। পৃষ্ঠা 189–190। আইএসবিএন 978-0-415-30593-8 
  7. Lacovara, Peter (২০১৮)। "Pyramids and Obelisks Beyond Egypt"Aegyptiaca (2): 124–129। ডিওআই:10.11588/aegyp.2018.2.48018। ১৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৯ 
  8. "EVALUATIONS OF CULTURAL PROPERTIES" (পিডিএফ)Whc.unesco.org। ৩ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০২২ .
  9. Michael Ritter (2003) [১] Dating the Pyramids. Retrieved 13 April 2005

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা