পান্না কোকিল

পাখির প্রজাতি

পান্না কোকিল (বৈজ্ঞানিক নাম: Chrysococcyx maculatus), এশীয় শ্যামাপাপিয়া, এশীয় সবুজাভ কোকিল বা শ্যামা পাপিয়া কোকিল (কুকুলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Chrysococcyx (ক্রাইসোকক্কিজ) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির সবুজ পাখি।[২][৩][৪] পান্না কোকিলের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ তিলা সোনাপাপিয়া (গ্রিক; khrusos = সোনা, cuculus = পাপিয়া; লাতিন: maculatus = তিলাযুক্ত)।[২][৪] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক প্রায় ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[৫] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থির রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।[৪]

পান্না কোকিল
Chrysococcyx maculatus
স্ত্রী কোকিল
পুরুষ কোকিল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Cuculiformes
পরিবার: Cuculidae
গণ: Chrysococcyx
প্রজাতি: C. maculatus
দ্বিপদী নাম
Chrysococcyx maculatus
(Gmelin, 1788)

বিস্তৃতি সম্পাদনা

হিমালয়ের গাড়ওয়ালের পূর্বাঞ্চল থেকে নেপাল হয়ে আসাম, মণিপুর, বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বত, দক্ষিণ চীন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও মধ্য ভিয়েতনাম এদের মূল আবাস। শীতকালে বাংলাদেশ, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, মালয় উপদ্বীপসুমাত্রায় পরিযান করে।[৬]

আকার সম্পাদনা

 
নারী পান্না কোকিল

পান্না কোকিল লম্বায় মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার।[২] এর ডানা কমবেশি ১১ সেমি, ঠোঁট ১.৫ সেমি, পা ১.৫ সেমি ও লেজ ৬.৭ সেমি।[৪] স্ত্রী ও পুরুষের রঙে ভিন্নতা রয়েছে। পুরুষের পিঠের ওপরটা চকচকে পান্না-সবুজ, তাতে সোনালি-ব্রোঞ্জ আভা। থুতনি, গলা ও বুকেও তাই। বুক-পেটের নিচটা সাদা, তার ওপর ধাতব ব্রোঞ্জ-সবুজ ডোরা। লেজের নিচটা ধাতব সবুজ, তাতে সাদা ডোরা। স্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ের পেছনটা সোনালি লাল। পিঠের পালকের রং ব্রোঞ্জ-সবুজ। গলা-বুক-পেটে সাদার ওপর বাদামি-ব্রোঞ্জ ডোরা। লেজে খয়েরি-কালো ডোরা, ডগা সাদা। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখির চোখ ও চোখের পাতা গাঢ় লাল। ঠোঁট কমলা-হলুদ, আগা কালো। পা ও পায়ের পাতা গাঢ় বাদামি-সবুজ।[২] অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে স্ত্রীপাখির মতোই, কেবল কাঁধ-ঢাকনি ও ডানায় লালচে-কমলা ডোরা থাকে। এছাড়া মাথার চাঁদিতেও ডোরা দেখা যায়। যুবা পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছন দিক পান্না-সবুজ রঙের। এছাড়া বাকিসব স্ত্রীপাখির মত।[৪]

খাদ্য সম্পাদনা

পান্না কোকিল সাধারণত পিঁপড়া, শুঁয়োপোকা, ছারপোকা ও নরম পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে।[২]

স্বভাব সম্পাদনা

পান্না কোকিল প্রধানত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। তবে নিচু ভূমি, হালকা বন, পাহাড়ঘেরা বাগান ও পাহাড়ের ১৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। এরা একাকী, জোড়ায় বা চার-ছয়টির দলে বিচরণ করে। গাছের মগডালে পাতার আচ্ছাদনে লুকিয়ে থাকে, তাই সহজে দেখা যায় না।[২] গাছের মগডাল থেকে বাতাসে ভেসে শিকার ধরে।[৪]

প্রজনন সম্পাদনা

এপ্রিল-জুলাই মাস এর প্রজনন ঋতু। প্রজননের সময় পুরুষ পাখি দিনভর চিরর্-চিরর্-চিরর্... স্বরে ডাকে। স্ত্রী কোকিল চুপিসারে মৌটুসি বা মাকড়মারের বাসায় ডিম পাড়ে। অনেকসময় এরা পোষকের বাসার ক্ষুদে প্রবেশপথেও ডিম পেড়ে রাখে। সাদা রঙের ডিমগুলোয় বাদামি বা লালচে ছিট থাকে।[২] ডিমের মাপ ১.৬ × ১.২ সেমি।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Chrysococcyx maculatus"। Home Page The IUCN Red List of Threatened Species। ২০১৩-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১০  line feed character in |প্রকাশক= at position 10 (সাহায্য)
  2. আ ন ম আমিনুর রহমান (০৫-০৭-২০১৩)। "বিরল পান্না কোকিলের সন্ধানে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৩  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ৬৪। আইএসবিএন 9840746901 
  4. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৯৪। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  5. "Asian Emerald Cuckoo Chrysococcyx maculatus"। BirdLife International। ২০১৫-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১২ 
  6. "Asian Emerald Cuckoo (Chrysococcyx maculatus)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা