পাকিস্তানি বাঙালি

পাকিস্তানের ঐ সমস্ত নাগরিকদের বুঝায়, যারা জাতিগতভাবে বাঙালি

পাকিস্তানি বাঙালি (উর্দু: پاکستانی بنگالی ‎‎) বলতে পাকিস্তানের ঐ সমস্ত নাগরিকদের বুঝায়, যারা জাতিগতভাবে বাঙালি এবং পাকিস্তানের নাগরিক। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস করতে এসেছিল অথবা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। বাংলাদেশী টাকার চেয়ে পাকিস্তানের রুপির মান কম হওয়ায় পাকিস্তানে এসে কাজ করে অর্থ উপার্জন করা তাদের জন্য খুব বেশি লাভজনক নয়।[২] অধিকাংশ পাকিস্তানি বাঙালি দুইটি ভাষায় কথা বলতে জানেন। তাদের একটি হলো উর্দু এবং অন্যটি বাংলা। তারা মূলত করাচি শহর এবং এর আশেপাশে বসবাস করেন।

পাকিস্তানি বাঙালি
মোট জনসংখ্যা
২,০০০,০০০ [১]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
সিন্ধু প্রদেশ
ভাষা
বাংলা · উর্দু · ইংরেজি (পাকিস্তানি ইংরেজি)
ধর্ম
ইসলাম, হিন্দু, এবং খ্রিস্টান

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৪৭ এর পূর্বে সম্পাদনা

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে পাকিস্তানি বাঙালিরা পূর্ব বাংলা থেকে পাকিস্তানে এসে বসবাস শুরু করেন। তারা তখন সিন্ধু প্রদেশে বসবাস শুরু করেন। তারা সেখানে গিয়ে পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি রপ্ত করে দ্বিভাষিক নাগরিকে পরিণত হন। তারা বাংলার পাশাপাশি উর্দু ভাষায় কথা বলা শুরু করেন।

১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সম্পাদনা

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে তখন বহু বাঙালি পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহরে বসবাসের জন্য যায়। তারা মূলত ব্যবসা এবং শিক্ষা অর্জনের জন্য পাকিস্তানে যেত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাদের অনেকেই নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং অনেকেই সেখানে রয়ে যান।

১৯৭১ এর পরে সম্পাদনা

১৯৭১ সালের পর বিভিন্ন সময় হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী পাকিস্তানে এসেছে, বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশকে।[৩] ১৯৯৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানে অভিবাসীর সংখ্যা ২,৫০০,০০০ জন ছাড়িয়ে যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর শাসনামলে কিছু শীর্ষ উপদেষ্টা বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী অভিবাসী জনসংখ্যাকে রাষ্ট্রের জন্য ভীতিজনক আখ্যা দেন। তাদের ধারণা ছিল বাঙালিরা হয়তো করাচির দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে দেশের জনমিতিকে প্রভাবিত করে ফেলে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো অভিবাসীদের বিতাড়নবিষয়ক একটি কঠোর আদেশ জারী করেন। ফলে বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি ভুট্টোর এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। পাকিস্তানের অনেক গোষ্ঠী এই ঘোষণাকে ইসলামবিরোধী বলে মনে করেন।[৪][৫]

জনমিতি সম্পাদনা

শেখ মুহাম্মাদ ফিরোজ, পাকিস্তানি বাঙালি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান, এর দেয়া তথ্য অনুসারে পাকিস্তানে প্রায় ২০০টি বাঙালি জনবসতি আছে। এর মধ্যে ১৩২টিই করাচিতে।[৬] করাচির বাঙালি বসতি অঞ্চলকে "মিনি বাংলাদেশ" বলে আখ্যায়িত করা হয়।[৭] এসব অঞ্চলে রঙিন বাংলা সাইনবোর্ড, ভাসানী ক্যাপ, লুঙ্গি এবং কোর্তা ইত্যাদি প্রায়ই দেখা যায়।[৭] করাচির চট্টগ্রাম কলোনীতে একটি বাজার আছে, যা সারা পাকিস্তানে ঢাকার কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।[৮] তবে সাম্প্রতিককালে, বাঙালির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।[৯][১০] জাতিগত রেষারেষির জন্য পাকিস্তানের বাঙালিরা এখন অন্যত্র ভ্রমণ করছে।[১০]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সম্পাদনা

  • খাজা হাসান আসকারি, ঢাকার সর্বশেষ নবাব
  • আলমগীর, ১৯৭০ এবং ৮০ এর দশকের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী
  • রবিন ঘোষ, পাকিস্তানি সঙ্গীত পরিচালক এবং গায়ক[১১]
  • শবনম, পাকিস্তানের বিখ্যাত নায়িকা[১২]
  • মুন্নী বেগম, পাকিস্তানের গজল শিল্পী
  • নুরুল আমিন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
  • হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী, একজন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ক্রীড়াবিদ
  • রুপা ফারুকী, ব্রিটিশ লেখিকা (অর্ধ পাকিস্তানি, অর্ধ বাংলাদেশি)
  • তারিক ফাতেমি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি দূত
  • জাইব-উন-নেসা-হামিদুল্লাহ, নারীবাদী লেখিকা
  • আলতাফ হোসেন, ডনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক
  • ইকরাম সেহগাল, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক
  • হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী.
  • বেগম আখতার সুলাইমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কন্যা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Five million illegal immigrants residing in Pakistan - The Express Tribune"। ১৬ জানুয়ারি ২০১২। 
  2. Bilal Karim Mughal, Zehra Naqvi (১৬ জুন ২০১৮)। "Bengalis of Karachi demand urgent resolution to identity problem"। Dawn.com। 
  3. "Bangladeshi immigrants in Pakistan find it hard to go home"Nikkei Asian Review 
  4. Rahman, B. (৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৩)। "Indo-Bangladesh Standoff"South Asia Analysis Group। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "Five million illegal immigrants residing in Pakistan"Express Tribune। ১৬ জানুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  6. "Fringe Pakistan: Bengali-speaking Pakistanis demand right to vote"Express Tribune। ১০ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬Shaikh Muhammad Feroze, the chairman of the committee, said during a press conference on Friday that political parties and the government should acknowledge the sacrifices of their ancestors. 'We live in Sindh and feel proud to be called Sindhis rather than Bengalis. We appeal to Sindhi nationalists and Sindhis to help us in our struggle,' he added. He said that Bengali-speaking people were not given educational rights as they did not possess national identity cards. 'Our children can’t get an education after matriculation because colleges ask for the identity cards but the National Database Registration Authority has never accepted us as Pakistani citizens.' Shaikh said that over three million Bengalis and Biharis were grateful to the government for accepting them as Pakistani citizens. 'We postponed a hunger strike planned for March 25 after the government made decisions,' he added. 'We can go on a hunger strike, if our rights are not given.' He claimed that there were 200 settlements of Bengali-speaking people across the country, including 132 in Karachi. They populate different parts of Pakistan, including Thatta, Badin, Hyderabad, Tando Adam and Lahore. 
  7. Tohid, Owais; Mahmud, Arshad (২৯ নভেম্বর ১৯৯৫)। "Homeless In Karachi"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-০২ 
  8. Naqvi, Abbas (১৭ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Falling back"Daily Times। ৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১০ 
  9. Bloch, Hannah (২৫ সেপ্টেম্বর ২০০০)। http://edition.cnn.com/ASIANOW/time/magazine/2000/0925/pakistan.stateless.html  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  10. "Renowned music composer Robin Ghosh passes away" 
  11. "Shabnam biography, complete biography of Actresses Shabnam"www.pak101.com 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা