পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র

একটি মানব হিতৈষী প্রতিষ্ঠান

পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বা সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্‌ড (সিআরপি) বাংলাদেশের পূর্নবাসন কেন্দ্র। এর মূল কাজ শারীরিকভাবে অক্ষমদের পরিপূর্ণ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ১৯৭৯ সালে ইংরেজ ফিজিওথেরাপিস্ট ভেলরি এ. টেইলর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সাভারে অবস্থিত ১১ একর আয়তনের প্রধান শাখা সহ মোট ১৩টি শাখা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।[১] এসব শাখায় চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, পুনর্বাসন প্রভৃতি সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া ফিজিওথেরাপি, নার্সিং ইত্যাদি শিক্ষার জন্য সিআরপিতে একটি ইনস্টিটিউট ও একটি নার্সিং কলেজ রয়েছে।[২][৩]

সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্‌ড
সিআরপি এর মিরপুর শাখার ভবন‎
সংক্ষেপেসিআরপি
গঠিত১১ ডিসেম্বর ১৯৭৯ (1979-12-11)
প্রতিষ্ঠাতাভ্যালেরি টেইলর
প্রতিষ্ঠাস্থানশহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল
ধরনচিকিৎসা ও পূর্ণবাসন কেন্দ্র
সদরদপ্তরচাপাইন, সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ
দাপ্তরিক ভাষা
ইংরেজি, বাংলা
নির্বাহী পরিচালক
মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন
মূল ব্যক্তিত্ব
ভ্যালেরি টেইলর
ওয়েবসাইটwww.crp-bangladesh.org

ইতিহাস সম্পাদনা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৯ সালে অনেক কষ্ট এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই হাসপাতালের দুইটি পরিত্যক্ত গুদাম ঘর পান ভ্যালেরি টেইলর। এখানেই প্রথম একেবারে ছোট আকারে প্রতিষ্ঠা করেন পক্ষাঘাতগ্রস্থদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিআরপি এবং রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেন।[৪] প্রতিষ্ঠার পর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন এর উন্নতির জন্য। সাইকেলে চেপে বিভিন্নজনের ঘরে ঘরে যেতেন সাহায্যের জন্য। এজন্য তাঁকে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছিল। এভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সমর্থ হয়। পরিণত হয় ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি দাতব্য ক্লিনিকে। এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার এক পর্যায়ে তাঁকে নেতৃস্থানীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে এটি দাতব্য থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে অবশ্য তার পদ তিনি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এর উদারনৈতিক স্বেচ্ছাসেবার অভিযান অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে।

১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনবার তাঁর চিকিৎসা কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তিত হয়। পরে ঢাকা মহানগরীর অদূরে সাভারে একটি স্থায়ী পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] বর্তমানে ভ্যালেরির এই কেন্দ্রটি সিআরপি নামে সমধিক পরিচিত। সিআরপি প্রতিবন্ধীদের জীবনের উপর ভিত্তি করে "বিহঙ্গ" নামক সিনেমার তৈরি করেছিল। বর্তমানে অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, সেবিকা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ট্রেনিং ও বিভিন্ন মেয়াদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট সম্পাদনা

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট (বিএইচপিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, প্রস্থেটিক্স এন্ড অর্থোটিক্স এই ৪টি বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে ডিপ্লোমা ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বেশ কিছু কোর্স রয়েছে।[৬]

সিআরপি নার্সিং কলেজ সম্পাদনা

বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউটের নার্সিং উইং হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ২০০৪ সালে বিএইচপিআই-তে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, মিডওয়াইফারি এবং অর্থোপেডিকস নামে একটি ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়ে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কোর্সটির পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করে। কোর্সটির নাম দেওয়া হয় ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং মেয়াদ ৩ বছর করা হয়।

২০১০ সালে নার্সিং উইংকে বিএইচপিআই থেকে আলাদা করে সিআরপি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে সিআরপি নার্সিং কলেজ করা হয়। বর্তমানে এতে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং বিএসসি ইন নার্সিং কোর্স চালু আছে।[৭]

উইলিয়াম অ্যান্ড মেরী টেইলর স্কুল সম্পাদনা

সিআরপি ১৯৯৩ সালে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৩ সালে এটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্কুলে পরিণত করা হয় এবং এর নাম রাখা হয় উইলিয়াম অ্যান্ড মেরী টেইলর স্কুল। এখানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এবং স্বাভাবিক শিশুরা একসাথে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারে।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শাহনেওয়াজ রকি (১১ ডিসেম্বর ২০১৯)। "সিআরপি'র ৪০ বছর: ভ্যালেরি টেইলর বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে যেভাবে ৫০ বছর কাটিয়ে দিলেন"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ 
  2. শিশির মোড়ল (১৮ আগস্ট ২০২১)। "সিআরপি অনেকের জীবনে আশীর্বাদ"প্রথম আলো। স্বাস্থ্যখাতে অগ্রযাত্রার ৫০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ 
  3. "বড় কাজ করতে গেলে খুবই শান্ত থাকতে হয়"কালের কণ্ঠ। ৫ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২৩ 
  4. তুহিন রায় (২০১২)। "পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. দৈনিক যুগান্তর, ১০ মার্চ, ২০১২ইং, মুদ্রিত সংস্করণ, খবর, পৃষ্ঠা-৩
  6. "Bangladesh Health Professions Institute"সিআরপি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২৩ 
  7. "CRP Nursing College"সিআরপি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২৩ 
  8. "William and Marie Taylor Inclusive School"সিআরপি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা