নোয়েল কাওয়ার্ড

ইংরেজ নাট্যকার

স্যার নোয়েল পিয়ার্স কাওয়ার্ড (ইংরেজি: Noël Peirce Coward; ১৬ ডিসেম্বর ১৮৯৯ - ২৬ মার্চ ১৯৭৩) ছিলেন একজন ইংরেজ নাট্যকার, সুরকার, পরিচালক, অভিনেতা এবং সঙ্গীতশিল্পী। টাইম সাময়িকী তার বুদ্ধিমত্তা ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপনকে "ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতির জ্ঞান, পরিপাট্য ও ভাবভঙ্গির সমাহার" হিসেবে অভিহিত করে।[১]

১৯৭২ সালে নোয়েল কাওয়ার্ড।

কাওয়ার্ড শৈশবে লন্ডনে একটি নৃত্য একাডেমিতে ভর্তি হন এবং এগারো বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন। কৈশোরে তিনি সমাজের উচ্চ শ্রেণির সাথে পরিচিত হন, যা তার পরবর্তী জীবনে নাট্য রচনার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। কাওয়ার্ড নাট্যকার হিসেবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন এবং কিশোর বয়স পার হওয়ার পরপরই তার ৫০টি নাটক প্রকাশিত হয়। তার বেশ কয়েকটি কাজ, যেমন হে ফেভার, প্রাইভেট লাইভস, ডিজাইন ফর লিভিং, প্রেজেন্ট লাফটার এবং ব্লিদ স্পিরিট নিয়মিত মঞ্চস্থ হতে থাকে। তিনি শতাধিক গান রচনা করেন, পাশাপাশি ডজন খানেক সঙ্গীতধর্মী নাটক, চিত্রনাট্য, কবিতা, কয়েকটি ছোটগল্পের সংকলন, উপন্যাস পম্প অ্যান্ড সারকামস্টেন্সেস, এবং তিন খণ্ড আত্মজীবনী রচনা করেন। কাওয়ার্ড ছয় দশক মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় ও পরিচালনা করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে কাওয়ার্ড যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন এবং প্যারিসে ব্রিটিশ প্রচারণামূলক দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৩ সালে তার নৌবাহিনী-ভিত্তিক চলচ্চিত্র ইন হুইচ উই সার্ভ-এর জন্য তিনি একটি একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার অর্জন করেন এবং ১৯৬৯ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।

জীবনী সম্পাদনা

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কাওয়ার্ড ১৮৯৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মিডলসেক্সের টেডিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আর্থার স্যাবিন কাওয়ার্ড (১৮৫৬-১৯৩৭) ছিলেন একজন পিয়ানো বিক্রেতা এবং মাতা ভায়োলেট অ্যাগনেস কাওয়ার্ড (১৮৬৩-১৯৫৪) রয়্যাল নেভির ক্যাপ্টেন ও সারভেয়ার হেনরি গর্ডন ভেইচের কন্যা।[২] ভায়োলেটের এক বোন রেচেল ভেইচ ছিলেন ফিল্ড-মার্শাল ডগলাস হেইগের মাতা।[৩] কাওয়ার্ড তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় ভাই ১৮৯৮ সালে ছয় বছর বয়সে মারা যায়।[৪] কাওয়ার্ড শৈশবে চ্যাপেল রয়্যাল চয়ার স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অল্প হলেও তিনি অনেক বই পড়তেন।[৫]

অভিনেতা-মঞ্চ নির্দেশক চার্লস হট্রে ছিলেন কাওয়ার্ডের আদর্শ এবং তার নিকট থেকে তিনি মঞ্চ সম্পর্কিত অনেক বিষয় শিখেন। তিনিই তাকে হোয়ার দ্য রেইনবো এন্ডস নামক শিশুতোষ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। কাওয়ার্ড লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ডের গ্যারিক থিয়েটারে ১৯১১ ও ১৯১২ সালে এই নাটকে অভিনয় করেন।[৬][৭] ১৯১২ সালে কাওয়ার্ড স্যাভয় থিয়েটারে অ্যান অটাম আইডিল-এ ব্যালে নৃত্যশিল্পী হিসেবে এবং লন্ডন কলিজিয়ামে হ্যারল্ড ওয়েনের আ লিটল ফাউল প্লে নাটকে অভিনয় করেন, এই নাটকে হট্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন।[৮] ১৯১৩ সালে ইতালিয়া কন্তি কাওয়ার্ডেওকে লিভারপুল রিপার্টরি থিয়েটারে কাজ করার জন্য বলেন এবং এই বছর তিনি পিটার প্যান নাটকে হারানো বালক স্লাইটলি চরিত্রে অভিনয় করেন।[৯] তিনি পরের বছর পুনরায় পিটার প্যান নাটকে অভিনয় করেন এবং ১৯১৫ সালে আবার হোয়ার দ্য রেইনবো এন্ডস নাটকে অভিনয় করেন। এই সময়ে তিনি অন্যান্য যেসব শিশুশিল্পীদের সাথে অভিনয় করেন তার হলেন হারমিয়ন জিনগোল্ড,[১০] ফাবিয়া ড্রেক, এসমে ওয়াইন, আলফ্রেড উইলমোর এবং গারট্রুড লরেন্স।[১১][১২]

আন্তঃযুদ্ধকালীন সফলতা সম্পাদনা

১৯২০ সালে ২০ বছয় বয়সে কাওয়ার্ড তার নিজের লেখা স্বল্প হাস্যরসাত্মক নাটক আই উইল লিভ ইট টু ইউ-এ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় শুরু করেন। ম্যানচেস্টারে কিছুদিন চেষ্টার পর লন্ডনের নিউ থিয়েটারে (২০০৬ সালে নোয়েল কাওয়ার্ড থিয়েটার নামকরণ করা হয়) মঞ্চস্থ হয় এবং এটি ওয়েস্ট এন্ডে মঞ্চস্থ তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য নাটক।[১৩] দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানে নেভিল কারডাস এই নাটকের প্রশংসা করেন।[১৪] লন্ডনে নাটকটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে, তবে তা অনুপ্রেরণা যোগায়।[৫] দি অবজারভার-এ বলা হয়, "জনাব কাওয়ার্ডের হাস্যরসের বোধ রয়েছে, এবং যদি তিনি চটপটে হওয়ার প্রবণতা পরিবর্তন করতে পারেন, তবে তিনি অচিরেই ভালো নাটক রচনা করতে পারেন।"[১৫] অন্যদিকে দ্য টাইমস অতি উৎসাহের সাথে লিখে, "এতো অল্প বয়সী একজনের নিকট থেকে এই রকম রচনা সত্যই অসাধারণ - খুবই সতঃস্ফূর্ত, সহজ, এবং 'বুদ্ধিদীপ্ত'।"[১৬]

নাটকটি এক মাস চলে এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত কাওয়ার্ডের প্রথম নাটক।[১৩] এরপর কাওয়ার্ড অন্য লেখকদের কাজে অভিনয় শুরু করেন এবং দ্য নাইট অব দ্য বার্নিং পেস্টল-নাটকে রাফ চরিত্রে অভিনয় করেন, যা বার্মিংহাম ও পরে লন্ডনে মঞ্চস্থ হয়।[১৭] তিনি এই চরিত্রটি উপভোগ করেন নি, এবং পরবর্তীকালে ফ্রান্সিস বিউমন্ট ও তার সহযোগী জন ফ্লেচার সম্পর্কে বলেন, "এলিজাবেথীয় লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্প্রভ দুজন... আমার অভিনীত অংশটুকু অনেক বেশি ছিল, কিন্তু আমি খুবই খারাপ করেছিলাম।"[১৮] দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানে বলা হয় কাওয়ার্ড তার সেরা চরিত্রটি পেয়েছিল[১৯] এবং দ্য টাইমস নাটকটিকে লন্ডনে সবচেয়ে প্রফুল্ল বিষয় বলে উল্লেখ করে।[২০]

কাওয়ার্ড দুজন নারীর সাথে একজন পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ক এক অঙ্কের ব্যঙ্গধর্মী নাটক দ্য বেটার হাফ রচনা করেন। নাটকটি ১৯২২ সালে লন্ডনে দ্য লিটল থিয়েটারে অল্প কিছুদিন চলে। সমালোচক সেন্ট জন আরভিন লিখেন, "যখন জনাব কাওয়ার্ড চায়ের টেবিলে নারীদের গল্প-আড্ডা সম্পর্কে আরও জানতে পারবে তখন তিনি এখন যা লিখেছেন তার চেয়েও আকর্ষণীয় নাটক লিখতে পারবেন।"[২১] ২০০৭ সালে লর্ড চেম্বারলেইনের অফিসে আর্কাইভ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ধরা হত নাটকটি হারিয়ে গেছে, ১৯৬৮ সালে এটি সর্বশেষ মঞ্চস্থ হয়েছিল।[২২]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে কাওয়ার্ড মঞ্চনাটক ত্যাগ করেন এবং যুদ্ধে দাপ্তরিক কাজের অনুসন্ধান করেন। প্যারিসে ব্রিটিশ প্রচারণামূলক দপ্তর পরিচালনার পর তিনি সমাপ্তি টেনে বলেন, "যদি সরকারের নীতি জার্মানদের মৃত্যু পর্যন্ত মোড় নেয়, তবে আমি মনে করি আমাদের আরও সময় আছে।"[২৩] তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার হয়েও কাজ করেন।[২৪] তার কাজ ছিল তার তারকা খ্যাতি দিয়ে মার্কিন জনগণকে প্রভাবিত করা এবং ব্রিটেনের পক্ষে রাজনৈতিক রায় নিয়ে আসা। তার দেশের মানুষ যুদ্ধে মারা যাচ্ছে অথচ তিনি বিদেশ ভ্রমণ করছেন ব্রিটিশ গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত সমালোচনায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন, কিন্তু তিনি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছেন তা প্রকাশ করতে পারছিলেন না।[২৫] ১৯৪২ সালে ষষ্ঠ জর্জ তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে নাইটহুড প্রদান করতে চান, কিন্তু উইনস্টন চার্চিল তাতে অসম্মতি জানান।[২৫]

জার্মানরা ব্রিটেন আক্রমণকালে কাওয়ার্ডকে গ্রেফতার ও মারার পরিকল্পনা করে। তিনি ভার্জিনিয়া উল্‌ফ, পল রোবসন, বার্ট্রান্ড রাসেল, সি. পি. স্নো ও এইচ. জি. ওয়েল্‌সের সাথে তাদের কালো তালিকায় ছিলেন। যুদ্ধের পর এই তথ্য প্রকাশিত হলে কাওয়ার্ড লিখেন, "সে সময়ে যদি কেউ আমাকে বলত যে আমি নাৎসিদের কালো তালিকায় ছিলেন, আমি হাসতাম।"[২৬] তিনি যুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় গান লন্ডন প্রাইড ও ডোন্ট লেট্‌স বি বিস্টলি টু দ্য জার্মানস লিখেন এবং রেকর্ড করেন। ১৯৪১ সালে লন্ডনে অবস্থিত তার বাসভবন জার্মানদের বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় এবং তিনি স্যাভয় হোটেলে সাময়িকভাবে বসবাস করেন।[২৭] কাওয়ার্ডের যুদ্ধকালীন অপর একটি রচনা হল নাট্যধর্মী ইন হুইচ উই সার্ভ। তিনি এতে অভিনয় করেন, সুর করেন এবং ডেভিড লিনের সাথে যৌথভাবে পরিচালনা করেন। ছবিটি আটলান্টিকের উভয় পাশেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ১৯৪৩ সালের একাডেমি পুরস্কারের আয়োজনে একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার অর্জন করে।[২৮] কাওয়ার্ড এতে নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। লিন পরবর্তী কালে কাওয়ার্ডের কয়েকটি নাটক পরিচালনা করেন এবং চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেন।[৫]

যুদ্ধের বছরগুলোর সময় থেকে কাওয়ার্ডের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কাজ ছিল ব্ল্যাক কমেডি ব্লাইদ স্পিরিট (১৯৪১)। গুপ্ত বিষয়ে একজন ঔপন্যাসিকের গবেষণা ও একটি মাধ্যম ভাড়া করে। প্রেততত্ত্ববিদদের বৈঠকের মাধ্যমে তার প্রথম স্ত্রীর আত্মাকে ফিরেয়ে আনা হয়, যা ঔপন্যাসিক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।[৫] এই কাজটি ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। টানা ১,৯৯৭ বার মঞ্চস্থ নাটকটি ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটারের সকল বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়।[ক] এই সফলতায় ব্রডওয়ে মঞ্চেও এই নাটকের মঞ্চায়ন হয় এবং মূল নাটকটি ৬৫০ বার মঞ্চস্থ হয়। ১৯৪৫ সালে ডেভিড লিনের পরিচালনায় নাটকটির চলচ্চিত্রায়ন হয়।[৩১]

মিডল ইস্ট ডায়েরি-তে কাওয়ার্ড বেশ কিছু উক্তি করেন, যার অনেক মার্কিনী অসন্তুষ্ট হয়। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, তিনি মন্তব্য করেন যে তিনি "কান্নারত ছোট ব্রুকলিনের বাচ্চাদের শস্যের ভিড়ে শোয়ে থাকা দেখে হতাশ হন, যা বুলেটবিদ্ধ পা বা ভাঙ্গা বাহুর চেয়েও খারাপ দেখাচ্ছিল।"[৩২][৩৩] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে প্রতিবাদের পর বৈদেশিক দপ্তর ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে কাওয়ার্ডকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। তিনি যুদ্ধের সময় আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন নি। যুদ্ধের ফলাফলে কাওয়ার্ড একটি বিপরীতধর্মী বাস্তবতাবাদ নাটক পিস ইন আওয়ার টাইম রচনা করেন, যেখানে নাৎসি জার্মানি ইংল্যান্ড দখন করেছে।[৩৪]

যুদ্ধ-উত্তর কর্মজীবন সম্পাদনা

যুদ্ধ-উত্তর কাওয়ার্ডের নতুন নাটকগুলো মাঝারিমানের সফলতা লাভ করে, কিন্তু যুদ্ধ-পূর্ব সফল নাটকগুলোর মত জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।[৩৫] রিলেটিভ ভ্যালুজ (১৯৫১) নাটকটিতে বিবাহ নিয়ে এক অভিজাত ইংরেজ পরিবার ও একজন হলিউড অভিনেত্রীর সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে। সাউথ সি বাবল (১৯৫১) ব্রিটিশ উপনিবেশের পটভূমিতে রচিত একটি রাজনৈতিক হাস্যরসাত্মক নাটক। কোয়াড্রিল (১৯৫২) ভিক্টোরীয় যুগীয় প্রেম ও পলায়ন বিষয়ক নাটক। ন্যুড উইথ ভায়োলিন (১৯৫৬) আধুনিক শিল্পকলা ও বিদ্যাভিমান নিয়ে রচিত ব্যঙ্গধর্মী নাটক। এই নাটকটির লন্ডনে মঞ্চায়নে জন গিলগুড এবং নিউ ইয়র্কে মঞ্চায়নে কাওয়ার্ড কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন।[৩৬] সমসাময়িক ঘটনাভিত্তিক গীতি-নৃত্য-নাট্য সাই নো মোর (১৯৪৫) মাঝারিমানের সফলতা লাভ করে,[৩৭] কিন্তু সাউথ সিজ ধারার প্রণয়ধর্মী প্যাসিফিক ১৮৬০ (১৯৪৬) এবং একটি নৈশক্লাবের পটভূমিতে রচিত এইস অব ক্লাবস (১৯৪৯) শীর্ষক সঙ্গীতনাট্য দুটি আর্থিক দিক থেকে ব্যর্থ হয়।[৩৮] এই সময়ে ১৯৫১ ও ১৯৫২ সালে যথাক্রমে কাওয়ার্ডের দুই বন্ধু চার্লস কোচরান ও গারট্রুড লরেন্স মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মৃত্যুতে বিমর্ষ হয়ে পড়লেও কাওয়ার্ড সর্বসাধারণের নিকট তার উচ্চতর জীবনমান ধরে রাখেন। ১৯৫৩ সালে মার্গারেট লেইটনের সাথে জর্জ বার্নার্ড শয়ের দি অ্যাপল কার্ট নাটকে রাজা ম্যাগনাস চরিত্রে তার অভিনয় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করে।[৩৯] এছাড়া তার যুদ্ধকালীন সফরগুলোতে সৈনিকদের বিনোদনের লক্ষ্যে তার ক্যাবারে অঙ্কগুলো প্রথমে লন্ডনের ক্যাফে দে পারি এবং পরে লাস ভেগাসে বিপুল সফলতা অর্জন করেন।[৪০]

১৯৫৫ সালে লাস ভেগাসে কাওয়ার্ডের ক্যাবারে অঙ্কটির সরাসরি পরিবেশনা গ্রামোফোনের জন্য ধারণ করা হয় এবং নোয়েল কাওয়ার্ড অ্যাট লাস ভেগাস নামে মুক্তি দেওয়া হয়।[৪১] এটি এতই সফলতা অর্জন করে যে সিবিএস তাকে ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমের জন্য তিনটি ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানের একটি ধারাবাহিক রচনা ও পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। প্রথম বিশেষ অনুষ্ঠান টুগেদার উইথ মিউজিক-এ কাওয়ার্ড ম্যারি মার্টিনের সাথে জুটি বাঁধেন এবং তাকে লাস ভেগাস অঙ্কের কয়েকটি কাজে প্রধান চরিত্রে দেখা যায়।[৪২] এরপর তিনি ব্লাইদ স্পিরিট নাটকের কাজ শুরু করেন, এতে তিনি ক্লডেট কোলবার্ট, লরেন বাকল, ও মিলড্রেড ন্যাটউইকের সাথে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করে। এছাড়া তিনি দিস হ্যাপি ব্রিড নাটকে এডনা বেস্টরজার মুরের সাথে অভিনয় করেন। ইতিবাচক পর্যালোচনার পরও দর্শকের পরিমাণ মাঝারিমানের ছিল।[৪৩]

১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকেও কাওয়ার্ড সঙ্গীতনাট্য ও নাটক রচনা চালিয়ে যান। ১৯৫৩ সালে তিনি অস্কার ওয়াইল্ড রচিত চার-অঙ্কবিশিষ্ট লেডি উইন্ডমেয়ার্স ফ্যান নাটকটিকে আফটার দ্য বল নামে নিজের নাটকে উপযোগী করেন। এটি ওয়েস্ট এন্ডে উদ্বোধন হওয়া তার শেষ সঙ্গীতনাট্য। তার শেষ দুটি সঙ্গীতনাট্য ব্রডওয়ে মঞ্চে উদ্বোধন হয়। ব্যয়বহুল ক্রুজ লাইনারের পটভূমিতে রচিত সেইল অ্যাওয়ে (১৯৬১) যুদ্ধ-উত্তর কাওয়ার্ডের সবচেয়ে সফল সঙ্গীতনাট্য। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় মঞ্চস্থ হয়।[৪৪] টেরেন্স র‍্যাটিগ্যানের দ্য স্লিপিং প্রিন্স নাটকের সঙ্গীতনাট্যধর্মী উপযোগকরণ দ্য গার্ল হু কেম টু সাপার (১৯৬৩) মাত্র তিন মাস চলে।[৪৫] তিনি ১৯৬৪ সালে ব্লাইদ স্পিরিট নাটকের ব্রডওয়ে সঙ্গীতনাট্যধর্মী উপযোগকরণ হাই স্পিরিটস পরিচালনা করেন, যা সফলতা লাভ করে। কাওয়ার্ডের পরবর্তী নাটকগুলোর মধ্যে লুক আফটার লুলু! (১৯৫৯) নামে একটি প্রহসন এবং ওয়েটিং ইন দ্য উইংস (১৯৬০) নামে একটি বিয়োগান্ত-হাস্যরসাত্মক নাটক "তাচ্ছিল্যপূর্ণ সমালোচনা" সত্ত্বেও সফল হয়।[৪৬] কাওয়ার্ড যুক্তি প্রদর্শন করেন যে একটি নাটকের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বিনোদন প্রদান করা, এবং তিনি আধুনিকতার কোন প্রচেষ্টা করেননি, কারণ তিনি মনে করেন আধুনিকতা সমালোচকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও দর্শকদের কাছে বিরক্তিকর। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ব্রিটিশ উপনিবেশের জীবন নিয়ে রচিত তার হাস্যরসাত্মক উপন্যাস পম্প অ্যান্ড সারকামস্ট্যান্স (১৯৬০) অধিক সমাদৃত হয়।[৪৭][খ]

টীকা সম্পাদনা

  1. পূর্বের রেকর্ড ছিল ১৮৯০-এর দশকের চার্লিস আন্ট নাটকের, যার ১,৪৬৬ বার মঞ্চায়ন হয়েছিল।[২৯] ব্লাইদ স্পিরিট-এর ওয়েস্ট এন্ডের রেকর্ড ভাঙ্গে বোয়িং বোয়িং ১৯৬০-এর দশকে।[৩০]
  2. কাওয়ার্ডের কাল্পনিক সাউথ সি দ্বীপপুঞ্জ উপনিবেশ "সামোলো" মূলত জামাইকা ভিত্তিক একটি স্থান, যেখানে তার একটি বাড়ি ছিল। তিনি তার উপন্যাসের পটভূমি হিসেবেই শুধু এই স্থানটি ব্যবহার করেননি, বরং দুটি নাটক (পয়েন্ট ভেলাইনসাউথ সি বাবল) এবং একটি সঙ্গীতনাট্য (প্যাসিফিক ১৮৬০)-এর পটভূমি হিসেবেও এই স্থানটি ব্যবহার করেন।[৪৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Show Business: Noel Coward at 70"টাইম (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৬৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  2. মর্লি, পৃ. ২।
  3. হোয়ার, পৃ. ২।
  4. মর্লি, পৃ. ৩।
  5. কেনরিক, জন (২০০০)। Noel Coward: A Brief Biography - Part I। Coward 101 at Musicals 101: The Cyber Encyclopedia of Musical Theatre, TV and Film। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  6. হোয়ার, পৃ. ২৩-২৪।
  7. "Garrick Theatre"। দ্য টাইমস। ১২ ডিসেম্বর ১৯১২। পৃ. ৮।
  8. "The Savoy Theatre"। দ্য টাইমস। ২৬ জুন ১৯১২। পৃ. ১০; "The Coliseum"। ২৯ অক্টোবর ১৯১২। পৃ. ৮। এবং "Varieties etc", ১৮ নভেম্বর ১৯১২। পৃ. ১।
  9. "The Cult of Peter Pan"। দ্য টাইমস। ২৪ ডিসেম্বর ১৯১৩। পৃ. ৮।
  10. হোয়ার, পৃ. ১২।
  11. হোয়ার, পৃ. ২৭, ৩০ ও ৫১।
  12. "The Happy Family"। দ্য টাইমস। ১৯ ডিসেম্বর ১৯১৬। পৃ. ১১।
  13. ট্যাক্সটার, জন (২০০৯)। "I'll Leave It To You"। ব্রিটিশ থিয়েটার গাইড
  14. কারডাস, নেভিল (৪ মে ১৯২০)। "Gaiety Theatre"। দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান। পৃ. ১৩।
  15. আরভিন, সেন্ট জন (২৫ জুলাই ১৯২০)। "At the Play"। দি অবজারভার, পৃ. ৯।
  16. "I'll Leave It to You", দ্য টাইমস, ২২ জুলাই ১৯২০, পৃ. ১০।
  17. কাওয়ার্ড (প্রেজেন্ট ইন্ডিকেটিভ), পৃ. ১০৪–০৫ ও ১১২।
  18. ক্যাসল, পৃ. ৩৮।
  19. "The Knight of the Burning Pestle"। দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান। ২৫ নভেম্বর ১৯২০। পৃ.১৪।
  20. "A Jacobean Romp"। দ্য টাইমস। ২৫ নভেম্বর ১৯২০। পৃ. ১০।
  21. আরভিন, সেন্ট জন (৪ জুন ১৯২২)। "New Grand Guignol Series"। দি অবজারভার। পৃ. ৯।
  22. থর্প, ভানেসা (১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "Coward's long-lost satire was almost too 'daring' about women"দ্য গার্ডিয়ান। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  23. রিচার্ডস, পৃ. ১০৫।
  24. কোচ, স্টিভেন (১৩ এপ্রিল ২০০৮)। "Essay - Noël Coward Was a Spy - Books - Review"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ 
  25. হেস্টিংস, ক্রিস (৩ নভেম্বর ২০০৭)। "Winston Churchill vetoed Coward knighthood"দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ 
  26. কাওয়ার্ড (ফিউচার ইন্ডিফিনিট), পৃ. ১২১।
  27. হোয়ার, পৃ. ৩১৭।
  28. "The 15th Academy Awards | 1943"অস্কার (ইংরেজি ভাষায়)। একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ 
  29. গে, পৃ. ১৫২৫।
  30. "Blithe Spirit", 2005/2006 Study Guide, গ্লোব থিয়েটার গাইড।
  31. হোয়ার, পৃ. ৩৩১।
  32. ক্যালডার, রবার্ট (২০০৪)। Beware the British Serpent: The Role of Writers in British Propaganda in the United States, 1939-1945 (ইংরেজি ভাষায়)। ম্যাকগিল-কুইন্স প্রেস। পৃষ্ঠা ১০৩। আইএসবিএন 9780773526884। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ 
  33. হোয়ার, পৃ. ৩৪১।
  34. লার, পৃ. ৯৩।
  35. লার, পৃ. ১৩৬।
  36. লেসলি, পৃ. ৩১৪, ৩৬১, ৩৭০।
  37. মর্লি ১৯৭৪, পৃ. ৩০৮।
  38. লেসলি, পৃ. ২৪৮, ২৮৯।
  39. "Haymarket Theatre", দ্য টাইমস, ৮ মে ১৯৫৩, পৃ. ১২; এবং ব্রাউন, আইভর। "Royal and Ancient", দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান, ৮ মে ১৯৫৩, পৃ. ৫।
  40. মর্লি ১৯৭৪, পৃ. ৩৩৯-৩৪০।
  41. Reissued in 2003 on CD by CBS – DRG 19037
  42. কেনরিক, জন। "Noel Coward: A Brief Biography - Part III"Musicals 101: The Cyber Encyclopedia of Musical Theatre, TV and Film। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০২১ 
  43. পেইন ও মর্লি ১৯৭৪, পৃ. ২৮৭-৮৮, ৩০৪, ৩১৪।
  44. লেসলি, পৃ. ৪১০-৪১৪, ৪২৮-৪২৯।
  45. লেসলি, পৃ. ৪৩০।
  46. সিমন, জন (৩ জানুয়ারি ২০০০)। "Waiting in the Wings"নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিন। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০২১ 
  47. পেইন ও মর্লি ১৯৭৪, পৃ. ৪৫১, ৪৫৩।
  48. কাওয়ার্ড, Plays, Six, পৃ. xi

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা