নোবেল পুরস্কার ২০১৫

নোবেল পুরস্কার প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে ঘোষণা করার ঐতিহ্যকে মেনে ২০১৫ সালে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় যথাক্রমে ৫ অক্টোবর তারিখে চিকিৎসা শাস্ত্রে, ৬ অক্টোবর তারিখে পদার্থবিজ্ঞানে, ৭ অক্টোবর তারিখে রসায়নে, ৮ অক্টোবর তারিখে সাহিত্যে, ৯ অক্টোবর তারিখে শান্তিতে এবং ১২ অক্টোবর তারিখে অর্থনীতিতে। মোট ১০ জন ব্যক্তি ও ৪টি প্রতিষ্ঠান এবছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; যাদের মধ্য রয়েছে জাপানী (২ জন), কানাডীয় (১ জন), সুইড (১ জন), মার্কিন (১ জন), তুর্কি (১ জন), চৈনিক (১ জন), আইরিশ (১ জন), বেলারুশীয় (১ জন), তিউনিশিয়ান (৪টি সংগঠন) এবং ব্রিটিশ-মার্কিন (১ জন)।

পদার্থবিজ্ঞান সম্পাদনা

পদার্থের অণুতে নিউট্রিনোর রূপ বদলের স্বরূপ খুঁজতে গিয়ে এই কণার ভর থাকার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন যারা, সেই দুই বিজ্ঞানী এবার পেয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর এই পুরস্কারের জন্য জাপানের তাকাকি কাজিটাকানাডার আর্থার বি. ম্যাকডোনাল্ডের নাম ঘোষণা করে।

রসায়ন সম্পাদনা

জীবন্ত কোষ কী করে তার ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করে, আর কেমন করে জিনে থাকা তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া হয়- সেই প্রশ্নের উত্তর বিশ্বের সামনে এনে রসায়নের নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এই পুরস্কারের জন্য সুইডেনের টোমাস লিন্ডাল, যুক্তরাষ্ট্রের পল পল মডরিতুরস্কের আজিজ সানজারের নাম ঘোষণা করে। অ্যাকাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জীবন্ত কোষের ভেতরে কী ঘটে সে বিষয়ে আমাদের মৌলিক ধারণা দিয়েছে তাদের গবেষণা; এর মধ্য দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”[১]

চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পাদনা

২০১৫ সালের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয় ৫ অক্টোবর তারিখে। পরজীবীসৃষ্ট রোগ নিরাময়ে চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০১৫ সালের নোবেল পুরস্কার জিতে নেন তিন বিজ্ঞানী; তারা হলেন আয়ারল্যান্ডের উইলিয়াম সি ক্যাম্পবেল, জাপানের সাতোশি ওমুরা এবং চীনের ইউইউ তু[২][৩] কেঁচো ক্রিমি থেকে সৃষ্ট রোগ প্রতিকারের নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ক্যাম্পবেল ও ওমুরা নোবেল পান। তারা পুরস্কারের অর্ধাংশ ভাগাভাগি করে নেবেন। অন্যদিকে, ম্যালেরিয়ার নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য তু মোট পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন।

সাহিত্য সম্পাদনা

২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন বেলারুশ লেখক সলতিয়েনা আলেক্সিয়েভিচ । ৬৭ বছর বয়সী এই লেখিকা এ মনুমন্টে টু সাফারিং অ্যান্ড করেজ ইন আওয়ার টাইম বইয়ের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে আলেক্সিয়েভিচ ১৪-তম নারী যিনি এ পুরস্কার পেলেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য আট মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার বা নয় লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার। চেরনোবিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে লেখা বইয়ের মাধ্যমেই আলেক্সিয়েভিচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত অর্জন করেন। এই দুই ঘটনার ভয়াবহতা তিনি প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আবেগ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তার সেই বই গুলো বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নোবেল পুরস্কার ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

শান্তি সম্পাদনা

তিউনিসিয়ায় ২০১১ সালের বিপ্লবের পর সেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের ধারা সুসংহত করার জন্য ২০১৫ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে দেশটির চারটি সংগঠনের একটি জোট। নোবেল কমিটি বলেছে, ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট নামের শান্তি আলোচক ওই জোটটি তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছে। ৯ অক্টোবর নরওয়ের অসলো থেকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির প্রধান কাচি কুলমান এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়। নোবেলজয়ী জোটভুক্ত ওই চারটি সংগঠন হলো তিউনিসিয়ান জেনারেল লেবার ইউনিয়ন, তিউনিসিয়ান কনফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রি, ট্রেড অ্যান্ড হ্যান্ডিক্র্যাফটস, তিউনিসিয়ান হিউম্যান রাইটস লীগ এবং তিউনিসিয়ান অর্ডার অব লইয়ার্স ৷ তিউনিসিয়ায় চরম সামাজিক অস্থিরতার কারণে যখন গণতন্ত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন ২০১৩ সালে এই চারটি সংগঠন শান্তি প্রতিষ্ঠায় জোটবদ্ধ হয়। নোবেল কমিটি বলছে, তিউনিসিয়া যখন প্রায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, তখন এই জোট শান্তিপূর্ণ পথে বিকল্প রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা করে। এর ধারাবাহিকতায় দেশটিতে সাংবিধানিক ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়। নোবেল কমিটি আশা করছে এই পুরস্কার তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রকে আরও সংহত করতে অবদান রাখবে। ২০১৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নে দুই শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। এর মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলপোপ ফ্রান্সিসের নামও ছিল। শান্তি পুরস্কারের জন্য ২৭৩ ব্যক্তি এবং সংগঠনকে বিবেচনায় নিয়েছিল।[৪]

অর্থনীতি সম্পাদনা

২০১৫ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন ইঙ্গো-মার্কিন অর্থনীতিবিদ অ্যানগাস ডেটনভোগ, দারিদ্র্য ও জনকল্যাণ বিষয়ে গবেষণার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ অক্টোবর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে দ্য রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এ ঘোষণা দেয়। যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গে ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন অ্যানগাস ডেটন। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৷

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ডিএনএ গবেষণার জন্য রসায়নে নোবেল জয় তিন বিজ্ঞানীর"prothom-alo.com 
  2. "চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী"দৈনিক প্রথমআলো। ৫ অক্টোবর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৫ 
  3. "চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পেলেন ৩ গবেষক"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর.কম। ৫ অক্টোবর ২০১৫। ৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১৫ 
  4. নোবেল পেল তিউনিসিয়ার চার সংগঠন