নেভিল কারদাস

ইংরেজ লেখক ও সমালোচক

স্যার জন ফ্রেডেরিক নেভিল কারদাস, সিবিই (ইংরেজি: Neville Cardus; জন্ম: ৩ এপ্রিল, ১৮৮৮ - মৃত্যু: ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫) ম্যানচেস্টারের রাসহোমে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ লেখক ও সমালোচক ছিলেন। মূলতঃ স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত থেকে ১৯১৯ সালে দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের ক্রিকেট সংবাদদাতার কাজ করেন। এরপর ১৯২৭ সালে এর প্রধান সঙ্গীত সমালোচকের কাজ করেন। উভয় পদেই তিনি ১৯৪০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। দুইটি ভিন্ন বিষয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে তার অবদানের প্রেক্ষিতে তার প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় সমালোচকের মর্যাদা পান নেভিল কারদাস

নেভিল কারদাস
বৃদ্ধ বয়সে নেভিল কারদাসের স্থিরচিত্র
বৃদ্ধ বয়সে নেভিল কারদাসের স্থিরচিত্র
জন্মজন ফ্রেডেরিক নেভিল কারদাস
(১৮৮৮-০৪-০৩)৩ এপ্রিল ১৮৮৮
রাসহোম, ম্যানচেস্টার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫(1975-02-28) (বয়স ৮৬)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
পেশা
  • লেখক
  • সমালোচক
শিক্ষাবোর্ড স্কুল
সময়কাল১৯১২-১৯৭৫
ধরন
  • সঙ্গীত সমালোচনা
  • বর্ণনাত্মক ক্রিকেট প্রতিবেদন
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিদ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান:
প্রধান ক্রিকেট সাংবাদিক ১৯১৯-৩৯
প্রধান সঙ্গীত সমালোচক ১৯২৭-৪০
লন্ডন সঙ্গীত সমালোচক, ১৯৫১-৭
দাম্পত্যসঙ্গীএডিথ অনারিন ওয়াটেন কিং (মৃত্যু: ১৯৬৮)

কারদাস ক্রিকেট বিষয়ক লেখনিকে বিস্তৃতি ঘটিয়ে ও সমালোচনাধর্মী শিল্পের পর্যায়ে উত্তরণ ঘটান। সমসাময়িক ক্রিকেট লেখকগণের কাছে পথিকৃতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ক্রিকেট বিষয়ক প্রতিবেদন ও গ্রন্থাবলী প্রকাশের মাধ্যমেই মূলতঃ পরিচিতি পেলেও তিনি সঙ্গীত সমালোচনায়ও সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। সঙ্গীতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করেও স্যামুয়েল ল্যাংফোর্ডআর্নেস্ট নিউম্যানের ন্যায় প্রাচীন সমালোচকদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে নিজস্ব বিষয়ভিত্তিক সমালোচনাবোধ, আবেগপ্রবণতা ও ব্যক্তিক চেতনাকে লিখনীর মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। ব্যক্তিগত আকর্ষণ ও বন্ধুত্বসূলভ মনোভাবের কারণে ক্রিকেট ও সঙ্গীত দুনিয়ায় নিজেকে বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। তন্মধ্যে, নিউম্যান, স্যার টমাস বিচাম ও স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান অন্যতম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেন। দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে লেখতেন ও নিয়মিতভাবে রেডিও টকশোতে উপস্থিত হতেন। সঙ্গীত বিষয়েও গ্রন্থাদি প্রকাশ করেছেন ও নিজ আত্মজীবনী লেখেন। ইংল্যান্ডে ফিরে দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের লন্ডন সঙ্গীত সমালোচনা বিভাগে পুনরায় জড়িত হন। ক্রিকেট বিষয়ে লেখা চালিয়ে যেতে থাকেন ও তিনি তার বিশেষত্ব প্রয়োগ ঘটিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ করতে থাকেন। ১৯৬৪ সালে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই) পদবী লাভের পর কারদাসের সাহিত্যকর্ম সাধারণ্যের কাছে আরো পরিচিতি করে তোলে। ১৯৬৬ সালে নাইটহুড পুরস্কার পান। অন্যদিকে, সঙ্গীত ও ক্রিকেট বিশ্বে তিনি অগণিত সম্মাননা পেতে থাকেন। জীবনের শেষদিকে তরুণ লেখকদের কাছে তিনি গুরু বনে যান ও উজ্জ্বীবনী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন।

শৈশবকাল সম্পাদনা

ম্যানচেস্টারের রাসহোমে ৩ এপ্রিল, ১৮৮৮ তারিখে নেভিল কারদাসের জন্ম। শৈশবে ‘ফ্রেড’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন তিনি।[১] তবে, তার জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। কিছু সূত্রে ২ এপ্রিল, ১৮৮৯ তারিখ তুলে ধরা হয়েছে।[n ১] অন্যদিকে, ২ এপ্রিল, ১৯৫৯ তারিখে নৈশভোজন অনুষ্ঠানে কারদাস স্বয়ং ৭০তম জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করেন।[৬] তবে, জন্ম সনদে পূর্বেকার তারিখকেই নির্ধারণ করা হয়েছে।[৭] রাসহোমের ৪ সামার প্লেসে অবস্থানকারী রবার্ট ও অ্যান কারদাস দম্পতির বেশ কয়েকজন কন্যার একজন অ্যাডা কারদাস তার মা হন। ১৪ জুলাই, ১৮৮৮ তারিখে তিনমাসের কারদাসকে নিয়ে অ্যাডা তার পিতার বাড়ী ত্যাগ করেন ও জন ফ্রেডেরিক নিউসাম নামীয় এক কর্মকারকে বিয়ে করেন। তাদের পারিবারিক নাম ধারণ করলেও নিউসাম যে নেভিলের জৈবিক পিতা, তার কোন প্রামাণ্য দলিল নেই। কারদাসের আত্মজীবনীতে তিনি অর্কেস্ট্রায় বেহালাবাদক হিসেবে উল্লিখিত হন। নিউসামের বৈবাহিকজীবন স্বল্পকালীন ছিলন। কয়েকবছরের মধ্যেই অ্যাডা ও নেভিল সামার প্লেসে পিতার বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করেন।[৪]

নেভিলের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ স্থানীয় বোর্ড স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। ১০ বছর বয়সেই ডিকেন্সের উপন্যাস পড়তে শুরু করেন।[৮] হস্তলিখিত সাময়িকী ‘দ্য বয়েজ ওয়ার্ল্ডে’ তার সৃজনশীল প্রতিভা বিচ্ছুরিত হতে থাকে। সেখানে তিনি নিবন্ধ ও গল্প লিখতে থাকেন। সহপাঠীদেরকে এগুলো তিনি বিতরণ করতেন। এক বদরাগী শিক্ষক তার এ প্রতিভার সন্ধান পান।[৯]

 
১৯১০ সালের ম্যানচেস্টারের আলবার্ট স্কয়ারে কারদাস ও স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত বন্ধুরা নিয়মিতভাবে আলাপ-আলোচনায় মত্ত ও বিতর্কে অংশ নিতেন।

১৯০০ সালে রবার্ট কারদাসের মৃত্যুর পর পরিবারটি বেশ কয়েক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। এক পর্যায়ে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।[১০] ১৯০১ আলে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। স্বল্পকালীন অদক্ষ কাজে নিযুক্ত হবার পর ফ্লেমিংসের মেরিন ইন্স্যুরেন্স এজেন্সীতে একটু দীর্ঘসময়ের জন্য কেরাণী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।[৪][১১] কাকী বিট্রিসের সাথে একসময় বসবাস করতেন।[১১] বিট্রিস তাকে জীবনের মানে বুঝাতে শেখান। তিনি তাকে মূল্যবান গ্রন্থ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন যা তাকে লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।[১২] এছাড়াও, তিনি প্রথমবারের মতো ক্রিকেট ব্যাট কিনে দেন।[১৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

কারদাসের ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানে ক্রিকেট লেখাগুলো নির্বাচিত আকারে ১৯২২ থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে ধারাবাহিক বই হিসেবে প্রকাশিত হতে থাকে।[১৪] অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতায় অস্ট্রেলিয়ায় ‘ক্রিকেটারে’ ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের বডিলাইনের বিষয়ে পৌঁছতে পারেনি। ডগলাস জারদিনের বিতর্কিত বডিলাইন কৌশল অবলম্বনে কারদাসের সম্মতির বিষয়টি ৫ মার্চ, ১৯৩৩ তারিখের লেখনিতে উল্লেখ করা হয়। জারদিন দূর্বল চিত্তের লোক ছিলেন। ইংল্যান্ডের প্রধান বোলার লারউডের সর্বশক্তি প্রয়োগের ফলেও ১৯৩০ সালে দলের সাফল্য প্রমাণিত হয়নি।[১৫] ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে কারদাস এমসিসি দলের সহযোগী হিসেবে যান।[১৬] ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ইংরেজ ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে তার লেখা চালিয়ে যান। ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড অধিগ্রহণ করে। লর্ডসের প্যাভিলিয়নে ডব্লিউ. জি. গ্রেসের মৌন লক্ষ্য করেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।[১৭]

সঙ্গীত সমালোচক সম্পাদনা

মে, ১৯২৭ সালে ল্যাংফোর্ডের দেহাবসান ঘটে। ফলশ্রুতিতে কারদাস ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের প্রধান সঙ্গীত সমালোচক হন।[৪] বেশ কয়েক বছর তিনি ল্যাংফোর্ডের সান্নিধ্যে থেকেছেন। তার ভাষায়, ল্যাংফোর্ড অনুভব ও অনুবাদ করতে শিখিয়েছেন; অন্যদিক, নিউম্যান পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা শিখিয়েছেন।[১৮] কারদাসের সতীর্থ সমালোচক হুগো কোল তার ভূমিকাকে শিক্ষানুক্রমিকের তুলনায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকরূপে আখ্যায়িত করেন। শ্রবণের পরই তার সঙ্গীতের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। কারদাস সর্বশেষ প্রথিতযশা সঙ্গীত সমালোচক ছিলেন যিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেননি। প্রথমত তিনি একজন লেখক ও দ্বিতীয়ত সঙ্গীত সমালোচক।[১৯]

অস্ট্রেলিয়া গমন সম্পাদনা

লন্ডনের সংবাদপত্রসমূহে অর্থনৈতিক দূরবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানে কারদাস বহাল তবিয়তে ছিলেন।[২০] সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সালে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ফ্রি ট্রেড হল বন্ধ করে দেয়া হয় ও সামরিক কর্মকাণ্ডে দখল করা হয়। ম্যানচেস্টারে কোন সঙ্গীত আয়োজন করা হয়নি ও সকল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট বন্ধ করে দেয়া হয়। কারদাস বেকার হয়ে পড়েন। কার্যতঃ ম্যানচেস্টারে গৃহবন্দীর পর্যায়ে উপনীত হন। স্যার কিথ মারডকের কাছ থেকে প্রস্তাবনা পেয়ে দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার হেরাল্ডে যোগ দেন।[২১]

১৯২০-এর দশক থেকেই কারদাস অস্ট্রেলীয় পাঠকদের কাছে পরিচিত ছিলেন। জনৈক অস্ট্রেলীয় লেখক ১৯৩২ সালে উল্লেখ করেন যে, জনাব কারদাস স্বভাবসুলভ লেখক ও সর্বাপেক্ষা নিরপেক্ষ সমালোচক।[২২] ১৯৩৬ সালের মধ্যে, অস্ট্রেলীয় জনগণের কাছে ক্রিকেট লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পাশাপাশি তার সঙ্গীত বিষয়ে দক্ষতার কথাও অস্ট্রেলীয়রা জানতো।[২৩]

১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে জি.ও. অ্যালেনের নেতৃত্বে এমসিসি দল অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। এটিই দেশের পক্ষে কারদাসের প্রথম ভ্রমণের বিষয় ছিল।[২৪] এ সফরেই সি. বি. ফ্রাই ও ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সাবেক ইংরেজ ক্রিকেট অধিনায়ক ফ্রাই কারদাসের বাল্যকালের স্বপ্নের তারকা ছিলেন। লন্ডনের ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডের জন্য টেস্টের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন।[২৫] ব্র্যাডম্যানের মাঝে কারদাস ক্রিকেটীয় জ্ঞানের গভীরতা ও দায়িত্ববোধ খুঁজে পান যা অন্য কোন লেখক শনাক্ত করতে পারেননি।[২৬] অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যাবর্তনের পর এক স্বাক্ষাৎকারে কারদাস সঙ্গীতবিহীন অবস্থায় কীভাবে ছয়মাস সময় কাটাবেন তার এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। পরদিনই চোপিনহুগো উল্ফের নির্দেশনায় ব্যক্তিগতভাবে পার্থে ছাত্রদের মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশনায় মুগ্ধ হন।[১৬] এ সফরকালে কারদাস মেলবোর্নের দ্য হেরাল্ডে লিখেন ও ক্রিকেট বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান রেডিওতে ধারাভাষ্য দেন।[২৭]

১৯৪২ সালে সিডনির কিংস ক্রস জেলায় একটি ছোট ফ্লাট ভাড়া করেন। সেখানেই তিনি ‘টেন কম্পোজার্স’ (১৯৪৫) ও ‘অটোবায়োগ্রাফি’ (১৯৪৭) রচনা করেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছেন যে, শুরুর দিকে সাত ঘণ্টা লেখার অভ্যাসের বিষয়টি বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে এ জন্য তিনি সাংবাদিকতা থেকে অন্যকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধাবিত হতে পেরেছেন।[২৮]

যুদ্ধ পরবর্তী সময়কাল সম্পাদনা

যুদ্ধ শেষ হবার পর ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন। এসএমএইচের পক্ষ থেকে সঙ্গীত ও ক্রিকেট বিষয়ে স্থায়ীভাবে উচ্চবেতনের প্রস্তাবনা নাকচ করেন। এসএমএইচসহ টাইমস ও ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের জন্য এমসিসির ১৯৪৬-৪৭ সালের সফর তুলে ধরতে রাজী হন।[২৯] ঔপন্যাসিক চার্লস মর্গ্যান কারদাসের প্রতিবেদন সম্পর্কে লেখেন যে, ‘৪০ বছর ধরে সেরাগুলো পড়ছি। কে অস্বীকার করবে যে, জর্জ মেরেডিথ বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেছেন?’[৩০][n ২]

এপ্রিল, ১৯৪৭ সালে কারদাস ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত না নিলেও মনের সজীবতার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেন।[৩২] ইংল্যান্ডের যুদ্ধ পরবর্তী ক্ষতচিহ্ন দেখতে পান। চিরপরিচিত স্থাপনাগুলো অদৃশ্য হয়েছে। পুরনো বন্ধু ও পরিচিতজনেরা মারা গেছেন। ফ্রি ট্রেড হল গোলায় পুড়ে গেছে। লন্ডনের কুইন্স হল পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। তাস্বত্ত্বেও কারদাস ইংরেজ সঙ্গীত অঙ্গনে চমৎকার ভূমিকা রেখেছেন। লর্ডসের ক্ষতিবিহীন অবস্থায় সন্তুষ্ট হন ও চমকপ্রদ ক্রিকেট মৌসুম উপভোগ করেন। মিডলসেক্সের জুটি ডেনিস কম্পটনবিল এডরিচের ব্যাটিংশৈলী দেখেন।[৩৩] ঐ বছরের শেষদিকে সিডনিতে ফিরে যান। কিন্তু ১৯৪৮ সালের শুরুতে দ্য সানডে টাইমসের কাছ থেকে প্রস্তাবনা পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরতে পুনরায় ইংল্যান্ডে ফিরে যান।[৩৪]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

আর্থিক ও পেশাদারী নিরাপত্তার কারণে ১৭ জুন, ১৯২১ তারিখে কারদাস ও এডিথ কিংয়ের মধ্যকার স্মারকসূচক বৈবাহিকজীবন শুরু হয়।[৩৫] এডিথের মৃত্যুর পূর্বেকার ৪৭ বছর তাদের বিবাহ টিকেছিল। অস্বাভাবিকভাবেই এ দম্পতি একাকী সময় কাটাতেন ও খুব কম সময়ই একত্রে মিলিত হতেন যা বন্ধুদের কাছে অজ্ঞাত ছিল।[৩৬] কারদাস তার স্ত্রীকে বড়মানের ও চরিত্রবান হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি বোন হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন, স্ত্রী হিসেবে নয়।[৩৭] এ সময় থেকে পরবর্তীকাল পর্যন্ত ফ্রেডের পরিবর্তে পারিবারিক নাম নেভিল গ্রহণ করেন। সঙ্গীত পর্যালোচনায় সংক্ষেপে এন.সি. রাখেন যা তার ক্রিকেটারের পরিচিতি থেকে স্বতন্ত্র করেন।[৪][n ৩]

১৯৪২ সালের শেষদিকে তার স্ত্রী ইংল্যান্ড থেকে জাহাজে চড়ে অস্ট্রেলিয়ায় তার সাথে যোগ দেয়ার ইচ্ছার কথা জানালে কারদাস উভয়ের উপযোগী বৃহৎ ফ্লাটে স্থানান্তরিত হবার কথা অগ্রাহ্য করেন। স্ত্রীর জন্য এক মাইল দূরবর্তী পৃথক জায়গা ভাড়া করেন। সপ্তাহে একদিন একত্রে আহার করতেন। তবে, ব্যাপক অর্থে তারা পৃথকভাবে বসবাস করেন।[৩৯]

আনুষ্ঠানিকভাবে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার পরও অনেক রমণীর সাথে কারদাসের সম্পর্ক ছিল। তন্মধ্যে, হিল্ডা বার্বি এড। ১৯৩৭ সাথে এডের আকস্মিক মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত ১৯৩০-এর দশকে শয্যাসঙ্গী হন।[৪০] কারদাস তাকে মিলেডি নামে ডাকতেন ও ফুল স্কোরের একটি অধ্যায় তাকে উৎসর্গ করেন।[৪১] অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসার পর তার কাছাকাছি থাকা মেয়েবন্ধুদের মধ্যে মার্গারেট হিউজ ও এলসি মেয়ার-লিজমান অন্যতম যাদেরকে তিনি যথাক্রমে ক্রিকেট স্ত্রী ও সঙ্গীত স্ত্রী নামে ডাকতেন।[৪] তন্মধ্যে, হিউজ কারদাসের চেয়ে প্রায় ৩০ বছরের ছোট ছিলেন। কারদাসের মৃত্যুর পর হিউজ সাহিত্যকর্ম পরিচালনা করতে এবং ক্রিকেট ও সঙ্গীতবিষয়ক অনেকগুলো সঙ্কলন সম্পাদনা করেন।[৪২]

দেহাবসান সম্পাদনা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে লন্ডনের নাফিল্ড ক্লিনিকে তার দেহাবসান ঘটে।[৪] এর কয়েকদিন পূর্বে নিজ গৃহে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শবানুষ্ঠান নিভৃতে পরিচালিত হয়। ৪ এপ্রিল দুই শতাধিক ব্যক্তি কভেন্ট গার্ডেনের সেন্ট পলসে উপস্থিত ছিলেন। কারদাসের ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সঙ্গীতজ্ঞরা ছিলেন। ফ্লোরা রবসনওয়েন্ডি হিলার বক্তব্য রাখেন। রয়্যাল ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার ক্লিফোর্ড কার্জন মোজার্টের পিয়ানো কনসার্টো নং ২৩-এর দ্বিতীয় অধ্যায় মঞ্চস্থ হয়।[৪৩] ক্রিকেট লেখক ও ইতিহাসবেত্তা অ্যালান গিবসন ব্ল্যাকের আগুরিস অব ইনোসেন্স থেকে উদ্বৃতি তুলে ধরেন।[৪৪]

রচনাসমগ্র সম্পাদনা

এ তালিকায় কারদাস কর্তৃক রচিত গ্রন্থসহ সঙ্কলন, ভিন্ন লেখক, বই সম্পাদনা বা যৌথ রচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার মরণের পরও প্রকাশনা এর অন্তর্ভুক্ত। প্রকাশনার বছরটি মূল প্রকাশনার সাথে জড়িত। অনেক গ্রন্থই পুণঃপ্রকাশিত হয়েছে যার অধিকাংশই ভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে হয়েছে।

আত্মজীবনী সম্পাদনা

সঙ্গীত সম্পাদনা

ক্রিকেট সম্পাদনা

সাধারণ সংগ্রহ সম্পাদনা

পাদটীকা ও তথ্যসূত্র সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Both Cardus's Who's Who entry, and Brookes's 1985 biography, give 2 April 1889 as the birth date;[২][৩] the Oxford Dictionary of National Biography, and Robin Daniels's 2009 memoir, give the correct date.[৪][৫]
  2. Morgan cited this passage from a Cardus report: "Naturally the English players were now men uplifted; mercury bubbled in the blood ... The issue was here a very ache of intensity; the arms of the deities above were stretching far beyond their reach as Miller went out of his ground to Wright." Cardus's friend the publisher Rupert Hart-Davis considered that such applause "did to some extent go to N.C.'s head, but it's difficult to imagine how one could write about cricket year after year without getting bored with the ordinary and trying to introduce something a little different. He has often sworn he would write of the game no more, but always his love of it draws him back."[৩১]
  3. According to Brookes, Cardus had earlier used the name "Neville Cardus" for his 1912 Musical Opinion article.[৩৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Brookes, p. 3 and pp. 67–74
  2. "Cardus, Sir Neville"। Who's Who Online edition। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  3. Brookes, p. 17
  4. Howat, Gerald"Cardus, Sir (John Frederick) Neville"। Oxford Dictionary of National Biography, Online edition। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১২  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন)
  5. Daniels, p. 3
  6. Hart-Davis: Lyttelton Hart-Davis Letters, Volume 4: letters of 29 March and 5 April 1959, pp. 227 and 230
  7. Barnes, Simon (৫ ডিসেম্বর ১৯৮৭)। "Sporting Diary"The Times 
  8. Daniels, p. 10
  9. Cardus: Second Innings, pp. 83–90
  10. Brookes, p. 47
  11. Daniels, pp. 11–12
  12. Brookes, pp. 22 and 42
  13. Cardus: Autobiography, p. 34
  14. Brookes, p. 77
  15. Cardus, Neville (৫ মার্চ ১৯৩৩)। "Nobody will deny the better side won the rubber"The Manchester Guardian 
  16. Brookes, pp. 130–31
  17. Cardus: Autobiography, p. 167
  18. Cardus: Autobiography, pp. 213–15
  19. Cole, Hugo (১ মার্চ ১৯৭৫)। "Sir Neville Cardus"। The Guardian। পৃষ্ঠা 8। 
  20. Hart-Davis: The Essential Neville Cardus p. 13
  21. Cardus: Second Innings, p. 223
  22. "Verity's Great Feat."The Morning Bulletin। ১৬ জুলাই ১৯৩২। পৃষ্ঠা 9। 
  23. "Music and the Drama"The Courier-Mail। ৪ জুলাই ১৯৩৬। পৃষ্ঠা 18। 
  24. Brookes, p. 128
  25. Wilton, p. 376
  26. Brookes, pp. 128–31 and Cardus: Autobiography, pp. 150–51
  27. "The Coming Tour in Australia: "Cricketer" to be Special Correspondent of the "Manchester Guardian""। The Manchester Guardian। ১৮ আগস্ট ১৯৩৬। পৃষ্ঠা 8। 
  28. Cardus: Second Innings, p. 225
  29. Brookes, pp. 175–76 and 178
  30. Morgan, Charles (৮ জানুয়ারি ১৯৪৭)। "Meredith at Melbourne"The Times। পৃষ্ঠা 5। 
  31. Hart-Davis: Lyttelton Hart-Davis Letters, Volume 1: letter of 3 June 1956, p. 141
  32. Cardus: Second Innings, p. 238
  33. Brookes, pp. 182–84
  34. Cardus: Full Score, pp. 198–99
  35. Brookes, pp. 100–01
  36. Brookes, pp. 118–21
  37. O'Neill, Sally। "Cardus, Sir John Frederick Neville (1888–1975)"Australian Dictionary of Biography। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১২ 
  38. Brookes, p. 63
  39. Brookes, pp. 169 and 171
  40. Brookes, pp. 123–25
  41. Cardus: Full Score, pp. 67–74
  42. Mason, Tony। "Hughes, Margaret Patricia"। Oxford Dictionary of National Biography, Online edition। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১২  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন)
  43. Brookes, p. 263
  44. "Sir Neville Cardus: Text of a tribute by Alan Gibson"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ 

গ্রন্থপঞ্জী সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা