নুডলস

খামিরহীন মাখা ময়দার তাল থেকে তৈরি মোটা সেমাইয়ের মতো খাবার

নুডলস একধরনের খাবার যা ঝটপট খাবার (ইন্সট্যান্ট ফুড) হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। নুডলসের উৎস নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও অধিকাংশ মত অনুযায়ী এটা চীনদেশীয় খাবার বা চীনাদের আবিষ্কার। ময়দার তাল থেকে বিভিন্ন ধরনের নুডলস তৈরি করা হয়ে থাকে। লম্বা, সরু সুতার মত দেখতে নুডলসই বেশি দেখা যায়। তবে এটা ঢেউ খেলানো, নলাকার, খোলসাকার, ভাঁজ করা ইত্যাদি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। নুডলস সাধারণত ফুটন্ত পানিতে রান্না করা হয়। অনেকসময় রান্নার তেল ও লবণ ব্যবহার করা হয়। এদেরকে প্রায়শই কড়া ভাজা করা হয়। চাটনি দিয়ে নুডলস পরিবেশন করা হয়। অল্প সময় সংরক্ষণের জন্য নুডলস রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়। নুডলস শব্দটি জার্মান শব্দ নুডেল থেকে এসেছে।[১]

লুডুলস
চীনের ডালিয়ানে ঐতিহ্যবাহী নুডলস তৈরী
অন্যান্য নামনুডল/নুডলস/নুডুলস/লুডুলস/নুডুস
উৎপত্তিস্থলচীন
অঞ্চল বা রাজ্যপূর্ব এশিয়া
ভিন্নতাবিবিধ

ইতিহাস সম্পাদনা

 
ওয়ারশ এর জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত ভার্মির ভ্যান ইউট্রেচটের আঁকা একজন ব্যক্তি নুডলস খাচ্ছেন।

নুডলসের উৎস অমীমাংসিত। দাবী করা হয়ে থাকে নুডলসের চীনা[২][৩], আরবীয় ও ইউরোপীয় উৎসের[৪] । একটি নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে নুডলস খাওয়ার সব থেকে পুরাতন নিদর্শন রয়েছে ৪০০০ বছর আগেকার চীনে। ২০০৫ সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে কাজ করার সময়ে মাটির পাত্র খুঁজে পায় যেখানে ফক্সটেইল মিলেট এবং ব্রুমকর্ণ মিলেটের সন্ধান পাওয়া যায়]][৫] । নুডলসের লিখিত নথি পাওয়া যায় ২৫-২২০ সালের মধ্যে পূর্ব হান সাম্রাজ্যকালে লিখিতে একটি বইয়ে).[৬] । গমের ময়দার খামির থেকে তৈরী নুডলস হান রাজত্বের প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়[৭]। ট্যাং সাম্রাজ্যকালে সর্বপ্রথম নুডলস কেটে সুতাকারের তৈরি করা হয় এবং ইউয়ান রাজত্বকালে শুকনো নুডলস তৈরির প্রচলন হয়।

এশিয়া সম্পাদনা

 
মশলাযুক্ত গোমাংস নুডলস

নবম শতকের শুরুর দিকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে চীনের গমের নুডলস জাপানে আসে। ১৩ শতকে পারস্যের জনগণ রেশতেহ নুডলস খেতো। বিভিন্ন উপাদান থেকে নুডলস তৈরির গবেষণা চলতেই থাকে। ১৯২ থেকে ১৮৯৭ সালে কোরিয়ার জোসেয়ন রাজত্বকালে বাজরা থেকে নুডলস তৈরি আবিষ্কার হয়। চাইনিজ নুডলসের উপর ভিত্তি করে তৈরি র‌্যামেন নুডলস ১৯০০ সালে জাপানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মমফোকু আন্ডো ইন্সট্যান্ট নুডলস আবিষ্কার করেন এবং ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম জাপানে বাজারজাত করা হয়[৮]

ইউরোপ ও নিকট প্রাচ্য সম্পাদনা

খ্রিস্টপূর্বাব্দ ১ম শতকে হোরেস লাগানা নামক পাতলা ময়দার পাতের উল্লেখ করেছেন। যদিও এই লাগানা নামক এই পাতলা পাতের রান্নার ধরন আজকের দিনে তাজা অথবা শুকনো পাস্তা পণ্যের মত নয় শুধুমাত্র উপাদান ও আকারের মিল আছে। দ্বিতীয় শতকে গ্রিক শল্যবিদ গ্যালেন পানি ও ময়দার মিশ্রণে ঘরে তৈরি ইত্রিয়নের উল্লেখ করেছেন। সিদ্ধ ডাফকে উল্লেখ করতে লাতিন ভাষায় ইরিত্রিয়াম ব্যবহার করা হয়। জেরুজালেমের তালমুদ থেকে জানা যায় ৩য় থেকে ৫ম শতকে বাইজান্টাইন প্রদেশ প্যালেস্টিনা প্রিমা ও প্যালেস্টিনা সেকুন্ডাতে ইরিত্রিয়ামের ব্যবহার খুবই সাধারণ ছিলো। শুকনো পাস্তার প্রথম লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায় ৫ম শতকের আরবদের কাছে। ৯ম শতকের আরব শল্যবিদ ইশো বার আলী ইত্রিয়ার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে যে গ্রিক উৎসের আরবি শব্দ যা সুতোর মত দেখতে, সুজি থেকে প্রস্তুত করা হয় এবং রান্নার পূর্বে শুকানো হয়। ১১৫৪ শতকে মাহমুদ আল ইদ্রিসি লেখেন যে নরমান সিসিলিতে প্রস্তুত ইত্রিয়া আমদানি করা হতো। পারস্য বৃত্তের আরামীয় ভাষীরা ইত্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত ছিলো। ইসলামী শাসনকালীন সময়ে ময়দার তাল থেকে ছোট স্যুপ নুডল প্রস্তুতের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ইতালীতে পাস্তা সম্পর্কে শক্ত তথ্য পাওয়া যায় ১৩ বা ১৪ শতকের। ১৩ শতকে পেড্রে জিয়োভান্নি দেল কারপিনির মত ইউরোপীয়গণ এশিয়া ভ্রমণের ফলে এটা ইউরোপে যেতে পারে।

উপাদান সম্পাদনা

চাল সম্পাদনা

  • বানহ ফো - ভিয়েতনাম
  • শাহে ফে বা হো ফুন
  • চালের নুডলস মিফেন
  • ইডিয়াপ্পাম - ভারতীয় চালের নুডলস
  • খানম চিন - থাই রন্ধনশৈলীর চালের নুডলস

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Harper, Douglas। "noodle"Online Etymology Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. "The History of Noodles: How a Simple Food Became a Worldwide Staple"The Atlantic 
  3. "A short history of Japan's long noodles"The Japan Times 
  4. Serventi ও Sabban 2002, পৃ. 271-344।
  5. Lu, Houyuan; Yang, Xiaoyan; Ye, Maolin; ও অন্যান্য (১৩ অক্টোবর ২০০৫)। "Culinary archaeology: Millet noodles in Late Neolithic China"। Nature437 (7061): 967। ডিওআই:10.1038/437967aপিএমআইডি 16222289 
  6. Roach, John (১২ অক্টোবর ২০০৫)। "4,000-Year-Old Noodles Found in China"National Geographic। পৃষ্ঠা 1–2। 
  7. Sinclair ও Sinclair 2010, পৃ. 91।
  8. "Momofuku Ando"The Sunday Times। TIMESONLINE। ১০ জানুয়ারি ২০০৭। (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)