নাজমুল হক

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ৭ নং সেক্টর কমান্ডার

মেজর নাজমুল হক (১ আগস্ট, ১৯৩৮ - ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তার ডাকনাম টুলু। তিনি ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২][৩][৪]

মেজর নাজমুল হক
জন্ম(১৯৩৮-০৮-০১)১ আগস্ট ১৯৩৮
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৭১(1971-09-27) (বয়স ৩৩)
সমাধিচাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে[১]
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশাসাবেক সেনা কর্মকর্তা
কর্মজীবন১৯৬২ সালের ১৪ অক্টোবর- ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর[১]
পরিচিতির কারণমুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টর কমান্ডার
সন্তানইসরাত জাহান সুরভী ও নওরীন সাবা শিউলী[২]
পিতা-মাতা
  • হাফেজ আহমদ খান[২] (পিতা)
  • জয়নাব বেগম[২] (মাতা)

জীবন সম্পাদনা

মেজর নাজমুল হক ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার তৎকালীন সাতকানিয়া উপজেলার অন্তর্গত আমিরাবাদ ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমদ, মা জয়নাব বেগম। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে কুমিল্লার পেশোয়ারা পাঠশালা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে[৩] ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর আর্টিলারী কোরে কমিশন লাভ করেন।[২][৪]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধের সময় নাজমুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি রাজশাহী জেলা, পাবনা জেলা, বগুড়া জেলা এবং দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গড়ে ওঠা ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার পদে ১৯৭১ এর এপ্রিল থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।[৩] তরংগপুর ছিল তার হেডকোয়ার্টার।[২] তার সেক্টরে তিনি গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতেন এবং মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতেন যারা প্রথাগত সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলো না। প্রায় পনের হাজার মুক্তিযোদ্ধা এ সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর তার অধীনেই যুদ্ধ করেন।

১৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে মেজর নাজমুল হককে নওগাঁয়ইপিআর উইংয়ের অধিনায়ক করে পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে পরদিন স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে নওগাঁ মহকুমাকে শত্রুমুক্ত স্বাধীন বাংলার অংশ ঘোষণা করেন তিনি। স্থানীয় যুবকদের হাতে তিনি তুলে দেন অস্ত্র। স্বেচ্ছাসেবক যুবকদের নিয়ে গঠন করেন ইপিআর মুজাহিদ বাহিনী। সেই বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে প্রথমেই তিনি নওগাঁ ও বগুড়ার পাকিস্তানি হানাদারদের ক্যাম্প দখল করে শত্রুমুক্ত করেন গোটা বগুড়া জেলা।[৩] ২৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে তার বাহিনীর দ্বিমুখী আক্রমণে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে হানাদাররা। দিনাজপুরের ধনধনিয়াপাড়ায় ১৮ জুন, ১৯৭১ তারিখে বড় রকমের এক যুদ্ধের পর ওই এলাকা মেজর নাজমুলের বাহিনীর দখলে আসে। এতে ১৪ জন পাকিস্তানি সেনা মারা যায়।[২]

মৃত্যু সম্পাদনা

 
সোনা মসজিদ আঙিনায় অবস্থিত মেজর নাজমুল হক ও বীর শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি

১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেজর নাজমুল হক মিত্রবাহিনীর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে ভারতের শিলিগুড়ি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।[৩] চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা ছোট সোনা মসজিদ এর প্রাঙ্গনে মেজর নাজমুল হকের সমাধি রয়েছে। তার মৃত্যুর পর মেজর কাজী নুরুজ্জামানকে ৭ম সেক্টরের নতুন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (২০১২)। "হক, মেজর নাজমুল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৪ 
  2. "সেক্টর কমান্ডার নাজমুল হকের মুক্তিযুদ্ধ"দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৪ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "খেতাববঞ্চিত এক বীরের কথা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৩ 
  4. ওসমান, অভীক (২০১৭)। শহিদ মেজর নাজমুল হক : সেক্টর ৭-এর বিস্মৃত কমান্ডারের উপাখ্যান। ঢাকা: গদ্যপদ্য। পৃষ্ঠা ১০। আইএসবিএন 9789849175391 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

১. দৈনিক প্রথম আলো, "স্মরণ মুক্তিযুদ্ধের বীর মেজর নাজমুল" নাসির উদ্দিন হায়দার, ২৭.০৯.২০০৯ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা