নাইট হলেন কোন শাসক বা দেশের জন্য তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, বিশেষ করে সামরিক কাজের জন্য, সেই শাসক বা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা কর্তৃক প্রদত্ত সম্মানসূচক উপাধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ঐতিহাসিকভাবে, ইউরোপে সাধারণত অশ্বারোহী যোদ্ধাদের নাইটহুডে ভূষিত করা হয়।[১] মধ্যযুগে নাইটহুড নিম্ন শ্রেণীর অভিজাত হিসেবে বিবেচিত ছিল। মধ্যযুগের শেষের দিকে, এই পদক্রমটি বীরত্বের সূচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মূলত নাইট হলেন একজন সামন্ত, যিনি একজন অভিজাত ব্যক্তির যোদ্ধা হিসেবে তার রাজস্ব আদায় করে থাকেন।[২] অভিজাতগণ তাদের নাইটদের বিশ্বাস করতেন এবং তারা ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করায় পারদর্শী ছিল।

বর্ম পরিহিত একজন মধ্যযুগীয় অশ্বারোহী নাইট।

মধ্যযুগে ১২শ শতাব্দীতে এই উপাধি প্রদানের শুরু থেকে ১৫শ শতাব্দীতে ডিউচি ও বার্গান্ডি পর্যন্ত নাইটহুড মূলত ঘোড়সওয়ারদের সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই যোগসূত্র বীরত্ব, অশ্বারোহী সৈনিক ও অন্যান্য সম্পর্কিত শব্দের সাথে জড়িত ছিল। অশ্বারোহী যোদ্ধাদের প্রদত্ত বিশেষ সম্মাননা মুসলিম বিশ্বে ফুরুসিয়া, গ্রিসে হিপেউস ও রোমে ইকুয়েস নামে পরিচিত ছিল।[৩]

মধ্যযুগের শেষের দিকে, যুদ্ধবিগ্রহের নতুন কৌশল আবিষ্কার হলে বর্ম পরিহিত ধ্রুপদী নাইটদের উপযোগ কমতে থাকে, কিন্তু অনেক দেশে তাদের উপাধি রয়ে যায়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন খ্রিস্টীয় গির্জায় নাইটহুডের অনেক ক্রম রয়ে গেছে। কয়েকটি ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান দেশে এবং তাদের প্রাক্তন অঞ্চলসমূহে এই ক্রম দেখতে পাওয়া যায়, যেমন রোমান ক্যাথলিকদের অর্ডার অব দ্য হলি সেপালচার, প্রটেস্ট্যান্টদের অর্ডার অব সেন্ট জন, ইংরেজদের অর্ডার অব দ্য গার্টার, সুইডিশদের রয়্যাল অর্ডার অব দ্য সেরাফিম, এবং রয়্যাল নরওয়েজিয়ান অর্ডার অব সেন্ট ওলাভ। এই পদক্রমে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের নিজস্ব মানদণ্ড রয়েছে, কিন্তু সাধারণত রাজ্যের প্রধান, শাসক বা প্রধান ধর্মযাজক মেধাসম্পন্ন কাজের অবদানের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিকে নাইটহুড প্রদান করে থাকেন, যেমন ব্রিটিশ সম্মাননা পদ্ধতিতে গির্জা বা দেশের সেবার জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে নাইটের সমকক্ষ নারী উপাধি হল ডেম।এছাড়াও বর্তমানে নাইট বা নাইটহুড একটি উপাধি। আমাদের দেশে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহান বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ সরকার দ্বারা নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। পরে অবশ্য জালিওনাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগ করেন।

মধ্যযুগীয় নাইটহুডের বিবর্তন সম্পাদনা

প্রাক-ক্যারোলিঞ্জিয়ান আভিজাত্য সম্পাদনা

প্রাচীন রোমে অর্দো একুয়েস্ত্রিস নামে এক শ্রেণীর নাইট ছিল। তৃতীয় শতাব্দীতে ইউরোপ দখল করা জার্মানিক সৈন্যদের কিছু অংশ বর্মাস্ত্র পরিহিত অশ্বারোহী ছিল এবং অস্ট্রোগথ শ্রেণীর কিছু সৈন্য অশ্বারোহী ছিল।[৪] যাই হোক, ফ্রাঙ্কদের সেনবাহিনীতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ পদাতিক সৈন্য, পদাতিক অভিজাত ও কমিতাতাস নিযুক্ত ছিল। কমিতাতারা প্রায়ই পায়ে হেঁটে যুদ্ধ করার পরিবর্তে ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করত। যখন ফ্রাঙ্কিশ শাসক চার্লস মার্টেলের বাহিনী ৭৩২ সালে তুরের যুদ্ধে উমাইয়া আরবকে পরাজিত করে, তখনও ফ্রাঙ্কিশ বাহিনী বেশিরভাগ পদাতিক সৈন্য ছিল। যারা যুদ্ধে ঘোড়া ব্যবহার করেছিল, তাদেরও যুদ্ধের সময় ঘোড়া থেকে নামতে হত।

ক্যারোলিঞ্জিয়ান যুগ সম্পাদনা

প্রারম্ভিক মধ্যযুগীয় সময়ে কোন সুসজ্জিত ঘোড়সওয়ারকে লাতিন ভাষায় "নাইট" বা "মাইলস" হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।[৫] ৮ম শতাব্দীতে শার্লমেনের শাসনামলে প্রথম নাইটদের দেখা যায়।[৬][৭][৮] ক্যারোলিঞ্জিয়া যুগের অগ্রগতির সাথে সাথে, ফ্রাঙ্করা বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ শুরু করে, এবং যোদ্ধাদের একটি বড় অংশ সম্রাটের সঙ্গে ঘোড়ায় আরোহণ করে আক্রমণে যেত। প্রায় একই সময়ে জিন আবিষ্কারের সাথে সাথে ফ্রাঙ্করা যুদ্ধক্ষেত্রে অশ্বারোহী সৈন্যের মত ঘোড়ার পিঠে থেকেই যুদ্ধ চালিত যেত এবং পরবর্তীতে কয়েক শতাব্দী তা চলতে থাকে।[৯] যদিও ১৪ শতাব্দীর শেষের দিকে কিছু জাতির নাইটগণ পদাতিক সেনাবাহিনী হিসেবে যোগ দেন, তবে বর্শা ও পরবর্তীতে বল্লম সজ্জিত নাইটদের একটি দল শক্তিশালী হিসেবে রয়ে যায়। একজন যুবককে যুদ্ধাস্ত্র প্রদানের প্রাচীন ক্যারোলিঞ্জিয়ান উদ্‌যাপন নাইটহুড উদ্‌যাপনের শুরুর সময়ে এই উদ্‌যাপনকে প্রভাবিত করে, যেখানে একজন অভিজাত ব্যক্তি বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও রীতি পালনের মাধ্যমে অস্ত্র প্রদান করেন এবং নাইট ঘোষণা দিয়ে থাকেন।[১০]

ধর্মযুদ্ধ সম্পাদনা

 
ইউরোপে অটোমান যুদ্ধ চলাকালীন তুর্কি ও খ্রিস্টান নাইটদের মধ্যে যুদ্ধ।

১২শ শতাব্দীতে নাইটহুড সামাজিক পদক্রম হয়ে ওঠে এবং মিলিটিস গ্রেগারি (অভিজাত ভিন্ন অশ্বারোহী সৈন্য) ও মিলিটিস নোবিলেস (সত্যিকারের নাইট) এই দুই শ্রেণিবিভাগ দেখা যায়।[১১] "নাইট" শব্দটি সামাজিক পদাক্রম বুঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে, এবং পূর্ণ বর্মাস্ত্র সজ্জিত অশ্বারোহী সৈন্যদের "অস্ত্র সজ্জিত সৈন্য" হিসেবে ডাকা হয়। ১০৯৯ সালে প্রথম ধর্মযুদ্ধ চলাকালীন সেবাদানকারী ও পবিত্র সমাধি সংক্রান্ত নাইটহুড প্রদান শুরু হয়, এবং পরবর্তীতে অর্ডার অব সেন্ট লাজারুস (১১০০), নাইট্‌স টেম্পলার্স (১১১৮) ও তেওতোনিক নাইট (১১৯০) উপাধি প্রদান শুরু হয়। এইসব উপাধি প্রদানের শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল এসব শাসকতান্ত্রিক পদক্রম হয়, যার সদস্যরা সাধারণ সৈন্যদের মত তীর্থযাত্রীদের রক্ষা করবে। পরের শতাব্দীতে পবিত্র ভূমি বিজয় ও ধর্মযুদ্ধ ভিত্তিক রাষ্ট্রের জন্মের ফলে এই পদক্রমগুলো ক্ষমতাধর ও সম্মানিত হয়ে ওঠে।

পালাদিন, ম্যাটার অব ফ্রান্স ও ম্যাটার অব ব্রিটেনের মত যোদ্ধা বিষয়ক ইউরোপীয় কিংবদন্তি সাহিত্য যোদ্ধা শ্রেণীর মধ্যে বীরত্বের বিষয়টি জনপ্রিয় করে তুলে।[১২][১৩] খ্রিস্টান যোদ্ধাদের মূল্যবোধের মত বীরত্বের আদর্শ এবং "ভৃত্য, সৈন্য" থেকে "নাইট" শব্দে রূপান্তর, আদর্শ শ্রেণীর সদস্যকে অভিহিত করার জন্য অশ্বারোহী "অস্ত্রসজ্জিত সৈন্য" শব্দের ব্যবহারে ধর্মযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। একদিকে তা শাসকতান্ত্রিক যোদ্ধাদের সেনাবাহিনীর পদক্রম থেকে অনুপ্রাণিত, অন্যদিকে ফুরুসিয়ার ইসলামী (সারসেন) আদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত।[১৩][১৪]

মধ্যযুগে নাইট সংস্কৃতি সম্পাদনা

প্রশিক্ষণ সম্পাদনা

১০ম শতাব্দীতে নাইট বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচিতি লাভ করতে থাকে। নাইট উপাধি দিয়ে মূলত সেনাদের বুঝানো হত, এবং অভিজাত শ্রেণীর লোকজন, যেমন জমিদারদের উচ্চতর পদক্রম ছিল।[১৫] অভিজাতগণ সামন্তদের বিশ্বস্ততা, প্রতিরক্ষা ও সেবার জন্য জমির রাজস্বের অংশ প্রদান করতেন। এছাড়া অভিজাতগণ নাইটদের তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ, খাদ্য, বর্ম, অস্ত্র, ঘোড়া ও অর্থ প্রদান করতেন।[১৬] রাজস্ব গ্রহণের মেয়াদ অনুযায়ী নাইটদের কোন জমির উপর আধিপত্য থাকত, যা তার কর্মজীবনের সম্পূর্ণ সময় থাকত। প্রত্যেক নাইট জমির পরিবর্তে তার সেবা প্রদান করতেন। সামন্ত ও জমিদারদের বহু সংখ্যক নাইট থাকতে পারত, তবে অধিক অভিজ্ঞতা লব্ধ নাইটই সকলের প্রথম পছন্দ ছিল। ফলে, সকল নিম্ন শ্রেণীর অভিজাতদেরই সফল নাইট হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হতো।[১৫] অপর একজন নাইটের অধীনে যুদ্ধ করা নাইটকে বলা হতো নাইট ব্যাচেলর এবং তার নিজের ব্যানারের অধীনে যুদ্ধ করা নাইটকে বলা হতো নাইট ব্যানারেট

পেজ সম্পাদনা

একজন ব্যক্তিকে নাইট হতে হলে অভিজাত বংশে জন্ম নিতে হবে - সাধারণত নাইট বা জমিদারের পুত্র।[১৬] কিছু ক্ষেত্রে, সেনাবাহিনীতে অসাধারণ কাজের জন্য সাধারণ ব্যক্তিরাও নাইট হতে পারে। অভিজাতদের সন্তানদের সাত বছর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অভিজাত শ্রেণীর ধাইমাগণ দুর্গের অভ্যন্তরে লালনপালন করে থাকেন।

সাত বছর বয়সী পুত্রকে পেজ উপাধি দেওয়া হতো এবং দুর্গের প্রধানদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হতো। প্রারম্ভিক প্রশিক্ষণ হিসেবে তাদের শিকারী ও বাজপাখি পালকদের সাথে শিকার এবং পুরোহিতদের অধীনে একাডেমিক শিক্ষার জন্য পাঠানো হতো। পেজরা পরবর্তীতে যুদ্ধে বয়োজ্যেষ্ঠ নাইটদের সহকারী হতো, তাদের বর্ম বহন করত ও পরিষ্কার করত, ঘোড়ার দেখাশুনা করত, এবং মালপত্র ঘোছাত। তারা নাইটদের সাথে বিভিন্ন আক্রমণে যোগ দিত, এমনকি ভিন্ন দেশেও। জ্যেষ্ঠ পেজরা নাইটের নির্দেশনা অনুযায়ী তরবারি চালানো, অশ্বারোহণ, শৌর্য্য প্রদর্শন, যুদ্ধ বিগ্রহ ও একে অপরের সাথে যুদ্ধ (কাঠের তলোয়ার ও বর্শা দিয়ে) করত।

স্কোইয়ার সম্পাদনা

 
স্কটল্যান্ডের প্রথম ডেভিড একজন স্কোইয়ারকে নাইট বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

১৫ বছর বয়স হলে একটি বালক স্কোইয়ার হয়। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে নতুন স্কোইয়ারকে একজন বিশপ বা পুরোহিত একটি তলোয়ার দিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং তার মালিকের বাড়িঘরের দেখাশুনাসহ তার যাবতীয় কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার করান। এই সময়ে স্কোইয়াররা একে অপরের সাথে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেত এবং বর্ম পড়ার অনুমতি দেওয়া হত।

স্কোইয়ারদের সাতটি বিষয়ে তৎপর হতে হতো, সেগুলো হল - ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার ও ঝাপ দেওয়া, বিভিন্ন অস্ত্র ছোড়া, উচ্চস্থানে আরোহণ করা, মল্লযুদ্ধ ও তরবারি চালনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ, উচ্চ লাফ ও নৃত্য। এসব হল নাইটহুডের জন্য দক্ষতা অর্জনের পূর্বশর্ত। বর্ম পড়ার পর এই সকল বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হতো।[১৭]

২১ বছর পূর্ণ হলে স্কোইয়ারগণ নাইট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করত।

সম্মাননা সম্পাদনা

নাইট সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান সাধারণত কোন বড় উৎসব বা ছুটির উপলক্ষ্য, যেমন ক্রিসমাস বা ইস্টার, কিংবা মাঝে মাঝে কোন অভিজাত বা রাজবংশীয় ব্যক্তির বিয়ের অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হতো। এই অনুষ্ঠানে সাধারণত অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যায় রীতি অনুসারে গোসল এবং রাতে এক ধরনের উপাসনার আয়োজন থাকত। অনুষ্ঠানের দিন হবু নাইটকে শপথ বাক্য পাঠ করতে হত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান নতুন নাইটকে তলোয়ার প্রদানের মাধ্যমে এই উপাধি প্রদান করত।[১৫][১৬] যুদ্ধে সাহসিকতা ও যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারলে স্কোইয়ারদেরকেও নাইটহুডে ভূষিত করা হতো।

পতন সম্পাদনা

১৫শ শতাব্দীর শেষের দিকে নাইটপ্রথা সেকেলে হয়ে যেতে থাকে, কারণ বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের পেশাদার সেনাবাহিনী গড়ে তুলে। তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান দ্রুত হত, ব্যয় কম হত এবং সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যেত।[১৮][১৯] উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ভাবনের ফলে বর্মের ব্যবহার হ্রাস পায়, এবং সৈন্যদের বন্দুকের প্রশিক্ষণ প্রদানে নাইটদের প্রশিক্ষণের তুলনায় কম সময় লাগতো। আধুনিক সরঞ্জামের খরচ অনেক কম এবং বন্দুক সহজেই নাইটের বর্মে ঢুকে যেতে পারে। ১৪শ শতাব্দীতে পাইক সংবলিত পদাতিকদের ব্যবহার এবং ভারী অস্ত্রের বিপরীতে কাছাকাছি থেকে যুদ্ধ করার কৌশল বেশি কার্যকর বলে গণ্য হয়। ন্যান্সির যুদ্ধে এই বিষয়টি দেখা যায়, যেখানে চার্লস দ্য বোল্ডের বর্ম পরিহিত বীরযোদ্ধারা শুধুমাত্র পাইকওয়ালা সুইস সেনাদের কাছে পরাজিত হয়।[২০] সামন্ততান্ত্রিক পদ্ধতির সমাপ্তি দেখা দিলে জমিদারদের কাছে নাইটদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। অনেক জমিদাররা নাইটদের দায়িত্ব পালনকে ব্যয়বহুল মনে করেন এবং তারা স্কোইয়ারদের দিয়ে কাজ করিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। যখন কোন দ্বন্দ্ব দেখা দিত, ভাড়াটে সেনাও নাইটদের বিকল্প হয়ে ওঠে।

সে সময়ের সেনাবাহিনী বীরত্বের সম্মানসূচক রীতি তুলনায় যুদ্ধবিগ্রহে আরও বাস্তবসম্মত কৌশল গ্রহণ করতে শুরু করে। দ্রুতই বাকি নাইটরা পেশাদার সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। যদিও তাদের মূল্যবান যোগসূত্রের কারণে অন্যান্য সেনাদের তুলনায় উচ্চ পদক্রমে আসীন হন, তবু পূর্বে সাধারণ সেনাদের থেকে তাদের আলাদা করা যে পরিচয় ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়।[১৮] নাইট যুগের সমাপ্তি হলেও মধ্যযুগের শেষভাগেও কয়েকজন তখনও নাইটের পদক্রম ধরে রাখে। তারা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করে, কিন্তু তখনও পুরনো বীরত্বের রীতি ধরে রাখে। মধ্যযুগের পরেও বিদ্যমান কয়েকটি পদক্রমের উদাহরণ হল নাইট্‌স হসপিটালার্স ও তেওতোনিক নাইট।[২১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Clark, p. 1.
  2. Carnine, Douglas; ও অন্যান্য (২০০৬)। World History:Medieval and Early Modern Times (ইংরেজি ভাষায়)। USA: McDougal Littell। পৃষ্ঠা 300–301। আইএসবিএন 978-0-618-27747-6Knights were often vassals, or lesser nobles, who fought on behalf of lords in return for land. 
  3. Paddock, David Edge & John Miles (১৯৯৫)। Arms & armor of the medieval knight : an illustrated history of weaponry in the Middle Ages (ইংরেজি ভাষায়) (পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ)। New York: Crescent Books। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 0-517-10319-2 
  4. Peterse, Leif Inge Ree. Siege Warfare and Military Organization in the Successor States (400-800 A.D.). BRILL (September 1, 2013). pp. 177-180, 243, 310-311. আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪২৫১৯৯১
  5. Church, Stephen (১৯৯৫)। Papers from the sixth Strawberry Hill Conference 1994। Woodbridge, England: Boydell। পৃষ্ঠা 51। আইএসবিএন 978-0-85115-628-6 
  6. Nelson, Ken (২০১৫)। "Middle Ages: History of the Medieval Knight" (ইংরেজি ভাষায়)। Ducksters. Technological Solutions, Inc. (TSI)। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  7. Saul, Nigel (সেপ্টেম্বর ৬, ২০১১)। "Knighthood As It Was, Not As We Wish It Were" (ইংরেজি ভাষায়)। Origins। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  8. Freudenrich, Ph.D., Craig (জানুয়ারি ২২, ২০০৮)। "How Knights Work" (ইংরেজি ভাষায়)। How Stuff Works। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  9. "The Knight in Armour: 8th-14th century" (ইংরেজি ভাষায়)। History World। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  10. Bumke, Joachim (১৯৯১)। Courtly Culture: Literature and Society in the High Middle Ages (ইংরেজি ভাষায়)। Berkeley, US and Los Angeles US: University of California Press। পৃষ্ঠা 231–233। আইএসবিএন 9780520066342 
  11. Church, Stephen (১৯৯৫)। Papers from the sixth Strawberry Hill Conference 1994 (ইংরেজি ভাষায়)। Woodbridge, England: Boydell। পৃষ্ঠা 48–49। আইএসবিএন 978-0-85115-628-6 
  12. "The Middle Ages: Charlemagne" (ইংরেজি ভাষায়)। The Middle Ages। ৯ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  13. Hermes, Nizar (ডিসেম্বর ৪, ২০০৭)। "King Arthur in the Lands of the Saracen" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। Nebula। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  14. Burton, Richard Francis (২০০৭)। Charles Anderson Read, সম্পাদক। The Cabinet of Irish Literature, Vol. IV (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 1-4067-8001-4 
  15. "Knight." (ইংরেজি ভাষায়) (6th সংস্করণ)। The Columbia Encyclopedia। নভেম্বর ১৫, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  16. Freudenrich, Craig (২২ জানুয়ারি ২০০৮)। "How Knights Work" (ইংরেজি ভাষায়)। How Stuff Works। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  17. Lixey L.C., Kevin. Sport and Christianity: A Sign of the Times in the Light of Faith. The Catholic University of America Press (October 31, 2012). p. 26. আইএসবিএন ৯৭৮-০৮১৩২১৯৯৩৬.
  18. Gies, Francis. The Knight in History. Harper Perennial (July 26, 2011). pp. Introduction: What is a Knight. আইএসবিএন ৯৭৮-০০৬০৯১৪১৩৪
  19. "The History of Knights - medieval templars" (ইংরেজি ভাষায়)। All Things Medieval। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  20. "History of Knights - middle ages" (ইংরেজি ভাষায়)। How Stuff Works। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  21. "Malta History 1000 AD–present" (ইংরেজি ভাষায়)। Carnaval.com। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮