নাইজেল হেগ

ইংরেজ ক্রিকেটার

নাইজেল এজমে হেগ (ইংরেজি: Nigel Haig; জন্ম: ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮৭ - মৃত্যু: ২৭ অক্টোবর, ১৯৬৬) লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯২১ থেকে ১৯৩০ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

নাইজেল হেগ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামনাইজেল এজমে হেগ
জন্ম(১৮৮৭-১২-১২)১২ ডিসেম্বর ১৮৮৭
কেনসিংটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৭ অক্টোবর ১৯৬৬(1966-10-27) (বয়স ৭৮)
ইস্টবোর্ন, সাসেক্স, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৯৮)
১১ জুন ১৯২১ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৩ এপ্রিল ১৯৩০ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৫১৩
রানের সংখ্যা ১২৬ ১৫২২০
ব্যাটিং গড় ১৪.০০ ২০.৯০
১০০/৫০ -/- ১২/৬১
সর্বোচ্চ রান ৪৭ ১৩১
বল করেছে ১০২৬ ৭৮১৭২
উইকেট ১৩ ১১১৭
বোলিং গড় ৩৪.৪৬ ২৭.৪৮
ইনিংসে ৫ উইকেট - ৪৭
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ৩/৭৩ ৭/৩৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/- ২২০/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন লিওনেল এজমে হেগ নামে পরিচিত নাইজেল হেগ

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯১২ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত নাইজেল হেগের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। উভয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে শৌখিন তারকা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। এটনে অবস্থানকালে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি তার। তবে, ১৯১২ সাল থেকে ১৯৩৪ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত মিডসেক্সের পক্ষে অসাধারণ খেলা উপহার দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, শেষ ছয় বছর দলের অধিনায়কত্ব করার গৌরব অর্জন করেন। ১৯২৯ সাল থেকে পরবর্তী ছয় মৌসুম মিডলসেক্স দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। শেষ দুই মৌসুমে এইচজে অ্যান্থোভেনের সাথে যৌথভাবে দায়িত্ব বণ্টন করে নেন তিনি। ১৯২০ ও ১৯২১ সালে চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ী মিডলসেক্স দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে নাইজেল হেগ ২০.৮৩ গড়ে ১৫,২০৮ রান তুলেন। এছাড়াও, মিডিয়াম পেসের চেয়ে একটু উঁচুমানের সুইং বোলিং করে ২৭.৪৭ গড়ে ১,১১৬টি উইকেট ঝুলিতে পুড়েন। ছয়বার মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। পাঁচবার মৌসুমে শত উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে, ১৯২১, ১৯২৭ ও ১৯২৯ সালে সহস্র রান ও শত উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল পান। দূর্দান্ত ফিল্ডিং করে ২১৮টি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ধ্রুপদীমানের ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেন। চোখের কারুকাজকে কাজে লাগিয়ে শারীরিকভাবে শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী না হওয়া স্বত্ত্বেও বলকে সপাটে আঘাত করতে পারতেন।

সর্বমোট ছয়টি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। তন্মধ্যে, ১৯২০ সালে লর্ডসে সাসেক্সের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৩১ রান তুলেন। এ পর্যায়ে শীর্ষসারির চারজন ব্যাটসম্যান - পি. এফ. ওয়ার্নার, এইচ. ডব্লিউ. লিজে. ডব্লিউ. হার্ন-সহ তিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। হ্যারি লি’র ১১৯ রানের পাশাপাশি পেলহাম ওয়ার্নার ১৩৯, নাইজেল হেগ ১৩১ ও হার্ন ১১৬ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় দলের ইনিংস ঘোষণা করা হয়।[১] চারজন ব্যাটসম্যানের শতরান করার ঘটনা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এটিই প্রথম ছিল।[২][৩] পরবর্তীতে, সাউদাম্পটনে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে তিন বছর পর অবশ্য এইচ. এল. ডেলস, এইচ. ডব্লিউ. লি, জে. ডব্লিউ. হার্ন ও ই. হেনড্রেন এ কৃতিত্বের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করেছিলেন।

১৯২০ সালে ক্যান্টারবারিতে কেন্টের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭/৩৩ পান। আরও একটি ঘটনাবহুল খেলার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। মিডলসেক্সের প্রথম ইনিংসে ৫৭ রান করেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে এ. পি. ফ্রিম্যানের হ্যাট্রিকের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে ব্রিস্টলে প্যাকার্স গ্রাউন্ডে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রথম ইনিংসে ৬/১১ পান। তবে, সি. ডব্লিউ. এল. পার্কারের অনবদ্য খেলায় দুইবার হ্যাট্রিকের কবলে পড়েন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন নাইজেল হেগ। ১১ জুন, ১৯২১ তারিখে লর্ডসে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ৩ এপ্রিল, ১৯৩০ তারিখে কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিপর্যয়কর সিরিজে অংশ নেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে সম্মানীয় এফ. এস. জি. ক্যালথর্পের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারবার খেললেও তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি।

টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে মোটেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারেননি তিনি। ইংল্যান্ড দলে খেলেন। তবে, অনেকের মতো তাকেও মাত্র একটি টেস্টে খেলার সুযোগ দেয়া হয় ও পরবর্তীকালে বাদ দেয়া হয়। এরপর ১৯২১ সালে ওয়ারউইক আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বাধীন শক্তিধর অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত করা হয়নি। আট বছর পর ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফ্রেডি ক্যালথর্পের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলে অন্তর্ভুক্ত হন। সিরিজের প্রথম চার টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

খেলার ধরন সম্পাদনা

দীর্ঘদেহের অধিকারী নাইজেল হেগ ১৯১২ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে শৌখিন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ইনিংস উদ্বোধনে কিংবা এর পরে নামতেন। সুইং বোলার হিসেবে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের চেয়ে কিছুটা কম গতিসম্পন্ন বোলিং করতেন। অল-রাউন্ডার হিসেবে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছেন। ছয় মৌসুমে সহস্রাধিক রান ও পাঁচ মৌসুমে শতাধিক উইকেট পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ১৯২১, ১৯২৭ ও ১৯২৯ সালে তিনবার সহস্র রান ও শত উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল লাভ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

তার ভ্রাতৃস্পুত্র লর্ড হ্যারিস সর্বক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন। আইস হকি, রিয়্যাল টেনিস, লন টেনিস, র‍্যাকেটস, ফুটবল, রাগবি ইউনিয়ন ও গল্ফ খেলতেন লর্ড হ্যারিস।[৪] প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রয়্যাল ফিল্ড আর্টিলারিতে কাজ করেন। ১৯১৭ সালে নববর্ষের সম্মাননায় মিলিটারি ক্রস প্রাপক হন।[৫] মিডলসেক্সে থাকাকালীন ইয়ান পিবলস তার নেতৃত্বে খেলতেন। [৪]

ক্রিকেটের পাশাপাশি দক্ষ টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। উইম্বলডন মানের কাছাকাছি ছিল তার লন টেনিস খেলা। ২৭ অক্টোবর, ১৯৬৬ তারিখে ৭৮ বছর বয়সে সাসেক্সের ইস্টবোর্ন এলাকায় নাইজেল হেগের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Middlesex v Sussex: County Championship 1920"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. "Player Profile: Harry Lee"ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০১১ 
  3. Lee & Thompson (1948), pp. 54–55.
  4. Ian Peebles, Bowler's Turn, Pavilion Library, London, 1987, p. 59.
  5. "নং. 30111"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুন ১৯১৭। 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
ফ্রাঙ্ক মান
মিডলসেক্স ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯২৯–১৯৩৪
(যৌথভাবে - টমি এন্থোভেন ১৯৩৩–৩৪)
উত্তরসূরী
ওয়াল্টার রবিন্স