নব্য উপনিবেশবাদ হলো পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদকে ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর প্রভাব বিস্তারের নতুন কৌশল। পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক পদ্ধতিগুলোর মতো এই ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ সামরিক নিয়ন্ত্রণ কিংবা অপ্রত্যক্ষ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়ে না। ১৯৫৬ সালে ফরাসি দার্শনিক জঁ-পল সার্ত্র পরিভাষাটি উদ্ভাবন করলেও কোয়ামে এনক্রুমাহ এটি প্রথম ব্যবহার করেন। ১৯৬০-এর দশকে আফ্রিকার দেশগুলির বিউপনিবেশায়ন প্রসঙ্গে তিনি পরিভাষাটি ব্যবহার করেন। নব্য উপনিবেশবাদের ধারণাটি জঁ-পল সার্ত্র (উপনিবেশবাদ এবং নব্য উপনিবেশবাদ, ১৯৬৪) এবং নোম চম্‌স্কির (ওয়াশিংটন সংযোগ এবং তৃতীয় বিশ্বে ফ্যাসিবাদ, ১৯৭৯) এর মতো পশ্চিমা চিন্তাবিদদের কাজেও আলোচিত হয়েছে।[১]

প্রথম দিকে নব্য উপনিবেশবাদ ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে তাদের পূর্ববর্তী উপনিবেশগুলির বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্বাধীন হওয়া আফ্রিকার দেশগুলির অব্যাহত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আলোচনায় নিয়ে আসে। ঘানার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কোয়ামে এনক্রুমাহ (১৯৬০–৬৬) এই পরিভাষাটি তৈরি করেছিলেন যা ১৯৬৩ সালে আফ্রিকার সহযোগিতা সংস্থার সনদের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করেন। পরিভাষাটি ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘নব্য উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদের শেষ পর্যায়’ (১৯৬৫) বইয়ের শিরোনামও ছিল।[২] এনক্রুমাহ যুদ্ধ পরবর্তী বিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে লেনিনের ‘সাম্রাজ্যবাদঃ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ (১৯১৭) পুস্তিকাটিতে উপস্থাপিত সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক যুক্তিগুলিকে তাত্ত্বিকভাবে বিকশিত ও প্রসারিত করেছিলেন। এই পুস্তিকাটি ঊনিশ শতকের সাম্রাজ্যবাদকে ভূ-রাজনৈতিক শক্তির যৌক্তিক প্রসার হিসাবে চিহ্নিত করে যা পুঁজিবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতির আর্থিক বিনিয়োগের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।[৩]

‘নব্য-উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদের শেষ পর্যায়’ বইটিতে, কোয়ামে এনক্রুমাহ লিখেছেন:

উপনিবেশবাদের স্থলে সাম্রাজ্যবাদের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে আজ পৃথিবীতে অস্তিত্বশীল নব্য উপনিবেশবাদ যা উপনিবেশবাদের মতোই পুঁজিবাদী দেশগুলোর সামাজিক দ্বন্দ্ব রফতানি করার নবতর এক প্রচেষ্টা মাত্র। নব্য-উপনিবেশবাদের ফলাফল হিসেবে বিশ্বের স্বল্পোন্নত অংশগুলির উন্নয়নের চেয়ে আরো অধিকতর শোষণের উদ্দেশ্যে বৈদেশিক মূলধন ব্যবহার হয়। নয়া এই ব্যবস্থার অধীনে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলেও ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মাঝে ব্যবধান আরো বৃদ্ধি পায়। নব্য-উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্য অবশ্য কম উন্নত দেশগুলোতে উন্নত বিশ্বের পুঁজির বিনিয়োগে বাঁধার সৃষ্টি নয়।এটা বরং স্বল্পোন্নত দেশগুলিকে আরো দরিদ্র করার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর আর্থিক শক্তির ব্যবহার রোধ করার চেষ্টা করে।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sartre, Jean-Paul (২০০১)। Colonialism and Neocolonialism। Psychology Press। আইএসবিএন 978-0-415-19146-3 
  2. Arnold, Guy (৬ এপ্রিল ২০১০)। The A to Z of the Non-Aligned Movement and Third World। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-1-4616-7231-9 
  3. Vladimir Ilyich Lenin. Imperialism, the Highest Stage of Capitalism ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত অক্টোবর ১১, ২০১৬ তারিখে. transcribed from Lenin's Selected Works, Progress Publishers, 1963, Moscow, Volume 1, pp. 667–766.
  4. From the Introduction. Kwame Nkrumah. Neo-Colonialism, The Last Stage of Imperialism. First Published: Thomas Nelson & Sons, Ltd., London (1965). Published in the USA by International Publishers Co., Inc., (1966);