নবাবগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা

ঢাকা জেলার একটি উপজেলা

নবাবগঞ্জ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা[১]

নবাবগঞ্জ
উপজেলা
মানচিত্রে নবাবগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা
মানচিত্রে নবাবগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪০′১″ উত্তর ৯০°৯′৫৫″ পূর্ব / ২৩.৬৬৬৯৪° উত্তর ৯০.১৬৫২৮° পূর্ব / 23.66694; 90.16528 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলাঢাকা জেলা
আয়তন
 • মোট২৪৪.৮১ বর্গকিমি (৯৪.৫২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
 • মোট৩,৩৫,৭৫৭
 • জনঘনত্ব১,৪০০/বর্গকিমি (৩,৬০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোটগড় হার ৫৪.৪%; পুরুষ ৫৬.৪%, মহিলা ৫২.৬%।
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড১৩২০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ২৬ ৬২
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

নবাবগঞ্জ উপজেলা, এটি ঢাকা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী, কালিগঙ্গা নদীপদ্মা নদী। ঢাকা শহর থেকে ৩৫ কি:মি: দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত নবাবগঞ্জ উপজেলা। এর অবস্থানের স্থানাঙ্ক: ২৩.৬৭° উত্তর অক্ষাংশ - ৯০.১৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। উত্তরে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলা, দক্ষিণে দোহার উপজেলা, পূর্বে কেরানীগঞ্জ উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলাশ্রীনগর উপজেলা, পশ্চিমে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলামানিকগঞ্জ সদর উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা সম্পাদনা

  • ১৪ টি ইউনিয়ন,
  • ১২৬ টি ওয়ার্ড,

১৪টি ইউনিয়নের নাম নিম্নরূপ:

ইতিহাস সম্পাদনা

নামকরণ

নবাবগঞ্জের নামকরণ নিয়ে কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত জনশ্রুতি আছে - নবাবী আমলে নবাব ও তাদের অধীনস্থ কর্মচারী এবং সৈন্যরা মুর্শিদাবাদ থেকে নৌপথে নবাবগঞ্জের ইছামতি নদী হয়ে ঢাকা যাতায়াত করতো। তারা ইছামতি তীরবর্তী এই অঞ্চলে তাবু ফেলে বিশ্রাম নিত। এক সময়ে নবাবের কর্মচারীরা খাজনা আদায়ের স্বার্থে এই এলাকায় বসবাস করা আরম্ভ করে। এভাবে ধীরে ধীরে এই এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকে এবং শহর গড়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে নবাবী আমল থেকে এই এলাকাটি নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত হয়ে উঠে।[২]

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

  • জনসংখ্যা ৩,৩৫,৭৫৭ জন
  • পুরুষ ১,৭২,৭৪১ জন
  • মহিলা ১,৬৩,০১৬ জন

শিক্ষা সম্পাদনা

শিক্ষার হার: গড় হার ৫৪.৪%; পুরুষ ৫৬.৪%, মহিলা ৫২.৬%।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৯, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৩, মাদ্রাসা ৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী কলেজ, শিকারীপাড়া (১৯৯৭), শিকারীপাড়া টি.কে.এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩২), নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), বান্দুরা হলিক্রশ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯১২), তাশুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়, চুড়াইন তারিনী বামা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), আগলা চৌকিঘাটা জনমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), মেলেং উচ্চ বিদ্যালয়, ডিগনারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লা কান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

অর্থনীতি সম্পাদনা

  • কৃষি ৩১.০১%,
  • অকৃষি শ্রমিক ৩.০৭%,
  • শিল্প ৩.৬৮%,
  • ব্যবসা ১২.৯৮%,
  • পরিবহন ও যোগাযোগ ১.৯৫%,
  • চাকরি ১২.২৬%,
  • নির্মাণ ৩.৮২%,
  • ধর্মীয় সেবা ০.১৩%,
  • রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১৯.৩৬% এবং
  • অন্যান্য ১১.৭৪%।[৩]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

  1. আব্দুল মান্নান, সাবেক মন্ত্রী, বৈদাশিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  2. সালমা ইসলাম, এমপি সংরক্ষিত মহিলা আসন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
  3. আতাখান, সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিষ্ঠাতা দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ
  4. মোঃ বোরহান উদ্দিন খান, সাবেক সংসদ সদস্য
  5. মহাকবি কায়কোবাদ
  6. জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক
  7. লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী[৪]

দর্শনীয় স্থান[৫] সম্পাদনা

ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিশাল এক ভাণ্ডার নবাবগঞ্জ উপজেলা। উনিশ শতকেও এখানে জমিদারদের বসতি ছিল। প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ গ্রাম কলাকোপা-বান্দুরা একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থস্থান ছিল। এছাড়াও এখানকার সোনাবাজু বেড়িবাঁধের প্রাকিতিক দৃশ্য রয়েছে চোখ জুড়ানোর মতো। যার প্রাণ ইছামতি নদী। এখানে দেখার অনেক কিছুই আছে। একদিকে স্নিগ্ধ অপরূপ প্রকৃতি অন্য দিকে নানা পুরাণ কাহিনী। কলাকোপার কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির পাশে উকিল বাড়ি। তারপর জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন (যা এখন জজ বাড়ি নাম ধারণ করেছে)। ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি। শ্রীযুক্ত বাবু লোকনাথ সাহার বাড়ি (যার খ্যাতি মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি নামে)। মধুবাবুর পাইন্না বাড়ি, পোদ্দার বাড়ি এবং কালি বাড়ি। এখানে আরও আছে খেলারাম দাতার বিগ্রহমন্দির, এর থেকে একটু সামনেই আদনান প্যালেস, মহামায়া দেবীর মন্দির। আর একটু দূরের হাসনাবাদে জপমালা রানীর গির্জা। বারুয়াখালীর জমিদার বাড়ি, মধ্য সোনাবাজু প্রিন্সিপাল বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দুরত্বের ভাঙ্গা নামক স্থানটি অত্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত, এছাড়াও শিকারীপাড়া ও জয়কৃষ্ণপুর এর ৩০০ বছরের পুড়নো জমিদার বাড়ি।

  • সোনাবাজু বেড়িবাঁধঃ এই স্থানটি নবাবগঞ্জের সবচেয়ে পশ্চিমে অবস্থিত। নবাবগঞ্জ উপজেলার অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানটি হলো সোনাবাজু বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধের দু'ধারে সারি সারি গাছ রয়েছে। বর্ষায় এর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখানে রয়েছে স্লুইস গেইট, পানির উপরে ভাসমান রেস্টুরেন্ট।
  • ঐতিহ্যবাহী জজ বাড়ি: এটি নবাবগঞ্জের কলাকোপা নামক স্থানে অবস্থিত। বাগান ঘেরা এবং বিশালাকৃতির এই জমিদার বাড়িটি মূলত জজ বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। রয়েছে পোষা হরিণের একটি খামার।
  • কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়ি: এই জমিদার বাড়িটি জজ বাড়ির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বলা যেতে পারে এটি জজ বাড়ির ওল্ড ভারসন। জজ বাড়ি বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হলেও এটি রয়ে গেছে সেই আগে যেমনটি ছিল। এই জমিদার বাড়িতেও রয়েছে শত শত দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ আর বাড়ির ঠিক সামনে রয়েছে বিশালাকৃতির স্বচ্ছ পানির পুকুর। রয়েছে বিশালাকৃতির পুকুর ঘাট।
  • বৌদ্ধ মন্দির: এই বৌদ্ধ মন্দিরটি কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ির ঠিক বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটির ভেতরে একটি ভাঙা মূর্তি আছে। কথিত আছে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী এই মূর্তিটি ভেঙে রেখে গিয়েছিল।
  • খেলারাম দাতার মন্দির
  • খেলারামদার বাড়ি(আন্ধার কোঠা): এটি এক সময় সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এখনো মাটির উপর দুইতলা একটি জড়াজীর্ণ ভবন দেখতে পাবেন। কথিত আছে এই পাঁচতলা ভবনটি এক রাতে তিনতলা পর্যন্ত মাটির নিচে চলে গিয়েছিল। ভবনটির উপরের তলাতে একটি বড় চৌবাচ্চা আছে। কথিত আছে জমিদার খেলারামদা এর মা একদিন তার সন্তানের কাছে দুধ খেতে চাইলে তিনি তার মায়ের জন্য এই চৌবাচ্চা বানানোর নির্দেশ দেন। পরে সেই বিরাট চৌবাচ্চায় দুধ এবং কলা দিয়ে পূর্ণ করে তার মাকে সেই চৌবাচ্চায় নামিয়ে দেন। তার মা সাতার কেঁটে কেঁটে মনের সাধ মিটিয়ে দুধ পান করেছিলেন। এই বাড়িটির পাশেও একটি বিরাট পুকুর আছে। কথিত আছে এই পুকুরের পাশে এসে কেউ কিছু চাইলে তার পর দিন তাই মিলে যেত।
  • আদনান প্যালেস:এই এলাকার অন্যতম আকর্ষণ আদনান প্যালেস। এটি বৃটিশ আমলের একটি জমিদার বাড়ি। এর কারুকাজ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাড়িটির সামনে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ইছামতি নদী।
  • কলাকোপা আনসার ক্যাম্প: জজ বাড়ির কাছেই কলাকোপা আনসার ক্যাম্প অবস্থিত। এটিও একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। ছায়া সুনিবিড় সুন্দর একটি পরিবেশ। পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আনসারদের বসবাসের জন্য অনেক বড় একটি এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নয়নাভিরাম ক্যাম্পটি। বেশ কয়েকটি পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ভবন রয়েছে ক্যাম্পটিতে।
  • ইছামতি নদী: এই নদীটিকে ঘিরে সেই আগের মত প্রাণ চাঞ্চল্য না থাকলেও সূর্যাস্তের সময় আপনি মুগ্ধ হয়ে এর রূপ অবলোকন করতে সক্ষম হবেন।
  • শাহী ভাঙা মসজিদ: কথিত আছে এই মসজিদটি এক রাতে গায়েবীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। যে রাতে এটি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন ভোরে কোনো এক লোক এই মসজিদটি প্রথম আবিষ্কার করেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ সৃষ্টি হতে পারেনি। মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ায় এটি সেরকম অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এর একটি অংশ ভাঙা থাকার কারণে এটি ভাঙা মসজিদ নামেই পরিচিত।
  • সাত মাথার মূর্তি: এটি মাঝির কান্দা নামক স্থানের অদূরে অবস্থিত। একটি বিরাট বটগাছের নিচে এই মুর্তিটি নির্মাণ করা করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। প্রতি বছর এই মূর্তিকে ঘিরে পূজা এবং মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
  • জপমালা রানীর গীর্জা: ১৭৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গীর্জাটি অনেক বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। গির্জার ভেতরের দিকটা বেশি আকর্ষণীয় এবং সামনে একটি বিশাল খোলা মাঠ এর সৌন্দর্য হাজারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গির্জাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু খ্রিস্টান মিশনারী ক্যাম্প। এটি হাসনাবাদ নামক এলাকায় অবস্থিত।

এছাড়াও রয়েছে-

  • আফাজউদ্দিন শাহ্ এর মাজার,গালিমপুর
  • মহাকবি কায়কোবাদের জন্মস্থান,আগলা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Md. Abu Hasan Farooque (২০১২)। "Nawabganj Upazila (Dhaka District)"। Sirajul Islam and Ahmed A. Jamal। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh। ১২ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৫ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৯ 
  3. বাংলাপিডিয়া
  4. "নবাবগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন"। ৩ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  5. ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নগর দোহার-নবাবগঞ্জ, একুশে টিভি ডট কম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা