নকশি কাঁথা

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বস্রশিল্প

নকশি কাঁথা হলো সাধারণ কাঁথার উপর নানা ধরনের নকশা করে বানানো বিশেষ প্রকারের কাঁথা। নকশি কাঁথা শত শত বছরের পুরনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশের সংস্কৃতির একটা অংশ।[১][২][৩]

নকশী কাঁথা
ভৌগোলিক নির্দেশক
ঐতিহ্যবাহী নকশী কাঁথা
বর্ণনাভারতের কিছু অঞ্চল ও বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ সেলাইশিল্প৷
দেশবাংলাদেশ, ভারতের কিছু অংশ
উপাদানপ্রধানত সুতির কাপড়, সূঁচ ও রঙিন সুতো
নকশি কাঁথায় ফুটে ওঠা বাংলাদেশের মানচিত্র

নকশি কাঁথা ভারত ও বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ।[৪]

সাধারণত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতিদের থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়। [৫] ঘরের মেঝেতে পা ফেলে পায়ের আঙ্গুলের সঙ্গে কাপড়ের পাড় আটকিয়ে সূতা খোলা হয়। এই সূতা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রেখে দেয়া হয়। সাধারণ কাঁথা সেলাইয়ের পর এর উপর মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুঁটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন নঁকশা যার মধ্যে থাকে ফুল, লতা, পাতা ইত্যাদি। পুরো বাংলাদেশেই নকশি কাঁথা তৈরি হয়, তবে জামালপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ফরিদপুরযশোর নকশি কাঁথার জন্য বিখ্যাত। ২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নকশি কাঁথার ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।[৬] নকশী শিল্পী ও শিল্প পুনর্বাসনের জামালপুরে ৩০০ একর জমিতে ‘শেখ হাসিনা নকশী পল্লী’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।[৭]

নকশি কাঁথা শব্দের উৎস সম্পাদনা

 
বাংলাদেশের একজন গ্রামীণ নারী নকশি কাঁথা সেলাই করছেন

কাঁথা শব্দটির কোন উৎস স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।[৮] সঠিকভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় কাঁথা শব্দটি পূর্বে উচ্চারিত হত "খেতা" বলে।[৯] বাংলায় ধানের ক্ষেতকে অনেক সময় "খেত" বলা হয়। নিয়াজ জামানের মতে, কাঁথা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃতি শব্দ "কঁথা" হতে। "কঁথা" শব্দটির বাংলা হলো ত্যানা। বা কাপড়ের টুকরা।[১০]

ঐতিহ্য সম্পাদনা

অন্যান্য লোকশিল্পের মতো কাঁথার উপর দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস, আবহাওয়া, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাব আছে।[১১] সম্ভবত প্রথমদিকে কাঁথা ছিল জোড়া তালি দেওয়া কাপড়। পরবর্তীতে এটি থেকেই নকশি কাঁথার আবির্ভাব। [১২]

সাহিত্য সম্পাদনা

পাঁচশ বছর আগে কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচিত শ্রী শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত বইয়ে কাঁথার কথা সবার প্রথম পাওয়া যায়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ নকশি কাঁথার মাঠ[১৩]

নির্মাণশৈলী সম্পাদনা

 
কাছে থেকে দেখা রাজশাহীর কাঁথা। বাম ও নিচের দিক জুড়ে কাঁথার পাড় দেখা যাচ্ছে। কাঁথার জমিনে সাধারণ কাঁথা ফোঁড়ে সাদা সুতা দিয়ে তরঙ্গ আকারে সেলাই দেয়া হয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের নারীরা পাতলা কাপড়, প্রধানত পুরানো কাপড় স্তরে স্তরে সজ্জিত করে সেলাই করে কাঁথা তৈরি করে থাকেন। কাঁথা মিতব্যয়ীতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, এখানে একাধিক পুরানো জিনিস একত্রিত করে নতুন একটি প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয়। কাঁথা তৈরির কাজে পুরানো শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁথার পুরুত্ব কম বা বেশি হয়। পুরুত্ব অনুসারে তিন থেকে সাতটি শাড়ি স্তরে স্তরে সাজিয়ে নিয়ে স্তরগুলোকে সেলাইয়ের মাধ্যমে জুড়ে দিয়ে কাঁথা তৈরি করা হয়। সাধারণ বা কাঁথাফোঁড়ে তরঙ্গ আকারে সেলাই দিয়ে শাড়ীর স্তরগুলোকে জুড়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন রঙের পুরানো কাপড় স্তরীভূত করা থাকে বলে কাঁথাগুলো দেখতে বাহারী রঙের হয়। সাধারণত শাড়ীর রঙ্গীন পাড় থেকে তোলা সুতা দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয় এবং শাড়ীর পাড়ের অনুকরণে কাঁথাতে নকশা করা হয়। তবে কোন কোন অঞ্চলে (প্রধানত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায়) কাপড় বোনার সুতা দিয়েও কাঁথাতে নকশা করা হয়ে থাকে।[২] সাধারণ কাঁথা কয়েক পাল্লা কাপড় কাঁথাফোঁড়ে সেলাই করা হলেও এই ফোঁড় দেয়ার নৈপুণ্যের গুণে এতেই বিচিত্র বর্ণের নকশা, বর্ণিল তরঙ্গ ও বয়নভঙ্গির প্রকাশ ঘটে। নকশার সাথে মানানোর জন্য বা নতুন নকশার জন্য কাঁথার ফোঁড় ছোট বা বড় করা হয় অর্থাৎ ফোঁড়ের দৈর্ঘ্য ছোট-বড় করে বৈচিত্র্য আনা হয়। উনিশ শতকের কিছু কাঁথায় কাঁথাফোঁড়ের উদ্ভাবনী প্রয়োগকে কুশলতার সাথে ব্যবহার করার ফলে উজ্জ্বল চিত্রযুক্ত নকশা দেখা যায়।[২] কাঁথাফোঁড়ের বৈচিত্র্য আছে এবং সেই অনুযায়ী এর দুটি নাম আছেঃ পাটি বা চাটাই ফোঁড় এবং কাইত্যা ফোঁড়।[২]

বেশিরভাগ গ্রামের নারী এই শিল্পে দক্ষ। সাধারণত গ্রামের মহিলারা তাদের অবসর সময় নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। এক একটি কাঁথা সেলাই করতে অনেক সময়, এমনকি ১ বছর সময়ও লেগে যায়। নতুন জামাইকে বা নাদ বউকে উপহার দেয়ার জন্য নানী-দাদীরা নকশি কাঁথা সেলাই করে থাকেন। এক একটি কাঁথা সেলাইয়ের পিছনে অনেক হাসি-কান্নার কাহিনী থাকে। বিকেল বেলা বা রাতের খাবারের পর মহিলারা একসাথে বসে গল্প করতে করতে এক একটি কাঁথা সেলাই করেন। তাই বলা হয় নকশি কাঁথা এক একজনের মনের কথা বলে। এটি মূলত বর্ষাকালে সেলাই করা হয়। একটা প্রমাণ মাপের কাঁথা তৈরিতে ৫ থেকে ৭ টা শাড়ী দরকার হয়। আজকাল পুরাতন সামগ্রীর বদলে সূতির কাপর ব্যবহার করা হয়। ইদানীং কাঁথা তৈরিতে পুরাতন কাপড়ের ব্যবহার কমে গেছে।

মূলত নকশা করার পূর্বে কোন কিছু দিয়ে এঁকে নেওয়া হয়। তারপর সুঁই-সুতা দিয়ে ওই আঁকা বরাবর সেলাই করা হয়। কাঁথায় সাধারণত মধ্যের অংশের নকশা আগে করা হয় এবং ধীরে ধীরে চারপাশের নকশা করা হয়। আগে কিছু কাঁথার নকশা আঁকানোর জন্য কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হত, এখন ট্রেসিং পেপার ব্যবহার করা হয়।

ধরন সম্পাদনা

নকশি কাঁথা সেলাইয়ের কোনো নির্দিষ্ট নকশা নেই। যিনি সেলাই করেন তার মনে যা আসে তা-ই তিনি সেলাই করে যান। বলা যায় এটি হচ্ছে মনের ডাইরি। সূর্য, চাঁদ, গাছ, পাখি, মাছ, ফল, মানুষ, ময়ূরসহ বিভিন্ন নকশা করা হয় নকশি কাঁথায়। তবে সেলাইয়ের ধরন অনুযায়ী কাঁথাগুলো নিম্নলিখিত প্রকারে ভাগ করা হয়েছে[১৪]:

চলমান সেলাই সম্পাদনা

চলমান সেলাই কাঁথাই হলো মূল দেশীয় কাঁথা। এটিকে আবার নকশি ও পাড়তোলা দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

লহরী কাঁথা সম্পাদনা

পারস্য শব্দ লহর থেকে লহরী কাঁথা নামের উদ্ভব। লহর মানে হলো ঢেউ। সাধারণত রাজশাহীতে এই কাঁথা বিখ্যাত। এই কাঁথা আবার সোজা, কেউটের খুপি, বরফি অথবা তারা (চারচালা, আটচালা অথবা বড়চালা) ইত্যাদিতে বিভক্ত।

আনারসি সম্পাদনা

আনরসি কাঁথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোরে পাওয়া যায়। আনারস টান, আনারস টাইল, আনারস ঝুমকা ও আনারস লহরী এর বিভিন্ন প্রকারভেদ।

বাঁকা সেলাই সম্পাদনা

এই কাঁথা সবার প্রথম তৈরি হয় ব্রিটিশ আমলে।[১৫] সাধারণত এই কাঁথা বাঁকা সেলাইয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়।

সুজনি কাঁথা সম্পাদনা

এটি শুধু রাজশাহী এলাকায় পাওয়া যায়। সাধারণত এই কাঁথায় ঢেউ খেলানো ফুল ও লতাপাতার নকশা থাকে।

সেলাই সম্পাদনা

প্রথম দিকে শুধু চলমান সেলাই কাঁথা প্রচলিত ছিল। এই ধরনের শিলাইকে ফোড় বলা হয়। [১৬] বর্তমানে চাটাই সেলাই, কাইত্যা সেলাই, যশুরে সেলাই, রিফু সেলাই, কাশ্মীরি সেলাই, শর সেলাই, ইত্যাদি সেলাই দিয়ে কাঁথা তৈরি হয়। মাঝে মধ্যে হেরিংবোন সেলাই, সাটিন সেলাই, ব্যাক সেলাই ও ক্রস সেলাই ব্যবহার করা হয়।[১৭]

ধরন সম্পাদনা

কাঁথা সাধারণত লেপের মতো মুড়ি দিয়ে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের কাঁথা গুলো হলোঃ[১৮]

  • লেপ-কাঁথা - আকারে বড় ও মোটা হয়।
  • শুজনি কাঁথা - লেপ কাঁথার মত বড় আকারের, তবে এই কাঁথা পাতলা হয়।
  • রূমাল কাঁথা - সাধারণত এক বর্গফুট আকারের কাঁথা।
  • আসন কাঁথা - বসার কাজে ব্যবহৃত হয়।
  • বস্তানি বা গাত্রি - ভারী ও মূল্যবান জিনিসপত্র এবং কাপড় চোপড় ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • আর্শিলতা - আর্শি (আরশি) বা আয়না, চিরুনি ইত্যাদি ঢেকে রাখার কাজে ব্যবহার হয়।
  • দস্তরখান - খাবার সময় মেঝেতে পেতে তার উপরে খাবার দাবার ও বাসনপত্র রাখা হয়।
  • গিলাফ - খাম আকারের এই কাঁথার মধ্যে কোরআন শরীফ রাখা হয়।

নকশা সম্পাদনা

নকশি কাঁথার নকশাগুলোতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে। যদিও কোন নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয় না, তবে ধরে নেওয়া হয় প্রত্যেকটা ভালো সেলাইকৃত নকশি কাঁথার একটি কেন্দ্র থাকবে। বেশিরভাগ কাঁথার কেন্দ্র হলো পদ্ম ফুল এবং পদ্ম ফুলের আশে পাশে নানা রকম আঁকাবাঁকা লতার নকশা থাকে। কখনো শাড়ীর পাড় দিয়ে সীমানা তৈরি করা হয়। নকশাতে ফুল, পাতা, পাখি মাছ, প্রাণী, রান্না আসবাব, এমনকি টয়লেট সামগ্রীও থাকতে পারে। বেশির ভাগ কাঁথার প্রাথমিক কিছু নকশা একই রকম হলেও দুইটি কাঁথা একই রকম হয় না। সাধারণত কাঁথাতে একই নকশা বারবার ব্যবহৃত হয়। উল্লেখযোগ্য নকশাগুলো হলোঃ

পদ্ম নকশা সম্পাদনা

 
পদ্ম নকশা

পদ্ম নকশা নকশি কাঁথাগুলোতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। পদ্ম ফুল হিন্দুধর্মের দেবদেবীর সাথে যুক্ত, এই জন্যও এটি বেশ জনপ্রিয়। পদ্মফুল হলো স্বর্গীয় আসন। এটা অবশ্য মহাজাগতিক মিলন ও নারীর প্রয়োজনীয়তাকেও বোঝায়। পদ্ম শাশ্বত আদেশ এবং আকাশ, মাটি ও পানির ঐক্য হিসেবেও মূর্ত। এটি জলের জীবনদায়ক ক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে এবং এছাড়াও পাপড়ির খোলা ও বন্ধ করা অবস্থাকে সূর্যের সাথে তুলনা করা হয়। এটি পবিত্রতার প্রতীক। এটি ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক। অষ্টদল থেকে শুরু করে শতদল বিভিন্ন ধরনের পদ্ম নকশা রয়েছে। পুরাতন প্রায় প্রত্যেকটা কাঁথাতে মাঝখানে একটি ফুটন্ত পদ্ম দেখতে পাওয়া যেত।

সূর্য নকশা সম্পাদনা

এই নকশা পদ্ম নকশার কাছাকাছি নকশা। কখনো কখনো এই দুই নকশা কাঁথার কেন্দ্রে একসাথে দেখা যায়। এটি সূর্যের জীবনদায়ক ক্ষমতার প্রকাশ করে। সূর্য হিন্দুদের ধর্মীয় ও বিবাহ উভয় আচারেই গুরত্ব বহন করে।

চন্দ্র নকশা সম্পাদনা

চন্দ্র নকশা মুসলমান ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নক্ষত্র সহযোগে একটি অর্ধচন্দ্রাকার নকশা। এই নকশা মূলত জায়নামাজ কাঁথায় দেখতে পাওয়া যায়।

চাকা নকশা সম্পাদনা

সাধারণত চাকা নকশা হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয়েরই ভারতীয় কলার প্রতীক। এটি আদেশের প্রতীক। এটি অবশ্য বিশ্বকেও প্রতিনিধিত্ব করে। যদিও বেশির ভাগ কাঁথা নির্মাতা চাকার গুরুত্ব জানেনা, তবুও এটি বেশ জনপ্রিয়। এটি চাটাই ফোর এর তুলনায় সহজ। পূর্বে এটি বর্ক রেখা বেষ্টিত হলেও বর্তমানে এটি

স্বস্তিকা নকশা সম্পাদনা

সংস্কৃতিতে সু অস্তি মানে হলো এটি ভাল। এই নকশা সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক। এটি ভালো ভাগ্যের প্রতীক। এটি মিছরি অথবা গোলক ধাঁধা হিসেবেও পরিচিত। সময়ের সাথে, মহেঞ্জোদাড়ো আমলের সোজা রেখা সংবলিত স্বস্তিকার চেয়ে বক্ররেখা বেষ্টিত স্বস্তিকা এখন বেশি ব্যবহৃত হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন প্রত্যেকটা ধর্মে এই প্রতীকের গুরুত্ব রয়েছে।

জীবনবৃক্ষ নকশা সম্পাদনা

 
কালকা নকশা নিকট দৃশ্য

সিন্ধু সভত্যার সময় থেকে ভারতের শিল্প-সংস্কৃতিতে এই নকশার প্রভাব রয়েছে। মনে হয় যে, সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা পিপুল গাছকে জীবনবৃক্ষ হিসেবে ধারণা করত... এর মধ্যে দিয়ে দেবতা তার সৃষ্টির শক্তি প্রকাশ করছে।[১৯] বৌদ্ধ আমলেও এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। পিপল বৌদ্ধদের নিকট পবিত্র বৃক্ষ, কেননা বুদ্ধ এই গাছের ছায়াই বসেই বোধিপ্রাপ্ত হন। এটি প্রকৃতির সৃষ্টির ক্ষমতা প্রতিফলিত করে এবং বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। আঙ্গুরগাছ ও লতাপাতার কাঁথার নকশায় যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে এবং এতে জীবন বৃক্ষের মতো একই রকম প্রতীক বহন করে। পান পাতার লহরি রাজশাহীতে অনেক জনপ্রিয়।

কালকা নকশা সম্পাদনা

মুঘল আমল থেকে আজ পর্যন্ত এই নকশা ব্যবহার করা হয়।[২০] কালকা নকশার উৎপত্তি পারস্যে ও কাশ্মীর এবং এটি বর্তমানে উপমহাদেশের অবিচ্ছেদ্য নকশা।[২১]

  • পর্বত নকশা
  • মৎস নকশা
  • নৌকা নকশা
  • পায়ের ছাপ নকশা
  • রথ নকশা
  • মসজিদ নকশা
  • পাঞ্জা নকশা
  • কৃষি সামগ্রী
  • প্রাণী-নকশা
  • সাজঘর সামগ্রী
  • রান্নাঘর সামগ্রী
  • পালকি নকশা

পাড় সম্পাদনা

 
উপর থেকে: মালা পাড়, মই পাড়, গাট পাড়, চিক পাড়, নাকের দুল পাড়, মাছ পাড়, পাঁচ পাড়, বাইশা পাড়, আনাজ পাড়
 
পাড়ের নকশা উপর থেকে:ধানের শীষ পাড়, বিছে পাড়, মটর পাড়, চোক, বেকি পাড়, তাবিজ পাড়

পাড় হলো কাঁথার সীমানার দিকের অংশ। বেশিরভাগ নকশি কাঁথার পাড় আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি শাড়ীর পাড়কেই কাঁথার পাড় বানানো হয়, কখনো নকশা সেলাই করে পাড় বানানো হয়। সাধারণ পাড় গুলো হলোঃ[২২]

 
উপর থেকে: শামুক পাড়, চোক পাড়, অনিয়ত পাড়, অন্যান্য পাড়, ঢেউ পাড়, নক্ষত্র পাড়
  • ধানের শীষ অথবা খেজুর চারি পাড়
  • বিছে পাড়
  • বেকি পাড়
  • বরফি পাড়
  • চোক পাড়
  • তাবিজ পাড়
  • মালা পাড়
  • মই পাড়
  • গাট পাড়
  • চিক পাড়
  • নোলক পাড়
  • মাছ পাড়
  • পাঁচ পাড়
  • বাইশা পাড়
  • আনাজ পাড়
  • শামুক পাড়
  • অনিয়ত পাড়
  • গ্রেফি পাড়
  • কলম পাড়

সংগ্রহ সম্পাদনা

বাংলাদেশ সম্পাদনা

  • বাংলা একাডেমি
  • ডিজাইন সেন্টার, বিএসসিআইসি
  • ফোক আর্ট এন্ড ক্রাফট ফাউন্ডেশন
  • জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ

ভারত সম্পাদনা

  • আশুতোষ জাদুঘর, কলকাতা
  • ক্যালিকো মিউজিয়াম অফ টেক্সটাইলস, আহমেদাবাদ
  • গুরুসদয় জাদুঘর, ঠাকুরপুর

ভৌগোলিক স্বত্ব সম্পাদনা

২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নকশি কাঁথার ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।[৬] এই বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষেরা দুঃখ প্রকাশ করে ও বিভিন্ন আন্দোলন করেন। [২৩][২৪]

গ্যালারী সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

অতিরিক্ত পাঠ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nakshi Kantha-Benhal Craft ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে accessed on: 10 November 2008
  2. নিয়াজ জামান (২০১২)। "নকশি কাঁথা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. Quilt (kantha) Art of Bengal accessed on:10 November 2008.
  4. "চাকরি হারানো খাদিজার নকশিকাঁথা যাচ্ছে বিদেশে"ভালো সংবাদ। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩। 
  5. R. Ghuznabi Sayyada; NAKSHA A Collection of Designs of Bangladesh (October 1981) page-23; Design Centre: Bangladesh Small & Cottage Industries Corporation
  6. http://www.ttg-sric.iitkgp.ernet.in/GIDrive/images/gi/registered_GI_13June2016.pdf
  7. "শেখ হাসিনা নকশী পল্লী প্রকল্প একনেকে অনুমোদন"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১২ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২৩ 
  8. Ahmad, Perveen; The Aesthetics & Vocabulary of NAKSHI KANTHA (1997); Bangladesh National Museum আইএসবিএন ৯৮৪-৫৮৫-০০০-৬
  9. "Lecture by Perveen Ahmad at IGNCA on 'Aesthetics and Vocabolary of Nakshi Kantha'"। ১৯ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ 
  10. Zaman, Niaz; The Art of KANTHA Embroidery (Second Revised Edition-1993), page-36, The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh; আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  11. Zaman, Niaz; The art of KANTHA Embroidery, (Second Revised Edition 1993); The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh; আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-০৫-১২২৮-৭
  12. Dutt, Gurusaday; Album of Art Treasure KANTHA (Series One)(1995); Gurusaday Dutt Folk Art Society, Gurusaday Museum, 24 Parganas. India
  13. Quilt (Kantha) Art of Bengal accessed on 2 January 2009
  14. The Art of Kantha Embroidery by Niaz Zaman
  15. Zaman, Niaz; The Art of KANTHA Embroidery (Second Revised Edition:1993), page 114, The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh; আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  16. Zaman, Niaz; The Art of KANTHA Embroidery (Second Revised Edition: 1993), Page 44,45; The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh: আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  17. Zaman, Niaz; The Art of KANTHA Embroidery (Second Revised Edition;1993); The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh: আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  18. Ahmad, Perveen; The Aesthetics & Vocabulary of NAKSHI KANTHA (1997), page v; Bangladesh National Museum: আইএসবিএন ৯৮৪-৫৮৫-০০০-৬
  19. Mukerjee Radhakamal, The Flowering of Indian Art, Bombay, 1964, page 35
  20. Zaman Niaz, The Art of KANTHA Emroidery; (Second Revised Edition-1993), page 82;The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh; আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  21. Ahmad Perveen, The Aesthetics & Vocabulary of NAKSHI KANTHA (1997), page 92; Bangladesh National Museum, Dhaka, Bangladesh: আইএসবিএন ৯৮৪-৫৮৫-০০০-৬
  22. Zaman, Niaz; The Art of KANTHA Embroidery (1993), page-94; The University Press Limited, Dhaka, Bangladesh: আইএসবিএন ৯৮৪-০৫-১২২৮-৫
  23. "Press reports on Protecting Geographical Indication Products in Bangladesh - Centre for Policy Dialogue (CPD)"Centre for Policy Dialogue (CPD) (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-২৪ 
  24. "India – Bangladesh Parliamentary Dialogue"www.ficci-inbdpd.com। ২০১৬-০১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-২৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা