দুর্ভিক্ষ

কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি

দুর্ভিক্ষ (রাক্ষুসে-আকাল) হল কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি।[১] সাধারণত ফসলহানি, যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদিপশুর মড়ক, পোকাড় আক্রমণ ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়।

১৮৭৭ সালে তোলা ছবিতে ১৮৭৬-৭৮ সালে ব্রিটিশ ভারতে সংগঠিত হওয়া মহা দুর্ভিক্ষ।

১৭৭০ সালে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। সময়টি বাংলা ১১৭৬ সাল হওয়ায় এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত হয়। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সমগ্র দেশজুড়ে চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা ও খাদ্যবাজারে দালাল ফড়িয়া শ্রেণীর দৌরাত্ম্যের ফলে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে।[২]

১৯৪৩ সালে বাংলাদেশে একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৩৫০ বঙ্গাব্দে ( খ্রি. ১৯৪৩) এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বলে এটি পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। ১৯৩৮ সাল থেকে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমতে থাকে। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনাও এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল। জাপানি সেনাবাহিনীর হাতে বার্মার পতন হলে সেখান থেকে বিপুল পরিমান চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া যুদ্ধরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের চাহিদা, অতিরিক্ত মুনাফাভোগীদের দৌরাত্ম এবং সরকারি অব্যবস্থাপনা এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ। এই দুর্ভিক্ষে ৩.৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতা শহরে মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য যে, এদের মধ্যে সবাই কলকাতা শহরের বাইরের বাসিন্দা ছিল।

১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এটি ৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নামে পরিচিত। সে সময়ে কয়েক লক্ষ মানুষ অনাহারে অথবা অপুষ্টিজনিত রোগে মারা যায়। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। চাল ও লবণের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিশেষ করে লবণের সরবরাহ একেবারেই কমে যায়। অনেক কৃষক কয়েক মৌসুমের ফসল আগ্রীম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। খাবার ও কাজের খোঁজে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ ঢাকা শহরে ছুটে আসে। একই বছর ডিসেম্বর মাস থেকে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ কমতে থাকে। [৩]

বিংশ শতাব্দীতে আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের কারণে মারা যায়। ১৯৫৮-৬১ সালে চীনের মহাদুর্ভিক্ষে শুধুমাত্র চীনেই মারা যায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ।[৪] বিংশ শতাব্দীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দুর্ভিক্ষ হল, ১৯৬০ সালে বায়াফ্রা দুর্ভিক্ষ, ১৯৭০ সালে কাম্বোডিয়া দুর্ভিক্ষ, ১৯৯০ সালে উত্তর কোরিয়ার দুর্ভিক্ষ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে ইথোপিয়ার দুর্ভিক্ষ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kelly, James (মে ১৯৯২)। "Scarcity and Poor Relief in Eighteenth-Century Ireland: The Subsistence Crisis of 1782-4"। Irish Historical StudiesCambridge University Press28: 38–62। জেস্টোর 30008004 
  2. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]/বাংলাপিডিয়া
  3. [২]/বিবিসি বাংলা ২৯ ডিসেম্বর ২০১১
  4. "Famine in the Twentieth Century" (পিডিএফ)। IDS। ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১১