দধীচি

হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র

দধীচি ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন ঋষি। বিভিন্ন সময় দধীচিকে উদ্ধৃত করে নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা রচনা করা হয়েছে।

দধীচি
পরিবার

দধীচি বা দধ্যাংশ নামটি সংস্কৃতের দধ্য(দৈ) ও অংশ(ভাগ) শব্দ মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এর অৰ্থ হল ‘যার দেহ দধ্য(দৈ) থেকে শক্তি আহরণ করেছে’। ঋষি দধীচির নাম দধ্যাঙ্গ বা দধ্যাংশ শব্দ থেকে এসেছে বলে বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত পাণিনি তার অষ্টাধ্যায়ী গ্ৰন্থে উল্লেখ করেছেন।

ঋষি দধীচি শিবভক্ত হিসেবে প্ৰখ্যাত। সতী বিচ্ছেদের পর শিব কিছুদিন অরণ্যতে বাস করেছিলেন । ঋষি হিসেবে শিবের বনে আবিৰ্ভাব হবার দিনকে বাৰ্ষিক মহাশিবরাত্রি হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়। বনে থাকা কালীন দধীচি ও অন্য ঋষিগণ মহাদেবের আরাধনা করার কথা পুরাণে পাওয়া যায়।

ভাগবত পুরাণ অনুসারে ঋষি দধীচি ‘অথৰ্বন মুনি’ ও তার পত্নী ‘চিত্তি’র পুত্ৰ। ঋষি অথৰ্বনকে হিন্দু ধৰ্মশাস্ত্ৰ চতুর্বেদের অন্যতম অথর্ববেদ এর রচয়িতা । তার পত্নী চিত্তি ঋষি ‘কৰ্দম’র কন্যা ছিলেন। ঋষি দধীচির পত্নীর নাম স্বৰ্চা ও পুত্ৰ পিপ্পলাদ। ঋষি পিপ্পালাড়া প্ৰশ্ন উপনিষদের রচয়িতা । দধীচি মুনি নৈমিষারণ্যের মিশ্ৰিখে আশ্ৰম প্ৰতিষ্ঠা করেছিলেন । বৰ্তমান এটি উত্তরপ্ৰদেশ এর লক্ষ্ণৌতে অবস্থিত।[১] বৰ্তমান রাজস্থান এ বসবাস করা দধীচ ব্ৰাহ্মণ সম্প্ৰদায়ের লোকেরা ঋষি দধীচির বংশধর ।

বেদে বর্ণিত ঋষি দধীচি আখ্যান সম্পাদনা

অশ্বিণদ্বয়কে মধুবিদ্যা শিক্ষণ সম্পাদনা

ঋগ্বেদ ১.১১৯.৯ জানাচ্ছে : যে অশ্বিদ্বির স্তব করেছিল মধু সন্ধানী মক্ষিকারা , উশিজপুত্র যাদেরকে সোম হব্য দিয়েছিল । দধীচির মনকে যারা লুব্ধ ক'রেছিল তাঁকে তাদের অশ্বিমস্তক দিয়ে যাতে তিনি তাদেরকে মধুবিদ্যা শিখিয়েছিলেন ।

পুরাণে বৰ্ণিত ঋষি দধীচির উপাখ্যান সম্পাদনা

ইন্দ্র ও বৃত্ৰ - বজ্রযুদ্ধের কাহিনী সম্পাদনা

পৌরাণিক কাহিনীতে অসুরদের রাজা বৃত্ৰাসুর স্বর্গের দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের কাছ থেকে তার স্বর্গরাজ্য কেড়ে নেয়।ভগবান বিষ্ণুর কাছে ইন্দ্র জানতে পারেন যে স্বর্গরাজ্য ফিরে পেতে হলে সাধারণ কোনো অস্ত্র দিয়ে নয় দধীচি মুনির হাড় দিয়ে বানানো অস্ত্র দিয়েই বৃত্ৰাসুরকে হত্যা করতে হবে। এ কথা শুনে দধীচি মুনি আত্মত্যাগ করতে রাজি হলেন। দধীচি দেহত্যাগ করলে তার দেহের হাড় দিয়ে বৃত্ৰাসুরকে মারার জন্য অস্ত্র তৈরি করা হল। যার নামকরণ করা হল বজ্র। দেবরাজ ইন্দ্র এই বজ্র দিয়ে বৃত্ৰাসুরকে হত্যা করতে সক্ষম হন এবং স্বর্গরাজ্য ফিরে পান। প্রাচীন ভারতে লোকমুখে এই কাহিনী প্রচলিত ছিল।

দক্ষ যজ্ঞ ও অন্যান্য সম্পাদনা

প্ৰজাপতি দক্ষের আয়োজিত যজ্ঞে মহাদেবকে আমন্ত্ৰণ না জানানোর জন্য ঋষি দধীচি প্ৰথম ব্যক্তি হিসেবে সেই যজ্ঞ ত্যাগ করেন ।[২] ‘নারায়ণ কবচ’ মন্ত্ৰের রচনা ঋষি দধীচি করেছিলেন। দেবী হিঙ্গলাজের আরাধনার মন্ত্ৰসমূহ দধীচি মুনি রচনা করেছিলেন । পুরাণ বৰ্ণিত আখ্যান অনুসারে পরশুরাম একসময় সকল ক্ষত্ৰিয় নিধন করছিলেন। সেই সময় ঋষি দধীচি কিছু ক্ষত্ৰিয় সন্তানকে হিঙ্গলাজ দেবীর মন্দিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন ও দেবীর আরাধনা করে তাদের রক্ষা করেছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Great Sage Dadhichi"www.urday.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৫ 
  2. Mudgala Purana 1.3.19