দক্ষিণ কোরিয়ায় লিঙ্গ অসমতা

দক্ষিণ কোরিয়ায় লিঙ্গ অসমতা দ্বারা দক্ষিণ কোরিয়ায় নারী ও পুরুষের মাঝে সুযোগ সুবিধার ভিন্নতা এবং অসম আচরনের দিকে ইঙ্গিত করে।[১] প্রাচীন পিতৃতান্ত্রিক ধারণা ও আচারের প্রভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় লিঙ্গ অসমতার হার পৃথিবীতে অন্যান্য অনেক দেশের মতোই উচ্চহারে দেখা যায়।[২] যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে লিঙ্গ অসমতা তীব্রভাবে লক্ষণীয় তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে লিঙ্গ অসমতার হার কমছে।

পরিসংখ্যান  সম্পাদনা

বিভিন্ন ধরনের গণনার নিয়ম ও সমীক্ষার ধরনে দক্ষিণ কোরিয়ার লিঙ্গ অসমতার হার বিভিন্ন রিপোর্টে বিভিন্ন রকমভাবে প্রকাশ পায়। ২০১৭ সালের ইউএনডিপির রিপোর্ট অনুযায়ী ১৬০টি দেশের মাঝে করা এক সমীক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়া লিঙ্গ অসমতার হারে ১০ম স্থান দখল করেছে। আবার, একই বছরে করা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের করা গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে একটি র‍্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়া লিঙ্গ অসমতাত ১৪৪টি দেশের মাঝে ১১৮তম স্থানে ছিল।[৩] ব্রানিসা ও তাঁর দলের বিজ্ঞানীরা ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দাবী করেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রকাশকারী সমীক্ষাগুলোতে "ফলাফলের উপর জোর" দেয়া হয়। অর্থাৎ, লিঙ্গ অসমতা বিভিন্ন এজেন্সি ও ভালো ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়।[৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

ঐতিহাসিকভাবেই দক্ষিণ কোরিয়াতে লিঙ্গ অসমতার চর্চা হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপ সামরিক বাহিনীতে যৌনদাস এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পার্ক গিউন-হাই কলঙ্কের কথা উল্লেখ করা যায়।[৫][৬]

অসমতার ধরন সম্পাদনা

পেশাদারী ক্ষেত্রে লিঙ্গ অসমতার হার অন্যান্য সকল উন্নত দেশের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি।[৭] এই সমতা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দক্ষিণ কোরিয়ায় বেতনের ফারাক, বেকারত্বের হার, শ্রম এবং পিতৃ-মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় দেখা যায়।

বেতনের ফারাক সম্পাদনা

২০০১ সালের এক নিবন্ধে মংক-টাম্পার এবং টার্নার রিপোর্ট প্রকাশ করে যে, "সব কিছু সমান থাকলেও পুরুষেরা একই যোগ্যতা সম্পন্ন নারীদের চেয়ে অন্তত ৩৩.৬ থেকে ৪৬.৯ শতাংশ বেশি উপার্জন করে।"[৮] ২০১৭ সালের ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় লিঙ্গ ভিত্তিতে বেতনের ফারাক অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের মাঝে সবচেয়ে বেশি। এমনকি ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত একই রিপোর্টের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে, ১৭ বছরে লিঙ্গ অসমতার কারণে বেতনের ফারাক কমানোর কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় নি।[৯][১০]

কর্মক্ষেত্রে সম্পাদনা

দেখা গেছে, নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম বেতনের, অনিয়মিত চাকরিতে বেশি। এছাড়াও নারী কর্মীদের পদোন্নতি হওয়ার হারও কম। অবশ্য ধীরে ধীরে হলেও চাকুরিক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার গত কয়েক দশক ধরে বাড়ছে।[১১] কোরিয়া যুদ্ধের পূর্বে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিলো ৩০ শতাংশ।[১২] ২০১৮ সালের ওইসিডির রিপোর্ট অনুযায়ী যা বর্তমানে ৫৬.১ শতাংশ। যা অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের তুলনায় সবচেয়ে কম। অথচ, পুরুষের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের হার অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশি।[৯]

 
১৯৪৪ সালের মার্কিন সামরিক বাহিনী কোরিয়া যুদ্ধের সময়ে নিপীড়িত নারীদের প্রশ্ন করছে। 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Parziale, Amy (২০০৮), "Gender Inequality and Discrimination", Encyclopedia of Business Ethics and Society, SAGE Publications, Inc., পৃষ্ঠা 978–981, ডিওআই:10.4135/9781412956260.n365, সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১৭ 
  2. Cho, Uhn (২০১৩)। Contemporary South Korean Society: A Critical Perspective। Routledge। পৃষ্ঠা 18–27। আইএসবিএন 9780415691390ওসিএলসি 741542008 CS1 maint: Date and year (link)
  3. "Human Development Reports"hdr.undp.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-১৭ 
  4. Branisa, Boris; Klasen, Stephan; Ziegler, Maria; Drechsler, Denis; Jütting, Johannes (২০১৩-১২-১১)। "The Institutional Basis of Gender Inequality: The Social Institutions and Gender Index (SIGI)"Feminist Economics (ইংরেজি ভাষায়)। 20 (2): 29–64। আইএসএসএন 1354-5701ডিওআই:10.1080/13545701.2013.850523 
  5. Hoffman, Diane M. (১৯৯৫)। "Blurred Genders: The Cultural Construction of Male and Female in South Korea"Korean Studies19: 112–138। 
  6. "Gender Colors Outrage Over Scandal Involving South Korea's President" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৭ 
  7. "Human Development Reports"hdr.undp.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৭ 
  8. Monk-Turner, Elizabeth; Turner, Charlie G. (2001-01)। "Sex Differentials in Earnings in the South Korean Labor Market"Feminist Economics (ইংরেজি ভাষায়)। 7 (1): 63–78। আইএসএসএন 1354-5701ডিওআই:10.1080/13545700010028374  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  9. OECD (২০১৭-১০-০৪)। "The Pursuit of Gender Equality" (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1787/9789264281318-en 
  10. "Since 2000, S. Korea number one in OECD for gender pay inequality"www.hani.co.kr। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-১৭ 
  11. "OECD Economic Surveys: Korea 2018"www.oecd-ilibrary.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৭ 
  12. Routledge handbook of modern Korean history। Seth, Michael J., 1948-। London। আইএসবিএন 9780415739313ওসিএলসি 883647567 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা