তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ঢাকা শহরের অন্যতম বিখ্যাত এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১] এটির দুইটি শাখা রয়েছে। প্রভাতি শাখা এবং দিবা শাখা। প্রভাতি শাখায় মেয়েরা এবং দিবা শাখায় ছেলেরা। প্রভাতি শাখার ক্লাস শুরু সকাল ০৭:৩০ মিনিটে এবং ছুটি দুপুর ১২:০০ টায়। এবং দিবা শাখার শুরু দুপুর ১২:৩০ ও ছুটি ০৫:০০।

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
[[File:‎|frameless|upright=1]]
অবস্থান
মানচিত্র

তথ্য
ধরনমাধ্যমিক বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৫৫
বন্ধবিকাল ৫.০৫
ইআইআইএন১০৮৫২২ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
অধ্যক্ষশাহ্‌রীন খান রূপা
ওয়েবসাইটwww.tghs.edu.bd

শিক্ষা একজন মানুষকে তার সুপ্ত মানসিক শক্তি উন্মোচনে সহায়তা করে। আবার একটি দেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ গঠন এবং তার ক্রমোন্নতির জন্য প্রকৃত শিক্ষা হয়ে ওঠে একটি অনিবার্য উপাদান। এই উদ্দেশ্যে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৫৫ সালে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়। এটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিতইহার একটি গৌরবময় অতীত রয়েছে। প্রথম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জগতে তার ভাবমূর্তি সমানভাবে ধরে রেখেছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুল থেকে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এর সাথে আরেকটি নাম আরেকটি ব্যঞ্জনা জনাব নূর মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক, যাদের পদধুলিতে ধন্য এ দেশ তিনি তাদেরই একজন। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ লুৎফর রহমান-কে যিনি ১৯৬৯ সালে এ বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি পাস করেছিলেন।

তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৮১ সালে এর জাতীয়করণ হলেও ১৯৫৫ সাল থেকে এর যাত্রা শুরু। তখন একজন প্রধান শিক্ষক ও দুজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের অধীনে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল হাই স্কুলের বালক ও বালিকা শাখা চলতো। ১৯৫৫ সালে স্কুলের জন্য ভাওয়াল রাজার দানকৃত ২২ বিঘা জমি কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তৎকালীন সরকার হুকুম দখল করে নেয়। স্কুল নেই, আছে শুধু কয়েকজন ছাত্র, ম্যানেজিং কমিটি এবং কয়েকজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের এ ক্রান্তিলগ্নে ভাসমান নাম সর্বস্ব স্কুলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জনার নূর মোহাম্মদ। তিনি বিভিন্ন জায়গায় স্কুলের একটু জায়গার জন্য ধর্ণা দিতে শুরু করলেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন মরহুম ডাঃ টি আহম্মদ এবং মরহুম দোহা। পাকিস্তানের তৎকালীন স্পিকার মরহুম তমিজ উদ্দিন খানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবশেষে তিনি পি.আই এর খালি জায়গায় স্কুল করার অনুমতি পেলেন। কিছুদিন পর আজম খান পাকিস্তানের গভর্নর হলে স্কুলের মাথায় নেমে আসে এক মহাবিপদ সংকেত। ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হল স্কুল সরিয়ে নিতে। তিনি আবারও ছুটলেন স্কুলটিকে বাঁচানোর জন্য। এ সময় আবার পাশে এসে দাঁড়ালেন তমিজ উদ্দিন খান সাহেব। তিনি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা গভর্নরকে বোঝাতে সক্ষম হলেন। বেঁচে গেল স্কুল। এর সাথে তৎকালীন জেনারেল ওমরাও খানের নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। সেই থেকে শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে গেছে স্কুল, স্কুলের অবস্থান সম্পর্কে আর কাউকে ভাবতে হয় নি।

ভৌত অবকাঠামো সম্পাদনা

বিদ্যালয়টিতে একটি এল টাইপ তিনতলা ভবন, একটি দোতলা ভবন ও একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। তিনতলা ভবনের নিচতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয়ের কক্ষ, অফিস কক্ষ, রেকর্ড রুম, শিক্ষক মিলনায়তন ছাড়াও আটটি কক্ষে শ্রেনির কাজ পরিচালিত হয়। দ্বিতীয় তলায় গার্হস্থ্যবিজ্ঞান ল্যাব, মহিলাদের নামাযের কক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব, রসায়ন ল্যাব, জীববিজ্ঞান ল্যাব ছাড়াও ছয়টি কক্ষে শ্রেণির কাজ পরিচালিত হয়। তিনতলায় রয়েছে শুধুমাত্র ছাত্রীদের জন্য চৌদ্দটি শ্রেণিকক্ষ এবং ওয়াশরুম। ভবনটির পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রয়েছে উঠানামার সিড়ি।

দোতলা ভবনটির নিচতলার ছয়টি কক্ষের একটিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার বাহিনীর আবাসিক কক্ষ। বাকী পাঁচটি স্টোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দোতলার ছয়টি কক্ষে শ্রেণির কাজ পরিচালিত হয়। উক্ত ভবনটির সাথে তিনতলা ভবনের সংযোগ রয়েছে একটি ছোট ব্রীজের মাধ্যমে।

পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় রয়েছে একটি হলরুম। দোতলায় রয়েছে তিনটি শ্রেণিকক্ষ এবং স্কাউট ডেন। তিনতলায় রয়েছে একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও সুবিশাল লাইব্রেরি। চারতলায় রয়েছে একটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও কম্পিউটার ল্যাব ও রেডক্রিসেন্ট কক্ষ। পাঁচতলায় রয়েছে একটি ছোট হলরুম, একটি শ্রেণিকক্ষ এবং গার্লস গাইড অফিস। তাছাড়া অত্র ভবনে পূর্বদিকে নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আধুনিক টয়লেট।

পাঁচতলা ভবনের নিচে পশ্চিম পাশে একটি শেড তৈরি করে দশটি পানির কল বসিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হাতমুখ ধোয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনতলা ভবনের তিনতলায় এবং নিচতলায় পানির লাইনে ফিল্টার বসিয়ে করা হয়েছে বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে পরিবেশ বান্ধব অসংখ্য ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষ। তিনটি ভবনের মাঝে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠ। প্রতিটি ভবনেই রয়েছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক লাইন।

ছাত্র-ছাত্রীদের টিফিন তৈরির জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত কোন ক্যাফেটেরিয়া ভবন না থাকলেও একটি টিনশেড ঘরে গ্যাস লাইন সংযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নকালীন টিফিন কর্মসূচী চালু করা হয়েছে।

লক্ষ্য সম্পাদনা

শিক্ষার্থীদেরকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী রূপে গড়ে তোলা।

শিক্ষার্থীদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

উদ্দেশ্য সম্পাদনা

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বৃত্তিগুলোর সুষম বর্ধনে সহায়তা করা।

শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা ও প্রতিভার বিকাশ সাধন।

অবদান সম্পাদনা

একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জীবন আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে অভূতপূর্ব, অগ্রগামী, গতিশীল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বৈচিত্র্যের জন্য। দক্ষ, শিক্ষিত, কৌশলী এবং সম্ভাবনাময় ব্যক্তিই দরকার এই গতিশীল ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের শপথ নিয়ে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আধুনিক ও বিশ্বমানের মানসম্মত শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রদান করছে।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার"banglanews24.com। ২০১৭-১২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-০১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

১. বিদ্যালয়ের বর্তমান অফিশিয়াল ওয়েবসাইট