তিরমিজ

উজবেকিস্তানের একটি ছোট শহর

তিরমিজ (উজবেক: Termiz/Термиз; রুশ: Термез; তাজিক: Тирмиз; ফার্সি: ترمذ; আরবি: ترمذ) উজবেকিস্তানের সর্বদক্ষিণ অংশের একটি ছোট শহর। এটি আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী হাইরাতান শহরের নিকটে অবস্থিত। তিরমিজ উজবেকিস্তানের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান। ১ জানুয়ারি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ১,৪০,৪০৪। তিরমিজ সারখান্দারয়ু অঞ্চলের রাজধানী।

তিরমিজ
Termiz / Термиз
সুলতান সাওদাত
সুলতান সাওদাত
তিরমিজ উজবেকিস্তান-এ অবস্থিত
তিরমিজ
তিরমিজ
উজবেকিস্তানে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ৩৭°১৩′ উত্তর ৬৭°১৭′ পূর্ব / ৩৭.২১৭° উত্তর ৬৭.২৮৩° পূর্ব / 37.217; 67.283
Country Uzbekistan
অঞ্চলসারখান্দারয়ু অঞ্চল
সরকার
 • ধরননগর প্রশাসন
জনসংখ্যা (২০০৫)
 • মোট১,৪০,৪০৪

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাচীন ও মধ্যযুগ সম্পাদনা

পুরনো তিরমিজ শহরটি আধুনিক শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এর নির্মাণের তারিখ স্পষ্টভাবে জানা যায় না। ২০০২ সালের এপ্রিলে তিরমিজ শহরের ২,৫০০তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে।[2]

খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে হাখমানেশী সাম্রাজ্যের নিকট পরিচিত ছিল। ৩২৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেক্সান্ডার তিরমিজ জয় করেছিলেন। পরবর্তীতে গ্রেকো-ব্যাক্ট্রিয়ান রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডেমেট্রিয়াস এই শহরের নাম রাখেন ডেমেট্রিস। কুশান সাম্রাজ্যের যুগে এই শহরকে বলা হত তা-লি-মি। এই যুগে শহরটি বৌদ্ধধর্মের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে হেফথালি ও সাসানীয়রা শহরটি শাসন করেছে।

৭ম শতাব্দীতে স্থানীয় শাহ রাজবংশ তিরমিজ শাসন করেছে। তারা গোকতুর্কদের অনুগত ছিল।

৭০৫ সালে মুসলিমরা শহরটি জয় করে। আব্বাসীয়সামানি যুগে শহরটি ইসলামের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠে।

৯ম থেকে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত তিরমিজ একটি বৃহৎ শহর এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। হস্তশিল্পের জন্য এই শহর খ্যাত ছিল। এসময় শহরের প্রতিরক্ষার দেয়াল ছিল ১০ মাইল দীর্ঘ এবং এতে নয়টি ফটক ছিল। এই সময়কালে তিরমিজ গজনভি, সেলজুককারা-খানি খানাতের অংশ ছিল। ১২০৬ সালে শহর খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের অংশ হয়।

১২২০ সালে দুই দিনের অবরোধের পর চেঙ্গিস খানের সৈন্যরা শহরটি ধ্বংস করে দেয়।

১৩শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে তিরমিজ পুনর্গঠিত হয়। এটি প্রথমে তৈমুরি সাম্রাজ্য ও পরে শাইবানিদের অধীনস্থ হয়। ১৮শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে শহরটি পরিত্যক্ত হয়েছিল।

রুশ সাম্রাজ্য ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পাদনা

১৮৯৩ সালের জানুয়ারিতে একটি রুশ দুর্গ নির্মাণের জন্য বুখারা আমিরাত পাতাকেসার গ্রামটি রুশ সাম্রাজ্যকে প্রদান করে। এখানে আমু দরিয়া নদীবন্দর নির্মিত হয়েছিল।

১৯২৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে পাতাকেসারের নাম পরিবর্তন করে শহরের প্রাচীন নাম তিরমিজ রাখা হয়। ১৯২৯ সালে গ্রামটি শহরে পরিণত হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় তিরমিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

স্বাধীন উজবেকিস্তান সম্পাদনা

১৯৯২ সালে তিরমিজের পেডাগোগিকাল ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করা হয়।

পরিবহন ব্যবস্থা সম্পাদনা

আমু দরিয়া নদী উজবেকিস্তান ও আফগানিস্তানকে আলাদা করেছে। আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান মৈত্রী সেতু নদীর উপর দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে। এছাড়াও তিরমিজে তিরমিজ বিমানবন্দর রয়েছে। রেলপথের মাধ্যমে তিরমিজ অন্যান্য শহরের সাথে যুক্ত।[১]

জনসংখ্যা সম্পাদনা

২০০৫ সালে সরকারি হিসাব অনুযায়ী তিরমিজের জনসংখ্যা ১,৪০,৪০৪। তাজিকউজবেকরা তিরমিজের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।

জলবায়ু সম্পাদনা

তিরমিজের জলবায়ু উষ্ণ। এর গ্রীষ্মকাল দীর্ঘ এবং শীতকাল অপেক্ষাকৃত স্বল্পস্থায়ী।

Termez-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) ২৩.৮
(৭৪.৮)
২৮.৪
(৮৩.১)
৩৪.৪
(৯৩.৯)
৩৮.৭
(১০১.৭)
৪৩.৬
(১১০.৫)
৫০.০
(১২২.০)
৫১.০
(১২৩.৮)
৫০.০
(১২২.০)
৪১.৫
(১০৬.৭)
৩৭.০
(৯৮.৬)
৩২.৪
(৯০.৩)
২৬.৭
(৮০.১)
৫১.০
(১২৩.৮)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) ১০.৪
(৫০.৭)
১৩.৩
(৫৫.৯)
১৮.৯
(৬৬.০)
২৬.৬
(৭৯.৯)
৩২.৮
(৯১.০)
৩৮.০
(১০০.৪)
৩৯.৭
(১০৩.৫)
৩৮.০
(১০০.৪)
৩২.৮
(৯১.০)
২৫.৮
(৭৮.৪)
১৮.৮
(৬৫.৮)
১২.১
(৫৩.৮)
২৫.৬০
(৭৮.০৮)
দৈনিক গড় °সে (°ফা) ৪.২
(৩৯.৬)
৬.৭
(৪৪.১)
১২.১
(৫৩.৮)
১৮.৯
(৬৬.০)
২৪.৬
(৭৬.৩)
২৯.১
(৮৪.৪)
৩০.৫
(৮৬.৯)
২৮.৪
(৮৩.১)
২২.৮
(৭৩.০)
১৬.৫
(৬১.৭)
১০.৮
(৫১.৪)
৫.৬
(৪২.১)
১৭.৫২
(৬৩.৫৪)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) −০.৩
(৩১.৫)
১.৭
(৩৫.১)
৬.৫
(৪৩.৭)
১২.০
(৫৩.৬)
১৬.৫
(৬১.৭)
১৯.৯
(৬৭.৮)
২১.৪
(৭০.৫)
১৯.২
(৬৬.৬)
১৩.৯
(৫৭.০)
৮.৬
(৪৭.৫)
৪.৭
(৪০.৫)
১.০
(৩৩.৮)
১০.৪৩
(৫০.৭৭)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) −১৯.৭
(−৩.৫)
−১৭.৫
(০.৫)
−৭.৯
(১৭.৮)
−২
(২৮)
−০.১
(৩১.৮)
১১.৪
(৫২.৫)
১২.৯
(৫৫.২)
৯.৩
(৪৮.৭)
২.৮
(৩৭.০)
−৪.২
(২৪.৪)
−১১
(১২)
−১৮.৪
(−১.১)
−১৯.৭
(−৩.৫)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) ২৪
(০.৯)
২৪
(০.৯)
৩৬
(১.৪)
২৩
(০.৯)

(০.৪)

(০.১)

(০)

(০)

(০.১)

(০.১)
১২
(০.৫)
২১
(০.৮)
১৫৬
(৬.১)
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড় ১০ ১১ ৬০
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%) ৭৭ ৭১ ৬৬ ৫৭ ৪৫ ৩৬ ৩৬ ৩৮ ৪৫ ৫৩ ৬৫ ৭৬ ৫৫
উৎস: Погода и Климат [২]

প্রাচীন তিরমিজের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সম্পাদনা

প্রধান ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সম্পাদনা

 
তিরমিজের একটি বাজার
  • কিরক-কিজ দুর্গ (৯ম-১৪শ শতাব্দী)
  • তিরমিজ শাসকদের প্রাসাদ (১১শ-১২শ শতাব্দী)
  • মুহাম্মদ ইবনে আলি আত-তিরমিজির স্থাপত্য কমপ্লেক্স (১০ম-১৫শ শতাব্দী)
  • সুলতান সাওদাত (১০ম-১৮শ শতাব্দী)
  • কোকিলদোরা খানকা (১৬শ শতাব্দী)
  • কারা-টেপে বৌদ্ধ মঠ (২য়-৪র্থ‌ শতাব্দী)
  • ফায়াজ-টেপে বৌদ্ধ মঠ (১ম-৩য় শতাব্দী)
  • জুরমালা টাওয়ার (১ম-২য় শতাব্দী)
  • আত-তিরমিজির মাজার (৯ম শতাব্দী)
  • জুল কিফল মাজার

যুদ্ধ সম্পাদনা

 
আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান মৈত্রী সেতু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেক বছর যাবত ১০৮তম মোটর রাইফেল ডিভিশন তিরমিজে ঘাঁটি করেছিল।

সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় ১,০০,০০০ এর বেশি সোভিয়েত সৈনিক তিরমিজে ঘাঁটি স্থাপন করে। বিমানঘাঁটি আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর সাথে কর্মরত জার্মান ও ডাচদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Surxondaryo Region