তিউনিস

তিউনিসিয়ার রাজধানী

তিউনিস (আরবি: تونس Tūnis) তিউনিসিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। বৃহত্তর তিউনিস নগর এলাকাতে (যাকে প্রায়শ "বৃহত্তর তিউনিস" নামে ডাকা হয়) প্রায় ২৭ লক্ষ লোক বাস করেন।

তিউনিস
تونس
শহর
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: এভিনিউ হাবিব বোরগুইবা, এভিনিউ ১৪ – জানভিয়ার ২০১১, ইবনে খালদাউনের মূর্তি, সিদি বেলহাসেন পর্বত থেকে তিউনিসের দৃশ্য, সিদি বউ সাইদের দৃশ্য, রাতে তিউনিসের দৃশ্য।
Flag of Tunis
পতাকা
Coat of arms of Tunis
প্রতীক
তিউনিস তিউনিসিয়া-এ অবস্থিত
তিউনিস
তিউনিস
তিউনিস আফ্রিকা-এ অবস্থিত
তিউনিস
তিউনিস
অবস্থান তিউনিসিয়াআফ্রিকা
স্থানাঙ্ক: ৩৬°৪৮′২৩″ উত্তর ১০°১০′৫৪″ পূর্ব / ৩৬.৮০৬৩৯° উত্তর ১০.১৮১৬৭° পূর্ব / 36.80639; 10.18167
দেশ তিউনিসিয়া
গভর্নরেটTunis
First settled2nd millennium BC
প্রতিষ্ঠাতাBerbers
সরকার
 • MayorSeifallah Lasram
আয়তন
 • শহর২১২.৬৩ বর্গকিমি (৮২.১০ বর্গমাইল)
 • মহানগর২,৬৬৮ বর্গকিমি (১,০৩০ বর্গমাইল)
সর্বোচ্চ উচ্চতা৪১ মিটার (১৩৫ ফুট)
সর্বনিন্ম উচ্চতা৪ মিটার (১৩ ফুট)
জনসংখ্যা (2014)[২]
 • শহর১ ০৫৬ ২৪৭[১]
 • জনঘনত্ব৯,৪০৬.০১/বর্গকিমি (২৪,৩৬১.৫/বর্গমাইল)
 • পৌর এলাকা২২,৯৪,৫৪৭
 • মহানগর২৬,৪৩,৬৯৫
বিশেষণতুনসি (আরবি: تونسي, Tounsi)
সময় অঞ্চলCET (ইউটিসি+1)
Postal code1xxx, 2xxx
Calling code71
আইএসও ৩১৬৬ কোডTN-11, TN-12, TN-13 and TN-14
geoTLD.tn
ওয়েবসাইটTunis City

তিউনিস শহরটি পূর্ব ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত তিউনিস উপসাগরের একটি খাঁড়ির তীরে অবস্থিত, যার নাম তিউনিস হ্রদ। এটি ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লা গুলেত বা হাল্ক আল ওয়াদি সমুদ্রবন্দরের সাথে জাহাজবাহী খালপথের মাধ্যমে সংযুক্ত। শহরটি একটি উপকূলীয় সমভূমি এবং তার আশেপাশের পাহাড়গুলির উপরে বিস্তৃত।

তিউনিস শহরটি দুই ভাগে বিভক্ত। শহরের কেন্দ্রের প্রাচীন প্রাচীরবেষ্টিত মুসলমান-অধ্যুষিত এলাকাটির নাম তিউনিসের মদিনা; এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। পুরাতন শহরের রাস্তাগুলি সংকীর্ণ এবং আঁকাবাঁকা। এখানে অনেক পণ্যদ্রব্যে পূর্ণ বাজার ও জমকালো মসজিদ আছে। এখানে আরও আছে স্থানীয় শাসনকর্তা বা বেগের প্রাসাদ, যেটি বর্তমানে একটি শিল্পকলা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুর জাদুঘর। এখানে আরও আছে জলপাই বৃক্ষের মসজিদ (৭৩২ সালে স্থাপিত), যেটি একসময় একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

মদিনার পূর্ব পাশ থেকে সমুদ্রদ্বার (বাব এলা ভার বা পর্ত দো ফ্রঁস নামেও পরিচিত) অতিক্রম করলে শুরু হয় আধুনিক বা ইউরোপীয় তিউনিস শহর, যাকে ভিল নুভেল নামেও ডাকা হয়। নতুন তিউনিসের ভেতর দিয়ে চলে গেছে বিশাল হাবিব বুরগিবা রাজপথ বা অ্যাভিনিউ। এই রাজপথের উপরে ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলের অনেক ভবন অবস্থিত, যেগুলি প্রাচীন ক্ষুদ্রতর স্থাপনাগুলির থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এরও পূর্বে সমুদ্রতীরে রয়েছে কার্থেজ, লা মারসা এবং সিদি বোউ সাইদ নামের শহরতলীগুলি।

কৃষিকাজ এখানকার অর্থনৈতিক উপার্জনের মূল উৎস। এখানে মূলত জলপাই ও খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হয়। এগুলি থেকে জলপাই তেল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। শিল্পকারখানাগুলিতে বস্ত্র, পোশাক, ফরাস, সিমেন্ট, ধাতব নির্মাণ সামগ্রী, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদিত হয়। ধাতুগলন, যন্ত্রপাতি নির্মাণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও রেলগাড়ির কারখানাও আছে। হাল্ক আল ওয়াদি বন্দরে অনেকগুলি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে এবং মাকরিনে একটি সীসা গলন কারখানা আছে। পর্যটন শহরের অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শহরের উত্তর-পূর্বে আল-উওয়াইনাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং তিউনিস-কার্থেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দুইটি অবস্থিত। শহরটি রেলপথের মাধ্যমে অন্যান্য উত্তর আফ্রিকান সমুদ্রবন্দরের সাথে সংযুক্ত।

তিউনিসে দুইটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চনাটক মিলনায়তন আছে। জুলাই মাসে কার্থেজে গ্রীষ্মকালীন উৎসব হয়, যেটি বেশ খ্যাতি লাভ করেছে। শহরের আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে আছে এর উষ্ণ স্নানঘর বা গোসলখানাগুলি, যেগুলি রোমেন আন্তোনিন সম্রাটদের সময় থেকে, অর্থাৎ খ্রিস্টীয় ২য় শতকে থেকে, এখানে অবস্থিত। সিদি বু সাইদ নামক টিলা, স্থানীয় বাজার বা সুক, ৮ম শতকে নির্মিত আল-জাইতুনাহ মসজিদ, যা তিউনিসের সবচেয়ে প্রাচীন ও সম্মানিত সৌধ। ১৯৬০ সালে তিউনিস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। শহরের দক্ষিণ-পূর্বে ওয়াদি মিলিয়ান উপত্যকাতে গেলে চোখে পড়বে রোমানদের নির্মিত জলপরিবহনপথের দৃষ্টিনন্দন অবশেষ, যে পথটি জাগওয়ান পর্বত ও কার্থেজ শহরকে সংযুক্ত করেছিল।

সম্ভবত একটি ফিনিসীয় বসতি হিসেবে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তিউনিস শহরটির পত্তন হয়। কিন্তু প্রাচীনকালে প্রতিবেশী শহর কার্থেজের প্রতিপত্তি অনেক বেশি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬ সালে রোমানরা কার্থেজ শহরের সাথে সাথে তিউনিস শহরটিও দখল করে। খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে আরবদের নিয়ন্ত্রণে আসার পর তিউনিসের ব্যাপক উন্নতি ঘটে, বিশেষ করে হাফসিদ রাজবংশের সময় (১২২৮-১৫৭৪) এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ১৭শ এবং ১৮শ শতকে বাণিজ্য ও জলদস্যুতার বদৌলতে শহরটির অর্থনীতি সমৃদ্ধি সমুন্নত থাকে।

আধুনিক তিউনিস শহরটি ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে (১৮৮১-১৯৫৬) নির্মাণ করা হয়। এই যুগে শহরটির জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। বহু ইউরোপীয় এবং স্থানীয় মুসলমান নতুন নতুন বাণিজ্য ও শিল্পকারখানার উপস্থিতির কারণে শহরটির প্রতি আকৃষ্ট হয়। তিউনিস শহরটি তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৫৬ সালে তিউনিসিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের পরে শহরটিকে দেশের রাজধানী বানানো হয়।

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Recencement"ins.tn। ২০১৪-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ins নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি