তারুণ্যোচ্ছল ষাটের দশক

১৯৬০-এর দশকে লন্ডন-কেন্দ্রিক তারুণ্যনির্ভর সাংস্কৃতিক বিপ্লব

তারুণ্যোচ্ছল ষাটের দশক বলতে ১৯৬০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে শেষভাগ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে তরুণদের মাঝে ঘটা একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঘটনাকে বোঝায়, যাতে আধুনিকতা ও আমোদ-ফুর্তিপ্রিয় শ্রেয়োবাদের উপর জোর দেওয়া হয়। তারুণ্যোচ্ছল লন্ডন নগরী ছিল এই আন্দোলনের কেন্দ্র।[১] এই আন্দোলনে শিল্পকলা, সঙ্গীতপোশাকশৈলীর বিকাশ ঘটে এবং লন্ডন নগরীর "পপ" ও "ফ্যাশন" বিদেশে রপ্তানি ছিল এর অন্যতম প্রতীক। দ্য বিটলস নামক সঙ্গীতদলটি জনপ্রিয় সঙ্গীতের ভুবনে ব্রিটিশ আগ্রাসনে নেতৃত্ব দেয়। ম্যারি কুয়ান্টের মিনি-স্কার্ট, টুইগিজিন শ্রিমটনের মতো জনপ্রিয় পোশাকশৈলী মডেল, মড উপসংস্কৃতি, লন্ডনের কিংস রোড, কেনসিংটনকার্নাবি স্ট্রিটের জনপ্রিয় বিপণী এলাকাগুলির কিংবদন্তীসম মর্যাদা, পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মত রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মকাণ্ড ও যৌন স্বাধীনতা ছিল এই আন্দোলনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।[১]

তারুণ্যোচ্ছল ষাটের দশক
১৯৬০-এর দশকের প্রতিসংস্কৃতি-এর অংশ
আনুমানিক ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড এলাকার কার্নাবি স্ট্রিট সড়কের একটি দৃশ্য
তারিখ১৯৬০-এর দশক
অবস্থানযুক্তরাজ্য
অন্য পরিচয়তারুণ্যোচ্ছল লন্ডন, সুইঙিং লন্ডন, সুইঙিং সিক্সটিজ

আন্দোলনের বড় একটি অংশ ছিল সঙ্গীত, যা "লন্ডন সাউন্ড" নামে পরিচিত। দ্য হু, দ্য কিংকস, দ্য স্মল ফেসেজদ্য রোলিং স্টোনস সঙ্গীতদলগুলির গানবাজনা অবৈধ বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রগুলি (যেমন রেডিও ক্যারোলাইন, ওয়ান্ডারফুল রেডিও লন্ডনসুইঙিং রেডিও ইংল্যান্ড) থেকে প্রায়শই সম্প্রচার করা হত। [২] তারুণ্যোচ্ছল লন্ডন ব্রিটিশ চলচ্চিত্রের উপরেও প্রভাব ফেলে; ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটের মতে এসময় চলচ্চিত্রে "রূপগত পরীক্ষানিরীক্ষা, বাকস্বাধীনতা, গাত্রবর্ণ ও হাস্যরসের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়।"[১] এই পর্বে সব ধরনের সৃষ্টিশীল ব্যক্তি রাজধানী লন্ডনের দিকে আকৃষ্ট হয়, যাদের মধ্যে লেখক, শিল্পী, সাময়িকী প্রকাশক, আলোকচিত্রগ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, পণ্য নকশাকারক, ইত্যাদি উল্লেখ্য।"[২]

১৯৬০-এর দশকে লন্ডন একটি "বিমর্ষ, ক্লেদাক্ত যুদ্ধোত্তর রাজধানী থেকে শৈলীর এক উজ্জ্বল, চকমকে পরিকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়।"[২] ১৯৫০-এর দশকে যুদ্ধোত্তর শিশু বিস্ফোরণ এবং যুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক তেজিভাব - এই দুই কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছিল।[২] ১৯৬০ সালে পুরুষদের জন্য জাতীয় সামরিক সেবাতে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ রদ করে দেওয়ার পরে এইসব তরুণেরা তাদের বাবা-মায়ের প্রজন্মের তুলনায় অধিকতর স্বাধীনতা ও অপেক্ষাকৃত কম দায়িত্ব ভোগ করা শুরু করে[২] এবং সামাজিক ও যৌন রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা করে।[১]

১৯৬০-এর দশকের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্রিটেনের জনচেতনাকে আকৃতি দানকারী এই আন্দোলনটি মূলত লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড (পশ্চিম প্রান্ত) এলাকার তরুণ মধ্যবিত্ত জনগণকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল, যাদের কেউ কেউ ব্যাপারটিকে এক ধরনের বিনোদন হিসেবেই গণ্য করেছিল। তারুণ্যোচ্ছল আন্দোলনটি আবার ১৯৬০-এর দশকের ভোগবাদ-বিরোধী ব্রিটিশ "আন্ডারগ্রাউন্ড" প্রতিসংস্কৃতিটির সমসাময়িক একটি ভোগবাদী বিপক্ষ হিসেবে কাজ করেছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wakefield, Thirza (১৫ জুলাই ২০১৪)। "10 great films set in the swinging 60s"British Film Institute। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৬ 
  2. "Swinging 60s – Capital of Cool"History. AETN UK। ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ নভেম্বর ২০১৬