তাত্ত্বিক রসায়ন

একাডেমিক ক্ষেত্র

তাত্ত্বিক রসায়ন, রসায়ন বিভাগের একটি শাখা, যা আধুনিক রসায়নের বিভিন্ন তাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের সিদ্ধান্ত গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, রাসায়নিক বন্ধনের ধারণা, রাসায়নিক বিক্রিয়া, যোজনী, সম্ভাব্য শক্তিস্তর, আণবিক কক্ষপথ, কক্ষপথের মিথস্ক্রিয়া, অণুর সক্রিয়করণ ইত্যাদি।

জে. ভ্যান'ট হফ (১৮৫২-১৯১১), প্রথম রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ইতিহাসে সবচেয়ে মেধাবী তাত্ত্বিক রসায়নবিদদের একজন হিসেবে বিবেচিত।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্পাদনা

তাত্ত্বিক রসায়ন রসায়নের সকল শাখার সাধারণ নীতি এবং ধারণাসমূহকে একত্রিত করে। তাত্ত্বিক রসায়নের কাঠামোতে, রাসায়নিক সূত্র, নিয়ম-নীতি এবং, তাদের পরিমার্জন এবং সম্প্রসারণ এবং অনুক্রম নির্মাণ সম্পর্কে যুক্তি প্রয়োগ করা হয়। তাত্ত্বিক রসায়নের কেন্দ্রীয় স্থান গঠন এবং আণবিক সিস্টেমের বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সংযোগ স্থাপনের মতবাদ দ্বারা দখল করা হয়। এটি রাসায়নিক পদ্ধতিগুলির কাঠামো এবং গতিশীলতা ব্যাখ্যা করার জন্য এবং তাদের তাপচালিত এবং গতিবিদ্যা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত, বোঝার এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য গাণিতিক এবং শারীরিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। সর্বাধিক সাধারণ অর্থে, এটি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা পদ্ধতির দ্বারা রাসায়নিক ঘটনা ব্যাখ্যা। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের বিপরীতে, রাসায়নিক পদ্ধতিগুলির উচ্চ জটিলতার সাথে সম্পর্কিত, তাত্ত্বিক রসায়ন, আনুমানিক গাণিতিক পদ্ধতি ছাড়াও, প্রায়শই আধা-পরীক্ষামূলক এবং পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে।

সাম্প্রতিক সময়ে, এটি প্রধানত কোয়ান্টাম রসায়ন দ্বারা গঠিত, বি.দ্র., রসায়নের সমস্যায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রয়োগ। অন্যান্য প্রধান অংশগুলোর মধ্যে আণবিক গতিবিদ্যা, সংখ্যাতাত্ত্বিক তাপগতিবিদ্যাতড়িৎবিশ্লেষ্য দ্রবণ তত্ত্ব, বিক্রিয়া নেটওয়ার্ক, পলিমারকরণ, অনুঘটন, আণবিক চৌম্বকত্ব এবং বর্ণালিবীক্ষণ অন্তর্গত।

আধুনিক তাত্ত্বিক রসায়নকে মোটামুটিভাবে রাসায়নিক গঠনের আলোচনা ও রাসায়নিক গতিবিদ্যার আলোচনা এই দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমটিতে ইলেকট্রনের অবস্থান, বিভব শক্তির স্তর ও শক্তি ক্ষেত্র; কম্পন-ঘূর্ণায়মান গতি; ঘনীভূত-দশা ব্যবস্থার সাম্যাবস্থার ধর্ম এবং বৃহৎ-অনু সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। রাসায়নিক গতিবিদ্যার মধ্যে রয়েছে দ্বিআণবিক গতিবিদ্যা এবং বিক্রিয়া ও শক্তি স্থানান্তরের সংঘর্ষ তত্ত্ব; একআণবিক হার তত্ত্ব ও অর্ধস্থায়ী দশা; গতিবিদ্যার ঘনীভূত-দশা ও বৃহদাণবিক বিষয়বস্তু।

তাত্ত্বিক রসায়নের শাখা সম্পাদনা

কোয়ান্টাম রসায়ন

এটি হল রাসায়নিক বা ভৌত-রাসায়নিক সমস্যায় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা মৌলিক মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োগ। বর্ণালী ও চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলো সবথেকে বেশি গঠন হওয়া নকশাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

পরিগণনামূলক রসায়ন
রসায়নে পরিগণক যন্ত্রের প্রয়োগ, যাতে হার্ট্রি–ফক, হার্ট্রি–ফক-পরবর্তী , কার্যকরী ঘনত্ব তত্ত্ব (যেমন পিএম৩) বা বল ক্ষেত্র পদ্ধতির মত আনুমানিক পদ্ধতির প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট। সবচেয়ে বেশি পূর্বাভাসকৃত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আণবিক আকার। কম্পিউটারের সাহায্যে কম্পমান বর্ণালী ও কম্পন সংযোজনের পূর্বাভাসও দেয়া যায়, তবে এতে কম্পাঙ্ক তথ্যে অবলোহিত উপাত্তের ধারণ ও ফ্যুরিয়ার রূপান্তর করা প্রয়োজন। গণনা করা কম্পনের সাথে তুলনাটি পূর্বাভাসকৃত আকৃতিকে সমর্থন করে।
আণবিক প্রতিমান নির্মাণ
এটি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই আণবিক গঠনের প্রতিমান তৈরির পদ্ধতি। উদাহরণ হচ্ছে, আণবিক ডকিং, প্রোটিন-প্রোটিন ডকিং, ওষুধের নকশা, সমাবেশীয় রসায়ন। আণবিক আকারের ফিটিং ও তড়িৎ বিভব এর লেখচিত্র সংক্রান্ত শাখার মূল উপাদান।
আণবিক গতিবিজ্ঞান
একটি অণু বা পরমাণুর সমাবেশে নিউক্লিয়াসের গতিবিধি অনুকরণে চিরায়ত বলবিদ্যার প্রয়োগ। একটি সমাবেশে অণুর পুনর্বিন্যাস ভ্যানডার ওয়ালস বল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাপমাত্রার সাহায্যে অগ্রসর হয়।
আণবিক বলবিজ্ঞান
বিভবশক্তির মাধ্যমে বিভবশক্তি পৃষ্ঠের অন্তঃআণবিক ও আন্তঃআণবিক মিথষ্ক্রিয়ার প্রতিরূপণ করা হয় এই শাখায়। আন্তঃআণবিক মিথষ্ক্রিয়া সাধারণত শুরু থেকেই ক্যালকুলাসের সাহায্যে স্থিতিমাপন করা হয়।
গাণিতিক রসায়ন
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্য ছাড়াই গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আণবিক গঠনের আলোচনা ও পূর্বাভাস। টোপোলজি হচ্ছে গণিতের এমন একটি শাখা যেখানে গবেষকগণ ক্লাস্টারের মত নমনীয় সসীম আকারের বস্তুর বৈশিষ্ট্যের পূর্বাভাস দিতে পারেন।
তাত্ত্বিক রাসায়নিক গতিবিজ্ঞান
গতিশীল ব্যবস্থার তাত্ত্বিক আলোচনা যা সক্রিয় রাসায়নিক দ্রব্য, তাদের সক্রিয় কমপ্লেক্স ও সংশ্লিষ্ট ব্যবকলনীয় সমীকরণের সাথে সম্পর্কিত।
রাসায়নিক তথ্যবিজ্ঞান (কেমোইনফোম্যাটিকস্ নামেও পরিচিত)
এখানে কম্পিউটার ও তথ্যগত কৌশলের ব্যবহার হয়, যা রসায়নের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তথ্যের সংক্ষিপ্তকরণে ব্যবহার করা হয়।

পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়সমূহ সম্পাদনা

ঐতিহাসিকভাবে,গবেষণাক্ষেত্রে তাত্ত্বিক রসায়নের প্রধান প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ নিম্নরূপ:

অতএব, তাত্ত্বিক রসায়ন একটি গবেষণামূলক শাখা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঘনত্বের কার্যকরী তত্ত্ব এবং আণবিক কৌশলের মত অন্যান্য পদ্ধতির আবির্ভাবের ফলে বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতির প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে যা প্রাণরসায়ন, ঘনীভূত পদার্থবিজ্ঞান, ন্যানোপ্রযুক্তি বা আণবিক জীববিজ্ঞানসহ রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত।

আরও দেখুন সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা