তাজ উল-মুলক

ইরানের রানী সঙ্গী

তাজ উল-মুলক (ফার্সি: تاج الملوک آیرملو, জন্ম: নিমতাজ আয়রোমলু[১] ফার্সি: نیم‌تاج آیرملو; ১৭ মার্চ ১৮৯৬ – ১০ মার্চ ১৯৮২) ছিলেন ইরানের রাণী এবং পাহলভি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ও ১৯২৫ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইরানের শাহ রেজা শাহের দ্বিতীয় স্ত্রী। রাণী হবার পরে তাকে "তাজ উল-মুলক" শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল তার অর্থ ফার্সি ভাষায় "রাজাদের মুকুট"।

তাজ উল-মুলক আয়রোমলু
রানী মা
তাজ উল-মুলক আয়রোমলু, আনুমানিক ১৯১৫-১৯৪১
ইরানের রানী সঙ্গী
কার্যকাল১৫ ডিসেম্বর ১৯২৫ – ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪১
পূর্বসূরিবদর আল-মুলক
উত্তরসূরিমিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদ
জন্মনিমতাজ আয়রোমলু
(1896-03-17) ১৭ মার্চ ১৮৯৬ (বয়স ১২৮)
বাকু, রুশ সাম্রাজ্য
(বর্তমানে আজারবাইজান)
মৃত্যু১০ মার্চ ১৯৮২(1982-03-10) (বয়স ৮৫)
আকাপুলকো, মেক্সিকো
দাম্পত্য সঙ্গীরেজা শাহ (বি. ১৯১৬; মৃ. ১৯৪৪)
বংশধর
পূর্ণ নাম
রাজবংশপাহলভি
পিতাতিমুর খান আয়রোমলু
মাতাজহরা খানুম
ধর্মইসলাম

৭ম শতকের মুসলিম রাজত্বের পর তিনি জনৈক রাজকীয় প্রতিনিধিত্বে অংশ নেওয়ার পর ইরানের প্রথম রাণী হয়েছিলেন এবং ১৯৩৬ সালে কাশফ-ই হিজাবে (পর্দার নিষেধাজ্ঞা) অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জীবনী সম্পাদনা

নিমতাজ ১৭ মার্চ ১৮৯৬ সালে তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্যের (বর্তমানে আজারবাইজান) বাকু অঞ্চলে জন্ম নেন। তার বাবা ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তিমুর খান আয়রোমলু[২] এবং মা ছিলেন জহরা খানুম।

তার বিয়ে প্রতিবেদনের সাথে আয়োজিত হয়েছিল এবং সেই সময়ে রেজা শাহের সামরিক কর্মজীবনে এই বিয়ে সুবিধাজনক ভূমিকা রেখেছিল, কারণ নিমতাজের বাবার যোগসূত্রে কারণে রেজা শাহ কসাকের অনুক্রমে অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছিল।

১৯২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তেহরানের অভ্যুত্থানে রেজা শাহ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন।

রাণী সম্পাদনা

 
রাণী তাজ উল-মুলক, অনুমানিক ১৯২৬–১৯৪১

১৯২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর, নিমতাজের স্বামী রেজা শাহ নিজেকে শাহান-শাহ (রাজাদের রাজা) ঘোষণা করেছিলেন এবং তাকে মালেকে (রাণী) শিরোনাম আক্ক্ষ্যা দেয়া হয়েছিল।

ব্যক্তিগতভাবে, নিমতাজ সে সময়ে রেজা শাহের সঙ্গে বাস করেন নি, কারণ শাহ তার অন্যান্য স্ত্রী এবং ১৯২৩ সাল থেকে এসমাত দৌলতশাহির সাথে তার অধিকাংশ সময় ব্যায় করেছিলেন। রাণী নিমতাজ নিজ উদ্যোগে কখনো রাজনীতিতে নিজেকে জড়িত করেন নি। তবে, তার রাজত্বকালে তিনি রাণী পদ লাভ করেছিলেন, যা নারীদের ওপর তার নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি ছিলেন ইরানের প্রথম রাণী, যিনি জনসাধারণের ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং জনসাধারণের মধ্যে একটি সরকারি অবস্থান সম্পাদন করেছিলেন।

ইরানে নারী ভূমিকার নতুন নীতির মধ্যে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বমূলক কর্তব্যগুলোতে অংশগ্রহণকারী রাণী হিসাবে তার ভূমিকা ছিল অন্যতম, যেমন তার স্বামীর নীতি ছিল সমাজে নারীর অংশগ্রহণকে আধুনিকীকরণের পদ্ধতি হিসাবে বাড়িয়ে তোলা, উদাহরণস্বরূপ তৎকালীন তুরস্ক।[৩] তিনি তার স্বামীর রাজত্বকালে ইরানের পর্দাপ্রথা বর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নারীদের হিজাবমুক্তির জন্য তার বিশাল প্রতীকী গুরুত্ব ছিল এবং শাহ ধীরে ধীরে এই সংস্কারের সূচনা করেছিলেন যাতে দেশে তখন কোনো প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়: যেখানে ১৯২৩ সালে নারী শিক্ষকদের এবং ১৯৩৫ সালে বিদ্যারয় শিক্ষার্থীদের পর্দা উন্মোচন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল, আর এই পর্দা উন্মোচন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছিল ৪ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে এবং এই ঘটনায় রাণী ও তার কন্যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।[৩] সেই দিন, রেজা শাহ তেহরান শিক্ষক কলেজের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পর্দাবর্জিত আধুনিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাণী এবং তাদের দুই কন্যাসহ উপস্থিত হয়েছিলেন।[৩] রাণী কূটনীতিককে সামাল দিয়েছিলেন, অথচ শাহ বলেছিলনে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অবহেলা করেছিলেন এবং নারীদের বলেছিলেন যে ভবিষ্যত এখন তাদের হাতে।[৩] এই প্রথম ইরানি রাণী জনসমক্ষে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। তারপরে, শাহ তার স্ত্রী ও কন্যাদের আলোকচিত্র প্রকাশ করেন এবং ইরান জুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দাবর্জনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়।[৩]

তাজ উল-মুলক তার স্বামীর বাধ্য হয়ে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্বে অংশগ্রহণ করেন এবং এভাবে তার নীতিতে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেন, কিন্তু তিনি কখনো নিজে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি এবং রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন না। ১৯৩৯ সালে তিনি মিশরের ফাউজিয়ার কাছে তার পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ফাউজিয়ার সাথে সম্পর্কটি ভাল হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি। ১৯৩৯ সালে, তিনি মিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদের সাথে তার পুত্রের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যদিও ফাওযিয়া সাথে তার সম্পর্ক ভাল না থাকা সত্ত্বেও তা ভাল হিসেবে বর্ণিত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "mother"Ashraf Pahlavi Official Site। ২১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৮ 
  2. "Royal Ark"। royalark.net। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. Lois Beck, Guity Nashat, Women in Iran from 1800 to the Islamic Republic

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

Iranian royalty
পূর্বসূরী
বদর আল-মুলক
ইরানের রানী সঙ্গী
১৯২৫–১৯৪১
উত্তরসূরী
মিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদ