তাওয়াক্কোল কারমান

শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী

তাওয়াক্কোল আব্দেল-সালাম কারমান (জন্ম ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯) একজন ইয়েমেনের সাংবাদিক, রাজনীতিক এবং ইয়েমেনের আল-ইসলাহ রাজনৈতিক দলের একজন প্রবীণ সদস্য। এছাড়া কারমান একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি “উইমেন জার্নালিস্ট উইথআউট চেইন্স” নামক নারী সাংবাদিকদের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন। ২০০৫ সালে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] কারমান আন্তর্জাতিকাভাবে পরিচিত হয়ে উঠেন ২০১১ সালের ইয়েমেন বিফ্রোহের সময়। তাকে “লৌহ মানবী” ও “বিদ্রোহের মাতা” বলে অভিহিত করে ইয়েমেনের জনগণ।[৪][৫] তিনি ২০১১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন।[৬] তিনিই প্রথম ইয়েমেনীয় ও প্রথম আরবীয় নারী হিসেবে এই পুরস্কার অর্জন করেন।[৭] এছাড়া তিনি দ্বিতীয় মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে নোবেল শান্তি পদক লাভ করেন।[৮]

তাওয়াক্কোল কারমান
অথবা
তাওয়াক্কুল কারমান
توكل كرمان
Tawakel Karman
২০১৯ সালে তাওয়াক্কোল কারমান
জন্ম (1979-02-07) ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ (বয়স ৪৫)
জাতীয়তাইয়েমেনীয়i
নাগরিকত্বইয়েমেন/তুর্কি[১][২]
মাতৃশিক্ষায়তনসানা বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলোজি, সানা
পেশাসাংবাদিক, রাজনীতিক. মানুবাধিকার কর্মী
রাজনৈতিক দলআল ইসলাহ
আন্দোলনতিউনিশিয়ার বিদ্রোহ
দাম্পত্য সঙ্গীমোহাম্মাদ আল-নাহমি
সন্তানতিন
পিতা-মাতাআব্দেল সালাম কারমান
আত্মীয়তারিক কারমান (ভাই)
সাফা কারমান (বোন)
পুরস্কারনোবেল শান্তি পুরস্কার (২০১১)
জাতিসংঘ ভবনের সামনে প্রতিবাদী কারমান, ১৮ অক্টোবর ১০১১

২০০৫ সালে সাংবাদিক হিসেবে কারমান ইয়েমেনে পরিচিত হয়ে উঠেন। এছাড়া তিনি একটি মোবাইল ফোন সংবাদ সেবার প্রবক্তা ছিলেন, ২০০৭ সালে এই সেবাটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরপর তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। ২০০৭ সালের মে মাসে কারমান সাপ্তাহিকভাবে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। একসময় এই প্রতিবাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সংস্কারের দাবি ওঠে।[৯] এছাড়া কারমান আরব বিদ্রোহের স্বপক্ষেও বিদ্রোহ করেন। তিনি ইয়েমেনীয় রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহ-এর বিপক্ষে প্রবল প্রতিবাদী হয়ে উঠেন।

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

কারমান ১৯৭৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ইয়েমেনের মেখলাফ নামক জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানটি তাইজ শহরের নিকটেই, তাইজ ইয়েমেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর এবং এখানে অনেক প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারমান তাইজ শহরেই শিক্ষাগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দেল সালাম কারমান, তিনি একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিক। আব্দেল সালাম একসময় আইন বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। তাওয়াক্কোল কারমানের এক ভাই রয়েছেন, তার নাম তারিক কারমান। তারিক কারমান ইয়েমেনের প্রখ্যাত কবি।[১০] তাওয়াক্কোল কারমানের বোনের নাম সাফা কারমান, যিনি আল-জাজিরাতে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।[১১] কারমানের স্বামীর নাম মোহাম্মেদ আল-নাহমী।[১২] তাদের তিন সন্তান রয়েছে।[১৩]

কারমান ব্যবসা শিক্ষায় স্তাতক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।[১৪][১৫]

২০১০ সালে একটি প্রতিবাদ সভায় একজন মহিলা কারমানকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেন, তবে কারমানের সমর্থকরা সেটা প্রতিহত করতে সমর্থ হন।[১২][১৬] তারিক কারমানের উদ্ধৃতি থেকে জানা যায়, একজন প্রবীণ ইয়েমেনীয় আমলা তার বোন তাওয়াক্কোল কারমানকে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হত্যার হুমকি দিয়েছিল এবং তাকে প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ থাকতে বলে। দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন অনুসারে সেই হামলাকারী হল ইয়েমেনের সাবেক রাষ্ট্রপতি সালেহ।

কারমনা বলেন তার পরিবারের পূর্ব পুরুষরা তুরস্কের আনাতোলিয়ার কারামান নামক অঞ্চলে থাকতেন। তুরস্ক সরকার কারমনাকে তুরস্কের নাগরিকত্ব প্রদান করে, কারমান ২০১২ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।[১][১৭][১৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Turkish fm receives winner of Nobel peace prize"। Anadolu Agency। ২০১২-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-১১ 
  2. "Barış Nobeli sahibi Yemenli, TC vatandaşı oldu"Posta। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১২ 
  3. Al-Sakkaf, Nadia (১৭ জুন ২০১০)। "Renowned activist and press freedom advocate Tawakul Karman to the Yemen Times: "A day will come when all human rights violators pay for what they did to Yemen""। Women Journalists Without Chains। ৩০ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১১ 
  4. Macdonald, Alastair (৭ অক্টোবর ২০১১)। "Nobel honours African, Arab women for peace"। Reuters। ১১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  5. Al-Haj, Ahmed; Sarah El-Deeb (৭ অক্টোবর ২০১১)। "Nobel peace winner Tawakkul Karman dubbed 'the mother of Yemen's revolution'"। Sun Sentinel। Associated Press। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১১ 
  6. "Nobel Peace Prize awarded jointly to three women"। BBC Online। ৭ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  7. "Profile: Nobel peace laureate Tawakul Karman"। BBC Online। ৭ অক্টোবর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  8. "Yemeni Activist Tawakkul Karman, First Female Arab Nobel Peace Laureate: A Nod for Arab Spring"। Democracynow.org। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১ 
  9. "Renowned activist and press freedom advocate Tawakul Karman to the Yemen Times:"A day will come when all human rights violators pay for what they did to Yemen.""। Yemen Times। ৩ নভেম্বর ২০১১। ১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১১ 
  10. Filkins, Dexter (১ আগস্ট ২০১১)। "Yemen's Protests and the Hope for Reform"The New Yorker। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  11. www.memri.org। "Nobel Peace Prize Laureate Tawakkul Karman – A Profile"। Memri.org। ২৭ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  12. Finn, T. (২৫ মার্চ ২০১১)। "Tawakul Karman, Yemeni activist, and thorn in the side of Saleh"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৩ 
  13. Karman, Tawakkol (১৮ জুন ২০১১)। "Yemen's Unfinished Revolution"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১১ 
  14. Shephard, Michelle (২০১২-১১-২৫)। "Nobel Peace Prize winner Tawakkol Karman tours Canada"। Toronto Star। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১৬ 
  15. Townsend, Sean (২০১২-১০-১৯)। "Honorary degrees recognize inspirational leaders" (public relations)। University of Alberta। ২০১২-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-১৬ 
  16. Blomfield, Adrian (৭ অক্টোবর ২০১১)। "Nobel peace prize: profile of Tawakul Karman"। London: Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১১ 
  17. "Turkey hopes to grant citizenship to Karman"Hurriyet Daily News। ২০১২-০৩-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-১১ 
  18. "Turkish ID more important than Nobel, Karman says"Hurriyet Daily News। ২০১২-১০-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা