ডেসিবেল হলো পরিমাপের একটি একক। এক বেলের দশ ভাগের এক ভাগকে বলা হয় এক ডেসিবেল। লগারিদমীয় স্কেলে শক্তি বা ক্ষেত্র মানের আনুপাতিক হার নির্ণয়ে ডেসিবেল এককটি ব্যবহৃত হয়। "লগারিদমীয় মান"-কে এক্ষেত্রে বলা হয় শক্তিমাত্রা বা ক্ষেত্রমাত্রা (শক্তি নাকি ক্ষেত্রমান ব্যবহার করা হচ্ছে, এর উপর নির্ভর করে)। দুইটি তরঙ্গসংকেতের মাত্রার পার্থক্য যদি ১ ডেসিবেল হয়, তাহলে তাদের শক্তিমাত্রার অনুপাত ১০১/১০ এবং ক্ষেত্রমাত্রার অনুপাত ১০১/২০[১][২]

ডেসিবেল ফাংশনের গ্রাফ এবং এটি বিপরীত
ডেসিবেল
শক্তির অনুপাত বিস্তারের অনুপাত
100 10000000000 100000
90 1000000000 31623
80 100000000 10000
70 10000000 3162
60 1000000 1000
50 100000 316 .2
40 10000 100
30 1000 31 .62
20 100 10
10 10 3 .162
6 3 .981 ≈ 4 1 .995 ≈ 2
3 1 .995 ≈ 2 1 .413 ≈
1 1 .259 1 .122
0 1 1
−1 0 .794 0 .891
−3 0 .501 ≈ 0 .708 ≈ '"`UNIQ--templatestyles-০০০০০০০২-QINU`"'
−6 0 .251 ≈ 0 .501 ≈
−10 0 .1 0 .3162
−20 0 .01 0 .1
−30 0 .001 0 .03162
−40 0 .0001 0 .01
−50 0 .00001 0 .003162
−60 0 .000001 0 .001
−70 0 .0000001 0 .0003162
−80 0 .00000001 0 .0001
−90 0 .000000001 0 .00003162
−100 0 .0000000001 0 .00001
An example scale showing power ratios x, amplitude ratios x, and dB equivalents 10 log10 x.

মানের পরিবর্তন কিংবা পরম মান প্রকাশে ডেসিবেল এককটি ব্যবহৃত হয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে এককটি প্রদত্ত নির্দিষ্ট মানের অনুপাত প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মান প্রকাশকারী উপসর্গটি ডেসিবেল প্রতীকের শেষে যুক্ত করা হয়। যদি নির্দিষ্ট মান ১ ভোল্ট হয়ে থাকে, তবে এটি প্রকাশকারী উপসর্গ হবে V (উদাহরণস্বরূপ - ২০ dBV, ২০ ডেসিবেল ভোল্ট)। আবার যদি প্রদত্ত নির্দিষ্ট মান ১ মিলিওয়াট হয়, তাহলে প্রকাশকারী উপসর্গ হবে M (উদাহরণস্বরূপ-২০ dBM, ২০ ডেসিবল মিলিওয়াট)।[৩]

দ্রব্যের প্রকৃতির উপর বিবেচনা করে ডেসিবেল এককে অনুপাত প্রকাশের জন্য দুইটি রাশিমালা ব্যবহার করা হয়। সূচকীয় অনুপাত প্রকাশের ক্ষেত্রে, ডেসিবেলের সংখ্যা এর দশ ভিত্তিক লগারিদমের দশ গুণ। শক্তিমাত্রা ও ক্ষেত্রমাত্রার উপর এটি নির্ভর করে। যদি ডেসিবেলযুক্ত কোনো রাশির বিস্তার যদি ১০ এর গুণিতক (১০, ১০০, ১০০০) হারে হ্রাস পায়, তাহলে প্রতি সূচকীয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে রাশির মান ১০ ডেসিবেল হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ডেসিবেলযুক্ত কোনো রাশি/রাশিমালার বিস্তার ১০^২ বা ১০০ হ্রাস পেয়েছে। তাহলে সম্পূর্ণ রাশির মান ২০ ডেসিবেল কমে যায়। উল্টোদিকে, রাশিমালার বিস্তার যদি ১০০ করে বৃদ্ধি পায়, তাহলে সম্পূর্ণ রাশিমালার মান ২০ ডেসিবেল বৃদ্ধি পায়।

টেলিফোন প্রযুক্তিতে শক্তিমাত্রা পরিমাপে ডেসিবেল এককের ব্যবহার শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেল সিস্টেমস প্রতিষ্ঠান বিংশ শতাব্দীর দিকে ডেসিবেল এককটির ব্যবহার শুরু করে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের অবদানের প্রতি সম্মান রেখে এর নামকরণ করা হয়। মূলত এক বেলের দশ ভাগের এক ভাগ এক ডেসিবেল- এটিই ছিল এককটির প্রাথমিক সংজ্ঞা। তবে যে এককের ক্ষুদ্রাংশ হিসেবে ডেসিবেলের উৎপত্তি, সেই বেল এককের ব্যবহার নেই বললেই চলে। শব্দবিজ্ঞান, বৈদ্যুতিন বিদ্যানিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেসিবেল এককের বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। বিবর্ধকগুলোর গেইন, কোনো মাধ্যমে তরঙ্গের প্রবাহ ঘনত্বের তীব্রতা হ্রাস (Attenuation) ও সংকেত-কোলাহল অনুপাত ডেসিবেল এককে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক রাশি ব্যবস্থা প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ডেসিবেল পরিমাপের একটি একক, যা লগারিদমীয় পর্যায়মাত্রা কিংবা পর্যায়মাত্রার পার্থক্য নিরূপণে ব্যবহৃত হয় এবং শক্তিমাত্রা বা ক্ষেত্রমাত্রা প্রকাশে সাহায্য করে। [৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বর্তনীতে সাংকেতিক অপচয় (Signal loss) পরিমাপ করতে গিয়ে সময়ের বিবর্তনে ডেসিবেল এককটির উৎপত্তি হয়েছে। শুরুতে "মাইলস অব স্ট্যান্ডার্ড কেবল" (এমএসসি) এককের সাহায্যে সাংকেতিক অপচয় হিসেব করা হতো। ১ মাইল দৈর্ঘ্যের আদর্শ টেলিফোন তারে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ রেডিয়ান শক্তি অপচয় হলে একে বলা হতো এক এমএসসি। একজন সাধারণ শ্রোতা যে পরিমাণ প্রবাহ ঘনত্ব হ্রাস শনাক্ত করতে পারেন, এক এমএসসি অনেকটা সে মানেরই কাছাকাছি ছিল। এক্ষেত্রে আদর্শ টেলিফোন তারের সংজ্ঞা ছিল-"প্রতি লুপমাইলে ৮৮ ওহম সুষমভাবে বণ্টিত রোধ ও প্রতি মাইলে ০.০৫৪ শান্ট (তড়িৎ প্রবাহ নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য নিম্ন-রোধীয় পথ তৈরি করে দেয় এমন যন্ত্র) ধারকত্ববিশিষ্ট তার।"

১৯২৪ সালে বেল সিস্টেমস টেলিপ্রযুক্তি উপদেষ্টা পর্ষদের কাছ থেকে সবুজসংকেত পাওয়ার পর এমএসসি এককটিকে ট্রান্সমিশন ইউনিট দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে। এক এমএসসি=১.০৫৬ ট্রান্সমিশন ইউনিট। ১৯২৮ সালে ট্রান্সমিশন ইউনিট একক-কে ডেসিবেল একক দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mark, James E. (১০ অক্টোবর ২০২০)। "Physical Properties of Polymers Handbook" – ui.adsabs.harvard.edu-এর মাধ্যমে। 
  2. Yost, William A. (১০ অক্টোবর ১৯৮৫)। "Fundamentals of hearing : an introduction"। New York : Holt, Rinehart and Winston – Internet Archive-এর মাধ্যমে। 
  3. "Utilities:VRMS/dBm/dBu/dBV calculators - Design Center - Analog Devices"www.analog.com 
  4. 14:00-17:00। "ISO 80000-3:2006"ISO 
  5. Laboratories, Bell Telephone (১০ অক্টোবর ২০২০)। "Bell Laboratories Record"। Bell Telephone Laboratories – Google Books-এর মাধ্যমে।