ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা

ঠাকুরগাঁও জেলার একটি উপজেলা

ঠাকুরগাঁও সদর বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা এবং এটি রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় উপজেলা। ।[২] সুপ্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষী উত্তরের শান্ত জনপদ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা একটি পৌরসভা ও ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ।

ঠাকুরগাঁও সদর
উপজেলা
মানচিত্রে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা
মানচিত্রে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৬°১′১৫″ উত্তর ৮৮°২৮′৭″ পূর্ব / ২৬.০২০৮৩° উত্তর ৮৮.৪৬৮৬১° পূর্ব / 26.02083; 88.46861 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাঠাকুরগাঁও জেলা
প্রতিষ্ঠা১৯৮৪
আয়তন
 • মোট৬৮৩.৪৫ বর্গকিমি (২৬৩.৮৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট৪,২৭,৯১৩
 • জনঘনত্ব৬৩০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৫১০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ৯৪ ৯৪
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

 
ঠাকুরগাঁওয়ে টাঙ্গন নদীর পাড়ে অপরাজেয় ৭১ ভাস্কর্য।

এ উপজেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলাবোদা উপজেলা, দক্ষিণে পীরগঞ্জ উপজেলাদিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা, দেবীগঞ্জ উপজেলাদিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলারাণীশংকৈল উপজেলা

নামকরণের ইতিহাস সম্পাদনা

ঠাকুর-অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্থানটির নাম ঠাকুরগাঁও হয়েছে। ১৮৬০ সালে এটি মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনও জনপদের ছবি।

ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির সুবাদে তাদের খুব নামডাক ছিল। সেখানকার লোকজন চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ‘ঠাকুরগাঁও’ বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ঠাকুরগাঁও। [৩]

প্রশাসনিক তথ্য সম্পাদনা

ইউনিয়নসমূহ সম্পাদনা

ইউনিয়ন ২২টি। ১. রুহিয়া, ২. আখানগর, ৩. আকচা, ৪. বড়গাঁও, ৫. বালিয়া, ৬. আউলিয়াপুর, ৭. চিলারং, ৮. রহিমানপুর, ​ ৯. রায়পুর ১০. জামালপুর, ১১. মোহম্মাদপুর, ১২. সালন্দর, ১৩. গড়েয়া, ১৪. রাজাগাঁও, ১৫. দেবীপুর, ১৬. নারগুন, ১৭. জগন্নাথপুর, ১৮. শুখানপুকুরী, ১৯. বেগুনবাড়ী , ২০. রুহিয়া পশ্চিম, ২১. ঢোলারহাট, ২২. সেনুয়া

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ৯৩৩টি।

  • মসজিদ- ৭১০ টি,
  • মন্দির ২০৪ টি,
  • গীর্জা-১৯টি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সংখ্যা সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় সরকারী, বেসরকারী, এনজিওভিত্তিক মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর সংখ্যা ১০২২টি :

  • মহাবিদ্যালয়- ১৪টি (সরকারী-০২টি, বেসরকারী-১২ টি)
  • কারিগরি মহাবিদ্যালয়- ১০টি
  • কারিগরি বিদ্যালয়- ০২টি
  • উচ্চ বিদ্যালয়-১২৬ টি (সরকারী-০২টি, বেসরকারী-১২৪টি)
  • নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়- ২৮ টি
  • মাদ্রাসা-৪৪ টি( কামিল-০২টি, ফাজিল-০৫টি,আলীম-০৮টি, দাখিল-২৯টি)
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় : সরকারী-১৯১টি
  • নব্য সরকারী-২০৩ টি,
  • অপেক্ষমাণ সরকারী-১৩টি,
  • পরীক্ষণ- ০১টি,
  • অস্থায়ী রেজি:-৩টি,
  • রস্ক (আনন্দ) স্কুল-২৫৯ টি,
  • কেজি স্কুল-৪৭টি,
  • এনজিও শিক্ষা কেন্দ্র-৭৩টি,
  • শিশু কল্যাণ বিদ্যালয়-০১টি,
  • উচ্চ বিদ্যলয় সংলগ্ন-০৮টি।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষার দিক দিয়ে বেশ উন্নত। এই উপজেলায় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ হলো:

১। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়: ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী একটি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। এটি ২০১৬ সালে দেশসেরা বিদ্যালয় হিসেবে পুরষ্কৃত হয়েছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নাম জনাব পিযূষ কান্ত রায়।

২। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: এই বিদ্যালয়টি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উপজেলার একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত।

৩। ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ: ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঠাকুরগাঁও শহর সংলগ্ন টাঙ্গন নদীর দক্ষিণ-পূর্বে নদীর পাশেই সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ৩৩ একর জমির উপর কলেজটি অবস্থিত। ১ মার্চ ১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও কলেজকে জাতীয়করণ করে নামকরণ করা হয় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ। বর্তমান অধ্যক্ষের নাম প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম কিবরিয়া মন্ডল।

৪। ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ: ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ এই উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঠাকুরগাঁও শহরে প্রায় ১ একর জমির উপর কলেজটি অবস্থিত। এই কলেজ বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ১ জুলাই ১৯৮৫ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়।

এছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঠাকুরগাঁও সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, আবুল হোসেন সরকার মহাবিদ্যালয়, গড়েয়া ডিগ্রী কলেজ, ভূল্লী ডিগ্রী কলেজ, ভেলাজান উচ্চ বিদ্যালয়, রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়, কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল, ইকো পাঠশালা, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শীঘ্রই এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে।

হাসপাতাল/ ক্লিনিক/ স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পাদনা

  • সরকারি হাসপাতাল- ০১টি
  • ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র-০৭টি
  • ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র-১২টি
  • বক্ষব্যাধি হাসপাতাল-০১টি
  • বেসরকারী হাসপাতাল-১৭টি
  • কমিউনিটি ক্লিনিক-৫৭টি
  • ডায়াবেটিক হাসপাতাল-০১
  • টিবিজিবি হাসপাতাল ০১টি

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

  • শিল্পকলা একাডেমী-১টি
  • রেডিও সেন্টার-১টি
  • টিভি. সম্প্রচার কেন্দ্র-১টি

লোকসংস্কৃতি সম্পাদনা

লোকসাহিত্য, লোকনৃত্য, ধামের গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বাউল, মুর্শিদি, মারফতি, পালা গান, কবিগান, বিচার গান, কোয়ালী গান, বিষহরি গান, সত্যপীরের গান, কীর্তন, বিয়ের গান, যাত্রা, আদিবাসীদের গান, জারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের লোকসংস্কৃতির অবদান রয়েছে।

ঐতিহাসিক স্থান সম্পাদনা

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

  • ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর (পরিত্যক্ত)।
  • বালিয়া মসজিদ
  • টাঙ্গন ব্যারেজ।
  • বুড়ির বাধ ।
  • বিশ্ব ইসলামি মিশন, সালন্দর।
  • বাসিয়া দেবী স্লুইস গেট।
  • কালিকাগাঁও স্লুইস গেট।
  • কুমিল্লাহাড়ী পিকনিক কর্ণার।
  • খিলাফতী মসজিদ, খানকাহ শরীফ, ঠাকুরগাঁও রোড।
  • রুহিয়া ক্যাথলিক চার্চ।
  • বলাকা উদ্যান।
  • সিংড়া ফরেস্ট।
  • মুজাবর্ণী সরকারপাড়া, দেবীপুর ইউনিয়ন

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা সম্পাদনা

 
জামালপুর জামে মসজিদ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আছে। সেগুলো হচ্ছে ঢোলারহাট শিব মন্দিরজামালপুর জামে মসজিদ[৪]

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

(আদমশুমারী ২০১১) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় মোট জনসংখ্যা- ৫৮১২২৭ জন (আদমশুমারী ২০১১)মুসলিম - ৪৩০৭১২জনহিন্দু -১৪৪২১৯জনখ্রিষ্টান-৩৬৪২জনউপজাতি-৩৭২১জন। ভোটার সংখ্যা- ৩৬৮৯১২। [৫]

অর্থনীতি সম্পাদনা

জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোর মতো সদর উপজেলাও বহুলাংশে কৃষি নির্ভর। প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, পাট, আখ, ভূট্টা, আলু, মরিচ প্রভৃতি।

নদীসমূহ সম্পাদনা

 
ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন সেতু থেকে টাঙ্গন নদীর দৃশ্য॥

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় রয়েছে কয়েকটি নদী। সেগুলো হচ্ছে টাঙ্গন নদী, কুলিক নদী, শুক নদী, ঢেপা নদী, তালমা নদী, পুনর্ভবা নদী, তীরনই নদী, সেনুয়া নদী ও পাথরি নদী।[৬][৭]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি সম্পাদনা

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (৮ মার্চ ২০২১)। "এক নজরে ঠাকুরগাঁও সদর"গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩০ 
  3. "ঠাকুরগাঁও জেলা"www.banglatribune.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "প্রত্নস্হলের তালিকা"বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। www.archaeology.gov.bd/। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  5. "এক নজরে ঠাকুরগাঁও সদর"www.bangladesh.gov.bd। ২০২১-১২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-১৬ 
  6. ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৪০৫,আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯
  7. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬১৭। আইএসবিএন 984-70120-0436-4 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা