টমাস ওয়াস

ইংরেজ ক্রিকেটার

টমাস জর্জ ওয়াস (ইংরেজি: Thomas Wass; জন্ম: ২৬ ডিসেম্বর, ১৮৭৩ - মৃত্যু: ২৭ অক্টোবর, ১৯৫৩) নটিংহ্যামশায়ারের সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৮৯৬ থেকে ১৯২০ সময়কালে নটিংহ্যামশায়ার দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন টমাস ওয়াস

টমাস ওয়াস
আনুমানিক ১৯০৫ সালে গৃহীত স্থিরচিত্রে টমাস ওয়াস
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৮৭৩-১২-২৬)২৬ ডিসেম্বর ১৮৭৩
সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ড, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৭ অক্টোবর ১৯৫৩(1953-10-27) (বয়স ৭৯)
সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ড, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩১২
রানের সংখ্যা ২,১৩৮
ব্যাটিং গড় ৭.২৯
১০০/৫০ ০/১
সর্বোচ্চ রান ৫৬
বল করেছে ৭১,৩৯৯
উইকেট ১,৬৬৬
বোলিং গড় ২০.৪৬
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৫৯
ম্যাচে ১০ উইকেট ৪৫
সেরা বোলিং ৯/৬৭
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১১৪/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৫ মার্চ ২০১৯

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

৪ মে, ১৮৯৬ তারিখে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে টমাস ওয়াসের। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের প্রায় সবটুকু সময়ই নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ সময়ে ২০.৩৪ গড়ে ১৬৩৩ উইকেট পেয়েছেন। তার এ সংগ্রহটি নটিংহ্যামশায়ারের রেকর্ডরূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার।

স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটেছিল টমাস ওয়াসের। পরবর্তীতে এডিনবরা একাডেমিক্যালস ও লিভারপুলে পেশাদারী পর্যায়ে খেলতে থাকেন।[১] আবাসিক মর্যাদা লাভের পর ল্যাঙ্কাশায়ারের কর্মী হবার সুযোগ পেলেও তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।[১] তাসত্ত্বেও, নটিংহ্যামশায়ার দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সময় নিয়েছিলেন। ১৮৯০-এর দশকে দলটি তখন দূর্বল বোলিং নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল।[২] অবশেষে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে দলের শেষ খেলায় কেন নীরবতা ভেঙ্গে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তা অজানাই রয়ে গেছে।[২]

দুইটি পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে মাঝারিমানের খেলা উপহার দেন তিনি। তবে, ১৯০০ সালে জন গানকে সাথে নিয়ে নটিংহ্যামশায়ারের প্রধান বোলারে উপনীত হন তিনি। এ দুজনে ১৮৯৭ থেকে ১৮৯৯ সালে তিন মৌসুমে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়কৃত সাত খেলার পাঁচটিতে অল-আউট করে দেন। ১৯০১ সালে একটি খেলা বাদে তুলনামূলকভাবে দূর্বল ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে বেশ নিচুমানের খেলেন। ফলশ্রুতিতে দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছিল টমাস ওয়াসকে। ঐ মৌসুমে ২৯.৭২ গড়ে ৫৮ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[৩]

১৯০২ সালের ভেজা উইকেটে টমাস ওয়াস খেলায় অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলারে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর সকল খেলায় ১৫.৮৯ গড়ে ১৪০ উইকেট পান। তার বোলিং নটিংহ্যামশায়ারের প্রত্যেক বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ঐ গ্রীষ্মে হোভের খেলায় সাসেক্সের বিপক্ষে ৭/১৯ ও ৫/২২; লিচেস্টারে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৮/৭৩ ও ৫/৪১; ডার্বিতে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৩/৭৫ ও ৬/১৫২; ট্রেন্ট ব্রিজে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৬/৯৪ ও ৭/৬০; ট্রেন্ট ব্রিজে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৫/৬৪ ও ৬/৫৩ ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে ৫/৬৪ ও ৭/৪৮ পান। দলের ছয় জয়ে ১০.৯৩ গড়ে ৭৬৫ রান দিয়ে সর্বমোট ৭০ উইকেট একাই লাভ করেছিলেন।

১৯০৩ সালে অনেকগুলো বোলিং উপযোগী পিচেও তিনি কম দক্ষতা দেখান। ৭৬ উইকেট পেলেও ট্রেন্ট ব্রিজের পিচের আকর্ষণীয় আবহাওয়ায় তিনি দূর্দান্ত খেলেছিলেন।[৪] ১৯০৪ সালে অনুপযোগী পরিবেশে বেশ চেষ্টা করেন। কেনিংটন ওভালে প্লেয়ার্স বনাম জেন্টলম্যানের মধ্যকার প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় দুইবার অংশগ্রহণের প্রথমটিতে অংশ নেন।[১] ১৯০৫ সালে নিজের সেরা অবস্থানকালে স্থানীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিয়ে আঘাতের কবলে পড়েন। ফলশ্রুতিতে, তৃতীয়বারের মতো নটিংহ্যামশায়ারের খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হয়।[৫]

মে, ১৯০৬ সালে টমাস ওয়াস আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। আইবার্থে পোতানো উইকেটেও ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ১৬ উইকেট দখল করেন। তাসত্ত্বেও, নটিংহ্যামশায়ার দল পরাজয়ের কবলে পড়ে।[৬] সারের বিপক্ষে হুইটসানটাইডের খেলায় পেশীর টান অনুভব করেন ও শুষ্ক আবহাওয়ায় তিনি তার সীমাবদ্ধতা দেখাতে থাকেন।[৭]

স্বর্ণালী অধ্যায় সম্পাদনা

১৯০৭ সালে নটিংহ্যামশায়ারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ মৌসুমে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। দুই দিন খালি হাতে থাকার পর মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে ৩ রান খরচ করে ৬ উইকেট তুলে নেন। এবার ভেজা আবহাওয়া পুরো গ্রীষ্ম জুড়ে বহমান ছিল। মাত্র উনিশ খেলায় টমাস ওয়াস ও আলবার্ট হলাম একের পর এক খেলায় আধিপত্য বিস্তার করে ২৯৮ উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। তারা দু’জন কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অধিক সময় ধরে বোলিং করেন। খেলাগুলোর পনেরটিতে তার দল জয়ী হয় ও বাদ-বাকী খেলাগুলোয় ড্র করে। কোন খেলাতেই পরাজয়ের ভাগীদার হয়নি তারা। তাদের সাথে কেবলমাত্র জন গান নিজেকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পেরেছিলেন। সতেরো খেলায় অংশ নিয়ে ২৮১ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৫ উইকেট পেয়েছিলেন জন গান। ঐ বছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে দূর্দান্ত খেলা উপস্থাপন করেন। আলবার্ট হলামকে সাথে নিয়ে নটিংহ্যামশায়ারকে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেছিলেন।

১৯০৭ সালে লর্ডসে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ত্রয়োদশ খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, চূড়ান্ত একাদশের বাইরে রাখা হয়। ১৯০৮ সালে কাঁধের আঘাতের কারণে আলবার্ট হলামের বোলিং দূর্বলতর হলেও টমাস ওয়াস ঠিকই নিজেকে ধরে রেখেছিলেন। এসেক্সের বিপক্ষে ১০৩ রান খরচ খেলায় ষোলো উইকেট দখল করেন।[৮] ১৯০৭ সালের ন্যায় ১৯০৯ সালের গ্রীষ্মকালও ভেজা আবহাওয়া বিরাজমান ছিল। তার বোলিং দূর্বলতর হলেও হলাম পূর্ণাঙ্গভাবে শারীরিক সক্ষমতায় ফিরে আসেন। ১৯০৫ সালের পর সবচেয়ে বাজে বোলিং করেন। তবে, দুই বছরের মধ্যেই খেলার ছন্দে ফিরে আসেন। বোলিংয়ে পেস হারালেও উইকেট নিয়ে দলকে ঠিকই সহযোগিতা করেছিলেন।[৯]

১৯১২ সালের গ্রীষ্মের ভেজা উইকেট লাভের পরিবেশেও তেমন ভালো খেলেননি। ১৯০৭ সালের তুলনায় কম উইকেট পান। ১৯১৩ সালে দশ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ১০০ উইকেট লাভে ব্যর্থ হন। ১৯১৪ সালে[৩] আঘাতের কারণে মাঠের বাইরে থাকেন ও সাতটি খেলায় অনুপস্থিত ছিলেন। ৬৯ উইকেটে চলে আসেন ও ১৯০৩ সালের পর প্রতি উইকেটে সর্বাধিক গড়ে রান দেন। যুদ্ধের পর জো হার্ডস্টাফ সিনিয়রের আর্থক সুবিধা গ্রহণের খেলায় তিনি কেবলমাত্র একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

খেলার ধরন সম্পাদনা

দীর্ঘদেহী ও মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন টমাস ওয়াস। দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে অপূর্ব ছন্দে নিজেকে বোলার হিসেবে উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী অধ্যায়ে লেগ-কাটারগুলো তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। বৃষ্টির পর তার বোলিং রুখে দেয়া বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল। কিন্তু, এরপর তার বলগুলো তেমন বাঁক খেতো না।[১] এছাড়াও, ধীরগতিসম্পন্ন বলগুলোও অনেক ব্যাটসম্যানকে কটে পরিণত করতে বাধ্য করতো।[১০] তার ফিল্ডিংও বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল। ব্যাটসম্যান হিসেবে মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, ১৯০৬ সালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৫৬ রান তুলেছিলেন। এ পর্যায়ে অবশ্য চারবার আউট হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।[১১]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

বর্ণাঢ্যময় জীবনের অধিকারী ছিলেন টপসি ওয়াস।[১] ২৭ অক্টোবর, ১৯৫৩ তারিখে ৮০ বছর বয়সে সাটন-ইন-অ্যাশফিল্ডে টমাস ওয়াসের দেহাবসান ঘটে। তার স্মরণে স্যার পেলহাম ওয়ার্নার শোক প্রকাশ করেছিলেন।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Preston, Norman (editor); Wisden Cricketers’ Almanac 1954; p. 930
  2. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Thirty-Fifth Edition (1898), p. 162
  3. First-Class Bowling in Each Season by Thomas Wass. cricketarchive.com
  4. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-First Edition (1904); Part II, p. 82
  5. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-Third Edition (1906); Part II, pp. 237, 251
  6. Lancashire v Nottinghamshire in 1906. cricketarchive.com
  7. Pardon,(editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-Fourth Edition; Part II, p. 92
  8. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-Sixth edition (1909); p. 141
  9. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-Ninth edition (1912); Part II, pp. 141, 142, 252
  10. See The Times, 18 June 1902; ‘Sporting Intelligence’
  11. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketer’s Almanac; Forty-Fourth Edition (1907); Part II, p. 266
  12. Cricketer Spring Annual Easter 1954

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা