রাজা তেজং (১৩ই জুন, ১৩৬৭ – ৩০ মে ১৪২২, রাজত্বকাল ১৪০০-১৪১৮) হচ্ছেন জোসন রাজবংশের রাজা এবং রাজা সেজং দা গ্রেইট এর পিতা।

ই বাং-উন
রাজ সমাধিতে জসিয়নের রাজা তাইজং এর মূর্তি
King of Joseon
রাজত্বনভেম্বত ২৮, ১৪০০-সেপ্টেম্ভর ৯, ১৪১৮
পূর্বসূরিরাজা জিওংজং (ই জিয়ং)
উত্তরসূরিজসিয়নের রাজা সেজং
জসিয়নের প্রাক্তন রাজা
অধিকারসেপ্টেম্ভর ৯, ১৪১৮- মে ৩০, ১৪২২
জন্ম(১৩৬৭-০৬-১৩)১৩ জুন ১৩৬৭
হামহিয়ং
মৃত্যুমে ৩০, ১৪২২(1422-05-30) (বয়স ৫৪)
চাঙ্গইয়ংগুং
সমাধি
হিওনিলাং, সিওল
সঙ্গীরাণী হিসাবে
  • ইয়োহিয়াং মিন বংশের ওংগায়ং

রাজ সঙ্গী

  • হায়ো-বিন কিম
  • শিন-বিন শিন
  • সিওন-বিন আন
  • উই-বিন কুয়ন
  • সো-বিন নো
  • মায়ং-বিন কিম
  • জিয়ং-বিন
  • সুক-উই চই
বংশধরই যে, যুবরাজ ইয়াংইয়ং
ই ব, যুবরাজ হায়রোইয়ং
ই ড, জসিয়নের রাজা সেজং (যুবরাজ চুংইয়ং)
মরণোত্তর নাম
রাজা তাইজং গংজিওয়ং সিওংডিওক সিং-গং গিওঞ্চিওন চেগুক দাইজেয়ং হাই-উ মুন্মু ইয়েচেওল সিওঙ্গিয়ল গুয়াঙ্গহো দা গ্রেইট
태종공정성덕신공건천체극대정계우문무예철성렬광효대왕
太宗恭定聖德神功建天體極大正啓佑文武叡哲成烈光孝大王
উপাসনালয়ের নাম
তাইজং
রাজবংশজিওংজু ই
পিতাজসিয়নের রাজা তাইজ
মাতাসিন-উই, জসিয়নের রাণী
জোসনের রাজা তেজং
হাঙ্গুল태종
হাঞ্জা太宗
সংশোধিত রোমানীকরণতাইজং
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াতা’ইজং
জন্মের নাম
হাঙ্গুল이방원
হাঞ্জা李芳遠
সংশোধিত রোমানীকরণই বাং-উন
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াই পাংউন

জীবন সম্পাদনা

জোসন প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

তিনি জন্মেছিলেন “ই বাং-উন” নামে ১৩৬৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা তাইজ এর পঞ্চম সন্তান হিসাবে এবং গোরিও রাজবংশের একজন কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেন ১৩৮২ সালে। তাঁর জীবনের শুরুর দিকে তিনি তাঁর পিতার প্রতি সমর্থন বাড়াতে নাগরিক এবং সরকারের প্রভাবশালীদের সাথে কাজ করেন। তাইজং সাহায্য করেন তাঁর পিতাকে জোসনের রাজা করে নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন প্রভাবশালীকে হত্যা করে যেমন জিয়ং মং-জু, যারা গোরিও রাজবংশের প্রতি অনুগত ছিল। তাঁকে যুবরাজ জিওং-আং নামে ডাকা হত তাঁর পিতার ক্ষমতাকালে।

যুবরাজদের দ্বন্দ্ব সম্পাদনা

১৩৯২ সালে তিনি তাঁর পিতাকে সাহায্য করেন গোরিও রাজবংশ ভূপাতিত করে নতুন রাজবংশ জোসন প্রতিষ্ঠায়। তিনি সকল যুবরাজদের মধ্যে বেশি অবদান রেখেছেন তাঁর পিতাকে সিংহাসনে বসাতে তাই তিনি আশা করেছিলেন তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হবেন, কিন্তু তাঁর পিতা এবং প্রধান মন্ত্রী জাং দ-জিওন বিশেষ সুবিধা দেন তাইজ এর অষ্টম সন্তান এবং ই বাং-উনের সৎ ভাই, ই বাং-সিওককে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে। সমস্যা আরও বাড়ে যখন জাং দ-জিওন যিনি স্থাপন করেছিলেন আদর্শিক, প্রতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামোভাবে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠায়, তিনি দেখছিলেন জোসনকে মন্ত্রীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে যেখানে রাজা মন্ত্রী নিযুক্ত করে দিবেন, অন্যদিকে ই বান-উন চেয়েছেন সরাসরি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যেখানে রাজাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন। উভয়পক্ষ তাঁদের এই বিবাদ সম্পর্কে পূর্ণ সতর্ক ছিল এবং তৈরি হচ্ছিল আঘাত হানার জন্য। কিন্তু রাণী সিন্দোকের হঠাৎ মৃত্যু হয় এবং যখন রাজা তাইজ তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু শোক কাঁটিয়ে উঠতে পারেননি, ই বাং-উন প্রথম আক্রমণ করেন রাজ প্রসাদে হানা দিয়ে এবং জাং দ-জিওন ও তাঁর সমর্থনকারীকে হত্যা করেন, এরই সাথে রাণী সিন্দোক এর দুই পুত্র যার মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজও ছিলেন। এই ঘটনা যুবরাজদের প্রথম দ্বন্দ্ব হিসাবে অভিহিত করা হয়। রাজা দেখেন যে তাঁর ছেলেরা একে অপরকে হত্যা করতে চাচ্ছে সিংহাসনের জন্য, এই অবস্থায় বিস্ময়ে বিমুঢ় রাজা তাইজ সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ই বাং-ওয়া, বা রাজা জিওংজংকে সিংহাসন হস্তান্তর করেন নতুন শাসক হিসাবে। রাজা জিওংজং এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল রাজধানীকে গাইসিয়ং এ ফিরিয়ে নেয়া, যেখানে তিনি বিশ্বাস করেন যে সেখানে অনেকটা আরামপ্রদ। এখনও ই বাং-উন আসল ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন এবং শিগ্রই তাঁর অসন্তুষ্ট বড় ভাই ই বাং-গানের সাথে সংঘর্ষতে যাচ্ছেন যেও ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা করছিল। ১৪০০ সালে জেনারেল বাক পো, যিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন ই বাং-উনের উপর যুবরাজদের প্রথম দ্বন্দে তার ভূমিকার জন্য তাকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিদান না দেয়ায়, সে ই বাং-উনের বড় ভাই ই বাং-গানের সাথে মিশে বিপ্লব করে যেটাকে বলা হয় যুবরাজদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্বন্দ্ব। ই বাং-উন সফলভাবে তাঁর ভাইয়ের সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেন, তারপর বাক-পোকে হত্যা করেন এবং ই বাং-গানকে নির্বাসনে পাঠান। রাজা জিয়ংজং তাঁর ভাইয়ের ক্ষমতায় ভীত হয়ে ই বাং-উনকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে ঘোষণা দেন এবং একই বছর সিংহাসন ত্যাগ করেন। ই বাং-উন অবশেষে জোসনের সিংহাসন অধিকৃত করেন রাজা তাইজং হিসাবে, জোসনের তৃতীয় রাজা।

রাজ ক্ষমতা একত্রিকরণ সম্পাদনা

 
জসিয়নের রাজা তাইজং এর চিহ্ন

তাইজং এর রাজত্বের শুরুতে প্রাক্তন মহারাজা তাইজ রাজ ছাপ ব্যবহার করতে তাইজংকে প্রত্যাখ্যান করেন। তাইজং বিভিন্ন কর্মপন্থা অবলম্বন করেন শাসনে তাঁর যোগ্যতা প্রমাণের জন্য। তাঁর প্রথম কাজগুলোর একটি ছিল যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকদের ব্যক্তিগতভাবে সৈন্যবাহিনী বাতিল করা, যার ফলে জাতীয় সৈন্যদলে ধীরে ধীরে লোকদের যোগদান বাড়তে থাকে। তাঁর পরবর্তি পদক্ষেপ ছিল জমির মালিকদের কাছ থেকে সঠিকভাবে কর আদায় করা এবং সেগুলো রাজ্যের বিষয় হিসাবে নথিগত করা। পূর্বের লোকানো জমিগুলো খুঁজে বের করেন যার ফলে রাজ্যের আয় দিগুন হয়ে যায়। তিনি ‘হোপায়’ নামের নিবন্ধ প্রবর্তন করেন, যেটা অনেকটা পরিচয়পত্রের মত কাজ করে এতে বাহনকারী এর নাম ও ঠিকানা থাকে এর মাধ্যমে তিনি জনগণের চলাফেরার গতিবিধির উপর নজর রাখেন।[১] তিনি নিজ রাজপ্রাসাদের সামনে একটি বড় ঢাক রাখেন এতে সাধারণ জনগণ তাঁদের মতামতের বা সমস্যার কথা লিখে রাখবে এবং যেটা রাজার কাছে যাবে ও রাজা তা সমাধান করে দেন।

পূর্ণ রাজতন্ত্র সম্পাদনা

তিনি কেন্দ্রীয় সরকার আরও শক্তিশালী করেন এবং পূর্ণ রাজতন্ত্র সৃষ্টি করেন। ১৩৯৯ সালে তাইজং ডপিয়ং এসেম্বলি বাতিলে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন যেটি ছিল পুরাতন সরকারের একটি প্রসাশন যারা আদালতের ক্ষমতায় একাধিকার পালন করেছে গোরিও রাজবংশের ক্রান্তিকালে, জোসন রাজবংশের রাজ্য পরিষধ এর সুবিধার জন্য। তাঁদের দিয়ে একটি নতুন শাখা খুলেন রাজা এবং তাঁর অনুশাসন ঘিরে, সেখান থেকেই সবকিছুর ছাড়পত্র পায় রাজার অনুমোদনে। সেখানে অনুষধের মন্ত্রী ও উপদেষ্ঠাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। কিছুদিন পরেই তাইজং ‘সিনমুন দপ্তর’ নামে একটি দপ্তর খুলেন যেখানে শুধু ক্ষতিগ্রস্থরাই আসবে যদি তারা মনে করে রাজ্যের সরকারী লোক বা রাজব্যক্তিদের দ্বারা তারা ন্যায়বিচার পায়নি। যদিও তাইজং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাং দ-জিওন এর সংশোধন অক্ষত রেখেছেন। তিনি দর্শনকে উন্নীত করেন যেটি ধর্মের চেয়ে রাজনৈতিক দর্শনই বেশি ছিল, বৌদ্ধ ধর্মের পদাবনতি ঘটে যেটি প্রাত্যহিক জীবনের চেয়ে অনেক দূরে ছিল এবং গোরিও রাজবংশের দ্বারা অধঃপতিত হয়েছিল। তিনি অনেক মন্দির বন্ধ করেন যেগুলো গোরিও এর রাজার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দখল বাজেয়াপ্রাপ্ত করেন ও তা রাজকোষাগারে যোগ করেন। আন্তর্জাতিক নীতিতে তিনি ছিলেন এক কথায় কট্টরপন্থী- তিনি জুরচেনস এর উত্তর সীমান্তে হামলা করেন এবং জাপানী জলদস্যুদের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা করেন। তাইজং ১৪১৯ সালে তুসিমা আইল্যান্ড এর ওয়েই আক্রমণের জন্যও দায়ী। তিনি প্রকাশনা, বাণিজ্য এবং শিক্ষার উন্নতি ঘটান। তিনি রাজকীয় রক্ষি বাহিনী উইগেওম্বু এবং গুপ্তচর বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন একই সময়ে। ১৪১৮ সালে তিনি তাঁর সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং তাঁর ছেলে রাজা সেজং দা গ্রেইটকে সিংহাসন প্রদান করেন। কিন্তু একনায়ক হিসাবে কাজ করে যান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং তিনি সেজং এর শ্বশুর ও তার ভাইকে হত্যা করেন। তাইজং হত্যা করেন কিংবা নির্বাসনে পাঠান তার অনেক সমর্থককে যারা থাকে সিংহাসনে বসতে সহায়তা করেছে। তার শ্বশুর এর দিক থেকে প্রভাব কমাতে তিনি তার রাণী ওং গায়ং এর চার ভাইকেই হত্যা করেন। তাইজং একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত হিসাবে রয়ে যান যিনি তার অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করেছেন যার মধ্যে জাং মং-জু এবং জাং দ-জিওনও ছিলেন এছাড়াও তার আত্নীয়দের হত্যা করেছেন ক্ষমতা পাওয়ার জন্য এবং আবারো কাজ করে গেছেন জনগণের জীবন উন্নত করার জন্য, জাতীয় প্রতিরক্ষার শক্তি বৃদ্ধিতে এবং তার সফলকারী হিসাবে সেজং এর শাসনের ভিত্তি স্থাপন করতে। তাইজং পরিচিত ছিলেন শিকারে তাঁর আসক্তির জন্য এবং শাসক হিসাবে খুব কমই বিবেচিত করা হয়।

তাঁর পুরো নাম সম্পাদনা

  • রাজা তাইজং গংজিওয়ং সিওংডিওক সিং-গং গিওঞ্চিওন চেগুক দাইজেয়ং হাই-উ মুন্মু ইয়েচেওল সিওঙ্গিয়ল গুয়াঙ্গহো দা
  • 태종공정성덕신공건천체극대정계우문무예철성렬광효대왕
  • 太宗恭定聖德神功建天體極大正啓佑文武叡哲成烈光孝大王

লোক সংস্কৃতিতে সম্পাদনা

টিয়ারস অব ড্রাগনে নামের জনপ্রিয় নাটক তাইজং এর জীবনী এর উপর নির্মিত হয় যেটি প্রচার করা হয় ১৯৯৬-১৯৯৮ পর্যন্ত। এছাড়া কিং সেজং দা গ্রেট(২০০৮), ডিপ রুটেড ট্রি(২০১১), জাং দ-জিওন(২০১৪), সিক্স ফ্লায়িং ড্রাগন (২০১৫) নাটকে তাঁর চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Grayson, James Huntley (২০০২)। Korea: A Religious History। United Kingdom: Routledge। আইএসবিএন 0-7007-1605-X  (p108)