জৈব প্রকৌশল

জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান ও প্রকৌশলশাস্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট জ্ঞানের ব্যবহারিক আ

জৈব প্রকৌশল, জীব-প্রকৌশল বা জীববৈজ্ঞানিক প্রকৌশল বলতে জীববিজ্ঞান (ও অন্যান্য জৈবনিক বিজ্ঞান), প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা এবং গণিত ও ভৌত বিজ্ঞানসমূহের সম্মিলনে সৃষ্ট জ্ঞানের একটি জটিল ও বৃহৎ পরিসরের আন্তঃক্ষেত্রীয় শাখাকে বোঝায়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের জৈব প্রযুক্তি ও চিকিৎসা প্রযুক্তি যেমন যন্ত্র, প্রক্রিয়া, ব্যবস্থা, ইত্যাদি উদ্ভাবনের মাধ্যমে জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ঔষধবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়।

কতিপয় জৈবিক যন্ত্র

একজন জৈব প্রকৌশলীর জীববিজ্ঞানের উপরে ভাল দখল থাকতে হয় এবং প্রকৌশল সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রাখতে হয়, যাতে তিনি প্রকৌশলের তড়িৎ, রাসায়নিক, যান্ত্রিক ও অন্যান্য উপশাখা থেকে আহৃত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া তিনি উপাদান বিজ্ঞানকম্পিউটার বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রগুলিতেও জ্ঞান রাখে। জৈব প্রকৌশলীরা বহুবিধ ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। যেমন তারা কোনও ব্যক্তির দেহের অঙ্গ সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকল হয়ে গেলে সেগুলি কাজগুলি করার জন্য প্রতিস্থাপনমূলক বা সহায়তামূলক বিশেষ যন্ত্র উদ্ভাবন করতে পারেন, যেমন শ্রুতি সহায়ক যন্ত্র, কৃত্রিম হাত-পা, হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধি, ইত্যাদি। আবার অন্যদিকে একজন জৈব প্রকৌশলী প্রকৌশলের পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে প্রাণীজ বা উদ্ভিজ্জ পদার্থসমূহ কৃত্রিমভাবে সংশ্লেষণ করতে পারেন, যেগুলি শিল্পক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে। কোনও রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে প্রকৌশলের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া উদ্ভাবন করা, চিকিৎসা চিত্রণের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন (যেমন অতিশব্দ চিত্রণ, চৌম্বকীয় অনুনাদ চিত্রণ, ইত্যাদি), বহনযোগ্য রোগনির্ণয়কারী যন্ত্র উদ্ভাবন, দেহকলা প্রকৌশলজাত অঙ্গ উদ্ভাবন, ইত্যাদি জৈব প্রকৌশলীয় গবেষণার কিছু উদাহরণ।[১][২] দেহের অংশবিশেষের (যেমন অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তির জন্য চর্ম, হৃদরোগীর জন্য হৃদযন্ত্রের কপাটিকা) ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ, ন্যানোপ্রযুক্তি (ঔষধ বা টিকা রক্তে পরিবহনের জন্য), ক্রিস্পার প্রযুক্তির মাধ্যমে বংশাণু সম্পাদনা (বংশগতীয় রোগের চিকিৎসার জন্য), পরিধানযোগ্য চিকিৎসা সংবেদক (রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য), ইত্যাদি জৈব প্রকৌশলের কিছু আধুনিক উদাহরণ।[৩]

জৈব প্রকৌশলীরা সাধারণত চিকিৎসা যন্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ঔষধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে থাকেন। এছাড়া তারা চিকিৎসা, আইন, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও কর্মজীবন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

চিকিৎসা প্রকৌশল, কৃষি প্রকৌশল, জীব-সদৃশ যন্ত্রকৌশল (bionics), জৈব-রাসায়নিক প্রকৌশল, দেহকলা প্রকৌশল, মানব নিয়ামক প্রকৌশল, বংশাণু প্রকৌশল, ইত্যাদি জৈব প্রকৌশলের শাখা হিসেবে পরিগণিত হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "What is Bioengineering?"bioeng.berkeley.edu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২১ 
  2. "MSB: About the Munich School of BioEngineering"www.bioengineering.tum.de। ২০২০-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-০৩ 
  3. "What is Bioengineering?"। American Socienty of Mechanical Engineers। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২০