জৈব খাদ্য

জৈব খাদ্য বা অর্গানিক ফুড তৈরিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, এন্টিবায়োটিক বা হরমোন দেয়া হয় না। আর

জৈব খাদ্য বা অর্গানিক ফুড হল সেই সব খাবার যা উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার, এন্টিবায়োটিক, হরমোন বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। জৈব সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাদ্য হল জৈব খাদ্য। আর যেসব পণ্য উৎপাদনে সহনীয় মাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক বা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, সেসব পণ্যকে নিরাপদ খাদ্য বা সেইফ ফুড বলা হয়। [১]

সবজি চাষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া হাইব্রিড ও জিএমও জাত উৎপাদন করে জমি ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষিজমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার আমাদের খাবারের ভেতরে ঢুকে যায়। গবাদি পশু-পাখির উৎপাদন বাড়াতে হরমোন দেয়া হয়। শুধু সবজি নয়, ফল, ডিম, মাছ, মাংস—সবকিছুতেই এগুলোর জীবনকাল বাড়াবার জন্য ফরমালিন কিংবা কীটনাশক মেশানো হয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এছাড়া ফলমূল পাকাতে বা পচে যাওয়া ঠেকাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে ওথেচ্ছভাবে। এই কৃত্রিম পদার্থগুলো খাবার ধোয়ার পর, এমনকি রান্না করার পরও সম্পূর্ণ দূর হয় না। যা আমাদের দেহের নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই রাসায়নিক জিনিসগুলো আমাদের শরীরে ধীরগতিতে বিষের মতো কাজ করে। কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহারে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারের সমস্যা ইত্যাদির প্রকোপ মারাত্মক হারে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের ওপর এর প্রভাব আরও মারাত্মক। এই ক্ষতিকর দিক থেকে থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম সমাধান হতে পারে অর্গানিক সবজি। অর্গানিক শাকসবজি বা শস্য উৎপাদনে কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এছাড়া জমিতে বীজ বপনের আগে কয়েক বছর জমি ফেলে রেখে মাটি পরিশুদ্ধ করে নিতে হয়। তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।[২]

চাহিদা ও দর দাম সম্পাদনা

স্বাস্থ্যকর, প্রাকৃতিক ও পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত খাবার হিসেবে জৈব খাবারের সারা পৃথিবীতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।[৩] বাংলাদেশেও জৈব খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তবে জৈব খাবারের দাম কিছুটা বেশি। এর একটি বড় কারণ হলো জৈব বা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহের অভাব। নব্বইয়ের দশকে ছোট পরিসরে অর্গানিক শাকসবজি, ধান ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড শুরু হলেও ২০১০ পরবর্তী সময়ে এই খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উৎপাদক, প্রক্রিয়াজাতকারী ও বিক্রেতা সংযুক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে মোবাইল কোর্টের অভিযান, সংবাদ মাধ্যমের সচেতনতা কার্যক্রম এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার পদক্ষেপের ফলে খাদ্যে ভেজালকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সাবধান হয়েছে।বিক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। কেননা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এসব কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পেরে সাধারণ মানুষ খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাবধান হচ্ছে। এছাড়া ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়বেটিস ইত্যাদি অসুখের প্রকোপ বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ডাক্তাররা খাদ্যে ভেজাল ও খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করে। এমন পরিস্থিতিতে জৈব খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। [২]

জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা সম্পাদনা

সাধারণ মানুষ হাতের নাগালের মধ্যেই পাওয়া খাবারগুলোর খারাপ প্রভাব সম্পর্কে জানছে। তাই জৈব খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই এখন খাবার হিসেবে জৈব পণ্যই বেশি পছন্দ করছেন। রাসায়নিক ব্যবহার না করায় জৈব খাদ্যের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। [২]

জৈব কৃষিপণ্য উৎপাদনে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ঢাকার বাইরে দূরদূরান্তের জেলায় হলেও সবচেয়ে বেশি ক্রেতা এই রাজধানী শহরেই বসবাস করে। বিক্রেতাদের কাছে পাওয়া যায় বিষমুক্ত শাকসবজি, ফলমূল, দেশী মুরগি-হাঁস, নিরাপদ ব্রয়লার, দেশী মাছ, শুঁটকি, দেশী খাসি, দেশী ষাঁড়, সরিষার তেল, নারিকেল তেল ও ঔষধি গুণের তেল, মশলাপাতি, দুধ, ডিম, ঘি, লাল চাল, চালের গুঁড়া, হাতে ভাজা মুড়ি, চিড়া, গুড়, লাল চিনি, ডালের বড়ি, দই, মিষ্টি ইত্যাদি খাদ্যপণ্য, যা স্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে অর্ডার সংগ্রহ করে সারাদেশে হোম ডেলিভারি দেয়। যার ফলে সুস্থ প্রতিযোগিতার পথ খুলছে এবং দাম কমার কারণে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে।

বর্তমানে জৈব ও নিরাপদ খাদ্যপণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে শস্য প্রবর্তনা, প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র, খাস ফুড, ভালো ফল, শুদ্ধ কৃষি, প্রাকৃতি ফার্মিং, নিওফার্মার, ঢাকা ডো, চাষবাস, বুনোকৃষি, পারমিদা, তাজা ফল, আমার ফুড, মাদল ইত্যাদি। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে জৈব ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন ব্যবস্থায় গতি আসবে। জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে৷ জমির উর্বরাশক্তি বাড়বে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Pesticides in Organic Farming". University of California, Berkeley. Organic foods are not necessarily pesticide-free. Organic foods are produced using only certain pesticides with specific ingredients. Organic pesticides tend to have substances like soaps, lime sulfur and hydrogen peroxide as ingredients. Not all natural substances are allowed in organic agriculture; some chemicals like arsenic, strychnine, and tobacco dust (nicotine sulfate) are prohibited.
  2. "অরগানিক খাবারের খোঁজে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১০ 
  3. White, Kim Kennedy; Duram, Leslie A (2013). America Goes Green: An Encyclopedia of Eco-friendly Culture in the United States. California: ABC-CLIO. p. 180. ISBN 978-1-59884-657-7.