জেমস ডিন

মার্কিন অভিনেতা

জেমস বায়রন ডিন (ইংরেজি: James Byron Dean; জন্ম: ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ - ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫) ছিলেন একজন মার্কিন অভিনেতা। তিনি কৌশরের মোহমুক্তি ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবাদ বিষয়ক চলচ্চিত্র রেবেল উইদাউট আ কজ (১৯৫৫) চলচ্চিত্রে জিম স্টার্ক চরিত্রে অভিনয় করে সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি হিসেবে স্মরণীয়। তার তারকা খ্যাতিকে আরও বাড়িয়ে দেয় ইস্ট অব ইডেন (১৯৫৫)-এর ক্যাল ট্রাস্ক এবং জায়ান্ট (১৯৫৬)-এর জেট রিংক চরিত্র।

জেমস ডিন
James Dean
১৯৫৩ সালে একটি প্রচারণামূলক ছবিতে ডিন
জন্ম
জেমস বায়রন ডিন

(১৯৩১-০২-০৮)৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১
মৃত্যু৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫(1955-09-30) (বয়স ২৪)
শোলাম, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুর কারণগাড়ি দুর্ঘটনা
সমাধিপার্ক সেমাট্রি, ফেয়ারমন্ট, ইন্ডিয়ানা
জাতীয়তামার্কিন
পেশাঅভিনেতা
কর্মজীবন১৯৫০-১৯৫৫
স্বাক্ষর

মাত্র ২৪ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা[১] ডিন মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করা প্রথম অভিনেতা এবং তিনিই দুটি মরণোত্তর একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত একমাত্র অভিনেতা।[২] ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাদের হলিউডের স্বর্ণযুগের সেরা ২৫ পুরুষ তারকা তালিকায় তাকে ১৮তম স্থান প্রদান করে।[৩]

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

জেমস বাইরন ডিন ১৯৩১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ম্যারিয়নের ফোর্থ স্ট্রিট ও ম্যাক্লুর স্ট্রিটের কোণায় সেভেন গেবলস অ্যাপার্টমেন্টে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার মাতা মিলড্রেড ম্যারি (উইলসন) এবং পিতা উইনটন ডিন। তিনি তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান। তিনি দাবী করেন তার পিতা আংশিক নেটিভ আমেরিকান, এবং তার মাতা মেফ্লাওয়ার আন্দোলনের শুরুর দিকের বাসিন্দাদের উত্তরসূরি।[৫] ছয় বছর পর তার পিতা কৃষিকাজ ছেড়ে দন্ত্য টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করলে তারা সপরিবারে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা মনিকায় চলে যায়। তিনি সেখানে লস অ্যাঞ্জেলেসের নিকটবর্তী ব্রেন্টউডের ব্রেন্টউড পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু কিছুদিন পরই ম্যাকিনলি এলিমেন্টারি স্কুলে চলে যান।[৬] তার পরিবার সেখানে কয়েক বছর কাটায় এবং ডিন তার মায়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাইকেল ডিঅ্যাঞ্জেলিসের ভাষ্যমতে, তার মা'ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি তাকে বুঝতে পারতেন।[৭] ১৯৩৮ সালে তার মা হঠাৎ করেই তীব্র পাকস্থলীর ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন এবং তার ওজন কমতে থাকে। তিনি জরায়ুর ক্যান্সারে মারা যান, ডিনের তখন নয় বছর বয়স ছিল।[৬]

কর্মজীবন সম্পাদনা

 
ইস্ট অব ইডেন (১৯৫৫)-এ ডিন

১৯৫৩ সালে পরিচালক এলিয়া কাজান জন স্টাইনবেকের ১৯৫২ সালের উপন্যাস ইস্ট অব ইডেন অবলম্বনে পল অসবর্নের চিত্রনাট্যে ক্যাল ট্রাস্ক চরিত্রের জন্য ভালো অভিনেতা খুঁজছিলেন। ক্যাল চরিত্রের অভিনেতা নির্বাচনের আগে এলিয়া কাজান বলেন তিনি এই চরিত্রে "একজন ব্রান্ডো"কে চাচ্ছিলেন। অসবর্ন তুলনামূলক তরুণ অভিনেতা ডিনের ব্যাপারে পরামর্শ দেন। ডিন স্টাইনবেকের সাথে দেখা করেন, তিনি ভাবসম্পন্ন, জটিল এই তরুণকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেননি, তবে মনে করেন তিনি এই চরিত্রের জন্য উপযুক্ত হবে। ১৯৫৪ সালের ৮ই এপ্রিল ডিনকে এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হলে তিনি শুটিংয়ের জন্য নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে পাড়ি জমান।[৮][৯][১০] ডিন ইস্ট অব ইডেন চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন, যা একাডেমি পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথম দাপ্তরিক মরণোত্তর অভিনয়ের মনোনয়ন।[১১] এর আগে জিন ইগেলস ১৯২৯ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছিলেন,[১২] তবে তখন বিজয়ী নির্বাচনের নিয়মাবলি ভিন্ন ছিল। ইস্ট অব ইডেন ডিনের জীবদ্দশায় মুক্তিপ্রাপ্ত একমাত্র শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করা চলচ্চিত্র।[১৩][১৪]

ডিন এরপর রেবেল উইদাউট আ কজ (১৯৫৫) চলচ্চিত্রে জিম স্টার্ক চরিত্রে অভিনয় করে কিশোর-তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। চলচ্চিত্রটি কিশোরদের অনিশ্চয়তার সঠিক উপস্থাপন।[১৫][১৬] ইস্ট অব ইডেনরেবেল উইদাউট আ কজ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর ডিন ক্যাল ট্রাস্ক বা জিম স্টার্কের মত বিদ্রোহী তরুণ হিসেবে অভিনয় করতে চাননি। এর পরিবর্তে তিনি জায়ান্ট (১৯৫৬)-এর জেট রিংক চরিত্রে কাজ করেন। চলচ্চিত্রটি তার মৃত্যুর পর মুক্তি পায়। ডিন তার এই কাজের জন্য ২৯তম একাডেমি পুরস্কারে তার দ্বিতীয় মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. গুডম্যান, এজরা (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬)। "Delirium over dead star"। লাইফ। খণ্ড ৪১, সংখ্যা ১৩, পৃষ্ঠা ৭৫-৮৮।
  2. কিডার, ডেভিড এস.; ওপেনহাইম, নূহ ডি. (২০০৮)। The Intellectual Devotional: Modern Culture: Revive Your Mind, Complete Your Education, and Converse Confidently with the Culturati (ইংরেজি ভাষায়)। পটার/টেন স্পিড/হারমনি/রোডেল। আইএসবিএন 9781605297934। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  3. "AFI's 100 Years...100 Stars"এএফআইআমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  4. এপটিং, ক্রিস (১ জুন ২০০৯)। The Birthplace Book: A Guide to Birth Sites of Famous People, Places, & Things। স্ট্যাকপোল বুকস। পৃষ্ঠা ১৬৩। আইএসবিএন 978-0-8117-4018-0 
  5. ডাল্টন, ডেভিড (২০০১)। James Dean: The Mutant King : a Biography। শিকাগো রিভিউ প্রেস। পৃষ্ঠা ২। আইএসবিএন 978-1-55652-398-4 
  6. পেরি, জর্জ সি. (২০০৫)। James Dean। ডিকে পাবলিশিং, ইনকর্পোরেটেড। পৃষ্ঠা ২৭। আইএসবিএন 978-0-7566-0934-4 
  7. ডিঅ্যাঞ্জেলিস, মাইকেল (১৫ আগস্ট ২০০১)। Gay Fandom and Crossover Stardom: James Dean, Mel Gibson, and Keanu Reeves। ডিউক ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৯৭। আইএসবিএন 0-8223-2738-4 
  8. হলি, পৃষ্ঠা x–১৯৬।
  9. পেরি ২০০৫, পৃষ্ঠা ১০৯–২২৬।
  10. র‍্যাথগেব, ডগলাস এল. (২০০৪)। The Making of Rebel Without a Cause। জেফারসন: ম্যাকফারল্যান্ড। পৃষ্ঠা 20আইএসবিএন 0786419768 
  11. পেরি ২০০৫, পৃষ্ঠা ২০৩।
  12. অসবর্ন, রবার্ট এ. (১৯৭৯)। Academy Awards Oscar Annual। ইএসই ক্যালিফোর্নিয়া। পৃষ্ঠা ৬০। 
  13. পোমারেন্স, মারি (২০১০)। "James Stewart and James Dean"। পালমার, আর. বার্টন। Larger Than Life: Movie Stars of the 1950s। রুটজার্স ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ৮০। আইএসবিএন 978-0-8135-4766-4 
  14. Films and Filming। হ্যানসম বুকস। ১৯৮৬। পৃষ্ঠা ৯। 
  15. স্প্রিঞ্জার, ক্লাউদিয়া (১৭ মে ২০১৩)। James Dean Transfigured: The Many Faces of Rebel Iconography। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস প্রেস। পৃষ্ঠা ২। আইএসবিএন 978-0-292-75288-7 
  16. ক্রাউস, কেনেথ (মে ১, ২০১৪)। Male Beauty: Postwar Masculinity in Theater, Film, and Physique Magazines। এসইউএনওয়াই প্রেস। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 978-1-4384-5001-8 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা