জেমস আয়ারমঙ্গার (ইংরেজি: James Iremonger; জন্ম: ৫ মার্চ, ১৮৭৬ - মৃত্যু: ২৫ মার্চ, ১৯৫৬) ইয়র্কশায়ারের নর্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ও ফুটবলার ছিলেন। নটিংহ্যামশায়ার দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

জেমস আয়ারমঙ্গার
আনুমানিক ১৯০৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জেমস আয়ারমঙ্গার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজেমস আয়ারমঙ্গার
জন্ম (1876-03-05) ৫ মার্চ ১৮৭৬ (বয়স ১৪৮)
নর্টন, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৫ মার্চ ১৯৫৬(1956-03-25) (বয়স ৮০)
নটিংহাম, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম পেস
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কআলবার্ট আয়ারমঙ্গার (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৩৪
রানের সংখ্যা ১৬,৬২২
ব্যাটিং গড় ৩৫.০৬
১০০/৫০ ৩১/৮২
সর্বোচ্চ রান ২৭২
বল করেছে ৩৮,৬৯৩
উইকেট ৬১৯
বোলিং গড় ২২.৯৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩৫
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৮/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৯০/০
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১২ মার্চ ২০১৯

১৮৯৯ থেকে ১৯১৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করার পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে ৩৫.০৬ গড়ে ১৬,৬২২ রান করেছেন। পাশাপাশি, ডানহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিং করে ২২.৯৮ গড়ে ৬১৯ উইকেট পেয়েছেন তিনি। ১৮৯৭ সালে উল্লেখযোগ্য বিশজন প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া তৎকালীন বার্ষিক কোল্টের অসম খেলায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে নটিংহ্যামশায়ার মূল দলের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশ নেন। তবে, দূর্বল বোলিংসমৃদ্ধ শক্তিশালী নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেন। ফলশ্রুতিতে, ১৮৯৯ সালে কাউন্টি দলে বোলার হিসেবে খেলার সুযোগ লাভ করেন তিনি। প্রথম একাদশের পক্ষে পাঁচটি খেলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। তবে, তিনি মাত্র পাঁচটি উইকেট পেয়েছিলেন। কোন খেলাতেই একাধিক উইকেট পাননি। বলে নিখুঁততা ও ৯০ কেজির অধিক ওজনের মজবুত শারীরিক গড়ন থাকা স্বত্ত্বেও স্পিন আনতে পারেননি ও সাধারণমানের কোন ব্যাটসম্যানকেও আউটে অক্ষমতা দেখান।

তাসত্ত্বেও, পরের বছর খাঁটিমানের রক্ষণশৈলী নিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম একাদশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু, স্ট্রোকের অভাব ও শারীরিক গড়নের কারণে কেবলমাত্র ১৮ রানের মধ্যেই তার ইনিংসগুলো সীমিত থাকতো। ফলে, নিয়মিতভাবে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হতেন। আগস্ট, ১৯০১ সালে বিস্ময়করভাবে ব্যাটসম্যান হিসেবে সম্মুখসারিতে নিয়ে আসেন জেমস আয়ারমঙ্গার। ঐ মাসে উপর্যুপরী খেলাগুলোয় ৪৪ গড় নিয়ে চারটি শতরানের ইনিংস খেলেন।

স্বর্ণালী অধ্যায় সম্পাদনা

পরবর্তী পাঁচ বছর ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের অন্যতমরূপে পরিগণিত হন। এ পর্যায়ে আর্থার জোন্সের সাথে সেরা উদ্বোধনী জুটি গড়ার প্রয়াস পান। শক্তিশালী ও দৃষ্টিনন্দন রক্ষণশৈলীর কারণে তাকে ক্রিজ থেকে বিদায় করা বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। তবে, দর্শকেরা তার খেলা থেকে মোটেই আনন্দ পেতেন না। ১৯০৪ সালে আয়ারমঙ্গার খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী শিখরে আরোহণ করেছিলেন। ৬০ ঊর্ধ্ব গড় নিয়ে ১,৯৮৩ রান করেন। তন্মধ্যে, কেন্টের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৭২ রান তুলেছিলেন।[১]

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

১৯০৭ সালে নটিংহ্যামশায়ার দল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯০৭ থেকে ১৯১৩ সময়কালের মধ্যে সাত মৌসুমে ব্যাটিং গড় ৩০-এর নিচে চলে যায়। তন্মধ্যে, ১৯১০ সালে ব্যাটিং অবস্থান পরিবর্তন করে নিচের দিকে নিয়ে আসতে বাধ্য হন। তাসত্ত্বেও, দলের কার্যকরী খেলোয়াড় ছিলেন ও ব্যাটিং বিপর্যয়ে নিজেকে রুখে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। এমনকি ১৯১২ সালের গ্রীষ্মের ভেজা মৌসুমে একবার পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার পাশাপাশি আটবার অপরাজিত থেকে ২৬ গড়ে রান তুলেছিলেন।

১৯০৮ সাল থেকে জন গানআলবার্ট হলামের বোলিং নিচের দিকে চলে গেলে বিস্ময়করভাবে কাউন্টি দলের বোলিং আক্রমণের শূন্যতা পূরণে সচেষ্ট হন। নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত বোলার না হলেও ১৯০৮ সালের পূর্ব-পর্যন্ত পাঁচ উইকেট পাননি। ঐ বছর ৫৭ উইকেট পান ও নটিংহ্যামশায়ারের বোলিং গড়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন। ১৯১০ সালের মধ্যে বোলিংয়ের উত্তরণ ও বলের নিখুঁততাভাব নিয়ে আসায় পোতানো উইকেটেও সফলতা পেয়েছিলেন।

১৯১১ সালে এর ব্যতিক্রম হয়। কোন ব্যাটসম্যানই তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেননি।[২] এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ায় শক্ত পিচে তাকে দলে রাখার চিন্তা করা হয়নি। এমনকি, ১৯১২ সালের ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতা থেকেও তাকে দূরে রাখা হয়।

১৯১১-১২ মৌসুমে অ্যাশেজ সফরে ইংরেজ দলের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় গমন করেন। সেখানে তিনি বেশকিছুসংখ্যক গুরুত্বহীন খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও, ১৯০১ থেকে ১৯০৫ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তবে, সর্বাপেক্ষা দূর্ভাগা খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

১৯১৪ সালে শোখিন খেলোয়াড় হিসেবে নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে জেমস আয়ারমঙ্গারকে দলে প্রায়শই অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হতো। দশ বছর পূর্বেকার কিছু ব্যাটিংশৈলী তুলে ধরেছিলেন। সাউদাম্পটনে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে অপরিবর্তিত অবস্থায় ৬৬ ওভার বোলিং করেন। অপরিবর্তিত অবস্থায় এ বোলিংটি সর্বকালের রেকর্ডরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কাউন্টি ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হলেও জেমস আয়ারমঙ্গার আর খেলার জগতে ফিরে আসেননি। তবে, ১৯২৭ সালে নটসের দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ৫১ বছর।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ফুটবল খেলায়ও তার সবিশেষ দক্ষতা ছিল। ১৮৯৬ সালে নটিংহাম ফরেস্টের সদস্যরূপে স্টোক সিটির বিপক্ষে ফুলব্যাক অবস্থানে খেলে অভিষেক ঘটে তার। এছাড়াও, তিনবার ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।[১]

১৯২১ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত নটিংহ্যামশায়ারের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৮ সালে অবসর নেন তিনি।[৩] ৮০ বছর বয়স অবধি নটিংহামে বসবাস করতে থাকেন। ২৫ মার্চ, ১৯৫৬ তারিখে ৮০ বছর বয়সে নটিংহামে জেমস আয়ারমঙ্গারের দেহবসান ঘটে।

জেমস আয়ারমঙ্গারের ভ্রাতা আলবার্ট আয়ারমঙ্গার নটস কাউন্টির গোলরক্ষকসহ নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।[৪] জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হ্যারি আয়ারমঙ্গারও নটিংহাম ফরেস্টের ফুটবলার ছিলেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Bygones". Nottingham Evening Post. p. 33. 2 May 2008
  2. Wisden Cricketer's Almanack, 1912
  3. Wisden 1957, p. 945.
  4. "Oh brother! War hero was also a goalkeeper"Nottingham Post (ইংরেজি ভাষায়)। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা