জেনির বড় মসজিদ

মালির মসজিদ

জেনির বড় মসজিদ (ফরাসি: Grande mosquée de Djenné, আরবি: الجامع الكبير في جينيه) একটি সুবিশাল ঐতিহ্যবাহী মাটির স্থাপনা যাকে সমসাময়িক স্থপতিরা সুদানো-সাহেলীয় স্থাপত্যের একটি অনুপম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করছেন। আফ্রিকান দেশ মালির জেনি শহরে এর অবস্থান। বানি নদীর তীরবর্তী বন্যাপ্রবন সমতল ভূমিতে এটি দাড়িয়ে আছে। ১৩শ শতাব্দিতে এই যায়গায় প্রথম মসজিদ তৈরী হলেও বর্তমানে যে কাঠামো দেখা যায় তা আসলে ১৯০৭ সাল থেকে চলমান। জেনির শহরের কেন্দ্র হবার পাশাপাশি এই মাটির মসজিদ সমগ্র আফিকার জন্যই অন্যতম জনপ্রিয় ল্যান্ডমার্ক। ইউনেস্কো ১৯৮৮ সালে এটিকে জেনির পুরাতন শহর সহকারে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

জেনির বড় মসজিদ
Grande mosquée de Djenné
الجامع الكبير في جينيه
মসজিদের মিনার ত্রয়ী।মানচিত্র
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
অবস্থাব্যবহৃত
অবস্থান
অবস্থানজেনি, মোপ্তি, মালি
স্থানাঙ্ক১৩°৫৪′১৯″ উত্তর ৪°৩৩′২০″ পশ্চিম / ১৩.৯০৫২৮° উত্তর ৪.৫৫৫৫৬° পশ্চিম / 13.90528; -4.55556
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীসুদানো-সাহেলীয় স্থাপত্য
সম্পূর্ণ হয়১৯০৭
বিনির্দেশ
উচ্চতা (সর্বোচ্চ)১৬ মিটার (৫২ ফু)
মিনার
উপাদানসমূহAdobe

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রথম মসজিদ

 
ফরাসী ডাকটিকেটে পুরাতন জেনি মসজিদের ছবি।(১৯০০)

জেনিতে প্রথম মসজিদ নির্মাণের তারিখ অজানা। তবে ধারণা করা হয় সময়টা ১২০০ সাল থেকে ১৩০০ সালের মধ্যে হবে।[১]. আবদ আল সাদী তার ইতিহাস গ্রন্থ তারিখ আর সুদানে স্থানীয় অধিবাসীদের ভাষ্যে মসজিদের প্রাথমিক ইতিহাস উল্লেখ করেন। সেখানে বলা হয় জেনির শাসক কানবুরু ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার নিজ বাসভবন ত্যাগ করে সেটাকে মসজিদে রুপান্তর করেন। নিজের থাকার জন্য তিনি মসজিদের পূর্ব পাশে আরেকটি প্রাসাদ নির্মাণের করেন।[২] মসজিদের চতুরদিকের দেয়ালও তিনি নির্মাণ করেন তবে পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা মসজিদের দুটো মিনার সংযোজন করেন।[৩] ফরাসী পর্যটক রেনে ক্যালি ১৮২৮ সালে জেনি মসজিদ পরিদর্শন করে লেখেন “জেনিতে একটি মাটির তৈরী মসজিদ আছে যা দুটো অনুচ্চ মিনারে ঘেরা। যদিও অনেক বড় তবে অমসৃন ভাবে নির্মিত। হাজারো চড়ুই সেখানে বাসা বেধেছে। একটা অসহ্য দূর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে আর সে কারণে সাধারনত মসজিদের বাহিরে ছোট উঠোনেই সবাই নামাজ পড়ে থাকে।"[৪]

সেকু আমাদুর মসজিদ সম্পাদনা

 
দক্ষিণ পশ্চিম কর্নার থেকে সেকু আমাদুর মসজিদের দৃশ্য। (১৯৮৫) From Félix Dubois' Tombouctou la Mystérieuse.

রেনে ক্যালির ভ্রমণের দশ বছর আগে ফুলানী গোত্রের নেতা সেকু আমাদু তার অভিযান শুরু করেন এবং শহরটি অধিকার করেন। তিনি মসজিদটি সংস্কার না করে ফেলে রাখেন। এই ভগ্ন মসজিদের বর্ণনাই সম্ভবত রেনে ক্যালিলি তার লেখায় দিয়েছেন। সেকু আমাদু আশেপাশের আরো কিছু ছোট ছোট মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে একটি নতুন কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ করেন।[৫].পুরাতন মসজিদের অবস্থান থেকে একটু পূর্বে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে নির্মিত নতুন মসজিদটি বড় হলেও এতে কোন মিনার বা অলংকরন ছিলোনা। [৬]

লুইস আর্কিনার্ড (Louis Archinard) এর নেতৃত্বে ফরাসী বাহিনী ১৮৯৩ সালের এপ্রিলে জেনি শহর দখল করে। তার পরপরই ফরাসী সাংবাদিক ফেলিক্স দুবো (Félix Dubois') শহরটি ভ্রমণ করেন এবং আদি মসজিদের ভগ্নাবশেষের বিবরন দেন।[৭] তার পরিদর্শনের সময় ভগ্ন মসজিদের অভ্যন্তরভাগ একটি সমাধি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো।[৮] ১৮৯৭ সালে তার বই দ্য মিস্ট্রিয়াস টিম্বুকটুতে (Timbuktu the mysterious), মসজিদটি ধ্বংসের আগে এর অবয়ব কেমন ছিলো তার অনুমান ভিত্তিক কিছু ধারণা নকশা সংযোজন করেন।[৯]

বর্তমান মসজিদ সম্পাদনা

১৯০৬ সালে ফরাসী প্রশাসন জেনি মসজিদকে এর প্রথম অবস্থানে পুন:নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেকু আমাদুর মসজিদের যায়গায় ধর্মীয় বিদ্যালয় স্থাপন করে। ১৯০৭ সালে মসজিদের পুন:নির্মাণ সম্পন্ন হয়। জেনির রাজমিস্ত্রি সংঘের প্রধান ইসমাইলা ত্রাউরিকে নির্দেশ দেয়া হয় দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য। সেই সময়ের তোলা একটি ছবি[১] থেকে বোঝা যায় যে অন্তত কিছু বহি:দেয়ালকে এর আদি অবস্থানে বসানোর চেস্টা করা হয়েছে যদিও ভেতরের পিলারগুলির অবস্থান আগের মতো ছিলো কিনা বোঝা যায়নি।

 
২০০৩ সালে তোলা ছবিতে বর্তমান মসজিদ এবং সামনে সাপ্তাহিক বাজার

নতুন স্থাপনার ক্বিবলার দেয়ালে তিনটি বড় মিনারকে প্রতিসম অবস্থানে বসানো হয়। মসজিদের নতুন চেহারা কিছুটা ফরাসী ধাচের হয়েছে বলে বিতর্কও তৈরী হয়। [১]. ফেলিক্স দুবো (Félix Dubois') ১৯১০ সালে পুনরায় জেনি গমন করেন এবং নতুন চেহারার মসজিদ দেখে স্তম্ভিত হন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই অনাকাংখিত পরিবর্তনের দায়টা ফরাসী কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তায়। নতুন ভবনের দেয়ালে যে সূচালো কোন (cone) সংযোজন করা হয়েছে তা বারোক মন্দিরে স্রস্টার উদ্দেশ্যে নিবেদনের চিহ্ন প্রকাশ করে।[১০] তবে ভিন্নমত পোষন করেন জেন লুইস বার্গিও (Jean-Louis Bourgeois)। তার মতে কিছু অভ্যন্তরীন খিলান ছাড়া বাকী স্থাপনায় দৃশ্যত কোন ফরাসী প্রভাব নেই। এমনকি এ খিলানগুলোও প্রকৃতপক্ষে আফ্রিকান স্থাপত্য দ্বারা প্রভাবিত।[১১]

ফরাসী নৃ-তত্ববিদ মাইকেল লেইরি (Michel Leiris), ১৯৩১ সালে মালি ভ্রমণ করে বলেন নতুন যে মসজিদ হয়েছে তা দেখেই বোঝা যায় যে এটা ইউরোপিয়ানদের কাজ। তিনি আরো বলেন স্থানীয় জনগণ এত বিরক্ত যে এর পরিচ্ছন্নতা কাজে তাদের আগ্রহ নস্ট হয়ে গেছে। প্রয়োজনে শাস্তির ভয় দেখিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।[১২]

মসজিদের পূর্ব দেয়ালের সামনের খোলা চত্বরে দুটো সমাধি আছে। দক্ষিণের বড় সমাধি ১৮ শতাব্দীর বিখ্যাত ইমাম আমানি ইসমাইলিয়ার।[১৩] ফরাসী উপনিবেশিক শাসনামলে মসজিদের পূর্ব পাশে একটি পুকুর ছিলো যেটিকে পরে ভরাট করে মাঠ সম্প্রসারণ করা হয়। এখানে এখন সাপ্তাহিক বাজার অনুষ্ঠিত হয়।[১৪]

১৯৯৬ সালে ভোগ ম্যাগাজিন মসজিদের অভ্যন্তরে ফ্যাশন শো এর শ্যুটিং করে। তবে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মডেলদের সংক্ষিপ্ত পোষাকের ছবিতে স্থানীয় জনসাধারনের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এ ঘটনার সূত্র ধরে মসজিদে অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার সংকুচিত হয়ে পড়ে। .[১৫] ২০০৫ সালে সাহারা সিনেমায় এই মসজিদ প্রদর্শিত হয়।

ডিজাইন সম্পাদনা

 
১৯৯০ সালের ছবিতে জেনির বড় মসজিদের উত্তর-পূর্ব দৃশ্য। From Félix Dubois' Notre beau Niger.

জেনির বড় মসজিদের দেয়াল রোদে শুকানো মাটির ইটের তৈরী। বালু এবং মাটির সংমিশ্রনে তৈরী মশলাকে আস্তর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে মসৃন এবং নান্দনিক ভাব ফুটে ওঠে। মাটির দেয়াল শক্তিশালী করতে আফ্রিকান পাম গাছের কাঠামো ব্যবহার করা হয় যা তোরণ নামে পরিচিত। কাঠিগুলোর অংশবিশেষ দেয়াল থেকে বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে। ৬০ সেমি (২.০ ফু) বাৎসরিক সংস্কার কাজের সময়েে এই কাঠিগুলোকে স্ক্যাফোল্ডিং হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সিরামিকের অর্ধাকৃতির পাইপ ছাদ থেকে বের করা যাতে বৃস্টির পানির ধারা দেয়াল থেকে দূরে থাকে।[১৬]

মসজিদটি একটি ভিত্তির উপর অবস্থিত যার মাপ হচ্ছে ৭৫ মি × ৭৫ মি (২৪৬ ফু × ২৪৬ ফু)। বাজার এলাকার ভূমিতল থেকে ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) উচু ভিত্তির কারণে বন্যার হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়া সহজ হয়েছে। ছয়টি সিড়ি দিয়ে এই ভিত্তির উপরে ওঠা যায়। প্রধান প্রবেশ দরজা হচ্ছে মসজিদের উত্তর পাশে। মসজিদের বাহিরের দেয়াল পুরোপুরি সমকোনে নেই বলে নকশা অনেকটা ট্রাপিজিয়াম ধাচের মনে হবে।[১৭][১৮]

মসদিজের নামাজ ঘর পূর্বে অর্থাৎ কিবলা মক্কা নগরের দিকে ফেরানো। পূর্ব পাশে শহরের বাজার এলাকা তাই আড়ালে পড়ে গিয়েছে। তিনটি বড় বাক্স আকৃতির টা্ওয়ার বা মিনারের দ্বারা ক্বিবলাকে দেয়াল থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মাঝের মিনার ১৬মিটার উচু।[১৯] প্রত্যেকটি মিনারেরে একদম উপরে কোনাকৃতির পিনাকল।[২০] পূর্ব দেয়াল প্রায় ১ মিটার চওঢ়া এবং বাট্রেসের সাহায্যে মজবুত করা। এগুলোর উপরেও পিনাকল আছে। দেয়ালের কোনাগুলোও তোরন ও পিনাকল সমৃদ্ধ আয়তাকার বাট্রেস দ্বারা সাজানো।[১৩]

মুল নামাজ ঘরের মাপ হচ্ছে ২৬ বাই ৫০ মিটার (৮৫ বাই ১৬৪ ফু), মসজিদের সামনের অর্ধেক পরিসর এই ঘর। পাম গাছের কাঠির সমন্বয়ে তৈরী মাটির ছাদকে ধরে রাখার জন্য উত্তর দক্ষিণে প্রলম্বিত নয়টি অভ্যন্তরীন দেয়াল আছে যার মধ্যে সারি সারি কেন্দ্রমুখী খিলানের অবস্থান। খিলানের নিচের অংশ পিলারে পরিনত হয়েছে আবার উপরিভাগ একদম ছাদের সাথে গিয়ে মিশেছে যেন ছাদের ওজন নিতে পারে।[২১] এভাবে ভিতরে ৯০টি পিলারের সমাবেশ ঘটেছে। এত সংখ্যক পিলারের কারণে ভিতরের পরিসরের দৃশ্যমানতা কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ দেয়ালে অনিয়মিত এবং ছোট আকারের জানালার কারণে ভিতর পরিসরে খুব বেশি আলোর প্রবেশ সম্ভব হয়না। মসজিদের মেঝে এখনো বালূ মাটির রয়ে গেছে।[২২]

 
দেয়াল থেকে বের হয়ে থাকা কাঠি বাহ্যিক অলংকরন এবং একই সাথে বছরে শেষে রক্ষনাবেক্ষন ও মেরামত কাজের সময় স্ক্যাফোল্ডিং হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

নামাজ ঘরের তিনটি মিনারই মেহরাব সমৃদ্ধ। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় অবস্থানে থাকা মেহরাবে ইমাম নামাজের জন্য দাড়ান। মেহরাবের ছাদের একটি সরু ফাঁকা দিয়ে মেহরাবের মিনারের উপর তলায় একটি ছোট রুমের সাথে সংযোগ তৈরী করা হয়। কেন্দ্রীয় মেহরাবের ডানপাশের অপেক্ষাকৃত ছোট মিনারে মিম্বর অবস্থিত যেখানে দাড়িয়েে ইমাম শুক্রবারের খুতবা দেন।[১৩]

ক্বিবলা দেয়ালে থাকা মিনারগুলোতে কোন সিড়ি নেই। অন্য দিকে থাকা দুটো মিনারের ভিতর দিয়ে সিড়ি উঠে গিয়েছে ছাদে। এদের মধ্যে একটি নামাজ ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে এবং অপরটি উত্তর পাশে প্রবেশ দরজার পাশে অবস্থিত। দ্বিতীয় সিড়ি সরাসরি বাইরে থেকে ব্যবহার করা যায়। বায়ু নিস্কাশনের জন্য ছাদে ছোট ছোট কিছু ছিদ্র আছে যা মাটির হাড়ি দ্বারা ঢেকে রাখা হয় এবং যখন সরিয়ে দেয়া হয় তখন গরম বাতাস বের করে ভিতরের পরিসরকে আরামদায়ক করে তোলে। নামাজ ঘরের পশ্চিমে অন্ত:স্থ উঠোনের দৈর্ঘ ২০ মিটা এবং প্রস্থ ৪৬ মিটার। তিন দিক ঘেরা গ্যালারির দেয়ালে খিলান সমৃদ্ধ জানালা। পশ্চিমের গ্যালারী মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।[২৩]

যদিও এটি নিয়মিত সংস্কার করা হয় তবু সেই ১৯০৭ সালে তৈরী হওয়া বহি:দেয়ালে খুব সামান্যই পরিবর্তন এসেছে শুধুমাত্র মেহরাব সংযোজন ছাড়া। মুল মসজিদে মেহরাব বলতে দেয়াল থেকে একটু বাড়তি অংশ ছিলো। এটা দেখতে অনেকটা উত্তর দেয়ালে প্রধান গেটের খিলানের মতো মনে হতো। তোরণও ছিলো খুব অল্প যাতে কর্নার বার্টেস ছিলোনা।[২৪][২৫] ফলিক্স ডুবোর প্রকাশিত ছবিতেও দেখা যায় ১৯৯০ সালের দিকে দেয়ালে দুটো অতিরিক্ত তোরণ সারি যোগ করা হয়।[২৬]

সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পাদনা

 
মসজিদের উত্তর দেয়ালে অবস্থিত প্রধান দরজা

জেনির বড় মসজিদের রক্ষনাবেক্ষন কাজে পুরো জনপদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রতি বছরে একবার একটি ভিন্নধর্মী উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এইদিনে গান, খাওয়া দাওয়া, ইত্যাদিরও আয়োজন থাকে তবে মুল লক্ষ হচ্ছে বিগত বছরের তাপমাত্রা, আদ্রতার হ্রাসবৃদ্ধি, এবং বৃস্টি ও প্রাকৃতিক কারণে যে স্বাভাবিক ক্ষয় বা ফাটল হয়েছে সেটাকে মেরামত করা। কাজের শুরুতে প্রথমে আস্তর তৈরী করা হয়। কয়েকদিন সময় লাগে এটা ব্যবহার উপযোগী হতে। এরপরে পর্যায়ক্রমে অল্প অল্প করে দেয়ালের গায়ে লাগাতে হয়। সাধারনত যুবক শ্রেণীর কাধে এই দ্বায়িত্ব চাপে। মসজিদের দেয়ালে বের হয়ে থাকা কাঠিতে চড়ে এই কাজ সম্পন্ন হয়।

যারা নিচে থাকে তাদের কাজ হচ্ছে এই মসলা আস্তর বহন করে প্রথম লোকদের কাছে পৌছে দেয়া। কাজটাকে আনন্দমুখর করার জন্য দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় যেন কে কার আগে মসলা আস্তর নিয়ে মসজিদের কাছে পৌছাতে পারে। মহিলা এবং শিশুরা পানি বহন করে। মসজিদ পরিচালনার সাথে যুক্ত দ্বায়িত্বশীলরা সার্বিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বয়স্ক শ্রেনীর মানুষ যারা একসময় এ কাজে অংশ গ্রহণ করতো তারাও উপস্থিত থাকে এই উৎসবমুখর কাজের দর্শক হয়ে।

১৯৩০ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের ফ্রেজুস (Fréjus) শহরে জেনি মসজিদের একটি বাস্তব প্রতিলিপি তৈরী হয়। Mosquée Missiri [fr],সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করে লাল রংয়ের আস্তর করে মুল মসজিদের সাথে সাদৃশ্য আনা হয়। ধারণা করা হয় শীতকালীন মহড়া উপলক্ষে যেসব পশ্চিম আফ্রিকান উপনিবেশিক সৈন্যকে এখানে অবস্থান করতে হতো তাদের নামাজের যায়গা হিসেবে এটি তৈরী করা হয়।

 
১৯৩০ সালে মসজিদের একটি প্রতিলিপি তৈরী করা হয় দক্ষিণ ফ্রান্সে।

মধ্যযুগে মুল মসজিদটি পরিচালিত হতো তখনকার সময়ের আফ্রিকার খুব গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক শিক্ষাকেন্দ্র কর্তৃক। সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী কোরআন অধ্যয়নের জন্য জেনির মাদ্রাসায় আসতো। ইউনেস্কো ১৯৮৮ সালে জেনির বড় মসজিদ সহ পুরো জেনি শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। জেনিতে আরো কিছু পুরাতন ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আছে তবে বড় মসজিদই জেনি শহরের এবং সমগ্র মালির জন্য পরিচয়বাহী।

২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারি একদল অচেনা মানুষদের পবিত্র মসজিদের ছাদে দেখে শহরের স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।[২৭][২৮] এই দলটি প্রকৃতপক্ষে আগা খান কালচারাল একাডেমির অর্থায়নে মসজিদের সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে ছাদ পরিদর্শন করছিলো । অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা দ্রুত নেমে যান। কিন্তু এই সুযোগে আমেরিকান দূতাবাস কর্তৃক উপহার দেয়া মসজিদের পাখাগুলোে একদল দুস্কৃতিকারী খুলে নিয়ে শহরে পালিয়ে যায়। উত্তেজিত জনগণ সাংস্কৃতিক দলকে সামনে পেয়ে তাদেরকে দোষী মনে করে। তারা সাংস্কৃতিক মিশন ও শহরের মেয়রের বাসভবনে হামলা করে এবং মসজিদের ইমাম ও তার ভাইয়ের চারটি গাড়ি ভাংচুর করে। স্থানীয় পুলিশ এসে শক্তি প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় ততক্ষনে একজন মারা যায়।[২৯]

২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার কিবলা দেয়ালের দক্ষিণ মিনারের উপরের অংশ দিনব্যাপী ৭৫ মিঃমিঃ (৩ ইঞ্চি) প্রবল বৃস্টির কারণে ভেঙে পড়ে।[৩০] আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার টাওয়ারের পুন:নির্মাণের জন্য সহায়তা প্রদান করে।

মালির জাতীয় প্রতীকে জেনি মসজিদ স্থান পেয়েছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bourgeois 1987
  2. Hunwick 1999, পৃ. 18
  3. Hunwick 1999, পৃ. 20
  4. Caillié 1830, পৃ. 460, Vol. 1
  5. Bourgeois 1987, পৃ. 55।
  6. Engraving from photo in (Dubois 1896, পৃ. 164)
  7. Dubois 1896, পৃ. 154
  8. Dubois 1896, পৃ. 162
  9. Dubois 1896, পৃ. 155
  10. Dubois 1911, পৃ. 189; Dubois's French text is quoted in Bedaux, Diaby এবং Maas 2003, পৃ. 16
  11. Bourgeois 1987, পৃ. 58
  12. Leiris, Michel (২০০৭)। A África Fantasma। São Paulo: Cosac naify। পৃষ্ঠা 154, 155। আইএসবিএন 9788575036563 
  13. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 112
  14. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 159
  15. 25 Simply Amazing Mosques – International Listings Blog
  16. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 111–117. A short illustrated article in English by the same author is: Maas, Pierre (১৯৯০), "Djenné: Living Tradition", Saudi Aramco World, Nov/Dec: 18–29, ৩ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা .
  17. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 112; Figure 7.2 is a plan of the mosque.
  18. Bedaux, Diaby এবং Maas 2003, পৃ. 170
  19. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 113, 117 Figs. 7.3 and 7.4।
  20. Bourgeois 1987, পৃ. 60
  21. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 115. A photograph by Amir-Massoud Anoushfar showing the arches in the prayer hall is available on the ArchNet site
  22. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 114
  23. Maas ও Mommersteeg 1992, পৃ. 115
  24. Dubois 1911, পৃ. 187, includes a picture of the new mosque as it looked in 1910; Bedaux, Diaby এবং Maas 2003, পৃ. 16, reproduces Dubois's picture; Gardi, Maas এবং Mommersteeg 1995, পৃ. 162, includes a photograph taken before 1914.
  25. Sanogo ও Fané 2008, পৃ. 44 Fig. 14 reproduces the 1911 Dubois picture and is available online.
  26. Bedaux, Diaby এবং Maas 2003, পৃ. 56
  27. Informations n° 21, automne 2006: Graves incidents à Djenné le 20 septembre 2006, Djenné Patrimoine, ২০০৬, ২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০ 
  28. DJENNE : Les travaux de la mosquée provoquent des émeutes, MaliWeb, ২০০৬, ২৯ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০ 
  29. la rénovation contestée de la mosquée de Djenné : Un homme trouve la mort dans les émeutes, Afribone, ২০০৬, ২২ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০ 
  30. Djenné : Une tour de la Mosquée s'effondre, Maliweb, ২০০৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা ; Restoration works continue despite violent storms at the Great Mosque of Djenné, UNESCO World Heritage News Archive, ২০০৯