জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ

জীবভৌগোলিক অঞ্চল বা ইকোজোন (পরিবেশমন্ডল) হ'ল স্থলজ জীবসমূহের বিস্তার-বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি, পৃথিবীর স্থলভাগ-এর বিস্তৃত জীবভৌগোলিক বিভাগ। এগুলি আবার ইকোরিজিয়ন-এ বিভক্ত, যা তাদের বায়োম বা আবাসের ধরনের ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

৮ টি জীবভৌগোলিক অঞ্চলের ৬ টি
  ওশেনীয়া এবং কুমেরু দেখানো হয়নি

জীবভৌগোলিক অঞ্চল হ'ল পৃথিবীর পৃষ্ঠের এক একটি বৃহত্তর অংশ, যার মধ্যে জীবগুলি দীর্ঘ সময় ধরে আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতায় বিবর্তিত হয়ে আসছে। আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতা হয় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা। যেমন মহাসাগর, বিস্তীর্ণ মরুভূমি বা উচ্চ পর্বতমালার সীমা, যারা অভিবাসনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। একই রকমের সাধারণ জীবভূগোলের উপর ভিত্তি করে, সজীব উপাদানগুলিকে সাধারণভাবে ভাগ করে, এই রকম জীবভৌগোলিক অঞ্চল নির্ধারণ করা হয়। উদ্ভিদবিদ্যার ফ্লোরিস্টিক রাজ্য সংক্রান্ত এবং প্রাণিবিদ্যার প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল অঞ্চল সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে জীবভৌগোলিক অঞ্চল সম্পর্কযুক্ত।

জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহকে তাদের মধ্যে থাকা জীবের বিবর্তনের ইতিহাস দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এগুলি বায়োম-সমূহের থেকে আলাদা। বায়োমসমূহ একই ধরনের ক্লাইম্যাক্স ভেজিটেশন (চূড়ান্ত উদ্ভিদকুল) হিসাবে চিহ্নিত হয়। প্রতিটি জীবভৌগোলিক অঞ্চলে থাকতে পারে বিভিন্ন বায়োম। যেমন, মধ্য আমেরিকার ক্রান্তীয় আর্দ্র বড়পাতার অরণ্যকে, নিউ গিনির গাছপালার ধরন এবং কাঠামো, জলবায়ু, মৃত্তিকা ইত্যাদির সঙ্গে একই রকম ঠেকতে পারে। কিন্তু এই অরণ্যগুলিতে প্রাণী, ছত্রাক, অণুজীব এবং খুব আলাদা বিবর্তনীয় ইতিহাস-সহ উদ্ভিদ রয়েছে।

প্লেট টেকটোনিক্স-এর কারণে, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস জুড়ে বিশ্বের স্থলভাগের পুনরায় বণ্টন হয়েছিল। বিশ্বের জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহে জীবিত প্রাণীদের বণ্টনের একটি রূপরেখাও লাভ করেছিল এই প্লেট টেকটোনিক্সের কারণে।

ধারণার ইতিহাস সম্পাদনা

ট্যাক্সোনমিক রচনার উপর ভিত্তি করে ইউভার্ডির (১৯৭৫) "জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ"টি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল। মর্যাদাক্রমে ফ্লোরিস্টিক রাজ্য এবং প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল অঞ্চল-এর সাথে সেটি কমবেশি মিলে যায়।

"ইকোজোন" শব্দটির ব্যবহার আরও পরিবর্তনশীল। এটি স্তরবিন্যাস-এ মূলত ব্যবহৃত হয়েছিল (ভেলা ১৯৬২, হেডবার্গ ১৯৭১)। কানাডিয়ান সাহিত্যে শব্দটি উইকেন (১৯৮৬) ম্যাক্রো স্তরের জমি শ্রেণিবিন্যাস-এ ভৌগোলিক মানদণ্ড হিসাবে (দেখুন কানাডার ইকোজোন) ব্যবহার করেছিলেন (উইকেন ১৯৮৬, স্কট ১৯৯৫)। পরে, স্যুল্জ (১৯৮৮) একে পরিবেশ এবং শারীরবৃত্তীয় নির্ণায়ক মানদণ্ডের সাথে বায়োম ধারণার অনুরূপে ব্যবহার করেন।

গ্লোবাল ২০০/ডাব্লিউ.ডাব্লিউ.এফ. প্রকল্পে (ওলসন এবং ডিনারস্টেইন ১৯৯৮), ইউভার্ডির অর্থে মূল শব্দ "জীবভৌগোলিক অঞ্চল" ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে বিবিসি (এনডি)-র একটি প্রকল্পে পরিবর্তে "ইকোজোন" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

স্থলজ জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

ইউভার্ডি (১৯৭৫) জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

ডাব্লিউ.ডাব্লিউ.এফ / গ্লোবাল ২০০ জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ (বিবিসি "ইকোজোন") সম্পাদনা

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড প্রকল্পটির সঙ্গে (ওলসন এবং ডিনারস্টেইন ১৯৯৮, ওলসন এট আল. ২০০১) মিক্লোস ইউভার্দি (১৯৭৫) পদ্ধতির যথেষ্টই মিল রয়েছে। কেবল, মূল পার্থক্যটি রয়েছে অ্যান্টার্কটিক বা কুমেরু, মহাসাগরীয় এবং ইন্দো-মালয়ের সাথে সম্পর্কিত অস্ট্রেলেশীয়ান জীবভৌগোলিক অঞ্চলটির বর্ণনা ছাড়া। ডাব্লিউডাব্লিউএফ পদ্ধতিতে অস্ট্রেলেশীয়ার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, ওয়ালেসার দ্বীপপুঞ্জ, নিউ গিনি, পূর্ব মেলানেশীয় দ্বীপপুঞ্জ, নিউ ক্যালেডোনিয়া, এবং নিউজিল্যান্ড। ইউভার্ডি অস্ট্রেলেশীয়া জীবভৌগোলিক অঞ্চলে কেবল অস্ট্রেলিয়া এবং তাসমানিয়া অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি ওয়ালেসাকে ইন্দো-মালয় জীবভৌগোলিক অঞ্চলে; নিউ গিনি, নিউ ক্যালেডোনিয়া এবং পূর্ব মেলানেশিয়াকে ওশেনীয়া অঞ্চলে এবং অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছেন।

জীবভৌগোলিক
অঞ্চল
আয়তন মন্তব্য
লক্ষ বর্গকিলোমিটার লক্ষ বর্গমাইল
প্যালিআর্কটিক ৫৪.১ ২০.৯ ইউরেশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার প্রচুর অংশ সহ
নিআর্কটিক ২২.৯ ৮.৮ উত্তর আমেরিকার বেশিরভাগ অংশ সহ।
আফ্রোট্রপিক ২২.১ ৮.৫ ট্রান্স-সাহারান আফ্রিকাআরব সহ।
নিওট্রপিক ১৯.০ ৭.৩ দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, এবং ক্যারিবিয়ান সহ।
অস্ট্রেলেশীয়া ৭.৬ ২.৯ অস্ট্রেলিয়া, নিউ গিনি, নিউজিল্যান্ড, এবং পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলি সহ। এই জোনের উত্তর সীমানা ওয়ালেস লাইন হিসাবে পরিচিত।
ইন্দো-মালয় ৭.৫ ২.৯ ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, এবং দক্ষিণ চীন সহ
ওশেনীয়া ১.০ ০.৩৯ পলিনেশিয়া (নিউজিল্যান্ড বাদে), মাইক্রোনেশিয়া, এবং ফিজিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সহ।
অ্যান্টার্কটিক বা কুমেরু ০.৩ ০.১২ অ্যান্টার্কটিকা সহ

প্যালিআর্কটিক এবং নিআর্কটিক কখনও কখনও হোলআর্কটিক জীবভৌগোলিক অঞ্চল-এ বিভক্ত হয়।

মোরনে (২০১৫) জীবভৌগোলিক রাজ্য সম্পাদনা

মোরনে (২০১৫) সংজ্ঞায়িত নিম্নলিখিত নামকরণ-রীতি পরবর্তী জীবভৌগোলিক রাজ্যসমূহ এবং অঞ্চলসমূহে অনুসৃত হবে বলে ইন্টারন্যাশনাল কোড অফ এরিয়া নোমেনক্লেচার স্থির করেছে:

  • হলোআর্কটিক রাজ্য হেইলপ্রিন (১৮৮৭)
    • নিআর্কটিক অঞ্চল স্ক্লাটার (১৮৫৮)
    • প্যালিআর্কটিক অঞ্চল স্ক্লাটার (১৮৫৮)
  • হোলোট্রপিকাল রাজ্য রাপোপোর্ট (১৯৬৮)
    • নিওপট্রিকাল অঞ্চল স্ক্লাটার (১৮৫৮)
    • ইথিওপীয় অঞ্চল স্ক্লাটার (১৮৫৮)
    • প্রাচ্য অঞ্চল ওয়ালেস (১৮৭৬)
  • অস্ট্রেলিয়ান রাজ্য এঙ্গলার (১৮৯৯)
    • কেপ অঞ্চল গ্রিসেনবাচ (১৮৭২)
    • অ্যান্ডিয়ান অঞ্চল এঙ্গলার (১৮৮২)
    • অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চল স্ক্লাটার (১৮৫৮)
    • অ্যান্টার্কটিক অঞ্চল গ্রিসেনবাচ (১৮৭২)
  • ট্রানজিশন অঞ্চল:
    • মেক্সিকান ট্রানজিশন মন্ডল (নিআর্কটিক–নিওপট্রিকাল ট্রানজিশন)
    • সাহারো-আরবীয় ট্রানজিশন অঞ্চল (প্যালিআর্কটিক–ইথিওপিয়ান ট্রানজিশন)
    • চাইনিজ ট্রানজিশন মন্ডল (প্যালিআর্কটিক-ওরিয়েন্টাল ট্রানজিশন জোন ট্রানজিশন)
    • ইন্দো-মালয়ান, ইন্দোনেশিয়ান বা ওয়ালেসের ট্রানজিশন মন্ডল (ওরিয়েন্টাল-অস্ট্রেলিয়ান ট্রানজিশন)
    • দক্ষিণ আমেরিকান ট্রানজিশন মন্ডল (নিওপট্রিকাল–অ্যানন্ডিয়ান ট্রানজিশন)

স্বাদুজলের জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

 
প্রধান মহাদেশীয় বিভাজন, বিশ্বের প্রধান মহাসাগর এবং সমুদ্রে নিকাশী দেখানো হচ্ছে - ধূসর অংশ এন্ডোরহিক বা অন্তর্নিহিত অববাহিকা যার নিকাশী সমুদ্রের দিকে হয় না

বেশিরভাগ স্বাদুজলের ট্যাক্সায় ইউভার্ডি (১৯৭৫) পরিকল্পনার প্রয়োগযোগ্যতা সমাধান করা যায়নি (অবেল এট আল. ২০০)।

মহাদেশীয় বিভাজন দ্বারা বিশ্বের প্রধান মহাসাগর এবং সমুদ্রে নিকাশী অববাহিকা চিহ্নিত করা যায়। ধূসর অঞ্চলগুলি এন্ডোরহিক বা অন্তর্নিহিত অববাহিকা, যাদের নিকাশী সমুদ্রের দিকে হয় না।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

সামুদ্রিক জীবভৌগোলিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

ব্রিগস (১৯৯৫) এবং মোরোন (২০০৯) এর মতে:

  • ইন্দো-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
  • পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল
  • পশ্চিম আটলান্টিক অঞ্চল
  • পূর্ব আটলান্টিক অঞ্চল
  • দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় অঞ্চল
  • উত্তর নিউজিল্যান্ড অঞ্চল
  • পশ্চিম দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল
  • পূর্ব দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল
  • দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চল
  • ভূমধ্যসাগর – আটলান্টিক অঞ্চল
  • ক্যারোলিনা অঞ্চল
  • ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চল
  • জাপান অঞ্চল
  • তাসমানিয়ান অঞ্চল
  • দক্ষিণ নিউজিল্যান্ড অঞ্চল
  • অ্যান্টিপোডিয়ান অঞ্চল
  • সাব্যানর্টারটিক অঞ্চল
  • ম্যাগেলান অঞ্চল
  • পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় বোরিয়াল অঞ্চল
  • পশ্চিম আটলান্টিক বোরিয়াল অঞ্চল
  • পূর্ব আটলান্টিক বোরিয়াল অঞ্চল
  • কুমেরু অঞ্চল
  • সুমেরু অঞ্চলের

ডাব্লিউডাব্লিউএফ প্রকল্প অনুযায়ী (স্প্ল্যাডিং, ২০০৭):


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • Abell, R., M. Thieme, C. Revenga, M. Bryer, M. Kottelat, N. Bogutskaya, B. Coad, N. Mandrak, S. Contreras-Balderas, W. Bussing, M. L. J. Stiassny, P. Skelton, G. R. Allen, P. Unmack, A. Naseka, R. Ng, N. Sindorf, J. Robertson, E. Armijo, J. Higgins, T. J. Heibel, E. Wikramanayake, D. Olson, H. L. Lopez, R. E. d. Reis, J. G. Lundberg, M. H. Sabaj Perez, and P. Petry. (2008). Freshwater ecoregions of the world: A new map of biogeographic units for freshwater biodiversity conservation. BioScience 58:403-414, [১].
  • "Ecozones"BBC Nature। n.d.। ১০ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  • Briggs, J.C. (1995). Global Biogeography. Amsterdam: Elsevier.
  • Morrone, J. J. (2009). Evolutionary biogeography, an integrative approach with case studies. Columbia University Press, New York, [২].
  • Morrone, J. J. (2015). Biogeographical regionalisation of the world: a reappraisal. Australian Systematic Botany 28: 81-90, [৩].
  • Olson, D. M. & E. Dinerstein (1998). The Global 200: A representation approach to conserving the Earth’s most biologically valuable ecoregions. Conservation Biol. 12:502–515, [৪].
  • Olson, D. M., Dinerstein, E., Wikramanayake, E. D., Burgess, N. D., Powell, G. V. N., Underwood, E. C., D'Amico, J. A., Itoua, I., Strand, H. E., Morrison, J. C., Loucks, C. J., Allnutt, T. F., Ricketts, T. H., Kura, Y., Lamoreux, J. F., Wettengel, W. W., Hedao, P., Kassem, K. R. (2001). Terrestrial ecoregions of the world: a new map of life on Earth. Bioscience 51(11):933-938, [৫].
  • Schültz, J. Die Ökozonen der Erde, 1st ed., Ulmer, Stuttgart, Germany, 1988, 488 pp.; 2nd ed., 1995, 535 pp.; 3rd ed., 2002. Transl.: The Ecozones of the World: The Ecological Divisions of the Geosphere. Berlin: Springer-Verlag, 1995; 2nd ed., 2005, [৬].
  • Scott, G. 1995. Canada's vegetation: a world perspective, p., [৭].
  • Spalding, M. D. et al. (2007). Marine ecoregions of the world: a bioregionalization of coastal and shelf areas. BioScience 57: 573-583, [৮].
  • Udvardy, M. D. F. (1975). A classification of the biogeographical provinces of the world. IUCN Occasional Paper no. 18. Morges, Switzerland: IUCN, [৯].
  • Wicken, E. B. 1986. Terrestrial ecozones of Canada / Écozones terrestres du Canada. Environment Canada. Ecological Land Classification Series No. 19. Lands Directorate, Ottawa. 26 pp., [১০] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে.