জনাথন জোসেফ জেমস ওরফে কমরেড (১২ ডিসেম্বর ১৯৮৩ - ১৮ মে ২০০৮) ছিলেন একজন বিশ্বখ্যাত আমেরিকান হ্যাকার এবং সবচেয়ে কমবয়সী কিশোর যিনি ১৬ বছর বয়সেই সাইবার অপরাধের সাথে লিপ্ত হয়ে জেলে গিয়েছিলেন।[১][২] দক্ষিণ ফ্লোরিডায় বেড়ে ওঠা জেমস তার জীবনের প্রথম হ্যাকিং সম্পন্ন করেন ১৫ বছর বয়েসে। তিনি মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ২০০৮ সালের ১৮ই মে তার বাবার বন্দুক দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।[৩][৪]

জনাথন জোসেফ জেমস
জন্ম১২ ডিসেম্বর, ১৯৮৩
মৃত্যু১৮ মে, ২০০৮
জাতীয়তাআমেরিকান
অন্যান্য নামকমরেড
পরিচিতির কারণহ্যাকিং

শৈশব সম্পাদনা

তের বছর বয়সে একবার ছেলের কম্পিউটারের নেশা মাত্রা ছাড়াচ্ছে দেখে তার কম্পিউটার জব্দ করেন বাবা রবার্ট জেমস। বাড়ি থেকে পালিয়ে যান জন, রাস্তার মোড় থেকে টেলিফোনে হুমকি দেন– আর বাড়ি ফিরবেন না যদি কম্পিউটার ফেরত না দেয়া হয়। মৃত্যুর পর ছেলের স্মৃতিচারণ করতে করতে বাবা রবার্ট জেমস বলেন, "So, yeah, he kind of liked computers." ।

মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করেন জেমস, জানতেন ইউনিক্স আর সি প্রোগ্রামিং ভাষা। কম্পিউটার ক্লাসের পাশাপাশি আন্তর্জালে ঘুরে শিখতেন তিনি। আর এ বিদ্যার উপর ভর করেই এক বছরের মাথায় হ্যাক করেন নাসা আর প্রতিরক্ষা বিভাগের সাইট। হ্যাকার কমিউনিটিতে তিনি কমরেড জন নামেও বহুল পরিচিত।

হ্যাকিং সম্পাদনা

১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে জেমস তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে ভাইরাস সম্পর্কে তার চিন্তা শক্তিকে অনেক দূর নিয়ে যান।[৫] এমনকি তিনি তখন মাত্র ১৫ বছর বয়সে বেল-সাউথ, মিয়ামি ডেড, আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং নাসার ওয়েব সাইট হ্যাক করেন। এছাড়াও তিনি ব্যাকডোর কম্পিউটিং এর মাধ্যমে ডালাস এবং ভিরজিনার সার্ভারে একটি স্নিফার ইন্সটল করেন। যার মাধ্যমে তিনি ওই সব স্থানের প্রায় তিন হাজার তথ্য চুরি করেন। যার মধ্যে ছিল ওই এলাকা গুলোর সকল চাকুরীজিবিদের তথ্য, এমন কি কমপক্ষে ১০ টি অফিশিয়াল মিলিটারী কম্পিউটারের তথ্য। ফলে জেমসকে জেলেও যেতে হয়।[২]

জেমস নাসার ওয়েব সাইট হ্যাক করেন এবং সেখান থেকে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান মূল্যের একটি সফটওয়্যারের সোর্সকোড ডাউনলোড করেন। নাসার মতে, জেমস যে সফটওয়্যারগুলো চুরি করেছিল সেগুলো দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জেমস নাসার ওয়েবসাইটে যে ক্ষতি করেছিলেন সেটি ঠিক করতে নাসার ওয়েবসাইট তিন সপ্তাহ বন্ধ রাখতে হয়।[৬] অপরদিকে এটি ঠিক করতে নাসাকে গুণতে হয় প্রায় আরো লক্ষাধিক ডলার।[৭]

গ্রেপ্তার, দোষী সাব্যস্ত এবং শাস্তি সম্পাদনা

প্রতিরক্ষা দপ্তর, নাসা এবং স্থানীয় পুলিশ থেকে এজেন্টদের একটি দল ২০০০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে আনুমানিক সকাল ৬টায় জেমসের বাড়িতে অভিযান চালায়। এরপর ২০০০ সালের অক্টোবর মাসে তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। মুক্তির পর তাকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কড়া নজরদারিতে রাখা হয় এবং নাসা ও প্রতিরক্ষা দপ্তর এর কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখতে হয়েছিল। এসময় তার কম্পিউটার ব্যবহারের উপরেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।[৮]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০০৭ সালে টিজেএক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে বেশ বড় একটা হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটে। যার ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যায়। এছাড়াও বস্টন মার্কেট, বার্নেস এয়ান্ড নোবেল, স্পোর্টস অথরিটি, ফরেভার-২১, অফিস ম্যাক্স এবং ডেভ বাস্টার্সসহ আরো কিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটে।

যদিও জেমস অস্বীকার করেন যে, তিনি এগুলোর সঙ্গে জড়িত নন, তবুও তাকে বিভিন্ন তদন্তের সম্মুখীন হতে হয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের তদন্তের মাধ্যমে দেখেন যে এই ঘটনাতে জে.জে. নামে অন্য একজন জড়িত। নামের সাথে মিলে যাওয়াতে জেমস তাদের প্রধান লক্ষ্যতে পরিণত হন। এরপর ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল জেমসের মৃতদেহ তার বাথরুমে পাওয়া যায়। তিনি তার বাবার বন্দুক দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। হ্যাকিং করার এই ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আর কোন উপায় না পেয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন এবং মৃত্যুর অগে এই নোট রেখে যান,

I honestly, honestly had nothing to do with TJX, I have no faith in the 'justice' system. Perhaps my actions today, and this letter, will send a stronger message to the public. Either way, I have lost control over this situation, and this is my only way to regain control.'[৪]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "who is Jonathan James"। pucore.moonfruit.fr। ২০১৩-০৭-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-০১ 
  2. Newton, Michael (২০০৪)। The Encyclopedia of High-Tech Crime and Crime-Fighting। Checkmark Books, an imprint of Facts on File Inc.। আইএসবিএন 0-8160-4979-3 
  3. "Obituary: Jonathan Joseph James" (The Miami Herald ভাষায়)। ২০০৮-০৫-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-১৩ 
  4. Poulsen, Kevin (২০০৯-০৭-০৯)। "Former Teen Hacker's Suicide Linked to TJX Probe"। Wired (magazine)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৩-১৩ 
  5. Grossman, M. "Computer crime: Changing the public's perception" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে. The Miami Herald, October 12, 2000.
  6. "15-Year-Old Admits Hacking NASA Computers"। এবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-১২ 
  7. Harrison, L. "Bedroom NASA hacker set to bite pillow in choky". The Register
  8. Lynch, I. "Nasa hacker gets six months downtime". Information World Review, November 21, 2000. Retrieved March 13, 2013.