জগদানন্দ রায়

বাঙালি লেখক

জগদানন্দ রায় (১৮ই সেপ্টেম্বর ১৮৬৯-২৫শে জুন ১৯৩৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক। তিনি শুক্র ভ্রমণ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক গ্রন্থ রচনার জন্যই মূলত তাকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক সাহিত্য চর্চার অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। তার এই বইটি ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাসবিদদের জন্য বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে।

জগদানন্দ রায়
জন্ম(১৮৬৯-০৯-১৮)১৮ সেপ্টেম্বর ১৮৬৯
কৃষ্ণনগর, নদীয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৫ জুন ১৯৩৩(1933-06-25) (বয়স ৬৩)
পেশাঅধ্যাপক, লেখক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
ধরনবিজ্ঞান কল্পকাহিনী
সাহিত্য আন্দোলনবাংলা রেনেসাঁ

জীবনী সম্পাদনা

জগদানন্দ জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের একটি অভিজাত ও অবস্থাপন্ন পরিবারে। তার পড়াশোনা শুরু হয় একটি স্থানীয় মিশনারি স্কুলে। তখন থেকেই তার মধ্যে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন মজার বিষয়ে লেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। এই আগ্রহের কারণে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশেষ দৃষ্টিতে পড়ে যান। রবীন্দ্রনাথ তখন সন্ধ্যা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখায় বিশেষ আগ্রহ বোধ করেন। জগদানন্দ যখন নিদারুণ ক্লেশের মধ্যে দিনাতিপাত করছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথ তাকে নিজের ভূ-সম্পত্তিতে একটি চাকরি জোগাড় করে দেন।

রবীন্দ্রনাথ জানতেন যে চাকরিটি জগদানন্দের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখা বই অন্য কিছু নয়। এ কারণে তিনি রায়কে নিজের ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ভার দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে যখন ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি জগদানন্দকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন একজন শিক্ষক হিসেবে। তিনি সেই স্কুলের প্রথম সর্বাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৩২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে কাজ করে গেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গণিত শিক্ষাদান শুরু করে জীবন কাটেন।

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

বিজ্ঞান জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু বই লিখেছিলেন। বৈজ্ঞানিক সত্যকে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার তাগিদেই তিনি লেখা শুরু করেন আর লেখার আদল ছিল অনেকটা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মত। এছাড়া বিজ্ঞান কল্পকাহিনী রচনাও শুরু করেন। তার শুক্র ভ্রমণ নামক গ্রন্থের বিষয় ছিল অন্য গ্রহে মানুষের ভ্রমণ কাহিনী। মানুষ অন্য গ্রহে যাতায়াতের মাধ্যমে ইউরেনাস গ্রহে ভিনগ্রহী জীবের সাক্ষাৎ লাভ করে। সেই ভিনগ্রহী জীবের বিবর্তনের সাথে আধুনিক বিবর্তনবাদী তত্ত্বের আশ্চর্য মিল লক্ষ্য করা যায়। ভিনগ্রহী জীবের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি যেসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন তা হল: তারা অনেকটা আমাদের পূর্বপুরুষ বানরদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের শরীর ঘন কালো পশমে ঢাকা, শরীরের তুলনায় মাথা অস্বাভাবিক রকমের মোটা, লম্বা লম্বা নখ রয়েছে এবং তারা সম্পূর্ণ নগ্ন। তার এই বর্ণনা প্রকাশিত হয় এইচ জি ওয়েল্‌সের বিখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস প্রকাশিত হওয়ারও আগে। এই বইয়েও এইচ জি ওয়েল্‌স মঙ্গল গ্রহে ভিনগ্রহী জীবের বর্ণনা দিয়েছিলেন।[১]

রচনাবলী সম্পাদনা

  • প্রকৃতি পরিচয় (১৩১৮ )
  • আচার্য জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার (১৩১৯)
  • বৈজ্ঞানিকী (১৩২০ )
  • প্রাকৃতিকী ( ১৩২১ )
  • জ্ঞানসোপান (১৩২১)
  • গ্রহণক্ষত্র ( ১৩২২ )
  • বিচিত্র সন্দর্ভ( ১৩২৪ )
  • সাহিত্য সন্দর্ভ ( ১৩২৪ )
  • সুকুমার পাঠ (১৩২৫ )
  • কনক পাঠ ( ১৩২৫ )
  • চয়ন (১৩২৬ )
  • পোকামাকড় (১৩২৬)
  • বিজ্ঞানের গল্প (১৩২৭)
  • গাছপালা (১৩২৮)
  • সাহিত্য সোপান (১৩২৯)
  • আদর্শ স্বাস্থ্যপাঠ (১৩৩০)
  • আদর্শ কাহিনী ( ১৩৩০)
  • মাছ,ব্যঙ,সাপ (১৩৩০)
  • বাংলার পাখী (১৩৩১)
  • শব্দ (১৩৩১)
  • পাখী (১৩৩১ )
  • বিজ্ঞান-প্রবেশ (১৩৩২)
  • বিজ্ঞান-পরিচয় (১৩৩২)
  • আলো (১৩৩৩)
  • গদ্য ও পদ্য (১৩৩৩)
  • সাহিত্য সৌরভ (১৩৩৩)
  • সঞ্চয়ন (১৩৩৩)
  • বিজ্ঞান-প্রকাশ (১৩৩৩ )
  • স্থির বিদ্যুৎ (১৩৩৫)
  • চুম্বক (১৩৩৫)
  • তাপ (এলাহাবাদ, ১৩৩৫)
  • চল বিদ্যুৎ (১৩৩৬)
  • পর্যবেক্ষণ শিক্ষা (১৩৩৮)
  • নক্ষত্র চেনা ( ১৯৩১)

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sengupta, Debjani (২০০৩)। "Sadhanbabu's Friends. Science Fiction in Bengal from 1882-1961" (পিডিএফ)Sarai Reader: 76–82। ২০০৭-০৭-১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা