ছিটমহল ও এক্সক্লেভ

(ছিটমহল থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ছিটমহল বা এনক্লেভ হলো একটি অঞ্চল যা সম্পূর্ণভাবে অন্য রাষ্ট্র বা সত্ত্বা দ্বারা আবদ্ধ।[১] আঞ্চলিক পানির মধ্যেও ছিটমহল থাকতে পারে।[২]:৬০ ছিটমহল শব্দটি কখনো কখনো অন্য রাষ্ট্র দ্বারা কেবল আংশিকভাবে আবদ্ধ অঞ্চলকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।[১] সম্পূর্ণভাবে ছিটমহলিকৃত সার্বভৌম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিসান মারিনো, ইতালি দ্বারা ছিটমহলিকৃত, এবং লেসোথো, দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা ছিটমহলিকৃত।

C হলো A-র ছিটমহল এবং B-এর এক্সক্লেভ।
C হলো B-এর এক্সক্লেভ কিন্তু A-র ছিটমহল নয় যেহেতু এটি D-এর সাথেও সীমানা ভাগ করে।

এক্সক্লেভ হলো একটি রাষ্ট্র বা অঞ্চলের একটি অংশ যা চারিদিকের বিদেশি অঞ্চলের দ্বারা মূল অংশ থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন।[৩] অনেক এক্সক্লেভ আবার ছিটমহলও হতে পারে, কিন্তু সবক্ষেত্রে নয়। একটি এক্সক্লেভ একের অধিক রাষ্ট্র দ্বারা আবদ্ধ হতে পারে।[৪] আজারবাইজানি এক্সক্লেভ নাখচিভান একটি এক্সক্লেভের উদাহরণ যা এক ছিটমহল নয়, কারণ এটি আর্মেনিয়া, তুরস্ক, ও ইরানের সঙ্গে সীমানা রচনা করে।

আধা-ছিটমহলআধা-এক্সক্লেভ হলো এমন অঞ্চল, যার কাছে এক অনাবদ্ধ সমুদ্র সীমান্ত (যা আন্তর্জাতিক পানির সঙ্গে সংলগ্ন) না থাকলে এক ছিটমহল বা এক্সক্লেভে পরিণত হতো।[৪]:১১৬[৫]:১২–১৪ ছিটমহল ও আধা-ছিটমহল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিদ্যমান হতে পারে (মোনাকো, গাম্বিয়া, ও ব্রুনাই হলো আধা-ছিটমহল), কিন্তু এক্সক্লেভ ও আধা-এক্সক্লেভ সর্বদাই এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের অংশ (যেমন কালিনিনগ্রাদ, রাশিয়ার একটি আধা-এক্সক্লেভ)।[৪]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

বিভিন্ন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ও ভৌগোলিক কারণের জন্য ছিটমহল বিদ্যমান। যেমন, ইউরোপের সামন্ততন্ত্রে কোনো ভূসম্পত্তির মালিকানাকে ক্রয়-বিক্রয় বা বংশপরম্পরার মাধ্যমে কখনো স্থানান্তিত বা বিভাজিত করা হত, এবং এরকম ভূসম্পত্তি অন্যান্য ভূসম্পত্তির দ্বারা আবদ্ধ থাকত বা আবদ্ধ হয়ে যেত। বিশেষত, পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে এই সমস্যা উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল, এবং এই ভূসম্পত্তিগুলি সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাত। ১৮৬৬ সালের আগে একা প্রুশিয়ারই ২৭০-এর বেশি বিচ্ছিন্ন অংশ ছিল।[২]:৬১

অন্য দেশের ছিটমহলে বাস করতে গেলে অনেকক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দেয়, যেমন উত্তরণ অধিকার, মাল আমদানি, মুদ্রা, বিভিন্ন পরিষেবা, ইত্যাদি। সুতরাং, সময়ের সঙ্গে ছিটমহলদের অবসান ঘটানো হয়। যেমন: ১ আগস্ট ২০১৫-এ বাংলাদেশভারত সরকারের মধ্যে স্থল সীমানা চুক্তির ফলে তৎকালীন জাতীয়-স্তরের ছিটমহলের দুই-তৃতীয়াংশের অবসান ঘটানো হয়েছিল এবং ১৬২টি প্রথম-ক্রমের ছিটমহল (৫১টি বাংলাদেশী ও ১১১টি ভারতীয়) দেশদুটির মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এই স্থানান্তরের ফলে অপর দুই ডজন দ্বিতীয়-ক্রমের ছিটমহল এবং একটি তৃতীয়-ক্রমের ছিটমহলের কার্যত অবসান ঘটেছিল এবং মোট ১৯৭টি বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহলের স্থানান্তরিত হয়েছিল। ঐ ছিটমহলের বাসিন্দাগণ দাবি করেছিলেন যে তাঁরা কার্যত রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছিলেন। কেবলমাত্র বাংলাদেশের দহগ্রাম ইউনিয়ন ছিটমহল অবস্থায় রয়ে গিয়েছে।

বার্লে শহরের ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসবেলজিয়াম ছিটমহল ব্যবস্থা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত রেখেছিল। যেহেতু নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম উভয়ই ইউরোপীয় ইউনিয়নশেঙ্গেন অঞ্চলের সদস্য, সেহেতু দেশদুটির মধ্যে প্রায় বিনা বাধায় ব্যক্তি, মাল, ও পরিষেবা স্থানান্তর সম্ভব।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Raton, Pierre (১৯৫৮)। "Les enclaves"। Annuaire Français de Droit International4: 186। ডিওআই:10.3406/afdi.1958.1373 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Melamid নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. "Exclave"। Webster's Encyclopedic Unabridged Dictionary of the English Language। ১৯৮৯। পৃষ্ঠা 497। 
  4. Rozhkov-Yuryevsky, Yuri (২০১৩)। "The concepts of enclave and exclave and their use in the political and geographical characteristic of the Kaliningrad region"। Baltic Region2 (2): 113–123। ডিওআই:10.5922/2079-8555-2013-2-11  
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; EV নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা