চৌরঙ্গী

কলকাতার একটি অঞ্চল
(চৌরঙ্গি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

চৌরঙ্গি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরের মধ্যাংশের একটি অঞ্চল। এই অঞ্চলের পশ্চিম দিকে জওহরলাল নেহেরু রোড (আগেকার নাম চৌরঙ্গী রোড) অবস্থিত। চৌরঙ্গী কলকাতার একটি ইতিহাস-সমৃদ্ধ এলাকা। এটি একটি বাণিজ্যকেন্দ্র[১] তথা হোটেল-বিনোদন কেন্দ্র।

চৌরঙ্গী
কলকাতার অঞ্চল
চৌরঙ্গী, ২০১১
চৌরঙ্গী, ২০১১
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৮° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব / 23.8; 88.25
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
শহরকলকাতা
ওয়ার্ড
  1. ৪৬, ৫২, ৬১, ৬২, ৬৩
মেট্রো স্টেশনএসপ্ল্যানেড, পার্ক স্ট্রিট, ময়দান
লোকসভা কেন্দ্রকলকাতা উত্তর
বিধানসভা কেন্দ্রচৌরঙ্গী
সরকার
 • বিধায়কনয়না বন্দ্যোপাধ্যায়
উচ্চতা৩৬ ফুট (১১ মিটার)
জনসংখ্যা (২০০১)
 • মোট১,৫৯,৯১৭
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
পিন কোড৭০০ ০৮৭, ৭০০ ০১৬
এলাকা কোড+৯১ ৩৩

নাম-ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

‘চৌরঙ্গী’ নামটির উৎপত্তি গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, চৌরঙ্গী গিরি নামে এক সন্ন্যাসীর নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় চৌরঙ্গী। এই সন্ন্যাসীই হিন্দু দেবী কালীর একটি মুখাবয়ব পেয়ে আদি কালীঘাট মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[২]

ইতিহাস সম্পাদনা

গ্রাম সম্পাদনা

 
চৌরঙ্গী, ১৭৯৮

সপ্তদশ শতাব্দী বা তারও আগে অধুনা ময়দানএসপ্ল্যানেড ছিল ব্যাঘ্র-সংকুল জঙ্গল। এর পশ্চিম দিকে একটি প্রাচীন রাস্তা অবস্থিত ছিল। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার বড়িশা থেকে হালিশহর পর্যন্ত এই রাস্তাটি নির্মাণ করেছিলেন। তার ওধারে ছিল “পুকুর, জলাভূমি ও ধানক্ষেত। তার মধ্যে এখানে ওখানে জেলে, পাখির বাজিকর, কাঠুরিয়া, তাঁতি ও জেলেদের কুটির। সেখানেই তিনটি ছোটো গ্রাম ছিল – চৌরঙ্গী, বিরজি ও কোলিম্বা।[৩]

১৭১৭ সালে চৌরঙ্গী ছিল জলাভূমি-আকীর্ণ ধানক্ষেত ও বাঁশঝাড়ে ভরা একটি ছোটো গ্রাম। সেই গ্রামে এখানে ওখানে ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর দেখা যেত। একটি জঙ্গল দ্বারা গ্রামটি গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।[৩] কথিত আছে, ওয়ারেন হেস্টিংস সেই জঙ্গলে হাতি নিয়ে শিকার করতে আসতেন।[৪] অধুনা ময়দানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলরবীন্দ্রসদন এলাকাটি ছিল বিরজি গ্রাম। খরমুজার নাম থেকে কোলিম্বা গ্রামের নামটি এসেছিল।[২]

নগরায়ণ সম্পাদনা

পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়ের পর ব্রিটিশদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ১৭৫৮ সালে তারা নতুন ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের কাজ শুরু করে। কলকাতার ইউরোপীয় অধিবাসীরা তাঁদের বসত এলাকার পুরনো গণ্ডী ছাড়িয়ে ময়দানের বাইরের দিকে বসবাস করতে শুরু করে।[৫] অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংরেজরা চৌরঙ্গীতে বড়ো বড়ো অট্টালিকা নির্মাণ করতে শুরু করে। এর ফলে কলকাতা ‘প্রাসাদ নগরী’ তকমা পায়।[৬]

কলকাতার প্রথম পাকা রাস্তা চিৎপুর রোড (অধুনা রবীন্দ্র সরণি) নির্মিত হয় ১৮৩৯ সালে। ১৮৫৭ সালের ৬ জুলাই সন্ধ্যাবেলা চৌরঙ্গী অঞ্চল ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানির দ্বারা গ্যাসের আলোয় সজ্জিত হয়। ১৮৫৮ সালে চৌরঙ্গীতেই প্রথম ফুটপাথ নির্মাণ শুরু হয়। ফুটপাথগুলি তৈরি হয়েছিল গ্যাস বাতিস্তম্ভ স্থাপনের সুবিধার্থে। এই সময় ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছিল। কারণ তাদের খদ্দেরদের গাড়ি দোকানের থেকে অনেকটা দূরে রাখতে হচ্ছিল।[৬]

অঞ্চল সম্পাদনা

‘চৌরঙ্গীর’ রাস্তাটি দক্ষিণে লোয়ার সার্কুলার রোড (অধুনা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) থেকে উত্তরে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। পুরনো মানচিত্র অনুসারে, চৌরঙ্গী ছিল একটি অঞ্চল, কোনো রাস্তা নয়। কর্নেল মার্ক উড ১৭৮৪ সালে যে মানচিত্রটি অঙ্কন করেছিলেন, তাতে রাস্তাটির নাম ছিল ‘রোড টু চৌরঙ্গী’। পার্ক স্ট্রিটের দক্ষিণাংশের অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চৌরঙ্গী’। যদিও ১৭৯৪ সালে আপজনের মানচিত্রে এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছিল ডিহি বিরজি এবং চৌরঙ্গীর সীমানাটি ছিল পূর্বে সার্কুলার রোড, দক্ষিণে পার্ক স্ট্রিট, উত্তরে কোলিঙ্গা ও পশ্চিমে ‘রোড টু চৌরঙ্গী’র একটি অংশ।[৪]

 
চৌরঙ্গীর দক্ষিণাঞ্চল

খ্যাতি ও সৌভাগ্য চৌরঙ্গী রোডের প্রায় তিন শতকের সঙ্গী। এই রাস্তাটি কলকাতার অন্যতম প্রধান রাস্তা। এর ইতিহাসের সমগ্র অংশটাই সম্মান ও গুরুত্বের আবহ বহন করে চলেছে। এখানকার পরিচারিকারা সব সময়ই সুবেশী ও বর্ণময়ী। অসংখ্য ভারতীয় এবং ভারত সম্পর্কে অবহিত অধিকাংশ ব্যক্তির কাছেই চৌরঙ্গীর স্বতন্ত্র নামটি কলকাতার পরিচায়ক।

লন্ডনে যেমন পিকাডিলি, নিউ ইয়র্কে যেমন ফিফথ অ্যাভিনিউ এবং প্যারিসে যেমন চ্যাম্পস এলিসিজ, ভারতে তেমনই এই রাস্তা। স্মৃতিমেদুর লন্ডনবাসীরা তাঁদের সার্কাসকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে থাকেন। কলকাতাবাসীরা তাঁদের দাবি সম্পর্কে আরও বেশি রক্ষণশীল। যদিও নিজেদের শহর সম্পর্কে তাঁরা যে উৎসাহ দেখিয়ে থাকেন, তা সম্ভবত অতুলনীয়।[৭]

‘রোড টু চৌরঙ্গী’তে দক্ষিণ থেকে উত্তরে আসতে প্রথম যে ক্রসিংটি পড়ে, সেটি থিয়েটার রোডের (বর্তমান নাম শেকসপিয়র সরণি) সঙ্গে। ১৮১৩ থেকে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত এখানে একটি থিয়েটার ছিল। একটি অগ্নিকাণ্ডে সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। পরের ক্রসিংটি হ্যারিংটন স্ট্রিটের (বর্তমান নাম হো চি মিন সরণি) সঙ্গে। এই রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছিল সদর আদালতের বিচারক জন হারবার্ট হ্যারিংটনের নামানুসারে। এরপরের ক্রসিংটি মিডলটন স্ট্রিটের সঙ্গে। এই রাস্তাটির নামকরণ করা হয় কলকাতার প্রথম বিশপ (১৮১৪-১৮২২) টমাস ফ্যানশ মিডলটনের নামানুসারে। এই রাস্তায় আরও খানিকটা গেলে পাওয়া যায় বেঙ্গল ক্লাব। এই ক্লাবের ভবনটি অতীতে টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকাউলির বাসভবন ছিল। বেঙ্গল ক্লাবের পিছনে রয়েছে রাসেল স্ট্রিট (বর্তমান নাম আনন্দীলাল পোদ্দার সরণি)। রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি (১৮০৬-১৮১৩) স্যার হেনরি রাসেলের নামানুসারে।[৪]

 
জওহরলাল নেহেরু রোড – চৌরঙ্গীর প্রধান রাস্তা

এরপরের ক্রসিংটি হল পার্ক স্ট্রিটের (বর্তমান নাম মাদার টেরেসা সরণি) সঙ্গে। এই ক্রসিংয়েই এশিয়াটিক সোসাইটি অবস্থিত। ১৭৬০ সালের আগেকার ম্যাপগুলিতে পার্ক স্ট্রিট দেখা যায় না। ১৭৯৪ সালে অঙ্কিত আপজনের মানচিত্রে এটিকে ‘বেরিয়াল-গ্রাউন্ড রোড’ বলা হয়েছে। যার অর্থ, এটি সার্কুলার রোডের পাশে অবস্থিত কবরখানা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। মিডলটন রোর স্যার এলাইজা ইম্পলের বাড়িটিতে এখন লোরেটো স্কুল ও লোরেটো কলেজ অবস্থিত। জেসুইটদের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ একসময় ছিল সানস সৌসি থিয়েটার। ১৮৪১ সালে এটি চালু হয় এবং ১৮৪৪ সালে এটিকে আর্চ বিশক ক্যারেওর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।[৪]

পার্ক স্ট্রিট থেকে সার্কুলার রোড পর্যন্ত প্রসারিত ক্যামাক স্ট্রিটের (বর্তমান নাম অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরণি) নামকরণ করা হয়েছিল কর্নওয়ালিসওয়েলেসলির সময়কার প্রবীণ বণিক উইলিয়াম ক্যামাকের মানানুসারে। উড স্ট্রিটের নামকরণ করা হয়েছিল হেনরি উডের নামানুসারে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের (বর্তমান নাম মির্জা গালিব স্ট্রিট) নামকরণ হয়েছিল ১৭৮৬ সালে সেই রাস্তায় প্রতিষ্ঠিত একটি ফ্রি স্কুলের নামানুসারে। এই জায়গাটি আগে বাঁশঝাড় ছিল।[৪]

পরবর্তী ক্রসিংটি কিড স্ট্রিটের সঙ্গে। এই রাস্তাটির নামকরণ হয়েছিল বাংলা সরকারের সামরিক সচিব কর্নেল রবার্ট কিডের নামানুসারে। তিনি এই রাস্তার ধারে বাস করতেন। এই রাস্তার সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের ক্রসিংয়ের উল্টোদিকে একটি ট্যাঙ্ক এখনও রয়েছে। সেই ট্যাঙ্কের নামানুসারে এই রাস্তাটির আগেকার নামটি ছিল চৌরঙ্গী ট্যাঙ্ক স্ট্রিট।[৮]

কলকাতায় অনেকগুলি ইংরেজি নাট্যশালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল ক্যালকাটা থিয়েটার। যে রাস্তাটি এখন লিয়নস রেঞ্জ নামে পরিচিত, সেখানে ১৭৭৫ সালে এই থিয়েটারটি স্থাপিত হয়।... এরপরের আশি বছরে একাধিক ইংরেজি নাট্যশালা চালু ও বন্ধ হয়। এগুলির মধ্যে দুটি থিয়েটার ছিল বিখ্যাত। প্রথমটি চৌরঙ্গী থিয়েটার (১৮১৩-১৮৩৯)। এই থিয়েটারের নামানুসারেই থিয়েটার রোডের (অধুনা শেকসপিয়র সরণি) নামকরণ করা হয়েছিল। অপর থিয়েটারটি ছিল সানস সৌসি। ১৮৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৪১ সালে এই থিয়েটারের স্থলেই পার্ক স্ট্রিটে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ স্থাপিত হয়। এই মঞ্চগুলিতে অভিজ্ঞ ও খ্যাতনামা অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা অভিনয় করে গিয়েছেন। এমনকি লন্ডনের এমা ব্রিস্টো, এসথার লিচ, জেমস ভিনিং, শ্রীমতী ডিকল ও কুমারী কাউলির মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও এখানে অভিনয় করেন। প্রথম দিকে এই থিয়েটারগুলির দর্শক ছিলেন শুধুমাত্র ইউরোপীয়রাই। ক্যালকাটা থিয়েটারের পরিচারক ও দ্বাররক্ষীরাও ছিলেন ইংরেজ। তবে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতীয়রাও এই থিয়েটারগুলিতে প্রবেশাধিকার পান। সদ্য ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙালিদের কাছে ইংরেজি থিয়েটারগুলি প্রিয় গন্তব্য ও গভীর আগ্রহের উৎস হয়ে ওঠে। ’প্রিন্স’ দ্বারকানাথ ঠাকুর যখন চৌরঙ্গী থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, তখন একটি ছোটোখাটো দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। ১৯৪৮ সালের অগস্ট মাসে সান সৌসিতে বৈষ্ণবচরণ আঢ্য নামে এক ‘নেটিভ জেন্টলম্যান’ যখন ওথেলোর ভূমিকায় অভিনয় করেন, তখন আরও বড়ো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। তবে ক্যালকাটা স্টার যে ‘এক সত্যিকারের রং-না-মাখানো নিগ্রো ওথেলো’র নোটিশ জারি করেছিল, তখন সেটা এই ব্যবস্থার এক অস্পষ্ট ও আপত্তিজনক রূপই ফুটিয়ে তোলে।[৯]

কিরণময় রাহা

ভারতীয় সংগ্রহালয়ের উত্তরে সদর স্ট্রিটে একসময় সদর কোর্ট অবস্থিত ছিল। এই এলাকার ওপারের এলাকাটি ছিল কোলিঙ্গা (কোলিম্বা থেকে)। ময়দানের ট্যাঙ্কটিকে বলা হত কোলিঙ্গা ট্যাঙ্ক। পৌরসংস্থার বাজার পর্যন্ত প্রসারিত লিন্ডসে স্ট্রিটটির নামকরণ করা হয়েছিল রবার্ট লিন্ডসের নামানুসারে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির খ্যাতনামা কর্মচারী লিন্ডসের বাড়ি ছিল এই রাস্তার ধারে। লিন্ডসে স্ট্রিটেই অপেরা হাউস নামে একটি কাঠের বাড়ি ছিল।[৮] জওহরলাল নেহেরু রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হল গ্র্যান্ড হোটেল

নতুন নাম সম্পাদনা

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর রাস্তার নামে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। চৌরঙ্গী রোডের নামকরণ হয় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নামানুসারে। পার্ক স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় মাদার টেরেসার নামানুসারে। থিয়েটার রোডের নামকরণ করা হয় উইলিয়াম শেকসপিয়রের নামানুসারে। ব্রিটিশ ভারতে শেকসপিয়রের নামে ভারতের কোনো রাস্তার নামকরণ করা হয়নি। হ্যারিংটন স্ট্রিটের নাম পালটে ভিয়েতনাম স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হো চি মিনের নামে রাখা হয়। ক্যামাক স্ট্রিটের নাম রাখা হয় বিশিষ্ট শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে। রাসেল স্ট্রিটের নাম রাখা হয় শিল্পপতি আনন্দীলাল পোদ্দারের নামানুসারে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় উর্দু/ফারসি কবি মির্জা গালিবের নামানুসারে। কিড স্ট্রিটের নামকরণ করা হয়েছে ড. মহম্মদ ইশাক রোড। লিন্ডসে স্ট্রিটের নামকরণ করা হয়েছে নেলি সেনগুপ্তের নামানুসারে।

ভূগোল সম্পাদনা

চৌরঙ্গী মধ্য কলকাতায় অবস্থিত। এর উত্তরে জানবাজার, পূর্ব দিকে তালতলা ও পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার কিয়দংশ, দক্ষিণে ভবানীপুর এবং পশ্চিমে ময়দান অবস্থিত। চৌরঙ্গী এলাকাটি নিউ মার্কেট,[১০] পার্ক স্ট্রিট,[১১] ো শেকসপিয়র সরণি থানার অধিভুক্ত।[১২]

জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা

কলকাতা পৌরসংস্থার ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৬২ নং ওয়ার্ড জুড়ে চৌরঙ্গী এলাকাটি প্রসারিত। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই সব কটি ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা ১৫৯,৯১৭। এর মধ্যে ১০১,১৮৯ জন পুরুষ এবং ৫৮,৮২৮।[১৩]

সাংস্কৃতিক প্রেরণা সম্পাদনা

চৌরঙ্গী অঞ্চলের জনজীবন একাধিক সাংস্কৃতিক প্রেরণার উৎস।

১৯৬২ সালে (আর্থার হাইলের হোটেল উপন্যাস রচনার তিন বছর আগে) বাঙালি ঔপন্যাসিক শংকর চৌরঙ্গী নামে একটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। উপন্যাসটি প্রকাশ মাত্রেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৫০-এর দশকের কলকাতার পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাসটি চৌরঙ্গী তথা কলকাতার অন্যতম বৃহৎ হোটেল শাহজাহানের কর্মচারী ও অতিথিদের অন্তরঙ্গ জীবনের গল্প। হোটেলের প্রাণোচ্ছল ম্যানেজার মার্কো পোলো, সংস্কৃতিবান রিসেপশনিস্ট স্যাটা বসু, দুঃখিনী হোস্টেস করবী গুহ এই উপন্যাসের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। অরুণাভ সিনহা এই বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং পেঙ্গুইন বুকস থেকে অনুবাদটি প্রকাশিত হয়। বইটি একাধিক ভারতীয় ভাষাতেও অনূদিত হয়।[১৪] ১৯৬৮ সালে পরিচালক পিনাকীভূষণ মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সেই চলচ্চিত্রটিও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিবিসি ফোর এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি নাটকও উপস্থাপনা করে।[১৫]

১৯৮১ সালে অপর্ণা সেন তার রচনায় ৩৬ চৌরঙ্গী লেন নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এই ছবিটি ছিল চৌরঙ্গী অঞ্চলে একটি এক-কামরার ফ্ল্যাটে একাকী জীবনযাপনকারী এক বয়স্ক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বিদ্যালয় শিক্ষকের জীবন সম্পর্কে।[১৬]

চিত্রকক্ষ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Tax lawyer is CPM candidate for Chowringhee seat"The Hindu Business Line, 18 February 2006। ২০০৮-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  2. Nair, P. Thankappan in The Growth and Development of Old Calcutta, in Calcutta, the Living City, Vol. I, edited by Sukanta Chaudhuri, pp. 14-15, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৬৩৬৯৬-৩.
  3. Cotton, H.E.A., Calcutta Old and New, 1909/1980, p. 19, General Printers and Publishers Pvt. Ltd.
  4. Cotton, H.E.A., pp. 230-236.
  5. Cotton, H.E.A., p. 72.
  6. Nair, P.Thankappan, Civic and Public Services in Old Calcutta, in Calcutta, the Living City, Vol. I, p. 224
  7. "Now and Then"Choweinghee। kolkatainformation। ২০০৮-০৪-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  8. Cotton, H.E.A., pp. 244-247
  9. Raha, Kironmoy, Calcutta Theatre 1835-1944, in Calcutta, the Living City, Vol. I, pp. 186-187
  10. "New Market Police Station"। Kolkata Police। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  11. "Park Street Police Station"। Kolkata Police। ২০০৭-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  12. "Shakespeare Sarani Police Station"। Kolkata Police। ২০০৭-০৬-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  13. "Provisional Population Totals, Table 4"Population, Decadal Growth Rate, Density and General Sex Ratio by Residence and Sex, West Bengal/ District/ Sub District, 1991 and 2001। Census Commission of India। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১০ 
  14. "Details of Chwringhee"। Indiatimes Shopping। ২০০৭-০৬-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  15. "Chwringhee (1968)"। imdb.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 
  16. "36 Chowringhee Lane (1981)"। imdb.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-১৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা