চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা

চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা বা অবশিষ্ট চুম্বকায়ন বা অবশেষ চুম্বকত্ব হল বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্র অপসারণের পরেও চৌম্বকীয় পদার্থে (যেমন ফেরোচৌম্বক পদার্থ) চুম্বকায়ন থেকে যাওয়া।[১] অর্থাৎ কোনও চুম্বক যখন "চৌম্বকীয়" হয় তখন তার অবশেষ চুম্বকত্ব থাকে।[২] চৌম্বকীয় পদার্থগুলির অবশেষ চুম্বকত্বের কারণে চৌম্বক আধার (ম্যাগনেটিক স্টোরেজ) যন্ত্রে চৌম্বকীয় স্মৃতি থেকে যায়, এবং পুরাচুম্বকত্বতে অতীতের পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের তথ্যের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। [৩]

সমতুল্য শব্দ অবশেষ চুম্বকত্ব সাধারণত প্রকৌশলী প্রয়োগগুলিতে ব্যবহৃত হয়। ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক মোটর এবং জেনারেটরে বড় মাত্রায় অবশেষ চুম্বকত্ব বাঞ্ছনীয় নয় (বৈদ্যুতিক ইস্পাত দেখুন), কারণ এটি একটি অবাঞ্ছিত দূষণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটি বৈদ্যুতিক চুম্বকের কুন্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হওয়ার পরেও থাকা চুম্বকত্ব, যেটি কাজের অসুবিধা ঘটায়। যেখানে এটি অবাঞ্ছিত, সেখানে এটি অব-গাউসিং পদ্ধতিতে বিচুম্বকায়ন করা যেতে পারে।

কখনও কখনও চৌম্বক প্রবাহ ঘনত্বের অবশেষের একক পরিমাপ করার জন্য ধারণক্ষম শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[৪]

প্রকার সম্পাদনা

সম্পৃক্ত চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা সম্পাদনা

 
চিত্র ১ পরিবর্তী প্রবাহে দানা যুক্ত বৈদ্যুতিক ইস্পাতের হিস্টেরেসিসের কয়েকটি বদ্ধ চক্র (Br বোঝাচ্ছে চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা এবং Hc হল সহ্যশীলতা)।

চৌম্বক ধারণ ক্ষমতার গতানুগতিক সংজ্ঞাটি হল বড় চৌম্বক ক্ষেত্র (সম্পৃক্তি অর্জনের মত বড়) প্রয়োগের পরে শূন্য ক্ষেত্রে অবশিষ্ট চুম্বকত্ব।[১] চৌম্বক হিস্টেরেসিস চক্রের প্রভাবগুলি স্পন্দনশীল নমুনা চুম্বকত্ব মাপকের মত মাপনী ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয়; এবং বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্র বা শূন্য ক্ষেত্র বিরতি হল চৌম্বক ধারণ ক্ষমতার একটি পরিমাপ। পদার্থবিজ্ঞানে এই পরিমাপকে গড় চুম্বকায়নে রূপান্তরিত করা হয় (মোট চৌম্বক ভ্রামককে উপাদানের আয়তন দ্বারা বিভক্ত করে) এবং সমীকরণে চিহ্নিত করা হয় Mr দিয়ে। যদি এটিকে অন্য ধরনের ধারণ ক্ষমতা থেকে পৃথক করতে হয়, তখন এটিকে সম্পৃক্ত ধারণ ক্ষমতা বা সম্পৃক্ত সমতাপীয় ধারণ ক্ষমতা (এসআইআরএম) বলা হয় এবং চিহ্নিত করা হয় Mrsদিয়ে।


প্রকৌশল প্রয়োগগুলিতে একটি বি-এইচ বিশ্লেষক ব্যবহার করে অবশেষ চুম্বকত্বের পরিমাপ করা হয়। বিশ্লেষকটি পরিবর্তী প্রবাহের জন্য চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করে (চিত্র ১ অনুযায়ী)। এটি ফ্লাক্স ঘনত্ব Br দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ধারণ ক্ষমতার এই মানটি স্থায়ী চুম্বকের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিমাপ; চুম্বকটি কতটা শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপাদন করতে পারে এটি তার পরিমাপ। উদাহরণস্বরূপ, নিওডিমিয়াম চুম্বকের চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ থেকে ১.৩ টেসলার সমান।

সমতাপীয় ধারণ ক্ষমতা সম্পাদনা

অনেক সময়েই শুধুমাত্র চৌম্বক ধারণ ক্ষমতার পরিমাপ, চুম্বক সম্বন্ধে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করে না। উদাহরণস্বরূপ, চৌম্বক ফিতাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ছোট চৌম্বক কণা রয়েছে (দেখুন চৌম্বক আধার), এবং এই কণাগুলি একরকম নয়। শিলাস্থ চৌম্বক খনিজগুলিতে বিভিন্ন রকম চৌম্বক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে (দেখুন শিলা চৌম্বক)। এই উপকরণগুলির ভিতরে দেখার এক উপায় হল ধারণ ক্ষমতার সামান্য বৃদ্ধির সংযোজন বা বিয়োজন। এটি করার একটি উপায় হলে প্রথমে চুম্বকটিকে পরিবর্তী প্রবাহ ব্যবহার করে বিচুম্বকন করতে হবে, এবং তারপরে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র H প্রয়োগ করে আবার অপসারণ করতে হবে। এই ধারণ ক্ষমতা, যাকে Mr(H) দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, সেটি H ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে।[৫] একে বলা হয় প্রাথমিক চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা[৬] বা সমতাপীয় চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা (আইআরএম)[৭]

আর এক ভাবে সমতাপীয় চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা (আইআরএম) বার করার জন্য প্রথমে চুম্বককে একমুখী সম্পৃক্ত ধারণ ক্ষমতা দিতে হবে, এবং তারপরে বিপরীত অভিমুখে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ ও অপসারণ করতে হবে।[৫] একে বলা হয় বিচুম্বকন ধারণ ক্ষমতা বা একমুখী প্রবাহের বিচুম্বকন ধারণ ক্ষমতা এবং একে চিহ্নিত করা হয় Md(H) প্রতীক দ্বারা, যেখানে H হল ক্ষেত্রের মান[৮] আরেকটি ধারণ ক্ষমতার পরিমাপ করা যায়, পরিবর্তী প্রবাহ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত ধারণ ক্ষমতাকে বিচুম্বকন করে। একে বলা হয় পরিবর্তী প্রবাহে বিচুম্বকন ধারণ ক্ষমতা বা এসি ক্ষেত্রে বিচুম্বকন ধারণ ক্ষমতা এবং একে চিহ্নিত করা হয় Maf(H) প্রতীক দ্বারা।

যদি কণাগুলি পরস্পরের উপর অ-ক্রিয়াশীল একক-ডোমেন কণা হয়, যাদের একাক্ষবিশিষ্ট অ-আইসোট্রপি আছে, তাদের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে সরল রৈখিক সম্পর্ক রয়েছে।[৫]

অ-হিস্টেরীয় ধারণ ক্ষমতা সম্পাদনা

পরীক্ষাগারে করা আর এক ধরনের ধারণ ক্ষমতা হল অ-হিস্টেরীয় ধারণ ক্ষমতা বা অ-হিস্টেরীয় ধারণ চুম্বকায়ন (এআরএম)। এখানে একটি চুম্বককে বড় পরিবর্তী প্রবাহ ক্ষেত্রের সাথে একটি ছোট একমুখী বায়াস ক্ষেত্র দেওয়া হয়। অ-হিস্টেরীয় চুম্বকায়ন পেতে পরিবর্তী প্রবাহ ক্ষেত্রটির মান ধীরে ধীরে শূন্যে নামিয়ে আনা হয়, এবং তারপরে ধারণ ক্ষমতার পরিমাপ পেতে বায়াস ক্ষেত্রটি সরানো হয়। অ-হিস্টেরীয় চুম্বকায়ন রেখা প্রায়শই হিস্টেরেসিস চক্রের দুটি শাখার গড় মানের কাছাকাছি থাকে,[৯] এবং কিছু ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়, এটি একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সর্বনিম্ন-শক্তি অবস্থাকে বোঝাচ্ছে।[১০] অ-ফ্লাক্স্মাপক এবং একমুখী বায়াস বিচুম্বকনের ওপর নির্ভর করে হিস্টেরীয় চুম্বকায়ন বক্ররেখার পরীক্ষামূলক পরিমাপের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে।[১১] কিছু চৌম্বক রেকর্ডিং প্রযুক্তিতে লেখন[১২] এবং শিলাগুলিতে প্রাকৃতিক চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা অর্জনের প্রক্রিয়াটির সাথে মিল থাকার কারণে এআরএম নিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছিল।[১৩]


আরও দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Chikazumi 1997
  2. Strictly speaking, it is still in the Earth's field, but that has little effect on the remanence of a hard magnet.
  3. "remanence | Origin and meaning of remanence by Online Etymology Dictionary"www.etymonline.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২০ 
  4. "Magnetic Tape Storage and Handling" 
  5. Wohlfarth 1958
  6. McCurrie ও Gaunt 1966
  7. Néel 1955
  8. Pfeiffer 1990
  9. Bozorth 1951
  10. Jiles ও Atherton 1986
  11. Nowicki 2018
  12. Jaep 1969
  13. Banerjee ও Mellema 1974

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা