চাবাহার বন্দর

ইরানের সমুদ্র বন্দর

চাবাহার বন্দর[১] (চাবা হার বন্দর) হল ইরান এর দক্ষিণ-পূর্বে সিস্টান এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। এই বন্দরটি ওমান উপসাগর এর তীরে অবস্থিত। ইরানের এই বন্দরটি পারস্য উপসাগর এর বাইরে আরব সাগরের জলভাগে অবস্থিত।

চাবাহার বন্দর
ওমান উপসাগরের তীরে চাবাহার বন্দরের দৃশ্য
অবস্থান
দেশ ইরান
অবস্থানচাবাহার, সিস্টান এবং বালুচিস্থান প্রদেশ, ইরান
স্থানাঙ্ক২৫°১০′ উত্তর ৬০°২৩′ পূর্ব / ২৫.১৭° উত্তর ৬০.৩৮° পূর্ব / 25.17; 60.38
বিস্তারিত
পরিচালনা করেইরান এরি বানাদের ইরানীয়ান
ভারত ইন্ডিয়ান পোর্টস গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেট (আইপিজিপিএল)
মালিকইরান পোর্ট এন্ড মেরিটাইম অর্গানাইজার
পোতাশ্রয়ের ধরনসমুদ্র বন্দর
পোতাশ্রয়ের আকার৪৮০ হেক্টর (১,২০০ একর)
জমির আয়তন৪৪০ হেক্টর (১,১০০ একর)
উপলব্ধ নোঙরের স্থান১০ টি
কর্মচারী১,০০০
মহাপরিচালকবেহাউজ আঘাঈ
বন্দরের গভীরতা২০ মিটার (৬৬ ফু)
পরিসংখ্যান
বার্ষিক কার্গো টনবৃদ্ধি ২.১ মিলিয়ন টন (২০১৫)
ওয়েবসাইট
চাবাহার বন্দর

ভারত-ইরান-আফগানিস্তান সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) পরিকল্পনা হিসাবে চাবাহর-হাজ্জিক করিডোরের জন্য কমপক্ষে $২১ বিলিয়ন ডলার করে দিয়েছে। ভারত চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য $৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমান অর্থ প্রদান করে।[২] ভারত থেকে $১৫০ মিলিয়ন ঋণ নিয়েছে ইরান[২] বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের জন্য ভারত-ইরান মৌউ স্বাক্ষর করেছে। চাবাহরে [৩] ১১ বিলিয়ন ডলারের "হজগক লোহা ও ইস্পাত খনির প্রকল্প" জন্য সাতটি ভারতীয় সংস্থাকে কেন্দ্রীয় আফগানিস্তানে জমি প্রদান করেছে আফগানিস্তান সরকার [৩][৪] এবং ভারত $২ বিলিয়ন ডলারের চাবাহার-হাজীগাজ রেলপথের সহকারী অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের কাছে অঙ্গীকার করেছে।[৪] ইউরোপ ও তুরস্কের সাথে সংযুক্ত ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বহুমুখী আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর (আইএনএসটিসি) দ্বারা যোগাযোগের মাধ্যমে আরো বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া জুড়ে আর২৯৭ আমুর মহাসড়ক, ট্রান্স-সাইবেরিয়ান মহাসড়ক [৫] এবং তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে "মাজার-ই-শরিফ-হেরাত রেলপথ" পরিকল্পনা করা হয়েছে। [৫] চাবাহার বন্দরটি তাজিকিস্তানে ভারতের ফারাকোর বিমান ঘাঁটিতে সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রদান করে। [৬] চবাহার রুটে পণ্য চালানের খরচ ৬০% হ্রাস পাবে এবং ভারত থেকে মধ্য এশিয়ায় পণ্য চালানের সময় ৫০% হ্রাস পাবে। [৭]

ইরানের শেষ শাহ দ্বারা ১৯৭৯ সালে বন্দর উন্নয়ন প্রথম প্রস্তাবিত হলেও, ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের জন্য উন্নয়ন বিলম্বিত হয়েছিল। [৮] ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ১৯৮৩ সালে বন্দরটি প্রথম পর্যায়ে খোলা হয়েছিলো, ইরানি পার্বত্য এলাকার পূর্ব সীমান্তে পারস্য উপসাগরে বন্দরসমূহের নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য, কারণ পারস্য উপসাগরের বন্দরগুলি ইরাকি বিমান বাহিনীর দ্বারা আক্রমণের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল। [৯]

ভারতইরান প্রথমবার ২০০৩ সালে চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণে সম্মত হয়েছিল কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে তা করা হয়নি। [১০] ২০১৩ সালের হিসাবে বন্দরের দশটি অংশ রয়েছে। [১] মে ২০১৬ সালে, ভারত ও ইরান একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মধ্যে ভারত চাবাহার বন্দরের মধ্যে একটি বার্থ নির্মান করবে এবং বন্দরে ৬০০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা পুনর্নির্মাণ করবে। [১১] ভারতআফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য একটি বিকল্প পথ তৈরির উদ্দেশ্যে বন্দরটি নির্মান করা হয়। চাবাহার বন্দর পাকিস্তানের করাচি বন্দরের তুলনায় আফগানিস্তানের প্রায় ৮০০ কিলোমিটার নিকটে অবস্থিত। [১২] বন্দরটি ২০১৫ সালে ২.১ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন করে [১৩] যা ২০১৬ সালে ৮.৫ মিলিয়ন টনে উন্নিত হয় এবং ভবিষ্যতে ৮৬ মিলিয়ন টন হ্যান্ডেল করার জন্য বন্দরটির সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। [১৪][১৫]

জুলাই ২০১৬ সালে, ভারত বন্দরে কনটেইনার ট্র্যাকগুলি গড়ে তোলার জন্য চাবাহরকে $১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রেলওয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে এবং ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্বারা ইরানের আইরন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক নির্মিত চাবাহর-জাঠান রেলপথ নির্মাণ করে, যার জন্য ভারত অতিরিক্ত ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইরান ১২ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে। এভাবে ২০১৬ সালের শেষে মোট বরাদ্দের পরিমান হয় $৫৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (রেলপথের জন্য ১.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন)। [১৬][১৭] ২০১৭ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে ভারতের প্রথম চালান চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। [১৮]

গুরুত্ব সম্পাদনা

ইরান এবং ভারতের মধ্যে ২০০৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী বন্দরটির নির্মাণ অধিকার পায় ভারত। এর পর ইরানের উপর পশ্চিম বিশ্বের বয়কটের ফলে বন্দর নির্মাণের গতি কমে আসে। বর্তমানে বয়কট উঠে যাওয়ায় নতুন ভাবে নির্মাণে গতি আসে এবং বন্দরটির প্রথম আংশের কাজ প্রায় শেষ। এই বন্দরটি থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানে, চীন গদর বন্দর নির্মাণ করছে ফলে বন্দরটি ভারতের কাছে ও মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তান এর কাছে গুরত্ব পূর্ণ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

বন্দরটির সাথে রেল যোগাযোগের জন্য ভারত সরকার ও ইরান সরকার যৌথ ভাবে চাবাহার-হাজিগাক এর মধ্য নয়শো কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে।এছাড়া ইরান সরকার বন্দর থেকে আফগানিস্তান সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ করবে।

পশ্চাৎ ভূমি সম্পাদনা

বন্দরটির মাধ্যমে ইরান এর দক্ষিণ - পূর্ব অঞ্চলের বাণিজ্য সাধিত হবে। বর্তমানে ইরান এর প্রধান বন্দর 'বন্দর আব্বাস' এর দ্বারা ৮৫% পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়।ফলে এই বন্দরটি বন্দর আব্বাসের চাপ অনেকটা কমাবে। এছাড়ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, কির্গিজস্তানদক্ষিণ এশিয়ার, আফগানিস্তান পণ্য পরিবহনের কথা রয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Ports Information - Chabahar"Seas Ark S.A.। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬ 
  2. Aneja, Atul (৫ মে ২০১৩)। "India to develop Iranian port ( May 05, 2013 )"www.thehindu.com। The Hindu। India announced its participation in the Chabahar port project. 
  3. "On a railroad from Russia to Iran.", The Hindu, 13 July 2016.
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; hajigak1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; traderoutes1 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. "India And Tajikistan Ties: Partners In Development – Analysis .", Eurasia Review, 4 March 2017.
  7. Connectivity projects should be consonant with sovereignty principles: Vijay Gokhale, Economic Times, 18 Jan 2018.
  8. Vatanaka, Alex (২০১৫)। Iran and Pakistan: Security, Diplomacy and American InfluenceGoogle Books: I.B. Taurus & Co. Limited। 
  9. Alahmad, Nida; Keshavarzian, Arang (Winter ২০১০)। "A War on Multiple Fronts"Middle East Report40 (Iran–Iraq War)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬ 
  10. "India determined to invest in Iranian port development projec"। Islamic Republic News Agency। ২০ জুন ২০১৬। ২২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬ 
  11. "India, Iran moving forward on redeveloping Chabahar port"। The Journal of Commerce। ৯ মে ২০১৬। ১৪ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬According to the provisional deal, IPGPL will refurbish a 640-meter (2,100-foot) container handling facility through deployment of new equipment, including four rail-mounted gantry cranes, 16 rubber-tire gantry cranes, two reach stackers and two empty handlers. For the rebuilding of a 600-meter (1,969-foot) multi-purpose berth at Chabahar, Indian authorities will invest in six mobile harbor cranes, 10 forklifts and 10 trailers. 
  12. "Chabahar Port to Leverage Afghan-India Commercial Relations"। ২০১৬-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-১৮ 
  13. "Indian government firm on developing Chabahar port"। Iran Daily। ২০ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৬ 
  14. "Iran' Chabahar port to come on stream in one month"। ৩০ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৮ 
  15. Centre to rope in private players for Chabahar port project in Iran
  16. India to export US$150 million rails for Chabahar port next month
  17. $125m for Chabahar-Zahedan Railroad
  18. http://www.tolonews.com/business/india%E2%80%99s-first-shipment-wheat-enter-chabahar