চরক সংহিতা

চিকিৎসার প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ

চরক সংহিতা ( সংস্কৃত:चरक संहिता) হ’ল ভারতীয় পরম্পরাগত ঔষধী ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ-এর এক প্রাচীন গ্রন্থ।[১] সুশ্রুত সংহিতার সাথে খ্রীষ্ট জন্মের কিছু শতক পরেই রচিত হওয়া এই গ্রন্থটি এই ব্যবস্থার প্রতিস্থাপক।[২]

চরক সংহিতার একটি অনুচ্ছেদ

অবশ্য এই গ্রন্থ দুটির প্রকৃত রচনাকাল সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। চরক সংহিতার রচনাকাল গুপ্ত যুগ বা ৩০০র থেকে ৫০০ খ্রীষ্টাব্দের বলে মনে করা হয়[৩] ও সেইদিক থেকে দেখতে গেলে এটি সুশ্রুত সংহিতার প্রায় সমসাময়িক বা তার কিছু বছর পরে রচিত। যাই হোক,চরক সংহিতার বর্তমান উপলব্ধ সংস্করণটি ১০০ খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে ১০০ খ্রীষ্টাব্দের ভিতর রচিত এক গ্রন্থের ওপরে ভিত্তি করে দৃধবল সম্পাদনা করা একটি সংস্করণ। তাহলে প্রকৃত চরক সংহিতা নিশ্চিতভাবে কিছু শতক আগের কৃতি। [৪]

সূচী সম্পাদনা

বর্তমান চরক সংহিতায় আটটা স্থান ও সর্বমোট ১২০ টা অধ্যায় আছে। সেই আটটা স্থান হ’ল-

  1. সূত্র স্থান (৩০টা অধ্যায়), (এতে রোগ নিরাময়ের উপায়,সংবলিত পান-ভোজন ও চিকিৎসকের দায়িত্ব সমূহর বিষয় আছে।)
  2. নিদান স্থান (৮ টা অধ্যায়), (এতে আটটা প্রধান রোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
  3. বিমান স্থান (৮ টা অধ্যায়), (এতে চিকিৎসা-জ্ঞান ও রোগের কারকের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
  4. শরীর স্থান (৮টা অধ্যায়), (এতে গর্ভাধান ও মানুষের শরীর-রচনার কথা আলোচনা করা হয়েছে।)
  5. ইন্দ্রিয় স্থান (১২ টা অধ্যায়),(এতে রোগ নির্ণয় ও রোগের পূর্বাভাসের বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।)
  6. চিকিৎসা স্থান (৩০টা অধ্যায়), (এতে বিশেষ চিকিৎসা সমূহর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
  7. কল্প স্থান (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)

  1. সিদ্ধি স্থান (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)

এতে চিকিৎসা স্থানর ১৭টা অধ্যায় ও কল্প স্থান তথা সিদ্ধি স্থান সম্পূর্ণ ভাবে দৃধবলের(পঞ্চম শতাব্দী) দ্বারা পরে যোগ করা হয়েছিল। আয়ুর্বেদিক প্রয়োগের সাধারণ ও মৌলিক সিদ্ধান্ত সমূহ সংবলিত ‘‘সূত্র স্থান’’-এর আরম্ভ হওয়া চরক সংহিতার অনন্য বৈশিষ্ট্য সমূহ হ’ল:

  • রোগের কারণ ও নিরাময় আবিষ্কারের এক যুক্তিসংগত আলোচনা
  • পরীক্ষার বস্তুবাচক কৌশল
“প্রত্যক্ষ প্রমাণ আয়ুর্বেদ-এর এক উল্লেখযোগ্য দিক। সংহিতায় বলা হয়েছে যে সকল প্রমাণের ভিতর প্রত্যক্ষ প্রমাণই সর্বাপেক্ষা বিশ্বাসযোগ্য। এই ব্যবস্থাতে কোনো রোগের এক সফল চিকিৎসা চারটি কারকের ওপরে নির্ভরশীল: চিকিৎসক,ঔষধ,শুশ্রুষাকার ও রোগী। একজন চিকিৎসকের গুণ সমূহ হ’ল: প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, এক বৃহৎ পরিসরের অভিজ্ঞতা, ব্যবহারিক দক্ষতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা; একটি ঔষধের গুণ সমূহ হ’ল: সহজলভ্যতা, ব্যবহারোপোযোগীতা,ব্যবহারবহুলতা ও উত্কৃষ্ট দক্ষতা; শুশ্রুষাকারের গুণ সমূহ হ’ল: শুশ্রুষা কৌশল সম্বন্ধে যথাযথ জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা, রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ;এবং রোগীর গুনাগুণ সমূহ হ’ল: ভাল স্মৃতিশক্তি, চিকিৎসকের নীতি-নির্দেশনার প্রতি সম্মান,সাহস ও লক্ষণসমূহ যথাযথভাবে বর্ণনা করার দক্ষতা।”[৫]

টীকাসমূহ সম্পাদনা

চরক সংহিতার ওপরে রচিত সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পাদটীকাটি হ’ল চক্রপানি দত্ত(১০৬৬) রচিত ‘‘চরকতাত্পর্যটীকা’’ বা ‘‘আয়ুর্বেদ দীপিকা’’। অন্যান্য টীকাসমূহের ভিতর ভট্টরক হরিশ্চন্দ্রর ‘‘চরকন্যাস’’(৬শতক),‘‘নিরন্তরপাদব্যাখ্যা’’ (৮৭৫), শিবদাস সেনের ‘‘চরকতত্ত্বপ্রদীপিকা’' (১৪৬০) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই সংহিতার ওপর রচিত উৎকৃষ্ট টীকাসমূহ হল নরসিংহ কবিরাজের ‘‘চরকতত্ত্বপ্রকাশ ও গংগাধর কবিরত্নর জল্পকল্পতরু (১৮৭৯)।

চরক সংহিতার মতে শুশ্রুষাকারের গুণ সম্পাদনা

"চরকের মতে শুশ্রুষাকার সকল ভাল ব্যবহার তথা বিশুদ্ধ চরিত্রের,বুদ্ধিমান ও দক্ষ,দয়ালু,রোগীকে নিরীক্ষা করে সকল সুবিধা দেয়ার সমকক্ষ,খাদ্য তৈরী করতে পারঙ্গম,রোগীর গা ও হাত-মুখ ধুইয়ে দিতে সক্ষম,হাত-পা মালিশে সিদ্ধহস্ত,বিছানা ও কাপড়চোপড় পরিষ্কার করতে উপযুক্ত জ্ঞান থাকা ও রোগীর আরোগ্য লাভ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে ইচ্ছুক তথা আদেশ লাভ করা কোনো কার্য উপেক্ষা করতে অনিচ্ছুক হতে হয়।" [৬]

চরক - এক ঐতিহাসিক চরিত্র সম্পাদনা

সংস্কৃত ভাষায় চরক মানে পরিভ্রমী ধার্মিক শিষ্য বা গোড়া ধার্মিক ব্যক্তি। আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পিতৃস্বরূপ চরকের জন্ম সম্বন্ধে বহু ঐতিহাসিক কথন প্রচলিত। এর একটির মতে, একবার আয়ুর্বেদ-এর উপাসক সর্থেকেজ আকাশপথে পৃথিবী পরিভ্রমণ করার সময় দেখলেন যে, পৃথিবী রোগ-জরায় পরিপূর্ণ । তা দেখে তিনি ব্যথিত হন ও পৃথিবীতে থাকা রোগ সমূহ নিরাময়ের জন্য একজন মুনির সন্তান হিসাবে জন্ম গ্রহণ করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেহেতু তিনি এক “চর” হিসাবে পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন, তাই তিনি চরক হিসাবে পরিচিত হন। তার পরে অগ্নিবেশ ইত্যাদি আত্রেয়র শিষ্যসমূহের লিখনের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সম্বন্ধে এক নতুন গ্রন্থ প্রণয়ন করা হয়।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Meulenbeld, G. J. A History of Indian Medical Literature (Groningen, 1999--2002), vol. IA, pp. 7-180.
  2. Valiathan, M. S. (2003) The Legacy of Caraka Orient Longman আইএসবিএন ৮১-২৫০-২৫০৫-৭ reviewed in Current Science, Vol.85 No.7 Oct 2003, Indian Academy of Sciences seen at [১] June 1, 2006
  3. Meulenbeld, op. cit., vol. IA, pp. 130-141.
  4. Meulenbeld, op. cit., v. IA, pp. 105-115.
  5. Chattopadhyāya, D. (1982) Case for a critical analysis of the Charak Saṃhitā In Studies in the History of Science in India (Ed. D. Chattopadhyāya). Vol. 1. New Delhi: Editorial Enterprises. Pp. 209-236. cited in Tiwari, Lalit “A Summary of the Late D. Chattopadhyaya's Critique of Charaka Saṃhitā” seen at [২] June 1, 2006
  6. Wilson, Bruce in The History of Men in American Nursing without sources at www.allnurses.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে, seen June 1, 2006
  7. Monier-Wlliams (1899), s.v. caraka.

আরও জানুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

বিশদ অধ্যয়ন সম্পাদনা

  • Kaviratna, A.C. and P. Sharma, tr., The Charaka Samhita 5 Vols., Indian Medical Science Series, Sri Satguru Publications, a division of Indian Books Centre, Delhi 81-7030-471-7
  • Menon, I A and H F Haberman, Dermatological writings of ancient India Medical History. 1969 October; 13(4): 387–392. seen at The Wellcome Trust Centre for the History of Medicine at University College London [৩][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] June 1, 2006
  • Muniyal Ayurveda, Manipal, Sacitra Caraka Samhita - Volume 1, published by Muniyal Institute of Ayurveda Medical Sciences, Manipal. 2005 [৪]
  • Wujastyk, Dominik, The Roots of Ayurveda (Penguin Classics, 3rd edition, 2003), pp. 1–50 gives an introduction to the Carakasaṃhitā and a modern translation of selected passages.
  • Meulenbeld, G. J. A History of Indian Medical Literature (Groningen, 1999–2002), vol. IA, pp. 7–180, gives a detailed survey of the contents of the Carakasaṃhitā and a comprehensive discussion of all historical matters related to the text, its commentators, and its later history in the Islamic world and in Tibet.
  • Sharma, P. V. Caraka-Saṃhitā: Agniveśa's Treatise Refined and annotated by Caraka and Redacted by Dṛḍhabala (text with English translation) Chaukhambha Orientalia, 1981–1994. The best modern English translation of the whole text. Volume 4 gives summaries of the commentary of Cakrapāṇidatta.
  • Sharma, R. K. & Bhagwan Dash, V. Agniveśa's Caraka Saṃhitā (Text with English Translation & Critical Exposition Based on Cakrapāṇi Datta's Āyurveda Dīpikā) Chowkhamba Sanskrit Series Office, 1976–2002. Another good English translation of the whole text, with paraphrases of the commentary of Cakrapāṇidatta.
  • Ācārya, Yādava Trivikrama (ed.) Maharṣiṇā Punarvasunopadiṣṭā, tacchiṣyeṇĀgniveśena praṇītā, CarakaDṛḍhabalābhyāṃ pratisaṃskṛtā Carakasaṃhitā, śrīCakrapāṇidattaviracitayā Āyurvedadīpikāvyākhyayā saṃvalitā Nirnaya Sagara Press, 1941. The best current edition of the Sanskrit text. Often reprinted. Online machine-readable transcription available at SARIT.info