গ্রান কলম্বিয়া বা গ্রেট কলম্বিয়া (স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈɡɾaŋ koˈlombja]) ১৮১৯ থেকে ১৮৩১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশের অধিকাংশ এবং দক্ষিণ মধ্য আমেরিকার অংশবিশেষ এলাকায় রাষ্ট্র হিসেবে নামটি অদ্যাবধি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে বর্তমানের কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, পানামা, পেরুর উত্তরাংশ, গায়ানার পশ্চিমাংশ এবং ব্রাজিলের উত্তর-পশ্চিমাংশের অঞ্চলসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র

República de Colombia
১৮২১–১৮৩১
গ্রান কলম্বিয়ার জাতীয় পতাকা
পতাকা (১৮২১-১৮২২)
গ্রান কলম্বিয়ার কোট অব আর্মস (১৮২১-৩১)
কোট অব আর্মস
(১৮২১-৩১)
জাতীয় সঙ্গীত: মার্চা লিবারেতোদোরা
(লিবারেশন মার্চ)
গ্রান কলম্বিয়া
গ্রান কলম্বিয়া
রাজধানীবোগোতা
প্রচলিত ভাষাস্পেনীয়
ধর্ম
রোমান ক্যাথলিক
সরকারপ্রজাতন্ত্র
রাষ্ট্রপতি 
• ১৮১৯-৩০
সিমন বলিভার
• ১৮৩০, ১৮৩১
ডোমিঙ্গো কেসেদো
• ১৮৩০, ১৮৩১
জোয়াকুইন মসকুয়েরা
• ১৮৩০-৩১
রাফায়েল আর্দানেতা
উপ-রাষ্ট্রপতি 
• ১৮১৯-২০
ফ্রান্সিস্কো অ্যান্টোনিও জি
• ১৮২০-২১
জুয়ান জার্মান রসিও
• ১৮২১
অ্যান্টোনিও নারিনো ওয়াই আলভারেজ
• ১৮২১
হোস মারিয়া দেল কাস্তিলো
• ১৮২১-২৭
ফ্রান্সিস্কো দ্য পলা স্যান্তান্দার
• ১৮৩০-৩১
ডোমিঙ্গো কেসেদো
আইন-সভাকংগ্রেস
• উচ্চতর চেম্বার
সিনেট
• নিম্নতর চেম্বার
চেম্বার প্রতিনিধি
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১৭ ডিসেম্বর[১] ১৮২১
৩০ আগস্ট, ১৮২১
১৮২৮-১৮২৯
• বিলুপ্ত
১৯ নভেম্বর ১৮৩১
মুদ্রাপিয়াস্ত্রা
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
নিউ গ্রানাডার সুবেদারী
ভেনেজুয়েলার ক্যাপ্টেন্সি জেনারেল
ভেনেজুয়েলার তৃতীয় প্রজাতন্ত্র
নিউ গ্রানাডা প্রজাতন্ত্র
ভেনেজুয়েলা
ইকুয়েডর
বর্তমানে যার অংশ ব্রাজিল
 কলম্বিয়া
 ইকুয়েডর
 গায়ানা
 পানামা
 পেরু
 ভেনেজুয়েলা

তন্মধ্যে, প্রথম তিনটি গ্রান কলম্বিয়ার বিলুপ্তি পর্যন্ত উত্তরাধিকারী রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেছিল। ১৯০৩ সালে পানামা কলম্বিয়া থেকে পৃথক হয়ে যায়। সাবেক নিউ গায়ানার সুবেদারী প্রথায় কম-বেশি মূল বিচারব্যবস্থায় গ্রান কলম্বিয়ার অঞ্চলসমূহ পরিচালিত হবার পর থেকে এতে নিকারাগুয়ার ক্যারিবিয় উপকূল, মসকুইটো উপকূল এবং গায়ানার গায়ানা ইসেকুইবা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিশাসিত কেন্দ্রীভূত সরকারের সমর্থক ও বিকেন্দ্রীভূত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সমর্থকদের বাদানুবাদের মাধ্যমে এর বিলুপ্তি ঘটে। একই সময়ে, অন্য রাজনৈতিক বিভাজন পরিলক্ষিত হয়। ১৮২১ সালে কুকুতা সংবিধানের সমর্থক এবং সংবিধান বিরোধী সমর্থকও এতে জড়িত ছিল। এ জাতিটি ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর প্রজাতন্ত্রের গঠন বা জোট গঠন করে কিন্তু আরও শক্তিধর রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।

এ দলাদলিতে সাংবিধানিক শাসনের পক্ষপাতি উপ-রাষ্ট্রপতি ফ্রান্সিসকো দ্য পলা সান্তান্দারের সুবিধাপ্রাপ্তি ঘটে। অন্যদিকে শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টিতে রাষ্ট্রপতি সিমন বলিভার নেতৃত্ব দেন। এ দুইজন স্পেনীয় শাসনের বিপক্ষে যুদ্ধকল্পে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু ১৮২৫ সালে তাঁদের মধ্যকার পার্থক্য প্রকাশ্য জনসমক্ষে ফুঁটে উঠে। ফলে, ঐ বছর থেকে পরবর্তীকালে রাজনৈতিক অস্থিরতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়ায়।

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

ঐ সময়ে দেশটির আনুষ্ঠানিক নাম ছিল কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র।[২] ইতিহাসবেত্তাগণ বর্তমানকালের কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র থেকে পার্থক্য রাখতে গ্রান কলম্বিয়া নামটি গ্রহণ করেছেন। এ নামটি ১৮৬৩ সাল থেকে প্রচলন করা হয়। তাস্বত্ত্বেও অনেকে কলম্বিয়া ব্যবহার করছেন যেখানে কোন বিভ্রান্তির সূত্রপাত ঘটা সম্ভব নয়।[৩]

কলম্বিয়া নামটি অষ্টাদশ শতকে স্পেনীয় সংস্করণে নতুন লাতিন শব্দ কলাম্বিয়া থেকে আহুত যা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নামানুসারে গৃহীত হয়েছিল। এ পরিভাষাটি বিপ্লববাদী ফ্রান্সিস্কো দ্য মিরান্ডা অগ্রাধিকারভিত্তিতে নতুন বিশ্বকে চিহ্নিত করতে প্রয়োগ করেছিলেন যা মূলতঃ স্পেনীয় শাসনে পরিচালিত সকল আমেরিকান অঞ্চল ও উপনিবেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল। তিনি কাগজপত্রে অর্থ বুঝাতে 'কলমবিয়া' ও কোন কিছু বুঝাতে 'কলম্বিয়া' সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছ তাঁর বিপ্লবাত্মক কার্যক্রমে নিজ সংগ্রহশালায় শিরোনাম আকারে রক্ষণাবেক্ষণ করতেন।[৪]

বলিভার এবং অন্যান্য স্পেনীয় আমেরিকান বিপ্লবীও কলম্বিয়া শব্দটি মহাদেশীয় অর্থে ব্যবহার করতেন। ১৮১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশটিকে অ্যাঙ্গোস্তুরা কংগ্রেস কলম্বিয়া রাখে। কংগ্রেস এ পরিভাষায় একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক তথ্যসূত্র প্রদান করে।

ভূগোল সম্পাদনা

কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্র ১৭৩৯ থেকে ১৭৭৭ সময়কালে নিউ গ্রানাডার সুবেদারী প্রথায় কম বা বেশি সাবেক অঞ্চলসমূহ নিয়ে গঠিত হয়। এতে বৈধনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সাবেক তৃতীয় ভেনিজুয়েলা প্রজাতন্ত্র, নিউ গ্রানাডার একতাবদ্ধ প্রদেশসমূহ, পানামার সাবেক রয়্যাল অডিয়েন্সিয়া এবং ১৮২১ সাল পর্যন্ত স্পেনীয় শাসনে পরিচালিত কিটোর প্রেসিডেন্সিকে একত্রিত করে।

সরকার ব্যবস্থা সম্পাদনা

অ্যাঙ্গোস্তুরা কংগ্রেস বলিভার ও সান্তান্দারকে যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করে। এরপর কুকুতা কংগ্রেসের নতুন সংবিধান লিখিতরূপ নেয়। কুকুতা সংবিধানের অধীনে দেশটিকে বারোটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক বিভাগই একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হতো। বিভাগগুলোকে আরও ছত্রিশটি প্রদেশে বিভক্ত করে গভর্নর দ্বারা শাসনের ব্যবস্থা করা হয়। গভর্নরেরা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে আগে-পিছে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী ছিল। বিভাগীয় পর্যায়ে সামরিক কর্মকর্তা কমান্ড্যান্ট জেনারেল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হতেন। কমান্ড্যান্ট জেনারেলও প্রশাসনিক কর্মকর্তার মর্যাদা উপভোগ করতেন। এ তিনটি কার্যালয়ের সকলেই কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন। কেন্দ্রীয় সরকার সাময়িকভাবে বোগোতা থেকে দেশ পরিচালনা করতো। প্রেসিডেন্সি, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট কংগ্রেস ও উচ্চ আদালত (আল্তা কোর্তে) কর্তৃক কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করা হয়।

রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার - উভয় নির্বাহী শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করতেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর অতিরিক্ত ক্ষমতা সামরিক বাহিনীতে প্রয়োগ করার অধিকারী ছিলেন। তন্মধ্যে এ অধিকার প্রয়োগ করে ইকুয়েডরকে এ রাষ্ট্রের আওতাভূক্ত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতি, মৃত্যু, পদাবনতি বা অসুস্থতার ক্ষেত্রে উপ-রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করতেন। গ্রান কলম্বিয়ায় রাষ্ট্রপতি বলিভারের শুরুর দিকের বছরগুলোয় অনুপস্থিতির কারণে নির্বাহী ক্ষমতা উপ-রাষ্ট্রপতি সান্তান্দারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১০০ পেসো ভূ-সম্পত্তির অধিকারী বা অন্য কোন পেশায় সমতুল্য আয়ের অধিকারী ব্যক্তি ভোট প্রদানের অধিকারী ছিলেন। নির্বাচন পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হতো।[৫][৬]

পুণঃএকত্রীকরণ সম্পাদনা

গ্রান কলম্বিয়ার পুণঃএকত্রীকরণ বলতে ভবিষ্যতে কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর ও পানামাকে একই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার সম্ভাবনাকে বুঝানো হয়েছে। পানামা কলম্বিয়া থেকে পৃথক হয়ে গেলে ১৯০৩ সাল থেকে একত্রীকরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। পুণঃএকত্রীকরণের পক্ষে আগ্রহী ব্যক্তিরা 'ইউনিয়নিস্তাস' বা 'ইউনিয়নবাদী' নামে আখ্যায়িত হয়ে থাকেন। বলিভারিয়ান সংবাদ সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, ভেনেজুয়েলার সাবেক রাষ্ট্রপতি হুগো চাভেজ গ্রেট কলম্বিয়ায় রাজনৈতিক স্থিরতা আনয়ণে বলিভীয় বিপ্লবের ছায়াতলে আসার প্রস্তাবনা ঘোষণা করেছিলেন।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bethell, Leslie (১৯৮৫)। The Cambridge History of Latin America। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 141। আইএসবিএন 978-0-521-23224-1। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১১ 
  2. "Gran Colombia"Encyclopædia Britannica। জুন ৬, ২০০৭। 
  3. Bushnell, The Santander Regime, 12. Bushnell uses both "Colombia" and "Gran Colombia."
  4. Miranda, Francisco de; Josefina Rodríguez de Alonso; José Luis Salcedo-Bastardo (১৯৭৮)। Colombeia: Primera parte: Miranda, súbdito español, 1750–17801। Caracas: Ediciones de la Presidencia de la República। পৃষ্ঠা 8–9। আইএসবিএন 978-84-499-5163-3 
  5. Bushnell, The Santander Regime, ii, 18–21.
  6. Gibson, The Constitutions of Colombia, 37–40.
  7. "Boletin Informativo No.13" (পিডিএফ)। Consulvenemontreal.org। ২০১৫-০৯-২৩ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-১২ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

চিত্রমালা সম্পাদনা