গৌড়ীয় মিশন

কলকাতা ভিত্তিক হিন্দু সংগঠন

গৌড়ীয় মিশন হল একটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব মঠ এবং ধর্মপ্রচারক সংগঠন। এটির প্রতিষ্ঠাতা আচার্য হলেন শ্রীমদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজ। ১৯৩৯/১৯৪১ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর তৎকালীন আচার্য শ্রীমদ ভক্তি প্রসাদ পুরী গোস্বামী মহারাজের তত্ত্বাবধানে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় ১৯৪০ সালের মার্চে সংগঠনটি নিবন্ধিত হয়েছে।[১][২]

গৌড়ীয় মিশন
শ্রী গৌড়ীয় মঠ, বাগবাজার, কলকাতা
নীতিবাক্য'শ্রী শ্রী গুরু ও গৌরাঙ্গের সকল গৌরব'
পূর্বসূরীগৌড়ীয় মঠ
গঠিতমার্চ ১৯৪০ (৮৪ বছর আগে) (1940-03) কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
প্রতিষ্ঠাতাভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী
ধরনধর্মীয় সংগঠন
উদ্দেশ্যশিক্ষাগত, জনহিতকর, ধর্মীয় গবেষণা, আধ্যাত্মিকতা
সদরদপ্তরকলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
অবস্থান
  • ভারত, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩২টি মন্দির
এলাকাগত সেবা
ভারত, যুক্তরাজ্য , যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশ
প্রেসিডেন্ট-আচার্য
ভক্তিসুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ
প্রধান অঙ্গ
পরিচালকগোষ্ঠী ও কাউন্সিল বডি
অনুমোদনগৌড়ীয় বৈষ্ণব
ওয়েবসাইটgaudiyamission.org

ইতিহাস সম্পাদনা

 
শ্রী গৌড়ীয় মঠ, বাগবাজার, কলকাতা (আনুমানিক ১৯৩০)।

গৌড়ীয় মিশন হল শ্রী গৌড়ীয় মঠের সরকারী নিবন্ধিত নাম, যা ১৯২০ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। গৌড়ীয় মঠের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর মৃত্যুর পর, পরিচালকগোষ্ঠী ও সন্ন্যাসীরা পরবর্তীতে অনন্ত বাসুদেব প্রভুকে পরবর্তী আচার্য হিসাবে নির্বাচিত করেন। গৌড়ীয় মঠের আজীবন সম্পাদক ও সভাপতি কুঞ্জবিহারী বিদ্যাভূষণ (কুঞ্জ বাবু) এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত হননি ও নিজের পৃথক শাখা ( মায়াপুরের "শ্রীচৈতন্য মঠ" শাখা) তৈরি করেছিলেন। এভাবে অনন্ত বাসুদেব প্রভু পরবর্তীতে তার উত্তরসূরির পদ ছেড়ে দেন এবং একটি নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হন (প্রকৃতপক্ষে গৌড়ীয় মঠের নতুন করে নামকরণ) এবং পরবর্তীতে এটি গৌড়ীয় মিশন নামে পরিচিত হয়। ১৯৪৮ সালে গৌড়ীয় মঠ কেন্দ্রগুলি দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত করা হয় ও গৌড়ীয় মিশন কলকাতা বাগবাজারের জাদুঘরসহ মন্দির "গৌড়ীয় মঠ" নিজেদের কাছে রাখে। যা আজ গৌড়ীয় মিশনের সদর দপ্তর ।[৩] [৪]

পরবর্তীতে অনন্ত বাসুদেব প্রভু ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর কিছু শিক্ষার সমালোচনা শুরু করেন ।[১] তিনি বিয়ে করে বৃন্দাবনে বসতি স্থাপন করেন। "বাবাজি"দের সাথে যোগ দেন ও বাংলাতে বৃন্দাবনের ছয় গোস্বামীর শাস্ত্রীয় গৌড়ীয় বৈষ্ণব রচনা অনুবাদ করেন। তাঁর পরে, মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন ভক্তি কেভাল অদুলুমি (১৯৫৩ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত)। পরবর্তী আচার্য হলেন ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত (১৯৮২-১৯৯৩) এবং ভক্তি সুহৃদ পরিব্রাজক (১৯৯৩-২০১৮)।[৫] বর্তমান আচার্য হলেন ভক্তিসুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজ।

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

মিশনের প্রধান পদ ও অংশ হল সভাপতি -আচার্য, সভাপতি, গভর্নিং বডি ও কাউন্সিলের সদস্য। এটির ভারতে ছাব্বিশটি মন্দির, যুক্তরাজ্যে ( লন্ডন এ "শ্রী বাসুদেব গৌড়ীয় মঠ" ১৯৩৩ সালে), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ( নিউ ইয়র্ক এ "শ্রী ভক্তি শ্রীরূপ ভাগবত গৌড়ীয় মঠ " ২০০৭ সালে) ও বাংলাদেশে (লালমনিরহাটে "শ্রী ভক্তিকেবল গৌড়ীয় আশ্রম ,দলগ্রাম " ) সহ তিনটি মন্দির আছে।[৬][৭] আনুমানিক ৬০ সন্ন্যাসী আছে। চিকিৎসা সেবা ও ঔষধালয় তৈরি করেছে। বাংলা ভাষায় "ভক্তি পত্র" নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করছে।[৮] ২০১৯ সালে গৌড়ীয় মিশন বাগবাজারে বিশ্বের প্রথম চৈতন্য সংগ্রহশালা তৈরি করে।[৯] [১০] ২০২০ সালে করোনায় অনটনে ভোগা মানুষদের বাগবাজার, দিল্লী, মুম্বাই, নবদ্বী‌প ও অন্যান্য জায়গায় খাদ্য বিতরণ করেন।[১১]

বাংলাদেশের মঠ সম্পাদনা

  • শ্রীশ্রী দলগ্রাম ভক্তিকেবল গৌড়ীয় মঠ, দলগ্রাম, কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।
  • চন্দনপাট শ্রীশ্রী ভক্তি শ্রীরুপ ভাগবত গৌড়ীয় মঠ, চন্দনপাট, আদিতমারি, লালমনিরহাট
  • নওদাবাস গৌড়ীয় মঠ, নওদাবাস, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট

মন্তব্য সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Brzezinski 2004, পৃ. 89।
  2. "About Gaudiya Mission"Gaudiya Mission। ১৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  3. Sherbow 2004, পৃ. 131।
  4. Jalakara dasa। "The Sons of the Son: The Breakup of the Gaudiya Matha"Bhaktivedanta Memorial Library। ২৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  5. Jalakara dasa। "The Sons of the Son: The Breakup of the Gaudiya Matha"। Bhaktivedanta Memorial Library। ২৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  6. "গৌড়ীয় মিশন বাংলাদেশ, Dalgram,Kaligonj,Lalmonirhat,Dhaka,Bangladesh (2019)"www.localprayers.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২০ 
  7. খন্দকার, জুয়েল। "কালীগঞ্জে শ্রী শ্রী ভক্তিকেবল গৌড়ীয় আশ্রমের শীতবস্ত্র বিতরণ | SongbadTV.Com" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-২০ 
  8. "Centers"Gaudiya Mission। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  9. রাহা, জয়তী। "উদ্বোধনের জন্য সেজে উঠেছে চৈতন্য সংগ্রহশালা"www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪ 
  10. "বাগবাজারের গৌড়ীয় মঠে প্রথম শ্রীচৈতন্য মিউজিয়াম"aajkaal.in। ৪ আগষ্ট ২০১৯। ২০২১-০৭-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪ 
  11. অভীক (২০২০-০৪-০৩)। "করোনায় রুটি-রুজি বন্ধ হওয়া মানুষের পাশে গৌড়ীয় মিশন"bengali.oneindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৪ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা