গোলাম মোস্তফা (বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক)

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক

গোলাম মোস্তফা (আনু. ১৯৪৯ – ১০ অক্টোবর ২০১৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রমবীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

গোলাম মোস্তফা
জন্মআনু. ১৯৪৯
মৃত্যু১০ অক্টোবর ২০১৯ (বয়স ৭০)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পরিচিতির কারণবীর বিক্রমবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

গোলাম মোস্তফার জন্ম ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার ঝনকি গ্রামে। তার বাবার নাম গোলাম মো. ফালু শেখ এবং মায়ের নাম আমেনা আছিয়া আক্তার। তার স্ত্রীর নাম শামিমা আক্তার। তার চার ছেলে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন গোলাম মোস্তফা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার পর তিনি যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি ১৮ বছরের যুবক। কয়দিন পরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ এবং তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

গোলাম মোস্তফা ছিলেন নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে। ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা সমবেত হয় বৃহত্তর সিলেটের মাধবপুরে। তারা জানতে পারলেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান উদ্যাপন শেষে একদল পাকিস্তানি সেনা যাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। আলফা কোম্পানির অধিনায়ক তাদের নির্দেশ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই দলকে অ্যামবুশ করার। এ জন্য রাতের অন্ধকারে তিনিসহ ১৫-১৬ জন মাধবপুর উপজেলার গোপালপুরে যান। সেখানে সড়কের একটি মোড়ে তারা অ্যামবুশ করেন। সবার দৃষ্টি ছিল রাস্তার দিকে। এর মধ্যে ওই সড়ক দিয়ে একটি দুটি করে কয়েকটি গাড়ি যাওয়া-আসা করে। সেগুলোতে আক্রমণ না করে তারা অপেক্ষায় থাকলেন একসঙ্গে কয়েকটি গাড়িতে আক্রমণ করার জন্য। এই সিদ্ধান্ত তাদের বিপদই ডেকে আনল। এর মধ্যে দুজন অপরিচিত লোক সেখানে আসে। তারা সামনে যেতে চাইলে গোলাম মোস্তফারা তাদের সামনে যেতে নিষেধ করেন। এরপর তারা পেছন দিকে চলে যায়।

সকাল হওয়ার পর গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোদ্ধারা দেখেন, পাকিস্তানি সেনারা তাদের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। ওই অপরিচিত লোক দুজন ছিল আসলে পাকিস্তানিদের অনুচর। তারা পাকিস্তানিদের খবর দিয়েছে। তখন পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখ লড়াই করা মানে জীবন বিলিয়ে দেওয়া। এ অবস্থায় তারা সামনে এগিয়ে বিরাট এক পাটখেতে যান। তার পাশেই ছিল একটি খাল। সেখানে অবস্থান নিয়ে গুলি শুরু করেন। পাকিস্তানিরাও পাল্টা গুলি শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর তারা ধর্মগড়ে পশ্চাদপসরণ করেন। সেদিন গোলাম মোস্তফা ও তার সহযোদ্ধারা ধরেই নিয়েছিলেন, আর বুঝি বাঁচবেন না। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুয়ায় এক যুদ্ধে আহত হন গোলাম মোস্তফা। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে হঠাৎ গুলি করতে থাকে। তখন সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। তার দুই পায়েই এলএমজির ব্রাশ-ফায়ারের গুলি লাগে। পরে তার এক পা কেটে ফেলা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য গোলাম মোস্তফা দুটি খেতাব পেয়েছেন। যার একটি বীর বিক্রম ও অন্যটি বীর প্রতীক[৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

গোলাম মোস্তফা ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[৪][৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৩-০৮-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884 
  4. "মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট গোলাম মোস্তফা আর নেই"ডিবিসি নিউজ। ১১ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯ 
  5. "বীরবিক্রম সার্জেট গোলাম মোস্তফার ইন্তেকাল"সমকাল। ১২ অক্টোবর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা